পূর্ব ইউরোপের গোপন বিমানঘাঁটি দিয়ে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে পশ্চিমারা
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো সৈন্য পাঠিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়ে- পরোক্ষভাবে ঠিকই তারা অংশ নিচ্ছে এই যুদ্ধে। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউরোপে ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি গোপন এক বিমানঘাঁটি হয়ে উঠেছে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের প্রধান 'শিপিং হাব'।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর বহুজাতিক প্রয়াস দেখতে গোপন ওই বিমানঘাঁটি পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন। এ সময় সেখানে অবস্থানরত সৈন্য ও কর্মীদের সঙ্গে তিনি দেখা করেন এবং অস্ত্রের চালান সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের তদারকি করেন। গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জায়গাটি অস্ত্র সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতা সম্পন্ন ঘাঁটিটি থেকে দৈনিক একাধিক ফ্লাইটে করে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে ইউক্রেনে।
ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের চালান রক্ষায় বিমানবন্দরটির অবস্থান এখনও গোপন রাখা হয়েছে। রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশের পরে এই ঘাঁটিকে নিজেদের টার্গেট না বানালেও ওই কর্মকর্তা বলেছেন, রুশ আক্রমণের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই ঘাঁটিটি তাদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।
ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়। তবে এর আগে থেকেই ইউরোপের আকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক কার্গো বিমানে ভরে গিয়েছিল। এই ফ্লাইটগুলো পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে সৈন্য পাঠানোর পাশপাশি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে অস্ত্রও সরবরাহ করছে, যেখান থেকে অস্ত্রের চালান ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। এ ধরনের ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিন দিন।
বিশাল এই অস্ত্র চালান অপারেশনের মূল চালিকাশক্তি হলো, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কমান্ড- ইইউসিওএম। ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে ইইউসিওএম-এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে তাদের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছন, 'যথা সময়ে' ইউক্রেনকে সাহায্য করতেই মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহের এই অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, "অস্ত্র সরবরাহের জন্য ইইউসিওএম যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সমন্বয় করছে। আমাদের সংস্থানগুলোকে যেন একটি সংগঠিত উপায়ে ইউক্রেনীয়দের সাহায্যে সর্বাধিক দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি, সেটি নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।"
রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি দেশ ইউক্রেনে নিরাপত্তা সহায়তা পাঠিয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ ইতোমধ্যে ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মাত্র এক সপ্তহের মধ্যেই এ সহায়তা পাঠানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএনের প্রতিবেদনে।
আনুমানিক ২৪০ মিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছেছে এবং বাকিটা কয়েকদিন বা সপ্তাহখানিকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে; শুক্রবার এমনটিই জানিয়েছেন মার্কিন ওই কর্মকর্তা। ইউক্রনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-আর্মর ক্ষেপণাস্ত্র, যা এই মুহূর্তে দেশটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মার্কিন কর্মকর্তার মতে, পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করেই ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে রুশ আক্রমণকে ধীরগতি, এমনকি কয়েক জায়গায় স্থগিত করতেও সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা যে সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করেছি তা তারা কার্যকরভাবেই ব্যবহার করছে।"
সম্ভবত এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফল, রুশ বাহিনীর ৪০ মাইল দীর্ঘ সামরিক বহরকে ধীরগতি করে দেওয়া। কয়েকদিন আগেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তরে রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি সামরিক বহর আগ্রসর হতে দেখা গিয়েছিল। মার্কিন কর্মকর্তার মতে, সামরিক বহরটি এখন সরে গেছে কিংবা তাদের আগ্রসর হওয়ার গতি কমেছে।
রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের গতি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। গেল বছর ডিসেম্বরের শেষে অনুমোদিত ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজের বেশিরভাগই ইউক্রেন পৌঁছে গেছে মাত্র এক মাসের মধ্যে। বাকি সহায়তা প্যাকেজও পৌঁছে যাবে সামনের কয়েক দিনের মধ্যেই। সরাসরি লোকবল পাঠিয়ে যুদ্ধে যোগ না দিলেও যে পরিমাণ অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তাতে নিঃসন্দেহে ইউক্রেনীয়দের মনের জোর বাড়ছে। পূর্ব ইউরোপীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
- সূত্র: সিএনএন