সকল ডিভাইসে বাধ্যতামূলক ইউএসবি-সি টাইপ চার্জার ব্যবহারের প্রস্তাব ইইউ'র
সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশনে (ইসি) মোবাইল ফোন এবং ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জন্য নির্মাতাদের প্রতি একটি সর্বজনীন চার্জিং সমাধান তৈরির নির্দেশ দিয়ে এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। নতুন এই প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য হলো, পরিবেশ রক্ষা ও সবুজায়নের লক্ষ্য পূরণে ইলেক্ট্রনিক ওয়েস্ট বা বৈদ্যুতিক বর্জ্যের পরিমাণ কমানো।
নতুন ডিভাইস কেনার সময় ভোক্তারা যেন তাদের পুরনো চার্জারই পুনরায় ব্যবহার করতে পারেন সে লক্ষ্যেই তোলা হয়েছে এমন প্রস্তাব। এতে করে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য হ্রাস পাবে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ইইউতে বিক্রি হওয়া সমস্ত স্মার্টফোনে অবশ্যই ইউএসবি-সি টাইপ চার্জিং পোর্ট থাকতে হবে।
কিন্তু টেক জায়ান্ট অ্যাপল সতর্ক করেছে, এই ধরনের পদক্ষেপ উদ্ভাবনের জন্য ক্ষতিকর।
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের প্রধান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, কাস্টম চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করে থাকে। অধিকাংশ স্মার্টফোন ও ডিভাইস নির্মাতারা ইউএসবি চার্জিং-এর সুবিধা দিলেও, অ্যাপলের আইফোন সিরিজের ডিভাইসগুলোয় চার্জ দিতে হয় ভিন্ন পন্থায়। অ্যাপল প্রতিষ্ঠানেরই তৈরিকৃত 'লাইটনিং' সংযোগকারী ব্যবহার করে পাওয়ার সাপ্লাই বা চার্জ দিতে হয় অ্যাপল ডিভাইসগুলোয়।
ইসি'র এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সংস্থাটি বিবিসিকে বলেছে, "ডিভাইসগুলোয় কেবল এক ধরনের চার্জিং ব্যবস্থা রাখার প্রতি যে কঠোর নিয়মনীতি প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ এটি উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করবে, যার ফলস্বরূপ ইউরোপ এবং বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন"।
অ্যাপল কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, তারা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের প্রতিটি ডিভাইসকে কার্বন নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোন ইউএসবি মাইক্রো-বি চার্জিং পোর্ট সুবিধা দিয়ে আসছে, অথবা আরো আধুনিক ইউএসবি-সি স্ট্যান্ডার্ডে চলে গেছে।
আইপ্যাড এবং ম্যাকবুকের নতুন মডেলগুলোও অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক স্যামসাং এবং হুয়াওয়ের মতোই ইউএসবি-সি টাইপ চার্জিং পোর্ট ব্যবহার করছে।
পরিবর্তনটি আসবে ডিভাইসের বডিতে চার্জিং পোর্টে। চার্জার প্লাগের সঙ্গে যুক্ত তারের শেষপ্রান্তের যে অংশটি ডিভাইসে সংযুক্ত করে পাওয়ার সাপ্লাই করা হয়; নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সেটি এখন হতে পারে ইউএসবি-সি টাইপ বা ইউএসবি-এ টাইপ কানেক্টর।
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, হেডফোন, পোর্টেবল স্পিকার এবং হ্যান্ডহেল্ড ভিডিও গেম কনসোলের ক্ষেত্রে নতুন এই নিয়ম কার্যকর হবে।
তবে, ইয়ারবাড, স্মার্ট-ঘড়ি এবং ফিটনেস ট্র্যাকার সহ অন্যান্য পণ্যের আকার এবং ব্যবহারের প্রযুক্তিগত কারণ বিবেচনায় এসব ডিভাইসের ক্ষেত্রে নতুন প্রস্তাবিত নিয়মটি আরোপ করা হবে না বলে জানা গেছে।
অপচয় রোধ
ইইউ রাজনীতিবিদরা এক দশক ধরে একটি কমন স্ট্যান্ডার্ড বা সাধারণ মানের জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। কমিশনের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর অকেজো এবং অব্যবহৃত চার্জিং ক্যাবলগুলোর মাধ্যমে ১১ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য তৈরি হয়।
কেবল গত বছরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে, প্রায় ৪২০ মিলিয়ন মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, গড় হিসাবে একজন ব্যক্তি প্রায় তিনটি মোবাইল ফোন চার্জারের মালিক, যার মধ্যে দু'টি চার্জার তারা নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন।
সিসিএস ইনসাইটের বিশ্লেষক বেন উড বলেন, "একটি সাধারণ চার্জিং স্ট্যান্ডার্ড থাকলেই বরং ভোক্তারা বেশি উপকৃত হবেন"।
তিনি আরো বলেন, "যদিও এক বিলিয়ন সক্রিয় আইফোন ব্যবহারকারীদের বিবেচনায় অ্যাপল তার 'লাইটনিং কানেক্টর' রাখার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেছে; তবে, ম্যাক এবং আইপ্যাড সহ তাদের বেশ কিছু পণ্যে এখন ইউএসবি-সি সমর্থন করে। আশা করি এটি শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা তৈরি করবে না, যদি অ্যাপল তার পরবর্তী ডিভাইসগুলোয় ইউএসবি-সি পোর্ট সংযুক্ত করে"।
ইসি আশা করছে এমইপি এবং সদস্য দেশগুলোর সম্মতিতে, ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রস্তাব কার্যকর হবে। সদস্য দেশগুলোকে নতুন এই নিয়ম জাতীয় আইনে পরিণত করতে দুই বছর সময় দেওয়া হবে এবং নির্মাতাদের তাদের চার্জিং পোর্ট পরিবর্তন করতে সময় দেওয়া হবে ২৪ মাস।
কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গারেথ ভেসটেগার বলেছেন, "আমরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে তাদের নিজস্ব সমাধান নিয়ে আসতে প্রচুর সময় দিয়েছি; এখন একটি সাধারণ মান নির্ধারণের জন্য আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। এই পদক্ষেপ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশবান্ধব উপায়ে আমাদের সবুজায়ন এবং ডিজিটাল উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ; ভবিষ্যতে এটি গুরুত্বপূর্ণ এক বিজয় নিয়ে আসবে বলে আশা করছি।"
- সূত্র- বিবিসি