গুম হওয়া নাগরিকেরা...
পাকিস্তানের হাইকোর্ট এবার এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের নাগরিক অধিকারের ইতিহাসে কালিমা লেপে দেওয়া বিতর্কিত গুমকাণ্ডের বিরুদ্ধেই অবশেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন আদালত।
অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সময়কাল থেকে শুরু করে ইমরান খানসহ পরবর্তী সব নির্বাহী প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে নোটিশ প্রদানে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। নাগরিকদের গুম করা নিয়ে রাষ্ট্রের 'অঘোষিত নীতি'র প্রতি 'মৌন সম্মতি' প্রদানের বিষয়ে তাদের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তা নাহলে, তাদের বিরুদ্ধে জেনেবুঝে সংবিধানে বর্ণিত নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় জাতীয় সংসদেরও নিন্দা জানান ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ। একইসঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার না করায় গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি।
প্রশ্নবিদ্ধ এই নীতিমালার জন্য প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের কোন অংশীদার দায়ী তা প্রধান বিচারপতি নিঃসন্দেহেই ভালোমতো জানেন। নেতৃত্বদানে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ প্রয়োজন। দেশের শাসকদের সরাসরি দায়ী করে তিনি এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। ফলে যে শক্তিগুলো আড়ালে রাষ্ট্রপ্রধানদের পরিচালনা করে, তাদের প্রতি মৌন বা অন্যকোনো সমর্থন প্রকাশের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে অন্যরা চাপে থাকবেন।
চলতি বছরের শুরুতে বলপূর্বক গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে হাইকোর্টে পেশ করা একটি প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা খুব সামান্যই কাজে এসেছে। এমনকি আদালতের নির্দেশ ছিল এমন নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পেতেও কমিশনকে প্রায়ই ব্যর্থ হতে দেখা গেছে।
যত গুরুতর অপরাধের অভিযোগই থাকুক না কেন, কোনো নাগরিককে বলপ্রয়োগ করে গুম করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এই নীতি সমর্থনকারীদের দাবি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কখনও কখনও এটাই একমাত্র কার্যকর পন্থা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থায় মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ, তদন্ত ও বিচারিক দায়িত্বপালনে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই তা তুলে ধরে।
এই ব্যর্থতাগুলো শুধু অবিশ্বাসের দুষ্ট চক্রকেই টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বলপূর্বক গুমের ঘটনা প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর দুঃখ, হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা বোধ আরও বাড়িয়ে তুলে। ফলে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডেও তাদের সমর্থন বাড়ে।
বেলুচিস্তানে জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। প্রদেশটিতে শাসন করা এখন রাষ্ট্রের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালার কারণেই রাষ্ট্র নাগরিকদের মন জয় করতে ব্যর্থ। কৌশলগত এই নীতি বদলে ফেলার এখনই সময়।
- সূত্র: দ্য ডন
- লেখাটি ৩১ মে সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত হয়