শিগগির বাজারে আসছে নতুন ধরনের ‘প্রোটিন সাব-ইউনিট’ কোভিড ভ্যাকসিন
মহামারি নাভিশ্বাস সৃষ্টি করে চলেছে জন-জীবনে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও নিশ্চুপ বসে নেই, ইতোমধ্যেই বাজারে অনেক কোম্পানির তৈরি টিকা আসলেও, খুব শিগগির 'প্রোটিন সাব-ইউনিট' নামে পরিচিত এক ধরনের জৈব-প্রযুক্তির প্রতিষেধক বাজারে আসতে চলেছে।
এটি কোভিড-১৯ –এর হুমকি আরও সফলভাবে প্রতিরোধেই সক্ষম হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে যেসব টিকা অনুমোদন পেয়েছে, তার অধিকাংশই সর্বাধুনিক তবে নতুনতর জৈব প্রযুক্তির। সে তুলনায় প্রোটিন সাব-ইউনিট প্রযুক্তিটি প্রমাণিত এবং এর সম্পর্কে বিজ্ঞানী মহলের রয়েছে স্পষ্ট ধারণা। সবচেয়ে বড় সুবিধার দিকটি হলো; প্রতিষেধকটি উচ্চ প্রযুক্তির ফ্রিজারে অত্যন্ত নিম্ন-তাপে সংরক্ষণের ঝামেলা নেই।
ভ্যাকসিনটি যেভাবে কাজ করে?
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভাইরাসের মেকি বেশ ধরে প্রতিরোধ তৈরিতে উদ্দীপ্ত করে টিকাগুলো। যদিও কোনো টিকায় আসল বা জীবন্ত ভাইরাস থাকে না। আসলে এটি কেউ আক্রান্ত হওয়ার আগেই তার দেহকে প্রকৃত হুমকি সম্পর্কে তৈরি করার এক আগাম সতর্কতার মতো। তাই টিকা নেওয়ার পর সত্যিকার অর্থেই কেউ আক্রান্ত হলে তখন টিকার মান ও কার্যকারিতা অনুসারে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমে যায়।
করোনাভাইরাস টিকা তৈরির জন্য ভাইরাসটির আবরণে থাকা কাঁটা সদৃশ স্পাইক প্রোটিন বা এর অনুরূপ জৈব-রাসায়নিক সংকেত টিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত অন্যান্য টিকা যেমন, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না এবং ফাইজার ইঙ্কের তৈরি প্রতিষেধকে এরকম স্পাইক প্রোটিনের জেনেটিক সংকেত থাকে। এটি মানবদেহে প্রবেশের পর শরীরের কোষগুলোকে অ্যান্টিবডি প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে।
কিন্তু, সাব-ইউনিট ভ্যাকসিনে সরাসরি স্পাইক প্রোটিন থাকবে। ফলে আলাদা করে জৈব–রাসায়নিক সংকেত তৈরির কোনো দরকার হবে না। টিকাটির মধ্যে থাকবে আরও কিছু শক্তিবর্ধক বা অ্যাডজুভ্যান্ট, যা বাড়াবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে এই টিকা বাড়তি সুরক্ষা দেবে বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কবে আসছে?
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এ প্রযুক্তির টিকা বাজারে আনতে পারে জৈব-প্রযুক্তি কোম্পানি নোভাভ্যাক্স এবং তা আসতে পারে চলতি গ্রীষ্মেই।
সবচেয়ে আশার কথা হলো প্রোটিন সাব-ইউনিট ভ্যাকসিন অনেক বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতঃপূর্বে, বাজারে আসা হেপাটাইটিস বি এবং পারটুসিস বা হুপিং কাশির টিকাও ছিল এ প্রযুক্তির।
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে নোভাভ্যাক্সের কোভিড-১৯ টিকার শেষ ট্রায়াল প্রায় সমাপ্তির পথে, প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এতে অংশ নেন। কোম্পানিটির গবেষণা বিভাগের প্রেসিডেন্ট গ্রেগরি গ্লেন 'ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ভ্যাকসিন' আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে সম্প্রতি একথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "বছরের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ আমরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে টিকাটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।"
উদ্ভিদ যখন প্রতিষেধকের কারখানা:
ল্যাবরেটরিতে বিপুল সংখ্যক সেল তৈরির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ভাইরাসের প্রোটিন সংগ্রহ করছে নোভাভ্যাক্স। কিন্তু, এর পরিবর্তে গ্রিনহাউজে উদ্ভিদের সাহায্য নিয়েও আরও কার্যকর প্রোটিন তৈরি করা যায়।
কানাডীয় জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মেডিকেগো জিন রূপান্তরিত তামাক জাতীয় উদ্ভিদকে ভাইরাসের প্রোটিন উৎপাদনে ব্যবহার করেছে। কোষের মেমব্রেনের বহিঃআবরণ লিপিড শেলকে দিয়ে উদ্ভিদেরা ভাইরাল প্রোটিনকে আবৃত করে। শুধু কাঁটা সদৃশ স্পাইক বা প্রোটিন অংশ আবরণের বাইরে থাকে। তামাক উদ্ভিদের এই যাদুকরী সম্ভাবনাই বিজ্ঞানীদের উৎসাহী করছে।
"উদ্ভিদের মাধ্যমে আমরা যে আবৃত প্রোটিন পাচ্ছি, তা দেখতে ভাইরাসের মতোই। তবে দেখতে ভাইরাসের মতো হলেও এর রোগ ছড়ানোর কোনো ক্ষমতা নেই, এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এটি কাউকে দেওয়া হলে তা ভালো মানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্ম দেবে," বলছিলেন মেডিকেগোর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট নাথাইল ল্যান্ড্রি।
কোম্পানিটির তৈরি কোভিড প্রতিষেধক একই রকম ভাবে কাজ করার প্রমাণ মিলছে প্রাথমিক গবেষণায়। প্রাথমিক সফলতায় বিজ্ঞানীরা এতো বেশি ইতিবাচক তথ্য পান যে, তার কারণে এখন তারা আরও বড় আকারে ১১টি দেশের ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে এটির মানব ট্রায়াল শুরু করেছেন।
- সূত্র: এনপিআর