স্কুলে ইতিহাস পড়েননি, অমিত শাহকে শশী থারুর
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ও অন্যতম শীর্ষ নেতা শশী থারুর। দ্য কুইন্টে লেখা এক কলামে স্কুলে শাহের ইতিহাস পাঠ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
শশী থারুর লিখেছেন, ‘মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে ভাবতে বাধ্য হই, আমাদের প্রতাপশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন স্কুলে পড়তেন, ইতিহাসের ক্লাসে নিশ্চয়ই ঠিকমতো মন দিতেন না। দেশের ইতিহাসগত অতীত নিয়ে তার সর্বশেষ মতবাদটি আমার মনে গুরুতরভাবে এই সন্দেহ জাগিয়েছে।’
শশী উল্লেখ করেছেন, ‘১৩ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লিতে শ্রী শাহ দুটি দাবি করেছেন: প্রথমত, ধর্মের ভিত্তিতেই দেশভাগ করেছিল কংগ্রেস; দ্বিতীয়ত, ১৯৪৭ সালের বিবৃতিগুলোর মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর ও সে বছরের নভেম্বরে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির দেওয়া বিবৃতিতে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে ভারতের প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবেই রয়েছে, তার মানে আজকের দিনে কংগ্রেস পার্টি তাদের সেই পূজণীয় নেতাদের প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’
শশীর যুক্তি, ‘দুটি দাবিই চ্যালেঞ্জ করার মতো এবং তাচ্ছিল্যের। আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসটির যেকোনো প্রাথমিক পাঠই আপনাকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, দ্বিজাতি তত্ত্ব ও ১৯৪০ দশকের মুসলিম লীগের পাকিস্তান প্রস্তাবের কাছে নিয়ে যাবে। আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটি কোনো আদর্শগত সীমারেখায় (যেমন, মার্কসবাদ বনাম পুঁজিবাদ) কিংবা ভৌগোলিক সীমারেখায় (উত্তর বনাম দক্ষিণ) বিভক্ত হয়নি; এটি বরং বিভক্ত হয়েছে এমন একটি মূলসূত্রে, যেখানে জাতিত্বের নির্ধারক হয়েছিল ধর্ম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘দেশভাগের দাবিটি তুলেছিল মুসলিম লিগ। তারা বলেছিল, ধর্মই হবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নির্ধারক। এ নিয়ে ১৯৪৬ সালে ভারতের মুসলমানদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মধ্যে প্রস্তাবনা ভোটও অনুষ্ঠিত হয়।’
শশী লিখেছেন, ‘কিন্তু ছয় দশক ধরে একটি ঐকবদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পতাকা বহন করা, বহুবার মুসলমান নেতাদের এবং ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একজন মুসলিম নেতার (মওলানা আজাদ) নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক দল, মহাত্মা গান্ধীর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস তখন মুসলিম লিগের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। কংগ্রেস দাবি করছিল, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত্বকে ভাগ করা ঠিক হবে না। কেননা, স্বাধীনতার সংগ্রামটি ছিল সব ভারতীয়ের অধিকারের জন্যই। তাদের লেখা সংবিধানে ভারতের সব ধর্মবিশ্বাসের সমানাধিকার ছিল। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করেছিল কংগ্রেস- এখন কি করে কারও পক্ষে অতীতের প্রসঙ্গ তুলে এই দাবি করা সম্ভব?’