মার্কিন অনুরোধে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া তালেবান নেতা আবদুল গনি বারাদার আফগানিস্তানের পরবর্তী কমান্ডার
তিন বছর আগে ট্রাম্প প্রশাসন আমলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে পাকিস্তানের একটি কারাগার থেকে মুক্তি পান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার। তালেবান গোষ্ঠীর এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা এখন আফগানিস্তানের পরবর্তী নেতা হতে চলেছেন।
মাত্র নয় মাস পূর্বেই তিনি কাতারের দোহায় শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতে সেই চুক্তির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া বেশ দুরূহ।
রোববার, তার বাহিনী কাবুল দখল করে নেয় এবং ভাগ্যগুণে সে এখন আফগানিস্তানের পরবর্তী নেতা হতে চলেছেন, যা নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের জন্য চরম অপমানের।
যদিও হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তালেবানের সামগ্রিক নেতা; তবে বারাদার তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান এবং কাতারে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তালেবানের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বারাদার দোহা হতে কাবুলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
১৯৬৮ সালে উরুজগানে জন্ম নেয়া বারাদার বেড়ে ওঠেন তালেবান আন্দোলনের মূলভূমি কান্দাহার শহরে।
১৯৮০'এর দশকে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে মুজাহিদিনের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন এবং ১৯৮৯ সালে সোয়েত সেনা প্রত্যাহার পর্যন্ত যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
পরবর্তীতে, আফগানিস্তানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ এবং এর মাঝেই বারাদার তার সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ ওমরের সঙ্গে কান্দাহারে একটি ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
সেই স্কুলকে কেন্দ্র করেই তারা দুইজন তালেবান আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হন। তালেবান আন্দোলন এমন একটি আদর্শে বিশ্বাসী যা, কট্টরপন্থী রক্ষণশীলতাকে গ্রহণ করে, ইসলামী আমিরাত তৈরির জন্য সংগ্রাম শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান সিক্রেট সার্ভিসের আর্থিক সহায়তায় তালেবান বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলেও আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে সমর্থন দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে, ২০০১ সালের মার্কিন সামরিক অভিযানে উৎখাত হয়।
এ সময় বারাদার আত্মগোপনে চলে গেলেও নির্বাসনে থেকেই তালেবান নেতৃত্বে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
২০১০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের করাচিতে তার সন্ধান পায় আইএসআই ও সিআইএ'র যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আট বছর পর, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুরোধে কাতারে তালেবানদের সঙ্গে চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির শর্ত ছিলো বারাদার শান্তি আনায়নে কাজ করবে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা করা এবং বিনিময়ে মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগ করবে, এমন শর্তে বারাদার তালেবানের পক্ষে চুক্তি সই করেন।
দোহা চুক্তিটি তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি ঘোষণা হিসেবে প্রচার করা হলেও এটা যে তালেবানদের একটি ছলনা ছাড়া আর কিছুই ছিলো, এখন সেটাই প্রমাণিত হলো।
হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ আমীর
হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তালেবানের 'বিশ্বস্ত নেতা' হিসেবে পরিচিত। তালেবানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামরিক নীতি সর্বোচ্চ কমান্ডার তিনি।
আখুন্দজাদা আফগানিস্তানের আমির উপাধি গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি ১৯৫৯ সালের দিকে কান্দাহার প্রদেশের পাঞ্জওয়াই জেলার একজন ধর্ম পণ্ডিতের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সোভিয়েত আক্রমণের সময় তার পরিবার তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় এবং তিনি একজন যুবক হিসেবে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯৯০'এর দশকে তালেবান গড়ে ওঠার সময় তিনি তালেবানে যোগ দেওয়া প্রথম দলের যোদ্ধাদের একজন।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, সোভিয়েত বিরোধী জিহাদের খ্যাতিমান কমান্ডারের পুত্র
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধানের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তালেবানের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্বেও নিয়োজিত আছেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মতে, হাক্কানি নেটওয়ার্ক হল একটি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর প্রধান কর্মসূচি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো। এছাড়া ধারণা করা হয়, গত কয়েক বছরে কাবুলে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল হামলা চালিয়েছে তারা।
মোল্লা ইয়াকুব, তালেবান প্রতিষ্ঠাতার পুত্র
তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা ইয়াকুব। তিনি গোষ্ঠীটির শক্তিশালী সামরিক কমিশনের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধে বিদ্রোহীদের কৌশলগত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োজিত ফিল্ড কমান্ডারদের একটি বিশাল নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধায়ক হলেন ইয়াকুব।
প্রতিষ্ঠাতার পুত্র হিসেবে তিনি সংগঠনটির মধ্যে সাবার কাছে বিশেষ মর্যাদার পাত্র।
তবে যাইহোক, আন্দোলনে ইয়াকুবের সঠিক ভূমিকা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা; কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ২০২০ সালে এই পদে তার নিয়োগ দেওয়া লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
- সূত্র: ডেইলি মেইল