মুসলিম ভোট বেশি বাইডেনের, ট্রাম্পের সমর্থন বেড়েছে
২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে মুসলমানদের ভোট বেশি পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের পোলে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ মুসলমান ট্রাম্পকে এবং ৬৪ শতাংশ মুসলমান বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে, মুসলিম সিভিল রাইটসের একটি গ্রুপের পোলে দেখা গেছে, ১৭ শতাংশ মুসলমান ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, তবে এ সংখ্যাও ২০১৬ সালের পোলের হিসাবের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ক্ষুদ্রাংশ হলেও মিশিগানের মতো রাজ্যগুলোতে তাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিশিগানে ১ লাখ ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন বাইডেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ১১ হাজারেরও কম ভোটে এ রাজ্যে জয়ী হন ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্পের মুসলমান সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবাক হননি বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের গবেষণা পরিচালক ডালিয়া মোগাহেদ। সংস্থাটির পরিচালনায় এক পোলের ফলাফলের ব্যাপারে তিনি জানান, 'আমরা মুসলমানদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট সমর্থন কমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করেছি। ২০১৯-২০ সালের মধ্যেই মুসলমানদের মধ্যে ট্রাম্পকে সমর্থনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।' ১৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ শতাংশ হয় এ সংখ্যা।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ট্রাম্পের মুসলমান সমর্থন বৃদ্ধির নির্ধারক শিক্ষা বা আয় সংক্রান্ত বিষয় নয়, বরং জাতিগত পরিচয়।
সমীক্ষাটিতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের মুসলমান সমর্থকদের ৫০ শতাংশই শ্বেতাঙ্গ মুসলমান। আরব, এশিয়ান, লাতিন জাতিগোষ্ঠী এবং কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থনের সংখ্যা ২০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।
বাকি জনগোষ্ঠীর মতোই, মুসলমানদের ট্রাম্পকে সমর্থনের প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক। তাদের মধ্যেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিরোধিতা এবং এবং রক্ষণশীল ধার্মিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আগ্রহের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
ডালিয়া বলেন, 'যে জিনিস আমাদের বেশি অবাক করেছে, তা হলো মুসলমান ট্রাম্প সমর্থক এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে মুসলমানবিরোধী চিন্তা প্রকাশের প্রবণতা বেশি।'
তবে মুসলমানরা যে জোটবদ্ধভাবে একজনকেই ভোট দেননি, এটি তেমন অবাক হওয়ার বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানরাই। কেউ হয়তো একটি বিষয়ের কারণে ভোট দিয়েছেন, কেউ হয়তো কোনো একটি দলের সমর্থক।
মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা সংস্থা এমগেইজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়া'য়েল আলজায়াত জানান, 'ট্রাম্প গত চার বছরে যা করেছেন এবং বলেছেন, তারপর মুসলমানরা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন- এটি বেশিরভাগ আমেরিকান বা যেকোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছেই অবিশ্বাস্য শোনাবে। তবে আপনি যখন বুঝতে পারবেন, মুসলমান সম্প্রদায় একরৈখিক নয় এবং অনেকেই অর্থনৈতিক নীতি, কর নীতি বা নির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতির কারণে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন, ব্যাপারটি তখন আর আশ্চর্যজনক মনে হবে না।'
আমেরিকান মুসলমানদের ভোটের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত ধারণা পেতে আরও পোলের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে আলজায়াতের সংস্থা।
আলজায়াত জোর দিয়ে বলেন, বাইডেনের পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান জয়ের পেছনে মুসলমানদের ভোটের ভূমিকা রয়েছে। তবে ট্রাম্পের মুসলমান সমর্থক বৃদ্ধি পেয়েছে, এ ব্যাপারও স্পষ্ট।
আমেরিকান মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তির নেতিবাচক প্রচারণা এর পেছনে কাজ করতে পারে বলে জানান আলজায়াত।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েই আমরা এমন কিছু প্রচারণা দেখতে পাই, যেখানে ট্রাম্পের নীতির সম্পর্কে না জানিয়েই বাইডেনকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়।'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বাইডেন ভারত বা কাশ্মিরে মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতি সমর্থন জোগাবেন, এমন অভিযোগের উদাহরণ দেন তিনি। তার নিজের সংস্থাই বাইডেনকে সমর্থনের জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আক্রান্ত হয়।
তবে এ ধরনের প্রচারণা চালানো এবং অভিযোগ তোলা ব্যক্তিরা ট্রাম্পের ক্ষতিকর, ইসলামবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী নীতির ব্যাপারে গত ৪ বছরে একেবারেই নীরব ছিল বলেও জানান তিনি।
'এসব কারণেই মূলত, অনেক ভোটারকে তারা ট্রাম্পকে ভোট দিতে রাজি করাতে পেরেছেন বা একেবারেই ভোট দেননি তারা,' বলেন তিনি।
- সূত্র: এনপিআর