আহমদ ছফা: একটি নক্ষত্র যেভাবে নিভে গেল
১.
রোববার সারাদিনই প্রায় অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টিটা ধরে এসেছিল। সন্ধ্যার পর আবার টিপটিপ বৃষ্টি। তুরাগের পাশে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিঃছিদ্র অন্ধকার। বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমরা প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন লোক একটা লাশবাহী খাটিয়ার পিছে পিছে এগিয়ে গেছি। একটিমাত্র টর্চের আলোর সাহায্যে কবরস্থ করা হলো আহমদ ছফাকে।
সেই অন্ধকার কবরস্থানে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে আমার কেবলই মনে পড়ছিল 'এমেডিয়্যুস' ছবিতে মোৎসার্টের শেষকৃত্যের দৃশ্য। কুয়াশাচ্ছন্ন চারিদিক। একটি ঘোড়ায়-টানা শকটে করে নিয়ে এসে ইউরোপীয় সঙ্গীতজগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হলো একটা গর্তে। মাত্র গুটিকয়েক লোক। বরফ আর কুয়াশার মধ্যে তারা আবার মিলিয়ে গেল। আমরাও অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যে আহমদ ছফাকে রেখে আসলাম। বাংলাদেশের সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নিভে গেল ২০০১ সালের ২৮ জুলাই বিকাল তিনটায়।
৩-৩০টায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে থেকে শিমুলের ফোন। উৎকণ্ঠাজড়িত কণ্ঠস্বর, 'স্যার এখনই চলে আসেন, ছফা ভাই-এর অবস্থা ভালো না।' ছুটে হাসপাতালে যেতেই সবার শোকাহত চেহারা। আমাকে দেখে জিয়া মাথা নাড়ল। ছফা ভাই নেই। আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। ইমারজেন্সি রুমে ঢুকতেই সাদা কাপড়ে মুখঢাকা একটা নিথর দেহ। আমি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আহমদ ছফা ইহলোক ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র আনোয়ার আমাকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। কয়েকদিন আগে এভাবে যে যাবেন সে-কথা আমাকে বলেছিলেন। আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছি।
আমি আস্তে আস্তে চারতলায় ডা. কাজী কামরুজ্জামানের কাছে চলে গেলাম। জামান ভাই বললেন, 'আমার মাথা কাজ করছে না, যা-যা করার আপনি করেন।' শিমুলকে বললাম বন্ধু-বান্ধবদের খবর দিতে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বদরুদ্দীন উমর, ফরিদা আখতার, মনসুর মুসা, আবুল কাশেম ফজলুল হক, সাঈদ-উর রহমান, সলিমুল্লাহ্ খান, সুলতানা রেবু, আহমদ কবির, নুরুল ইসলাম ছোটন, মান্নান ভুঁইয়া, হায়দার আকবর খান রনো, খালেকুজ্জামান ভুঁইয়া, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, পিনাকী দাস, চৌধুরী রফিকুল আবরার, আনু মুহাম্মদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, তাজুল ইসলাম এবং আরও অনেক সাহিত্যকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, টেলিভিশনের লোক এসে হাজির। ভিড় বাড়তে লাগলো। ফরহাদ মজহার ও হোসেন জিল্লুর ঢাকার বাইরে। ওদেরকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। ঠিক হলো ২৯ তারিখে জানাজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে। দাফন হবে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। রাতে বারডেমের ঠান্ডা ঘরে তাঁকে রাখা হবে। যে মেয়েটি ছফা ভাই-এর লেখার ডিকটেশন নিত ও এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, 'স্যার, একটু দোয়াদরুদ পড়ার ব্যবস্থা করি?' 'নিশ্চয়ই', বলেই আমি নিচের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঢুকে গেলাম আর একবার আহমদ ছফাকে দেখতে।
হঠাৎ আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন শুনতে পেলাম, 'কে বলল আমি মরে গেছি, এই তো আমি দিব্যি বেঁচে আছি।' আহমদ ছফার বিশেষ ভঙ্গিতে বিশেষ কণ্ঠে উচ্চারিত ঘোষণা। না, আমি ভুল শুনেছি। আমার মনে হলো আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পর আহমদ ছফাও চলে গেলেন-এক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে? এ-অঞ্চলের বাংলা সাহিত্য কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে পশ্চিম বাংলার সাহিত্যের পাশে? এ-দুশ্চিন্তা তো আহমদ ছফার। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নিজের সাহিত্যক্ষমতা সম্পর্কে। নিজেকে কারো চেয়ে ছোট ভাবতে পারতেন না। দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বর্ণনাতেও একটা অনাবিল অতিশয়োক্তি ভর করতো। কখনও কখনও লেখার পরিকল্পনা করেই ফোন করে বলতেন, 'এ বিষয়ে আমি সাড়ে সাতশো পৃষ্ঠার একটা বই লিখবো।' আমি হেসে ফেলতাম। তখন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে বলতেন, একদম সাড়ে সাতশো, পৃষ্ঠার, আপনাকে বলে দিচ্ছি।' আমি মেনে নিতাম। তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন।
ডা. জামান বললেন, 'বারডেমে কখন পাঠাবেন?' বললাম, আটটায়। ঠিক আটটায় অ্যাম্বুলেন্স এলো। আহমদ ছফার নিথর দেহটা নিয়ে গাড়িটা আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল। একরাশ ক্লান্তি এসে জাপটে ধরলো আমাকে। আমরা ডা. জামানের কক্ষে গিয়ে মরণোত্তর আহমদ ছফাকে নিয়ে কী করা যায় সেসব আলাপ-আলোচনায় মগ্ন হলাম। একসময় আস্তে আস্তে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসলাম। বারডেমের পাশ দিয়ে নিজের বাসায় যাবার সময় একবার তাকালাম ওদিকে। আজিজ মার্কেট থেকে বাংলা মোটরে যাবার পথে বারডেমের পাশ দিয়ে তাঁকে রোজই যাতায়াত করতে হয়েছে। কখনও কি ভেবেছেন এই হাসপাতালের হিমঘরে তাঁকে রাত কাটাতে হবে? বাসায় পৌঁছে অনেক রাত অবধি ঘুম আসেনি।
১৯৬৫ সাল। জগন্নাথ হলে মলয় ভৌমিকের রুমে ছফা ভাই-এর সাথে প্রথম পরিচয়। তরুণ সাহিত্যিকরা ছফা ভাইকে ঘিরে আড্ডা শুরু করে দিয়েছে। আমি নিজে সাহিত্যিক না হয়েও ঐ আড্ডায় একজন সদস্য। পরিণতিতে লেখক শিবির। ছফা ভাই অনেক কথা বললেন। সব মনে নেই। সাহিত্য, রাজনীতি সবকিছুই তাঁর কথা বলার বিষয়। মলয় ভৌমিক দুরারোগ্য ক্যান্সারে '৭৫ সালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আর ২৮ তারিখে ছফা ভাই চলে গেছেন। মলয়ের সাথে ছফা ভাইয়ের কি দেখা হবে? '৭১-এর পর ছফা ভাই এর সাথে বন্ধুত্বটা জোরালো হতে শুরু করলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপারে চলে গিয়েছিলেন। যুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। চোখের সামনে মানুষের বিচ্যুতি দেখে আহত হয়েছেন। ক্রুদ্ধ হয়েছেন। আহমদ ছফা এক বস্তা ক্রোধ নিয়ে বাংলাদেশে এসে গণকণ্ঠের সাথে জড়িত হলেন। জড়িয়ে পড়লেন জাসদ রাজনীতির সাথে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলাম '৭২-এ। ঢুকেই 'এ সমাজ ভাঙতে হবে'-র দলে ভিড়ে গেলাম।
ছফা ভাই গবেষণা বৃত্তি পেয়ে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে উঠলেন। প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ, আলোচনা হয়। আমাকে এক সেমিনারে 'প্রাচীন বাঙলার ইতিহাস' নিয়ে প্রায় জোর করেই একটা প্রবন্ধ পাঠ করালেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবনের প্রথম প্রবন্ধ। ছফা ভাই-এর উৎসাহেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। আমি '৭৫-এর প্রথম দিকে শামসুন্নাহার হলের হাউস টিউটর সুলতানা রেবুর বাসায় আশ্রিত ছিলাম স্ত্রী-কন্যাসহ। আমার মেয়ের বয়স তখন কয়েক মাস। ছফা ভাই ওকে কাঁধে করে অদ্ভূত সুর করে 'কমলা নৃত্য করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়া' বলে নাচতেন। এ দৃশ্য মনে হলে আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠত। এখন হয়তো এ-স্মৃতি জুড়ে দুঃখ জায়গা করে নেবে।
ছফা ভাই-এর সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ়তর হলো দেশে যখন একদলীয় শাসন জারি হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষক সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যত চাপই আসুক বাকশালে যোগ দেয়া যাবে না। যে গণতন্ত্রের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ সে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাদের কোনো সহযোগিতা থাকবে না। ছফা ভাই শিক্ষক ছিলেন না, ফলে এ-চাপ তাঁর ওপর ততটা ছিল না যতটা ছিল আমাদের ওপর। কিন্তু ছফা ভাই সাহস যোগাতেন। আমাকে একদিন জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে নিয়ে গেলেন এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্যে। রাজ্জাক স্যারও সহমর্মিতা দেখালেন। ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট রাতে ছফা ভাই আমার বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন, আর ঠিক তখনই একটি জিপে করে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন তরুণ ছফা ভাইকে তাড়া করলো। ছফা ভাই-এর খোঁজ করাই আমার প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়ালো। আগের রাতের ঘটনা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে বললে তিনিও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বেলা দশটার দিকে ছফা ভাই-এর সঙ্গে দেখা হলে জানতে পারলাম কীভাবে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন। আমি শঙ্কামুক্ত হয়েছিলাম।
২.
তরুণ প্রতিভা আবিস্কার করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আহমদ ছফার। হুমায়ুন আহমেদ থেকে শুরু করে অনেকেই তাঁর উৎসাহেই লেখার জগতে অবস্থান নিয়েছেন। নিজেও তিনি অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কবিতা, গল্প উপন্যাস ও গানের জগতে সাবলীলভাবে বিচরণ করতে পারতেন। ফাউস্ট অনুবাদ করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। দুই বাঙলার সাহিত্যমোদীরা নির্দ্বিধায় এটাকে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম কীর্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন। ফাউস্টের অনুবাদ নিয়ে ছফা ভাই-এর মধ্যে একটা গর্ব ছিল। খুবই যুক্তিসঙ্গত সে অহংকার। 'বস্তি উজার', 'একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা' বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিতার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ওঙ্কার, একজন আলী কেনানের উত্থানপতন, বারবার পড়তে ইচ্ছ করে। বাঙালি মুসলমানদের মন মননশীল রচনার অসাধারণ দৃষ্টান্ত। সমগ্র বাংলা সাহিত্যে যে লেখাটি একেবারেই অনন্য, এক কথায় অসাধারণ সেটি তাঁর পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গপুরাণ। গাছপালা ও পাখির জগতে মানুষ যে এভাবে একাত্ম হতে পারে এ-লেখা না পড়লে বোধগম্য হয় না। সমস্ত বইটি জুড়ে প্রাণী ও বৃক্ষজগতের যে পরম ঐক্যের বন্ধন সে বোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আহমদ ছফা [এ] লেখার মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বইটি নানা ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জাপানি ভাষায় ভাষান্তরিত বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
রচনার দক্ষতায় একটি মানুষকে কত জীবন্ত করা যায় তা তাঁর 'যদ্যপি আমার গুরু' লেখা না পড়লে বোঝা যাবে না। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, যিনি নিজে বলতে গেলে কিছুই লেখেননি, যিনি কথার মধ্য দিয়েই অকাতরে জ্ঞান বিতরণ করতেন, তাঁকে চিত্রশিল্পীর দক্ষতা নিয়ে তাঁর প্রাণবন্ত গদ্যে জীবন্ত করে তুলেছেন। শুধামাত্র এ লেখাই প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে স্মরণীয় করে রাখবে। তিনি যা বলতেন, যেভাবে বলতেন, একমাত্র আহমদ ছফার পক্ষেই সম্ভব ছিল তাঁকে তাঁর গদ্যের পিঞ্জরে ধরে রাখা। আহমদ ছফার গদ্যে মাটির গন্ধ। অসাধারণ সব উপমার সমাহার। একঝাঁক পোনার মতো শব্দেরা ছুটোছুটি করে তাঁর গদ্যে। আহমদ ছফার অন্যতম কৃতিত্ব তিনি শিল্পী সুলতানকে আবিস্কার করেছেন। ছফা আর শিল্পী সুলতানের যোগাযোগ এ-অঞ্চলের বাঙালি সংস্কৃতির জন্যে এক মাহেন্দ্রক্ষণ। 'বাঙালা মুল্লুকের' যে প্রাণশক্তি এতোদিন অবহেলিত ছিল, ছিল উপেক্ষিত, সুলতান আর ছফা মিলে তাকে ঘোষণা করলেন উচ্চস্বরে। আর তাই পশ্চিম বাঙলার কবি-সাহিত্যিকরা আহমদ ছফাকে সমীহ করতনে; অন্য অনেকের বেলায় তাঁদের সেটা করতে হয় না। ভারত, বিশেষ করে পশ্চিম বাঙলার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে মোকাবিলা করার জন্যে তিনি সদাপ্রস্তুত ছিলেন। আনন্দবাজার গোষ্ঠীর নানা চাতুরীর বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাঁড়িয়েছেন।
আহমদ ছফা ছিলেন একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক, অথচ সাম্প্রদায়িকতার লেশমাত্রও ছিল না তাঁর মধ্যে। যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছেন বারুদের মতো। খুব তুচ্ছ ব্যাপারে মানুষের ওপরে খেপে যেতেন। এ খ্যাপামির কথা যাঁরা জানতেন তাঁরা আহমদ ছফার আজীবন বন্ধু হতে পেরেছেন। আহমদ ছফার সামাজিক-রাজনৈতিক দিক নিয়ে আরও দীর্ঘ পরিসর নিয়ে লিখতে হবে। সেখানেও তাঁর কর্মকাণ্ড নেহাত ছোটখাটো নয়। একসময় প্রতিদিন সকালে ফোন করতেন। তাঁর দু'একটা পরিকল্পনার সঙ্গে আমি যথেষ্ট উৎসাহ দেখাতাম না বলে তিনি হয়তো অভিমান করতেন। অথবা রাগ করতেন। বলতেন না সে-কথা। চালচুলোর ঠিক ছিল না, অথচ যে-কেউ আশ্রয় পেত তাঁর কাছে। শিশুদের সঙ্গে একদম শিশু হয়ে যেতেন। অথচ নিজে ঘরসংসার কিছু করলেন না। 'ঘর করলাম নারে সংসার করলাম না'- এ তাঁরই লেখা গান। আজ তিনি সব অপূর্ণতার উর্ধ্বে চলে গেছেন। শুয়ে আছেন তুরাগের কোলে।
মৃত্যুর পর কী? আমরা কি কোনোদিন জানতে পারবো? আমার কেবলই মনে হয় মৃত্যুর পর আহমদ ছফা অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছেন, আরও অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে উঠবেন।
বি.দ্র. আহমদ ছফা'র অভাব খুব অনুভব করি।
-
লেখক: ইতিহাসবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অনারারি শিক্ষক