ইউক্রেনে অবিলম্বে রুশ আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের
পাকিস্তানের চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে 'চরম ট্রাজেডি' বলে মন্তব্য করেছেন। আজ শনিবার (২ মার্চ) 'ইসলামাবাদ সিকিউরিটি ডায়ালগ' শীর্ষক এক নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, অবিলম্বে এ যুদ্ধ বন্ধ করতেই হবে।
এই সংঘাত ঘিরে পাকিস্তানের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের গুরুতর উদ্বেগ তুলে ধরে জেনারেল বাজওয়া বলেন, "রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখা দিলেও, অপেক্ষাকৃত একটি ছোট দেশের ওপর এধরনের হামলা ক্ষমার অযোগ্য।"
সেনাপ্রধানের এই কড়া মন্তব্য জানা গেছে প্রভাবশালী পাকিস্তানী গণমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনের বরাতে।
বাজওয়া বলেছেন, "ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, এতে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, লাখ লাখ শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে। অর্ধেক ইউক্রেন ধ্বংস হয়ে গেছে। পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত অবসানের দাবি জানাচ্ছে। সংকট সমাধানে আমরা শান্তি আলোচনার পথকেই সমর্থন করছি।"
তিনি আরো বলেন, বড় শক্তির আক্রমণ থেকে ছোট একটি দেশ, তার অপেক্ষাকৃত ছোট অথচ কৌশলী সমরশক্তির মাধ্যমে নিজ ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে পারে- এই সংঘাত সে আশার জন্ম দিয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু সমরাস্ত্রের আধুনিকায়ন করেই এ শক্তি অর্জন করেছে ইউক্রেন।
বাজওয়া উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটির সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, কারণ দীর্ঘদিন নানান কারণে রাশিয়ার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল না। তবে সম্প্রতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানে করে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে এবং দেশটি এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বলে জানান বাজওয়া। যুদ্ধের বিস্তৃতি কোনো পক্ষকেই লাভবান করবে না বলেও সতর্ক করেন। বিশেষ করে, ওই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশগুলো সংঘাতের আর্থ-সামাজিক মূল্য দিচ্ছে। বিপজ্জনক এ যুদ্ধ 'সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেনারেল বাজওয়া পরিস্থিতির মূল্যায়নে বলেছেন, বিশ্ব এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। একপক্ষ যুদ্ধ বিবাদ চায়, আরেকপক্ষ চাইছে সহযোগিতার সম্পর্ক- এ দুইয়ের মধ্যে বিজয়ী শিবিরই আগামী দিনের বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামো নির্ধারণ করবে বলে মনে করেন পাকিস্তানী চিফ অব স্টাফ।
"আমার বিশ্বাস, যারা যুদ্ধান্মদনা ও আধিপত্যের বদলে সহযোগিতা, সম্মান, সমতা, চায় তারাই আজকের বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।"
এসব কথার মাধ্যমে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার প্রতিই নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি।
তার মতে, বড় শক্তিগুলোর মধ্যেকার বিরোধের বদলে সহযোগিতার সম্পর্কই পাকিস্তানের জন্য লাভজনক। আর তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত যেসব দেশ সংঘাত থেকে ফায়দা লুঠতে চায়, তাদের বদলে পাকিস্তানের মতো সহযোগিতাপন্থী দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চলতি সপ্তাহেই পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে চলেছেন। প্রস্তাবটি আনা বিরোধী দলগুলো সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট এবং আমেরিকার মদদেই তারা এমন চক্রান্ত করছে বলে জানিয়েছেন ইমরান। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়া সফর করাতেই তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে ওয়াশিংটন।
- সূত্র: দ্য ডন