মস্কোভার নাবিকেরা বেঁচে আছেন, ছবি প্রকাশ করলো রাশিয়া
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাহাজটির নাবিকদের ছবি প্রকাশ করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ক্রিমিয়ান বন্দর নগরী সেভাস্তোপোলের একটি প্যারেড গ্রাউন্ডে একদল নাবিকের সাথে দেখা যায় রুশ নৌবাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ নিকোলাই ইয়েভমেনভকে।
রাশিয়ার দাবি, জাহাজডুবির সময় নাবিকদের ক্রিমিয়ার প্রধান বন্দর সেভাস্টোপোলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে এই বন্দর দখল করে রাশিয়া। মস্কোভা ডুবে যাওয়ার পর এই প্রথম নাবিকদের জীবিত থাকার কোনো প্রমাণ দেখালো রাশিয়া।
মস্কোর প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০০ নাবিকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অ্যাডমিরাল ইয়েভমেনভ এবং আরো দুজন অফিসার। তবে এই সাক্ষাৎ পর্ব কখন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
ভিডিওর শেষে দেখানো একটি সাক্ষাৎকারে অ্যাডমিরাল ইয়েভমেনভ বলেন, অফিসার এবং নাবিকেরা এখন সেভাস্তোপোলে তাদের নিজস্ব ঘাঁটিতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তারা নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
জাহাজডুবি বা অগ্নিকান্ড থেকে কারো নিহতের খবর জানায়নি রাশিয়া। কিন্তু অজ্ঞাতনামা এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটন মনে করে, মস্কোভাডুবিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
যদিও ইউক্রেনের দাবি, জাহাজের ক্যাপ্টেন আন্তন কুপ্রিনকে জাহাজের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার 'ব্ল্যাক সি' নৌবহরের প্রধান যুদ্ধজাহাজ ছিল মস্কোভা। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার খবর রুশ বাহিনীর মনোবলের উপর একটি বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গোলাবারুদ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে মস্কোভার কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল। এরপর বন্দরের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তাল সাগরে এটি ডুবে যায়। অন্যদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে তাদের নিক্ষেপ করা যুদ্ধজাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ মিসাইল থেকে সৃষ্ট আগুনের ফলেই গোলাবারুদের ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১২ হাজার ৪৯০ টনের মস্কোভা ই প্রতিপক্ষের আক্রমণে ডুবে যাওয়া সবচেয়ে বড় রুশ যুদ্ধজাহাজ। সোভিয়েত যুগে নির্মিত মস্কোভা ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে কার্যক্রম শুরু করে। জাহাজটি আসলে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাইকোলাইভে নির্মিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়া ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে এই শহরে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রথম দিন, কৃষ্ণ সাগরে স্নেক আইল্যান্ড রক্ষাকারী ইউক্রেনীয় সীমান্ত সৈন্যদের একটি ছোট গ্যারিসনকে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান করার পরে মস্কোভা কুখ্যাতি অর্জন করে।
সিরিয়া যুদ্ধের সময়ও রাশিয়া এই মস্কোভা জাহাজটি সিরিয়ান সেনাদের নৌ সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করেছে।
ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে দুটি যুদ্ধজাহাজ হারিয়েছে রাশিয়া। মার্চ মাসে ইউক্রেনের আক্রমণে ধ্বংস হয় সারাতোভ নামক আরেকটি জাহাজ।
সূত্র: বিবিসি