যৌন নিপীড়ণের মামলায় কিভাবে আপস মীমাংসায় এলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু?
ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়ণের মামলার বাদী ভার্জিনিয়া জিওফ্রের সাথে আপস মীমাংসায় এসেছেন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এক জেলা আদালত থেকে জানানো হয়, ডিউক অব ইয়র্ক এবং জিওফ্রে আদালতের বাইরে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুর এই যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। বাদী ভার্জিনিয়ার দাবি, ১৭ বছর বয়সে ব্রিটিশ প্রিন্সের হাতে যৌন নিপীড়ণের শিকার হন তিনি। তবে আরও একবার পুরো ঘটনায় চোখ বুলিয়ে জেনে নেওয়া যাক, এই মামলায় আসলে কি কি ঘটেছে।
অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ ছিল ভার্জিনিয়া জিওফ্রের?
২০২১ সালে ভার্জিনিয়া জিওফ্রে (যিনি ভার্জিনিয়া রবার্টস নামেও পরিচিত) নামক জনৈক নারী নিউইয়র্কে ডিউক অব ইয়র্কের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। জিওফ্রের অভিযোগ, প্রায় দুই দশক আগে এপস্টেইনের বান্ধবী, ব্রিটিশ সোশ্যালাইট গিলেইন ম্যাক্সওয়েলের লন্ডনের বাড়িতে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাকে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে যেতে বাধ্য করেন এবং যৌন নিপীড়ণ করেন। পরবর্তীতে ম্যানহাটনে এপস্টেইনের বাড়িতে ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডের লিটল সেন্ট জেমসেও নিপীড়ন করেন। কিন্তু ব্রিটিশ রানীর ছেলে অ্যান্ড্রু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে এপস্টেইন নিজেও যৌন নিপীড়ণের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে থাকাকালীন ৬৬ বছর বয়সে মারা যান। ২০১৯ সালে ম্যানহাটন কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোরপূর্বক যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল।
আপসে মীমাংসার অর্থ কি?
আপসে রফা বলতে বোঝায় আদালতের বাইরে দুই পক্ষের বোঝাপড়ায় কোনো একটি সমাধানে আসা। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর এ মামলার আপসের ক্ষেত্রে কোনো বিচারকার্য হবে না, কিন্তু অ্যান্ড্রু জিওফ্রেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিবেন।
এর আগে প্রিন্স অ্যান্ড্রু জুরি ট্রায়ালের আবেদন করলে যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ লুইস কাপলান জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হতে পারে।
মীমাংসার শর্তগুলো কি কি?
আদালতে দাখিল করা যৌথ বিবৃতিতে সমঝোতার টাকার অংক প্রকাশ করেননি প্রিন্স অ্যান্ড্রু (৬১) ও জিওফ্রের (৩৮) আইনজীবিরা। তবে তারা জানিয়েছেন, জিওফ্রের দাতা সংস্থায় একটি 'উল্লেখযোগ্য পরিমাণ' টাকা দান করবেন অ্যান্ড্রু।
যদি এ মামলার বিচারকার্য শুরু হতো এবং জিওফ্রে জয়ী হতেন, তাহলে জিওফ্রেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হতো অ্যান্ড্রুকে। এদিকে অ্যান্ড্রুর কাছে অনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করেছেন জিওফ্রে।
অ্যান্ড্রু কি দোষ স্বীকার করেছেন?
বিবৃতিতে প্রিন্স অ্যান্ড্রু জিওফ্রের আনা অভিযোগকে অস্বীকারও করেননি, আবার স্বীকারও করেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, এপস্টেইনের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য তিনি অনুতপ্ত এবং যৌন নিপীড়ণের শিকার মানুষদের সাহায্য করার মাধ্যমে তিনি এর প্রায়শ্চিত্ত করবেন।
আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, বিবৃতিতে জিওফ্রের 'সাহসিকতা'র প্রশংসা করেছেন অ্যান্ড্রু, যা তার আগের বক্তব্য থেকে একেবারেই ভিন্ন সুরের! এর আগে তিনি বলেছিলেন, জিওফ্রের আনা মামলা ভিত্তিহীন এবং তিনি স্রেফ টাকা আদায়ের ফন্দি করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, "প্রিন্স অ্যান্ড্রু কখনোই জিওফ্রের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বা তাকে অসম্মান করতে চাননি। অ্যান্ড্রু মনে করেন, নিপীড়ণের এবং জনরোষের শিকার হওয়া ব্যক্তি হিসেবে জিওফ্রে অনেক কষ্ট করেছেন।"
মামলার কারণে অ্যান্ড্রু কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?
জিওফ্রের আনা মামলার কারণে ব্যক্তিগত সুনাম নষ্ট হয়েছে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর, এমনকি রাজকীয় পদমর্যাদাও হারিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে জানানো হয়,রাজকীয় ও সেনাবাহিনীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এবার 'হিজ রয়্যাল হাইনেস' নামটিও মুছে যাবে অ্যান্ড্রুর নামের পাশ থেকে। আরও জানানো হয়, অ্যান্ড্রু একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই জিওফ্রের মামলাটি লড়ছেন।
এর আগে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন অ্যান্ড্রু। ২০১৯ সালে বিবিসির এক সাক্ষাতকারে সমালোচকেরা দাবি করেন, এপস্টেইন ইস্যুতে নানা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্রিটিশ রাজকুমার। এর পরেই রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান অ্যান্ড্রু।
ব্রিটিশ রয়্যাল বায়োগ্রাফার ( রাজপরিবারের আত্মজীবনী লেখক) পেনি জুনোরের ভাষ্যে, জিওফ্রের মামলার আপস হওয়া সত্ত্বেও অ্যান্ড্রু যে আগের দায়িত্বে ফিরে যাবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই।
মামলাটি কি অ্যান্ড্রুকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় আনবে?
না, অ্যান্ড্রুকে কোনো ফৌজদারি অপরাধের আওতায় আনা হয়নি। সিভিল কেস হওয়ায় জিওফ্রের এই মামলা থেকে অ্যান্ড্রুকে ফৌজদারি অপরাধের কাঠগড়ায় দাড় করানো যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা এপস্টেইনের শিশু-কিশোরী পাচার ও যৌনদাসী বানানোর মতো অপরাধের বিষয়ে অ্যান্ড্রুর একটি সাক্ষাতকার নিতে চাইলে কোনো সাড়া দেননি ব্রিটিশ প্রিন্স।
সূত্র: রয়টার্স