সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেড়েছে উট ক্লোনিংয়ের চাহিদা
সংযুক্ত আরব আমিরাতে উট ক্লোনিংয়ের চাহিদা বেড়ে চলেছে। এ অঞ্চলে উটের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জগতে ক্লোনিংয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দুবাইয়ের রিপ্রোডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি সেন্টারে ক্লোনিংয়ের এ কাজটি করেন বিজ্ঞানীরা। কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক পরিচালক নিসার ওয়ানি এএফপিকে বলেন, "বর্তমানে উট ক্লোনিংয়ের এত চাহিদা রয়েছে যে আমরা এর সাথে তাল মেলাতে পারছি না।"
প্রতিটি উটই সুন্দর ঠোঁট এবং লম্বা, পরিমার্জিত গলার অধিকারী হয় না। কিন্তু ধনী ক্লায়েন্টরা এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের উটগুলোকে পছন্দমত তৈরি করে নিতে পারেন।
তবে শুধুমাত্র বিউটি প্যাজেন্টই উট ক্লোনিং শিল্পের একমাত্র চালক নয়। অনেক গ্রাহক রেসিং উট, বা প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধ উৎপাদনকারী উটও ক্লোন করতে চান।
কিন্তু উটের "বিউটি কুইনস" হলো ক্লোনিং শিল্পে সবচেয়ে জনপ্রিয়। উপসাগরীয় ক্লায়েন্টরা একটি আরবীয় উট ক্লোন করতে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ দিরহাম (৫৪,৫০০ থেকে এক লাখ ৯ হাজার ডলার) পর্যন্ত খরচ করে থাকেন।
উটগুলো এ অঞ্চলের রেসট্র্যাকগুলোতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। পরবর্তীতে বিচারকরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করেন। মাঝেমধ্যে উটগুলোর দেহে বোটক্স এবং কসমেটিক ফিলারের কারসাজিও ধরতে পারেন তারা।
কুয়েতে উটের নিলাম ব্যবসায়ী সৌদ আল-ওতাইবি জানান, পশুর বাহ্যিক চেহারা সম্পর্কে গ্রাহকদের বিবেচনাই তার ব্যবসার চাবিকাঠি।
তিনি এএফপিকে বলেন, "উটের দাম তার সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য এবং জাতটি কতটা পরিচিত তার উপর নির্ভর করে।"
এছাড়া, কম বয়সী উট কেনার আগে "ক্রেতারা তার সৌন্দর্য নির্ধারণের জন্য ঐ পশুর মা'কে দেখতে আগ্রহী থাকেন," যোগ করেন তিনি।
১২ বছর আগে, বিশ্বে প্রথমবারের মত উট ক্লোন করার দাবি জানিয়েছিল দুবাই।
২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল ইনজাজ নামক একটি উটের জন্ম হয়। ওয়ানি এবং তার সহকর্মীরা ৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে ইনজাজের জন্মের মাধ্যমে সফল হন।
"আমরা এখন প্রচুর পরিমাণে উট উৎপাদন করছি, সম্ভবত প্রতি বছর ১০ থেকে ২০ টিরও বেশি উট তৈরি করি আমরা। এ বছর, এখন পর্যন্ত ২৮ টি উটের গর্ভধারণ সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ২০," জানান ওয়ানি।
তিনি আরও বলেন, "রেসিং চ্যাম্পিয়ন, অধিক পরিমাণে দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাণী, এবং বিউটি কুইন্স নামে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী" উটগুলোই ক্লোনিং করা হয়।
'মরুভূমির জাহাজ' হিসাবে পরিচিত এবং এককালে আরব উপদ্বীপের মরুভূমি জুড়ে পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত এ প্রাণিগুলো ঐতিহ্যগত উপসাগরীয় সংস্কৃতির প্রতীক।
বর্তমানে দৌড় প্রতিযোগিতা, মাংস এবং দুধের জন্য ব্যবহৃত হয় উট। ওয়ানি বলেন, "আমরা কিছু উট ক্লোন করেছি যেগুলো প্রতিদিন ৩৫ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদন করতে পারে।" উল্লেখ্য, সাধারণ একটি উট দৈনিক গড়ে পাঁচ লিটার দুধ দেয়।
সাধারণত উপসাগরের সুপার মার্কেটে উটের দুধ একটি সহজলভ্য খাদ্য। তবে, উটের মাংস পরিবেশিত হয় অভিনব রেস্তোরাঁ গুলোতে।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লোনিং ক্লিনিকগুলোতে অর্ডার বাড়তে থাকায় বিজ্ঞানীরা নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।
স্ত্রী-লিঙ্গের উটগুলো প্রতি দু'বছরে শুধুমাত্র একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। ১৩ মাস তাদের স্বাভাবিক গর্ভকালীন সময়।
কিন্তু প্রজনন কেন্দ্রগুলো উটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সারোগেসি পদ্ধতি ব্যবহার করে। ক্লোনিং বা ঐতিহ্যগত প্রজনন, উভয় ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
- সূত্র: আরব নিউজ