ফোর্বসের তালিকায় ২০২১ সালের শীর্ষ ১০ ধনী যারা
করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে গেছে। তবে শীর্ষ ধনীদের উপর এর প্রভাব খুব একটা পড়েছে বলে মনে হয় না। উপরন্তু তাদের সম্পদ আগের চাইতে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। ফোর্বসের মতে, বিশ্বের ২৬৬০ বিলিওনিয়ারের তালিকায় ১৮০০ জন নতুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন। এই তালিকায় বেশ কিছু সম্পদশালী রয়েছেন যাদেরকে আক্ষরিকভাবেই ধনীদেরও ধনী বলা যায়। বছরে কমপক্ষে দশ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আয় করেছেন এরা। ২০২১ সালের শীর্ষ দশ ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৫৮ বিলিয়ন ডলার। তালিকায় থাকা ৬ জনই যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। তাদের অধিকাংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রযুক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। ম্যাগাজিনটির তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধনীদের সম্পদে মোট ৩০৪ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়ছে চলতি বছরে। বাকী ৪ সৌভাগ্যশীল ধনী ভারত, ফ্রান্স, চীন এবং হংকংয়ের অধিবাসী। চলুন জেনে নিই ফোর্বসের তৈরী করা এই বছরের শীর্ষ ১০জন ধনী ব্যক্তির সম্পর্কে-
১. ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক সম্পর্কে জানেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়াটাই দুষ্কর। টেসলা এবং স্পেস এক্স এর মালিক তিনি। মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৬৫.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তার উপার্জিত সম্পদের পরিমাণ ১০৯.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত নভেম্বরেই মাস্ক ৩০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, টুইটারে টেসলার শেয়ার বিক্রির সংবাদ দেয়ার পরে মাস্কের এই রেকর্ড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফোর্বসের করা ২০২০ সালের শীর্ষ ধনীর তালিকাতেও তিনি ছিলেন। প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলার আয় করার মাধ্যমে ২০২১ সালেও যেন নিজের রেকর্ডকেই আবার ছুঁয়ে দিলেন তিনি। সম্প্রতি মাস্ক তার ক্যালিফোর্নিয়ার বিলাসবহুল ম্যানশন বিক্রি করে ৪০০ বর্গফুটের ছোট একটি বাসায় থাকছেন।
২. গৌতম আদানি ও তার পরিবার
ভারতের এই ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ৮১.১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৫২.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। আদানি গ্রুপ মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুত প্লান্ট এবং আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। চলতি বছরে আদানি গ্যাসের শেয়ার বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। আদানি ট্রান্সমিশনের ৩৩০ শতাংশ এবং কনগ্লোমারেট আদানি এন্টারপ্রাইজের ২৫০ শতাংশ শেয়ার বৃদ্ধি হবার ফলে আদানি এবং তার পরিবার ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকার দ্বিতীয়তে স্থান করে নিয়েছেন।
৩. ল্যারি পেইজ
গুগলের মাতৃপ্রতিষ্ঠান এ্যালফাবেটের শেয়ার ৭১ শতাংশ বেড়ে যাওয়াতে কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ল্যারি পেইজের নাম এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে এসেছে। ল্যারি পেইজের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৬.৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরে তিনি আয় করেছেন প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ল্যারি পেইজ, সহকর্মী সের্গেই ব্রিনের সাথে ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
৪. ল্যারি এলিসন
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসন ১৩৫.৭ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছেন। তিনি ২০২১ সালে ৪৭.৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এলিসন টেসলার দ্বিতীয় শীর্ষ অংশীদার, যিনি টেসলার ৩ মিলিয়ন শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানিটির ১.৫ শতাংশের মালিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
৫. সের্গেই ব্রিন
গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ১২১.৭ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের মালিক। ২০২১ সালে তিনি ৪৬.৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। ব্রিন এলটিএ রিসার্চ এন্ড এক্সপ্লোরেশন নামক এয়ারশিপ কোম্পানি পরিচালনা করছেন। তিনি পার্কিনসন রোগের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানও চালু করেছেন। ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি এ্যালফাবেটের শেয়ার বিক্রি করে দেন।
৬. বার্নার্ড আর্নল্ট এবং তার পরিবার
ফ্রান্সের এই ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমান প্রায় ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে আর্নল্ট এবং তার পারিবার ৪৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। বছরের শুরুর দিকে আর্নল্টই ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী। আর্নল্ট ফ্রান্সের বিলাসী পণ্য প্রস্তুত কোম্পানি এলভিএমএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান। বিশ্ব বিখ্যাত ব্রান্ড লুই ভিটন, মোয়েট-হেননেসে, ফেন্ডি, ক্রিস্টিয়ান ডিওর ও গিভেনচি তারই প্রতিষ্ঠান।
৭. স্টিভ বলমার
মাইক্রোসফটের প্রাক্তন সিইও বলমারের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৭.৫ বিলিয়ন ডলার। এই বছরে তিনি মোট ৩২.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। বলমারের মালিকানাধীন বাস্কেটবল টিম 'লস এঞ্জেলেস ক্লিপার্সে'র দাম ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েই যে তিনি এই তালিকার ৭ম অবস্থানে আছেন তা নয়। মাইক্রোসফটের শেয়ারও এবছর ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তার মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে।
৮. ঝ্যাং ইমিং
ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া চীনের এই ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৯.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১.৭ বিলিয়ন ডলার। 'বাইটড্যান্স' প্রতিষ্ঠানের মালিক ঝ্যাং ইয়ং। কোম্পানিটির ২২ শতাংশ শেয়ার তার অধীনে। প্রতিষ্ঠানের সিইও থেকে চলতি বছরের মে মাসে তিনি অবসর নেন। সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম 'টিকটক' বাইটড্যান্সের একটি এ্যাপলিকেশন যা সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
৯. রবিন জেং
ফোর্বসের এই তালিকায় স্থান পাওয়া রবিন জেং হংকং এর অধিবাসী। ইলেক্ট্রনিক গাড়ির ব্যাটারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান 'কনটেম্পোরারি এ্যাম্পেরেক্স টেকনোলজি'র মালিক তিনি। সম্প্রতি তার কোম্পানির শেয়ার ৫৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়াতে তিনি এই তালিকার ৯ম স্থানে চলে এসেছেন। .২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত জেং-এর কোম্পানিটি বিএমডব্লিউ, ভক্স ওয়াগন এবং টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি সরবরাহ করে থাকে।
১০. বিল গেটস
গেটস ২০২১ সালে মাত্র ১৮.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে ফোর্বসের করা এই তালিকার দশম অবস্থানে আছেন। সাবেক এই শীর্ষ ধনীর বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩৯.২ বিলিয়ন ডলার। সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ কমে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে, বিল গেটস বলেন, 'পরিস্থিতি যা ই হোক, পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেয়া কখনোই সহজ না'। সম্প্রতি, গেটস মেলিন্ডাকে বিবাহবিচ্ছেদের আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ৬.২ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ হস্তান্তর করেছেন।