২০২০ সালে মার্কিনীদের গড় আয়ু কমেছে দেড় বছর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ
২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আয়ুষ্কাল কমে এসেছে দেড় বছর। অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আয়ুষ্কালের এতো বেশি সময় কমে আসার নজির আর নেই। কোভিড-১৯ এর কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, ড্রাগ ওভারডোজ, হত্যা-দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও দুরারোগ্য ব্যধি এর মূল কারণ।
গত বুধবার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালে মার্কিনীদের আয়ুষ্কাল কমে ৭৭.৩ বছরে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে আয়ুষ্কাল ছিল ৭৮.৮ বছর, এবার দেড় বছর কমে আসার কারণগুলোর মধ্যে ৭৪ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী কোভিড-১৯।
১৯৪৩ সালের পর এবারই প্রথম এক বছরে এক লাফে এতো বেশি সময় কমে এসেছে। সে বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও, তবে সেবারের আয়ুষ্কাল কমে আসার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেবার আয়ুষ্কাল কমে এসেছিল ২.৯ বছর। সবচেয়ে বেশি কমেছিল হিসপানিক ও কৃষ্ণাজ্ঞ জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
২০১৯ সালে আফ্রিকান আমেরিকানদের আয়ুষ্কাল ছিল ৭৪.৭ বছর, যা ২০২০ সালে এসে কমে ৭১.৮ বছরে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণ সময়ে হিসপানিক জনগোষ্ঠীর আয়ুষ্কাল কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বেশি হলেও এবার তাদের আয়ুষ্কালই সবচেয়ে বেশি কমে এসেছে। ২০১৯ সালে তাদের আয়ুষ্কাল ছিল ৮১.৮ বছর, ২০২০ সালে তা ৩ বছর কমে ৭৮.৮ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। হিসপানিক পুরুষদের মধ্যে আয়ুষ্কাল কমে এসেছে আরও বেশি, ৩.৭ বছর। হিসপানিকদের আয়ুষ্কাল কমার ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ ছিল কোভিড-১৯।
আয়ুষ্কাল কমে আসার আরেকটি বড় কারণ ড্রাগ ওভারডোজ। ২০২০ সালে ৯৩ হাজারের বেশি মার্কিনী ড্রাগ ওভারডোজের কারণে মারা গেছে। এক বছর সময়ের হিসেবে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আয়ুষ্কাল ও বিশ্বের আরও ১৬টি দেশের উচ্চ আয়ের মানুষের আয়ুষ্কালের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের গবেষণা প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে। গবেষণাটিতে দেখা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আয়ুষ্কাল যতো কমে এসেছে, তা গড়ে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ৮.৫ গুণ বেশি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু জনগষ্ঠীগুলোর মধ্যে আয়ুষ্কাল উচ্চ হারে কমে আসার প্রবণতা দেখা গেছে।
গবেষণাটির একজন গবেষক ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির স্টিভেন উলফ এব্যাপারে বলেন, "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ঘটনা আমরা আর দেখিনি। অস্বাভাবিক হারে আয়ুষ্কাল কমে এসেছে,"
"স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতিগত বর্ণবাদের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে," বলেন ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের পপুলেশন হেলথ সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারপার্সন লেজলি কার্টিস।
"আয় বৈষম্য, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জাতিগত বৈষম্য ও স্বাস্থ্য সুবিধার সুযোগের ক্ষেত্রেও বৈষম্য এর পেছনের কারণ কাজ করছে," বলেন তিনি।
- সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এনপিআর