কিয়েভের রাস্তাজুড়ে আতঙ্ক...
গতকাল দিনের শুরুতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর গতকালের রাত দীর্ঘ এক রাত ছিল ইউক্রেনীয়দের। দেশটির রাজধানী কিয়েভে সারারাত ধরে বাজছিল বিমান হামলার সাইরেন, ভোরের দিকে সড়কপথে শহর ছাড়তে মরিয়া হয়ে ওঠে বাসিন্দারা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল আরও হাজারখানেক মানুষ, সবাই চলতি ঘটনাপ্রবাহের আপডেট পেতে নিজেদের সেলফোন চেক করছিলেন বারেবারে।
এজেন্স ফ্রান্স প্রেস (এএফপি) কে কিয়েভের এক বাসিন্দা মারিয়া কাশকোসকা (২৯) বলেন, "বোমার শব্দে আমার ঘুম ভাঙে, ব্যাগ গুছিয়ে আমি পালিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি"।
কিয়েভের সাবওয়ে সিস্টেমে আশ্রয় নিয়েছেন তার মতোই এমন আরও অনেকে।
এখন পর্যন্ত রাজধানী কিয়েভের আকাশে কোনো সামরিক বিমান দেখা যায়নি, তবে রাশিয়ান এয়ার ফোর্সের সেনারা গতকাল দুপুরে কিয়েভের মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোস্তমেল এয়ারবেইজে হামলা করেছে বলে জানা গেছে সিনএনএনের খবরে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে কিয়েভ শহরের উপকণ্ঠ ধরে এগোচ্ছিল রাশিয়ান স্পেশাল ফোর্স আর বিমান বাহিনীর সদস্যরা।
কিয়েভের রাস্তাজুড়ে আতঙ্ক নেমে এসেছে। ২২ বছর বয়সী মনোবিজ্ঞানী সাশা সাবওয়ে ধরে শহর ছাড়ছিলেন, সাথে ছিল তার বিড়াল গোশা। নিজের একটি লাগেজ আর পোষ্য বন্ধুকে পেট ক্যারিয়ারে ভরে ছুটছিলেন তিনি। তিনি জানান, মেলনিটস্কি নামের একটি ছোট শহরে যাচ্ছেন তিনি, শহরটি কিয়েভ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে।
তিনি একা নন। ভোর হতে না হতেই অসংখ্য পরিবার রাশিয়ার সীমান্ত থেকে দূরে, কিয়েভের পশ্চিমের বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছেন, সেদিকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলা এসব মানুষদের গাড়ির বহর।
কিয়েভের কিছু হোটেল ইতোমধ্যেই খালি করে দিচ্ছে মালিকপক্ষ। খ্রেসচাটিক সড়কে সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে শহর ছাড়ার অপেক্ষা করছিলেন অনেকেই। তাদের অনেকে ফোনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
বুধবার রাতে মেয়র ভিটালি ক্লিসকো ঘোষণা দেন, রাজধানীর মূল প্রবেশ পথগুলোতে চেকপয়েন্ট বসানো হবে, ট্রেন আর বাস স্টেশনে যাত্রী নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর ঘোষণাও দেন তিনি।
এএফপিকে এক বাসিন্দা বলেন,"আমরা এখানেই থাকছি, এটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গা," তার ব্যাগে ছিল আইডি, ফোনের চার্জার আর বেশ কিছু নগদ অর্থ।
ভোর ৫টায় ভাসিককোভস্কায়া সড়কের বিলবোর্ডে প্রোজেক্টাইল আঘাত হানে। এটি সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ৫ মাইল দূরে, পাশেই সিনেমা হল আর পানি সরবরাহকারী কোম্পানির অফিস।
এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও, শব্দেই শহরের বাসিন্দারা জেগে ওঠে। বৃহস্পতিবার সকালে ধ্বংসাবশেষ সরাতে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। তাদের মধ্যে একজন সৈনিক তারাস জানিয়েছেন, রাশিয়ান প্লেন থেকে ছুড়ে মারা প্রোজেক্টাইলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আনুষ্ঠিক সূত্র এখনো এ ঘটনা নিশ্চিত করেনি।
এই বিস্ফোরণ নিয়ে কথা বলতে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলা পুলিশ লাইনের পাশে জড়ো হয় আশেপাশের বাসিন্দারা। ৪৭ বছর বয়সী লাডমিলা সোফোনুইক বলেন, বিস্ফোরণের আওয়াজের সময়ে তিনি শুয়ে ছিলেন। তার অ্যাপার্টমেন্টের জানালার কাঁচ না ভাঙলেও, আশপাশের অন্যান্য ভবনের কাঁচ ভেঙে পড়তে দেখেছেন তিনি।
সূত্র: এল পাইস