ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন আজ
সবার নজর আজ পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে; কারণ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের কথা রয়েছে আজ সোমবার (২৮ মার্চ)।
গত শুক্রবারই (২৫ মার্চ) তার বিরুদ্ধে বিরোধীদলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল অ্যাসেম্বলিতে। কিন্তু সেদিন অধিবেশন মূলতবি করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। ফলে পিছিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের কার্যক্রম।
রোববার (২৭ মার্চ) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ যদি স্পিকার আসাদ কায়সার অনুমোদন দেন তাহলে আগামী ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে পারে অনাস্থা ভোট। নিয়ম অনুযায়ী, অধিবেশন শুরু হওয়ার তিন দিন পর থেকে সাত দিনের মধ্যে এ ভোটের আয়োজন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ ইমরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। সেই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির জন্যই তা গত শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে উত্থাপন করার কথা ছিল।
এদিকে রাজধানী ইসলামাবাদের প্যারেড ময়দানে গতকাল বিকেলে পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) গণসমাবেশের ডাক দিয়েছিল। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে হাজির হয়েছিলেন ইমরানের সমর্থকেরা।
লক্ষাধিক মানুষের সামনে ইমরান বলেন, ''বাইরে থেকে আমাদের বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই এটা টের পাচ্ছি। আমরা এ-ও জানি, কে এই লোকগুলোকে একজোট করছে, কিন্তু সময় বদলে গিয়েছে। এটা আর জুলফিকার আলি ভুট্টোর আমল নয়।''
পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ''বিদেশি অর্থের সাহায্যে পাকিস্তানে সরকার বদলের চক্রান্ত চলছে। এই কাজে আমাদের মানুষদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার লিখিত প্রমাণও আমার হাতে আছে। কিন্তু আমি দেশের স্বার্থের সঙ্গে আপস করতে শিখিনি।''
বৈদেশিক অর্থে পাকিস্তানে পালাবদলের অভিযোগেই ইমরান একসূত্রে গেঁথে নেন বিরোধীদের। আজ পাকিস্তানের 'ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি'তে সম্মিলিত বিরোধীদের সামনেই সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে ইমরানকে। তার ঠিক আগে, ইসলামাবাদের ভিড়ে ঠাসা প্যারেড ময়দানে সেই বিরোধীদেরই বিদেশি ষড়যন্ত্রের শরিক করে দিলেন তিনি। একই সঙ্গে শোনালেন তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে পাকিস্তানে উন্নয়নের মাপকাঠিতে কী কী হয়েছে এবং তার সরকার যদি টিকে যায়, তাহলে কী কী করার পরিকল্পনা রয়েছে তাও।
৩৪২ সদস্যের 'ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি'তে ইমরানের দল পিটিআই-এর রয়েছে ১৫৫ জন সদস্য। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রয়োজন ১৭২ জন সদস্যের সমর্থন। পিটিআই-এর ১৫৫ ছাড়াও অন্তত ছ'টি রাজনৈতিক দলের ২৩ জন সদস্যের সমর্থন রয়েছে ইমরানের পক্ষে। কিন্তু সূত্রের দাবি, ইমরানের দলের অন্তত ২৪ জন অ্যাসেম্বলি সদস্য বিদ্রোহী হয়ে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ফলে পাটিগণিতের হিসেবে ইমরানের সরকার টেকানো কঠিন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনাস্থাভোটের ফল আন্দাজ করেই ইসলামাবাদে সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগে ভরা ভাষণ দিলেন ইমরান। তার আসল লক্ষ্য সোমবারের অনাস্থাভোট নয়, বরং সাধারণ নির্বাচন।
- সূত্র- ডন, আনন্দবাজার পত্রিকা