নির্বাচন লুকাশেঙ্কোর ৩০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেলারুশ প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কোর ৩০ বছরের শাসনকাল আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে প্রায়ই 'ইউরোপের শেষ স্বৈরশাসক' বলা হয়ে থাকে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে লুকাশেঙ্কো ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ার দাবি করেন। নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামে অসংখ্য মানুষ। এ ঘটনায় কয়েক হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আবার যাতে প্রতিবাদ বা আন্দোলনের মুখে পড়তে না হয়, সেজন্য লুকাশেঙ্কো ২০২৫ সালের নির্বাচনের তারিখ আগস্ট মাস থেকে পিছিয়ে পরের বছরের জানুয়ারি মাসে নির্ধারণ করেছেন। জানুয়ারি দেশটির শীতল মাস। তাই ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লুকাশেঙ্কোর অনেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীই কারাগারে রয়েছেন, কেউ কেউ আবার দেশ থেকে নির্বাসিত রয়েছেন। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সপ্তমবারের মতো বেলারুশের শাসনভার নিতে যাচ্ছেন ৭০ বছর বয়সি লুকাশেঙ্কো।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত বেলারুশের জনসংখ্যা ৯০ লাখ। এটি রাশিয়া, ইউক্রেন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মাঝে অবস্থিত। রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে লুকাশেঙ্কোর। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সামরিক সহযোগিতাও দিয়েছেন তিনি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বেলারুশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে মানুষের হতাশাও বাড়তে থাকে। আর এ হতাশাকে পুঁজি করেই ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হন লুকাশেঙ্কো। দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাই রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে শাসনক্ষমতায় রয়েছেন তিনি।
বিরোধীদের দমন, পশ্চিমারা অবৈধ মনে করে এমন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকা ইত্যাদি কাজের জন্য লুকাশেঙ্কো স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে সমালোচিত হয়েছেন।
যদিও পশ্চিমা সমর্থন পেতে লুকাশেঙ্কো মাঝে মধ্যে দমন-পীড়ন কিছুটা কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামলে আবারও সরকার কঠোর দমন-পীড়ন শুরু করে। গ্রেপ্তার হন হাজার হাজার মানুষ। বন্ধ করে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন এনজিও। এসব কারণে দেশটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে।
বেলারুশে অনেক বিরোধী নেতা কারাগারে কিংবা নির্বাসনে রয়েছেন। বেলারুশে প্রায় এক হাজার ৩০০ রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লুকাশেঙ্কো 'কৌশলগত পরিকল্পনা' উল্লেখ করে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে জানুয়ারিতে নির্ধারণ করেছেন।
সমালোচকরা মনে করেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এড়ানোর জন্যই নির্বাচন পেছানো হয়েছে। চাপ কমানোর চেষ্টা হিসেবে ২৫০ জন রাজনৈতিক বন্দীকেও ক্ষমা করা হয়েছে। তবে বিরোধীদের গ্রেপ্তার এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার লুকাশেঙ্কোর প্রতিদ্বন্দ্বীও অনেক কম। কারণ, তার বেশিরভাগ প্রতিদ্বন্দ্বীকেই নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে বেলারুশে আগাম ভোট শুরু হয়েছে। এটি আগামী রোববার শেষ হবে। নির্বাসিত এক বিরোধী নেতা এ নির্বাচনকে হাস্যকর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা ও বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।