অর্পার আশ্চর্য ডানা
মেয়েটা স্বীকার করে না। এই স্বীকার না করাটা তার সৌন্দর্য। আমি জানি, তার ভেতর একটা দুঃখের সরোবর রয়েছে। আনন্দের কোনো ঘটনার ভেতর হঠাৎ দেখা গেল দু-চোখে দুঃখের ছায়া। একই সঙ্গে ছায়াটা ঢেকে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা সে করছে, কিন্তু কোনোমতেই ঢাকতে পারছে না।
এ শহরে আমিই বোধ হয় একমাত্র ব্যক্তি, যার কাছে তার অদ্ভুত অনেক কিছুর আবদার। একটু আগে ফোন করে জানাল, তার শাঁখারিবাজার যেতে ইচ্ছে করছে। বলেছে, দুপুরের পরপরই রওনা করতে হবে, যাতে বিকালটা পাওয়া যায়। এই অদ্ভুত আবদারের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। শাঁখারিবাজার থেকে কি সমুদ্র দেখা যায়! এখন একগাদা মিথ্যা বলে বের হতে হবে অফিস থেকে। তবু টুপ টুপ করে আনন্দের পাপড়ি ঝরে পড়ছে আমার ভেতর, এই সত্যটা অস্বীকার করব না।
শাঁখারিবাজার পৌঁছাতে আমাদের বিকাল হয়ে গেল। মূল রাস্তা যেটা জগন্নাথ কলেজ হয়ে সদরঘাট চলে গেছে, তার থেকে ডানে ঢুকে যেতেই গলির মাঝামাঝি দেখা গেল কয়েকটা রক্তজবা ঝুঁলে আছে। বাতাসে থেমে থেমে ফুলগুলো মাতালের মতো দুলে উঠছে। দুটা ছোট মেয়ে দুদিকে মায়ের হাত ধরে হেঁটে আসছে। পায়ে ঘুঙুর, আনন্দে লাফাচ্ছে একটু পরপর।
অর্পা বলল, পূজা আছে মনে হয়। আজ আমরা অনেক রাত পর্যন্ত থাকব। পূজার খাবার খেয়ে যাব।
যদি আগেই পূজা হয়ে যায়? আমি বলি।
উত্তরে অর্পা সে পথে যায় না। বলে, জানো, গতকাল রাতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ পিঠের দুদিকে ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা মানে প্রচণ্ড ব্যথা। সঙ্গে ঘামতে শুরু করি। বৃষ্টি হলে উঠোনে যেমন পানির অনেকগুলো ধারা তৈরি হয়, আমার শরীরও তেমন একটা উঠোন হয়ে গেল। ঘামের ধারাপাতের ভেতর আমি পড়ে থাকি। আম্মুকে ডাকিনি। মনে হচ্ছিল, আমার এ অবস্থা দেখে আম্মু সহ্য করতে পারবে না। ভয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকি। এত ভয় পেয়েছিলাম যে মনে হচ্ছিল, তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। আর কোনোপ সকাল দেখতে পাব না। অথচ আমরা আজ দিব্বি শাঁখারিবাজারে। অর্পা আমার হাত চেপে ধরে হা হা করে হাসতে থাকে।
আমি বড় বড় চোখ করে অর্পার দিকে তাকিয়ে বলি, আমাকে জানাতে তো পারতে!
সে এর কোনো উত্তর দেয় না। কোনো বড় সমস্যা না জানানো, কোনো বড় ঘটনা নিজের ভেতর রেখে দেওয়া মানে অর্পা। তবু এ ঘটনাটা আমার কাছে অবিশ^াস্য বলে মনে হলো।
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনাটা রেখে দিলাম ফেরার পথের জন্য। এভাবেই আমরা সিরিয়াস বিষয়গুলোকে একত্র করে মূল সময় থেকে সরিয়ে রাখি। এতে আনন্দের সময়টুকুতে কিটিমিটি কোনো বিষয় ঢুকতে পারে না সহজে।
অর্পা বলল, চল আবিরের দোকানে যাই।
আমি উত্তরে মাথা নাড়াই। বলি, চলো, তোমাকে আবির কিনে দিই।
আমি আবির দিয়ে কী করব! অর্পা প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে।
আমি বলি, আরে চলোই না।
আমাদের থেকে এক মিনিটের পথ, পরপর কয়েকটা আবিরের দোকান। এটুকু সময়ের মধ্যে আকাশ কালো হয়ে গেল। আর আমরা একটা আবিরের দোকানে কোনোমতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শুরু হলো বৃষ্টি। যদিও বর্ষাকাল, তবু মেঘ কোত্থেকে এল, এত তাড়াতাড়ি, খুবই আশ্চর্য! আর বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।
আমার এ চিন্তাটুকু কি পড়ে ফেলল অর্পা। সে হাসতে হাসতে বলল, পাশেই তো আদালত, বোধ হয় একদল মেঘ জামিন পাওয়ার খুশিতে গলি ঘুরেই চলে এসেছে এখানে, হা হা। অর্পা এবারও আমার হাত চেপে ধরে, আচ্ছা এরা উকিলের ফি-টা দিয়ে এসেছে তো?
দুজনে একসঙ্গে হাসতে থাকি। বৃষ্টির শব্দ আমাদের বিরাট হাসিটাকে খেয়ে ফেলে।
আবিরের ছোট্ট দোকানটায় দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিল না। বৃষ্টির ঝাপটা, এর সঙ্গে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক মানুষ।
অর্পা বলল, এখানে তো দাঁড়ানো যাচ্ছে না। তার থেকে চলো বৃষ্টিতে ভিজি।
এবার আমি আপত্তি করি। বলি, পকেটে মোবাইল আছে, আরও কত কী, নষ্ট হয়ে যাবে। আর আমাদের যেতে যেতে ঠান্ডা লেগে যাবে।
অর্পা আমার কথা শুনল না। একাই নেমে পড়ল। বড় বড় ফোঁটা পড়ছে, মনে হচ্ছে কালো পিচঢালা পথে অজস্র বেলি ফুটেই মিলিয়ে যাচ্ছে।
অর্পা আমাকে ডাকছে, বিপুল আসো।
এদিকে আমার খুব রাগ হচ্ছে। তখন কাছাকাছি কোথাও বজ্রপাত হলো। বজ্রপাতের শব্দে গলিটা কেঁপে উঠল। অর্পা ভয়জড়ানো চোখে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টিতে। আমি বললাম, এই উঠে আসো। কিন্তু তাতে সে কর্ণপাত করল না।
আবার কোথাও বজ্রপাত হলো। এবার একটু দূরে বলেই মনে হলো। কিন্তু ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো শব্দ। আমি জেদ করে দাঁড়িয়ে আছি আবিরের দোকানে, আর সে বৃষ্টিতে ভিজছে। লোকজন আমাদের এ খেলাটায় বেশ মজা পাচ্ছে বলেই মনে হলো।
তখন অর্পা চিৎকার করে ডেকে ওঠে, বিপুল তাড়াতাড়ি আসো। আমাকে ধরো।
প্রথমে মনে হলো, সে আমার সঙ্গে মজা করছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার বৃষ্টির ভেতর দিয়ে তার ভয়ার্ত স্বরে ডেকে ওঠা যখন কানে এল, আমি এক দৌড়ে অর্পার কাছে চলে আসি। এসে দেখি, তার হাত-পা কাঁপছে। বলল, পিঠে ভীষণ ব্যথা।
অর্পাকে দু-হাতে চেপে ধরি। আমার হাত সম্ভাব্য ব্যথার জায়গায় চলে যায়। চমকে উঠি, এ কি! মনে হলো, গলিপথটা বিদ্যুৎচমকে ভরে গেছে। আমারও হাত-পা কাঁপতে লাগল। অর্পার পিঠে ডানা গজাচ্ছে। আমি আবারও ধরে বোঝার চেষ্টা করি। দেখি, ডানাই। পিঠের দুদিক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে।
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এল। বৃষ্টির কারণে অন্ধকার একটু বেশিই মনে হচ্ছে। আমাদের নিয়ে মানুষের কৌতূহল কোন পর্যায়ে আছে, তা বুঝতে পারছি না। বড্ড অসহায় লাগছে। কেউ এগিয়ে এল না তো! বৃষ্টি কমে গেছে। অর্পার কাঁপুনি থেমে গিয়ে সহসা সব স্বাভাবিক হয়ে গেল। কিন্তু আমার বিস্ময় কাটছে না।
অর্পা স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাহুডোর থেকে তাকে মুক্ত করে দিয়েছি। বললাম, তোমার ডানা গজাচ্ছিল, কী আশ্চর্য!
এই কথার পর সে উঠে গলির মুখের দিকে হাঁটতে শুরু করল। আমি বললাম, কোথায় যাচ্ছ?
সে কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের মতো হাঁটতে লাগল।
আমি উঠে তার পিছু ধরলাম। অর্পা বলল, তুমি আসবে না।
আবার চেষ্টা করলাম ওর সঙ্গে যেতে। দ্বিতীয়বার তার স্বর আরও রূঢ় শোনাল। আমি দাঁড়িয়ে থেকে তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।
২.
তিন দিন অর্পার সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ থাকল। আমি আকাশ-পাতাল ভাবছি। ভাবছি, এ রকম অতিলৌকিক একটা ব্যাপার যে ঘটতে যাচ্ছিল, এটা আসলে কী? এসব ভাবনার ভেতর তার ফোন এল, বসুন্ধরা সিটি আসতে পারবা?
এই প্রথম আমাদের একটানা তিন দিন যোগাযোগ নাই। যেকোনো মাধ্যমেই হোক, প্রতিদিন একবার হলেও যোগাযোগের ব্যাপারটা আমাদের ঘটে।
দেখা হলে বলল, তুমি কি জানো, এখানে একটা দোকান আছে...
কিসের? আমি জানতে চাইলাম।
গ্রাফিতি করে।
না তো।
আরে তুমি কিছুই জানো না। এখানে একটা দোকান আছে, যারা গ্রাফিতি করে। আমার পিঠে একটা ড্রাগনের গ্রাফিতি করাব, মিথে আছে না, ডানাওয়ালা ড্রাগন, যারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, উড়তে জানত, সে রকম একটা আঁকিয়ে নিব। বলে অর্পা খুশি খুশি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, আসলে কী ঘটছে। আমি অর্পাকে বলি, তোমার ব্যথাটার কী খবর?
ব্যথা! ও, ওটা আর হয়নি।
বাহ, তবু তোমার ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। আন্টিকে বলো, না হয় আমি নিয়ে যাই।
'ধুর, বাদ দাও, চলো তো। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
যে দোকানের সামনে গিয়ে থামলাম আমরা, দেখা গেল সেটা বন্ধ। অর্পা বিরক্ত, এটা কী হলো।
সে আমার হাত ছেড়ে পাশের দোকানে গিয়ে জানতে পারল, গ্রাফিতির দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে। প্যানডেমিক শুরুর পর ওই যে বন্ধ হয়েছে, আর খোলেনি।
৩.
কী করো। আমি ইনবক্সে নক দিলে তার কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। সিনও দেখাচ্ছে না। আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে থাকি, অর্পাকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। আবারও নক দিই।
না, দেখা করা সম্ভব হবে না। অর্পা লেখে।
মানে? আমি জানতে চাই।
উত্তর আসে, এখন বিরক্ত করো না। অনলাইনে একটা বই পড়ছি।
আচ্ছা। কিন্তু আমি তো দেখা করার কথা বলিনি।
উঁহু।
কী হলো। আমি জানতে চাই। উঁহু শব্দটা দেখে আমার ভয় লাগে। কী হলো আবার, ওর কি ব্যথা শুরু হলো। আমি লিখি, তোমার কি ব্যথা হচ্ছে?
ধুর, এসব কথা ভালো লাগে না।
সে অফলাইনে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথাব্যথা শুরু হয়। আমি ভাবতে শুরু করি, পৃথিবীতে এমন ডানা গজানোর ঘটনা এর আগে ঘটেছে কি না। মনে পড়ে পুরাণে তেমনটা আছে, ধর্মে তেমনটা আছে, লোকগাঁথায় তেমনটা আছে। তাহলে! তাহলে এসব গল্প তো আকাশ থেকে পড়েনি। আমার মাথাব্যথা আরও বাড়তে থাকে।
৪.
ফোনে আমরা কখনোই বেশি কথা বলি না। কথা হয় ইনবক্সে। আমি নক করলে সে কোনো উত্তর দেয় না। সিনও দেখায় না। বোধ হয় ব্যস্ত, অনলাইনে কোনো বই পড়ছে। উত্তর না পেলে আমার মনে হয়, সে বলল, 'উঁহু'। এই উঁহুর মানে বুঝতে পারি না। মনে হয়, তার ব্যথা শুরু হয়েছে। আমি ভয় পেতে শুরু করি। মেয়েটার এই ব্যথা যদি ডানায় রূপান্তরিত হয়। যদি সে ডানায় ভর করে উড়তে শুরু করে, তাহলে! আমি আর ভাবতে পারি না। শুধু আমাদের দেখা হয় না, এটা ভেবে মন খারাপ হয়ে যায়।
আচ্ছা তাহলে প্ল্যান করো।
ইনবক্সে হঠাৎ এই লেখাটা সে দেয়। আমি উত্তর পেয়ে যারপরনাই পুলকিত।
কিসের প্ল্যান করব! এই উত্তরের পর সে অফলাইনে চলে যায়।
সে এমন চমকে দেওয়া কথা নতুন লিখছে, এমন না, আগেও লিখেছে। তবু আমার চিন্তা হয়। বুঝে উঠতে পারি না, কী লিখল সে। ভয় পেতে থাকি যথারীতি। মেয়েটার কী ব্যথা হচ্ছে নিয়মিত। ব্যথা কি তাকে বিষাদগ্রস্থ করে তুলেছে, সে কি ঠিকঠাক ভাবতে পারছে না। কী লিখছে সে, নিজেই হয়তো পরক্ষণে বুঝতে পারছে না। এ রকম নানা চিন্তা আমার মাথায় ঘোরপাক খায়। মনে হয়, স্বীকার না করার যে স্বভাব তার দখলে, সেখানে আমি বেদনার মতো ফুটে আছি। কিন্তু সে তা জানাচ্ছে না।
৫.
কয়েক দিন সে কোথাও নাই। আমি অনলাইনে গিয়ে পাই না। ফোনও বন্ধ। আমার কি তাহলে ওর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত? তো তাকে পাওয়া গেল হারিয়ে যাওয়ার প ম দিনে। আমিই কল করে ফোন খোলা পেলাম। প্রথম ধরে নাই। কয়েকবার চেষ্টার পর ধরল।
তোমার কী হয়েছে।
কোথায়, কিছু হয়নি তো।
তোমার ব্যথা হয়নি তো? আমি জানতে চাইলাম।
এসব কথা বলো না তো। সে রেগে যায়।
আমি চুপ হয়ে থাকি। ভাবি, ব্যথা ব্যাপারটা তাহলে সত্যি নয়। নাকি সে স্বীকার করছে না।
আচ্ছা বলো। এবার ওর স্বর নরম শোনা যায়।
তোমাকে দেখি না কত দিন।
সে হু হু করে হেসে ওঠে, বলে, কোথায় তুমি।
অফিসে।
এক্ষুণি আসো। আমারও তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
এ ডাক আমি কীভাবে অস্বীকার করি। পকেটভরা অভিমান নিয়ে আমি তার দিকে রওনা হই।
আমরা যখন শহর ছেড়ে খোলা মাঠে পৌঁছাই, তখন বিকাল। আকাশে মেঘ, মেঘের আড়ালে রোদ। বাতাস বইছে। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আমি তাকে হাগ করতে কাছে টানি। সে-ও আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার বেদনামাখা স্বর, কিছুই ভালো লাগছিল না আমার।
সে আমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বাতাস আরেকটু বেড়েছে। এ কদিন কোথায় ছিলে? আমি জানতে চাই। সে কোনো উত্তর করে না। ততক্ষণে আমরা পরস্পরকে ছেড়ে দিয়েছি। যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে। খোলা মাঠ তো।
এবার আমি বলি, অর্পা তুমি ঠিক করো নাই।
এবারও কোনো উত্তর নাই, কিন্তু কপাল কুঁচকে যায়। এভাবে প্রথম আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আকাশের দিকে মুখ ফেরায়। দেখতে পাই, ওর শরীর কাঁপছে। আমি অর্পাকে জড়িয়ে ধরতে কাছে যাই। কিন্তু সে নিজেকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। অর্পার শরীর আরও বেশি কাঁপতে থাকে। আমি বলি, কী হলো তোমার!
বাতাস আরেকটু বাড়ল। কী নিপুণভাবে অর্পার পিঠে দুটা ডানা গজাচ্ছে। আমি বিস্ময় নিয়ে দেখতে লাগলাম। তারপর এক হাত, দুহাত এভাবে সে শূন্যে উড়তে লাগল।
আমি এমনই বিহ্বল হয়ে পড়লাম যে আমার পক্ষে আর কিছুই করার ছিল না। অর্পা উড়তে শুরু করল। প্রথমে খোলা মাঠে তাকে দেখা যাচ্ছিল, তারপর কোন দিকে চলে গেল, আমি আর তাকে খুঁজে পেলাম না। মনে হলো, ডানাটা গজিয়েছে আগেই, আমি এই খোলা প্রান্তরে এসে টের পেলাম।
কী আশ্চর্য, অর্পা উড়ে চলে গেল। কী আশ্চর্য, এখন আমাকে একা ফিরতে হবে। আমাকে একা ফিরতে হবে। অর্পার এভাবে ডানা গজিয়ে ওঠার ব্যাপারটা আমি দেখতে পেলাম।