ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবগুলো আয় করে কীভাবে?
ফুটবল যে কী ভীষণ জনপ্রিয় খেলা, তা তো আর বাংলাদেশিদের নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতি চার বছর অন্তর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে এ দেশের আপামর জনতা যে উৎসব-উন্মাদনায় মেতে ওঠে, তাতে অনেক সময় মনে হয়, ফুটবল বুঝি জীবন-মৃত্যুর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার!
তবে যাঁরা ফুটবলের নিয়মিত দর্শক নন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি, ফুটবলের প্রতি এই প্রেম বাংলাদেশিদের একচেটিয়া অধিকার নয়। গোটা বিশ্বজুড়েই ফুটবলের রয়েছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালটি টিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে সরাসরি উপভোগ করেছিল ১ বিলিয়ন মানুষ, অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজন! এরপর আর নিশ্চয়ই সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে ফুটবলই হলো পৃথিবী নামক এই গ্রহের জনপ্রিয়তম খেলা।
তবে বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তে ফুটবলের সমান জনপ্রিয়তা থাকলেও আভিজাত্যের দিক থেকে এই মুহূর্তে ইউরোপিয়ান ফুটবল অন্য সবার চেয়ে বহু গুণে এগিয়ে। বিশ্বকাপের শেষ চারটি আসরে ইউরোপের দলগুলো একটানা শিরোপা জিতেছে বলেই শুধু নয়, ক্লাব ফুটবলেও ইউরোপের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। বর্তমান সময়ের সেরা যেকোনো ফুটবলারের নাম করুন, যাঁরা ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে অবস্থান করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই খেলছেন ইউরোপের কোনো না কোনো ক্লাবে।
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলকে ঘিরে অনেক ভক্তের উন্মাদনা আন্তর্জাতিক ফুটবলের চেয়েও বেশি। ক্লাব ফুটবলই তাঁদের ধ্যানজ্ঞান, প্রতিমুহূর্তের আলোচ্য বিষয়। আর ইউরোপিয়ান ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারকা খেলোয়াড়েরা যে কী ধরনের বিলাসী, স্বপ্নিল জীবন যাপন করেন, তা-ও তো আজকাল খুব সহজেই পরিলক্ষিত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে। তাই ফুটবল সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন এমন কারও আর জানতে ও বুঝতে বাকি নেই যে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে রয়েছে অর্থের তুমুল ঝনঝনানি, টাকার ছড়াছড়ি!
কিন্তু যে ব্যাপারে হয়তো অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই কিন্তু জানার কৌতূহল রয়েছে ষোলো আনা, তা হলো এই যে ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবগুলো আয় করে কীভাবে? ঠিক কোন ধরনের ব্যবসায়িক কাঠামোর বদৌলতে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয়ের পরও দিন শেষে (পড়ুন মৌসুম শেষে) লাভের মুখ দেখে তারা?
ম্যাচ ডে-র বিক্রিবাট্টা
ইউরোপের প্রায় প্রতিটি ক্লাবই নিজ দেশীয় ও উপমহাদেশীয় মিলিয়ে একাধিক লিগে খেলে থাকে। তার মধ্যে থেকে উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (ইপিএল) কথা। এক মৌসুমে প্রতিটি ক্লাব হোম ও অ্যাওয়ে ভিত্তিতে মোট ৩৮টি করে ম্যাচ খেলে থাকে (অংশগ্রহণকারী দল ২০ হওয়ায়)। এর মধ্যে অর্ধেক ম্যাচ তারা খেলে নিজেদের মাঠে, বাকি অর্ধেক ম্যাচ খেলে প্রতিপক্ষের মাঠে।
নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত তথা হোম ম্যাচগুলোতে প্রতিটি ক্লাব নিজ ভক্ত-সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন তো পায়ই, সেই সঙ্গে তারা লাভবান হয় অর্থনৈতিকভাবেও। কারণ, গ্যালারিতে বসে তাদের খেলা দেখতে আসেন যে দর্শকেরা, তাঁদের টিকিটের পেছনে মোটা অঙ্ক খরচ করতে হয়, যার বেশির ভাগই জমা হয় ক্লাবের কোষাগারে।
প্রিমিয়ার লিগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে অংশগ্রহণকারী ২০টি দলের ম্যাচ ডে টিকিটের গড় মূল্য ছিল ৩২ পাউন্ড। তবে এ ক্ষেত্রে তো একদম ন্যূনতম টিকিটের মূল্যও বিবেচনায় আনা হয়েছে, যেসব টিকিট দিয়ে প্রাপ্ত আসনে বসে খেলা খুব একটা ভালোভাবে দেখা যায় না। যত ভালো জায়গায় আসন চাইবেন, আপনাকে তত বেশি দামের টিকিট কাটতে হবে।
চাহিদা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে একেক ক্লাবের প্রিমিয়াম টিকিটের দাম একেক রকম হয়। হাল সিটি ফুটবল ক্লাবের প্রিমিয়াম টিকিট যেখানে ৩৬ পাউন্ড, আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের ক্ষেত্রে তা ৯৭ পাউন্ড।
আর্সেনালের স্টেডিয়াম দ্য এমিরেটসের ধারণক্ষমতা ৬০,৭০৪। ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটিকে গড় ধরা যেতে পারে। তাহলে এবার নিজেই হিসাব করে দেখুন, যেসব ক্লাবের রয়েছে অনেক বড় স্টেডিয়াম ও প্রচুর ভক্ত-সমর্থক, তারা প্রতি মৌসুমে ম্যাচ ডে টিকিট বিক্রি করেই কত আয় করে থাকে!
আর কেবল টিকিটই তো ম্যাচ ডে-র একমাত্র আয়ের উৎস নয়। মাঠে যে ভক্ত-সমর্থকেরা প্রিয় দলের খেলা দেখতে যাবেন, তাঁদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা বলেও তো কিছু আছে, নাকি? ফলে ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের মতো পণ্য বিক্রি করেও ক্লাবগুলোর অনেক আয় হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও একেক ক্লাবের খাদ্যের মূল্য একেক রকম। যেমন ২০১৯-২০ মৌসুমে ইপিএল স্টেডিয়ামগুলোতে একটি পাইয়ের দাম ছিল ২ দশমিক ৯ পাউন্ড (লিভারপুল ফুটবল ক্লাব) থেকে শুরু করে ৪ দশমিক ৫ পাউন্ড (চেলসি ফুটবল ক্লাব) পর্যন্ত।
এবার আর্সেনালকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে গোটা ব্যাপারটার একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা যাক। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ক্লাবটি ম্যাচ ডে টিকিট, খাবারদাবার ও অন্য সবকিছু বিক্রি করে মোট আয় করেছিল ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
তাহলে বুঝতে পারছেন তো, ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবদের জন্য ম্যাচ ডে-র বিক্রিবাট্টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
স্টেডিয়াম ভাড়া ও ট্যুর
ফুটবল মৌসুম চলাকালীন প্রতিটি ক্লাবের জন্য নিজেদের স্টেডিয়ামে সপ্তাহে বিভিন্ন লিগের খেলা মিলিয়ে ম্যাচ ডে তো থাকে এক দিন বা সর্বোচ্চ দুই দিন। আর খেলোয়াড়দের ট্রেনিংয়ের জন্য রয়েছে আলাদা গ্রাউন্ড। তাহলে ভাবছেন, ম্যাচ ডে-র বাইরে সপ্তাহের বাকি পাঁচ-ছয় দিন স্টেডিয়ামগুলো খালি পড়ে থাকে? মোটেই না। আকারে ও অর্জনে বড় ক্লাবগুলো ওই পাঁচ-ছয় দিনেও স্টেডিয়ামকে ভাড়া খাটিয়ে অনেক উপার্জন করতে পারে।
সাধারণত ব্যক্তিগত আয়োজন, স্টেডিয়াম ও মিউজিয়াম ট্যুর, এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও বিভিন্ন প্যাকেজে স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়ে থাকে ক্লাবগুলো। বিশেষ করে স্যান সিরো (ইন্টার মিলান ও এসি মিলান), দ্য ইতিহাদ (ম্যানচেস্টার সিটি) এবং ক্যাম্প ন্যু (ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা) বিয়ের ভেন্যু হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
তা ছাড়া অনেক মানুষেরই তো স্বপ্ন থাকে পছন্দের ক্লাবের হোম গ্রাউন্ডে কোনো একদিন ফুটবল পায়ে দাপিয়ে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে। ব্যাংক ব্যালান্স যাঁদের ভালো রয়েছে, তাঁদের এই স্বপ্নপূরণেরও ব্যবস্থা রেখেছে কিছু কিছু ক্লাব, যদিও সংখ্যায় তারা খুব বেশি নয়।
কোন ক্লাব কত বড়, তার ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় সেই ক্লাবের হোম গ্রাউন্ডকে ফুটবল খেলার লক্ষ্যে ভাড়া নেওয়ার খরচ কেমন হবে। যেমন আপনি যদি নরউইচ সিটির ক্যারো রোডে খেলতে চান, তাহলে আপনার খসবে মাত্র হাজার দেড়েক পাউন্ড। কিন্তু যদি আপনি দ্য এমিরেটসে খেলতে চান, তাহলে আপনাকে গুনতে হবে পুরো ৩০ হাজার পাউন্ড!
ইতিপূর্বে কনসার্টের জন্যও ভাড়া দেওয়া হতো অনেক স্টেডিয়াম। যেমন সাম্প্রতিক অতীতে এ কাজ করেছে স্টেডিয়াম অব লাইট (সান্ডারল্যান্ড ফুটবল ক্লাব) ও মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম (ওয়েলস জাতীয় দলের স্টেডিয়াম)। কিন্তু যেহেতু সেখানে প্রচুর লোকসমাগম হতো, তাই তাদের পদতলে পিষ্ট হয়ে মাঠের অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে যেত যে পরের ম্যাচ ডে-তে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর খেলোয়াড়দের অবস্থা নাজেহাল হতো। এ কারণে বর্তমানে প্রচুর লোকের আগমন ঘটবে এমন আয়োজনের জন্যও স্টেডিয়াম ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।
এখানে আরেকটি কথা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, কোনো স্টেডিয়ামের যদি ছাদ থাকে, তাহলে সেটি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য খুবই আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু যেহেতু ইউরোপের অধিকাংশ ফুটবল স্টেডিয়ামেরই ছাদ থাকে না, সে কারণে ক্লাবগুলো তুলনামূলক কম আয় করে এ খাত থেকে।
মার্চেন্ডাইজ বিক্রি
যেহেতু ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবগুলো খুবই জনপ্রিয়, তাই তাদের প্রায় সবারই রয়েছে নিজস্ব দোকান ও অনলাইন শপ, যেখানে তারা বিক্রি করে থাকে নিজস্ব মার্চেন্ডাইজ, মেমোরাবিলিয়া ও স্যুভেনির।
এগুলো হয়তো খুব জরুরি বিষয় নয়। তবু ক্লাবের পাঁড় সমর্থকদের কাছে এগুলোর রয়েছে অন্য রকম আবেদন। আপনি যদি নিজে কোনো দলের সমর্থক হয়ে থাকেন, তাহলে আশা করি বিষয়টি বুঝবেন।
তো সে জন্যই, অনেক ভক্ত-সমর্থকই চান, নিজের পছন্দের ক্লাবের থিমওয়ালা স্নো গ্লোব, স্কার্ফ, স্টেশনারি বা অন্য যেকোনো শোপিস কিনে নিজের সংগ্রহে রেখে দিতে। আর তাঁদের এই চাহিদাই পরিণত হয়েছে ক্লাবগুলোর অন্যতম আয়ের উৎসে।
স্পনসরশিপ ডিল
কয়েক দশক ধরে ইউরোপের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফুটবল ক্লাবগুলো। একেকটি ফুটবল ক্লাবের প্রতি জনসাধারণের যে পরিমাণ ঔৎসুক্য ও ভালোবাসা, তা প্রায় নজিরবিহীন। তাই ফুটবল ক্লাবগুলোর প্রতি মানুষের এই মনোযোগকেই নিজেদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গে রূপান্তরিত করেছে বড় বড় করপোরেশনগুলো।
প্রায় প্রতিটি ফুটবল ক্লাবই খেলার সময় কিংবা ট্রেনিংয়েও স্পনসর্ড কিট পরে থাকে। যদি এর পেছনের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত কারণ খুঁজতে যাওয়া হয়, তাহলে ব্যাপারটি যে কতটা যুক্তিসঙ্গত ও অবশ্যম্ভাবী তা প্রমাণিত হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের কথাই ধরা যাক। ২০১৯-২০ মৌসুমে তারা যে হোম কিটটি পরেছে, সেটির স্পনসর ছিল তিনটি পৃথক কোম্পানি: অ্যাডিডাস, শেভ্রোলে ও কোহলার।
ব্যাপারটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রতি মৌসুমে অ্যাডিডাসের কাছ থেকে ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড, শেভ্রোলের কাছ থেকে ৬৪ মিলিয়ন পাউন্ড এবং কোহলারের কাছ থেকে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড পেয়ে থাকে।
কেন এই কোম্পানিগুলো এত অর্থ ব্যয় করে ক্লাবটির পেছনে? সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে ক্লাবটির নিজেরই করা ২০১৯ সালের একটি জরিপের ফলাফল থেকে। সেখানে হিসাব করে দেখানো হয় যে বিশ্বব্যাপী তাদের ভক্ত-সমর্থক ও অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন। তাই স্পনসর কোম্পানিগুলো ক্লাবটির কিটে নিজেদের লোগো ব্যবহারের মাধ্যমে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারছে ওই ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষের কাছে। জানান দিতে পারছে নিজেদের অস্তিত্বের, চালাতে পারছে প্রচারণা। অর্থাৎ খুব ভালোভাবেই উশুল হচ্ছে তাদের পয়সা, তাই না?
টি-শার্ট বিক্রি
টি-শার্ট বা জার্সি বিক্রির মাধ্যমে কারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, এ নিয়ে সব সময়ই একধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে। অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন যে টি-শার্ট বিক্রি করে ফুটবল ক্লাবগুলোই হয়তো সর্বাধিক লাভবান হয়। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সে রকম নয়।
টি-শার্টের ডিলের ধরন অনেকটা এমন যে একটি স্পনসরিং কোম্পানি একটি ক্লাবকে লাইসেন্সিং ফি হিসেবে অর্থ প্রদান করবে, যার মাধ্যমে তারা পেয়ে যাবে নিজেদের শার্টে ওই ক্লাবের লোগো ব্যবহারের অনুমতি।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বা জুভেন্টাসের কথা। উভয় ক্লাবেরই স্পনসর অ্যাডিডাস। স্রেফ তাদের লোগো ব্যবহার করার মাধ্যমেই অ্যাডিডাস পেয়ে যায় তাদের টি-শার্ট বিপুল পরিমাণে বিক্রির নিশ্চয়তা। কিন্তু তারপরও দিনশেষে টি-শার্টগুলোর মালিকানা থাকে অ্যাডিডাসেরই হাতে। তাই তারা ক্লাবগুলোকে যে পরিমাণ অর্থ দেয় লাইসেন্সিং ফি হিসেবে, নিজেরা আয় করে তার চেয়েও অনেক বেশি।
কিন্তু হ্যাঁ, ক্লাবগুলো যে ঠকছে, তা-ও নয়। প্রাথমিক লাইসেন্সিং ফির বাইরেও প্রতিটি টি-শার্ট বিক্রির বিপরীতেই তারা পেয়ে যায় একটি নির্দিষ্ট কমিশন। সাধারণত সেটি হয়ে থাকে লাভের ৭ দশমিক ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে।
২০১৮ সালে জুভেন্টাস ৯৯ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ট্রান্সফারের পেছনে। সেই ট্রান্সফারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাডিডাস পেছনে রোনালদোর নাম লেখা প্রায় ৫ লক্ষ ২০ হাজার রেপ্লিকা জার্সি বিক্রি করে। ধারণা করা যায়, ওই এক দিনে তারা প্রায় ৪৮ মিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের জার্সি বিক্রি করেছিল।
অনেকেই সে সময়ে বিশ্বাস করেছিল, কেবল টি-শার্ট বিক্রির মাধ্যমেই একপর্যায়ে জুভেন্টাস ট্রান্সফার ফির সবটুকু তুলে ফেলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রোনালদোর টি-শার্ট বিক্রি করে ওই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রাপ্ত মোট ৪৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বদলে জুভেন্টাসের প্রাপ্তি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের মধ্যে।
কিন্তু তারপরও টি-শার্ট স্পনসরশিপের ফলে লাভবান হয় দুই পক্ষই, অর্থাৎ ফুটবল ক্লাব ও স্পনসরিং কোম্পানিগুলো। আপনি হয়তো ভাবছেন, স্পনসরিং কোম্পানির কাছে লাইসেন্স বিক্রি না করে ফুটবল ক্লাবগুলো নিজেরাই সরাসরি টি-শার্ট বিক্রি করে না কেন। এর কারণ হলো, টি-শার্ট বিক্রির ব্যবসা খুবই বিস্তৃত, যেখানে রয়েছে অ্যাডিডাস বা নাইকির আধিপত্য। ফুটবল ক্লাবগুলোর সেই সক্ষমতা নেই যে তারা প্রতিবছর কোটি কোটি টি-শার্ট প্রিন্ট করবে, আবার সেগুলো বিশ্বব্যাপী বিতরণের ঝক্কিও সামলাবে। কিন্তু অ্যাপারেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জুটি বেঁধে তারা কত সহজেই না বিশ্বের প্রায় সব দেশের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যেতে পারছে এবং একটি থোক অঙ্কের পাশাপাশি প্রতিটি বিক্রির ওপর কমিশনও পাচ্ছে!
ট্রান্সফার মার্কেট
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে যে টাকার ছড়াছড়ি, তা সবচেয়ে ভালোভাবে এবং সবচেয়ে ঘন ঘন বোঝা যায় ট্রান্সফার মার্কেটের কারণেই। প্রতিবার ট্রান্সফার উইন্ডো খোলা হলেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন নামজাদা খেলোয়াড়ের দলবদলের গুঞ্জন। সেই সঙ্গে উচ্চারিত হয় বিস্ময়কর সব অঙ্ক। যদিও শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ গুঞ্জনই নিছক ভুয়া খবরে পর্যবসিত হয়, তারপরও দু-একটি এমন দলবদলও ঠিকই দেখা যায়, যা সম্পন্ন করতে বড় দলগুলো ব্যয় করে চোখ কপালে তোলার মতো অর্থ এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দলবদলের ক্ষেত্রে ট্রান্সফার ফির পরিমাণটা হু হু করে বাড়ছে।
২০০৪ সালে জিনেদিন জিদান যখন জুভেন্টাস থেকে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমালেন, তখন তাঁর পেছনে খরচ হয়েছিল ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড। সেটিই ছিল তৎকালীন সর্বকালের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি।
২০০৯ সালে যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে সেই রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরেই ভিড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, তখন অর্থের পরিমাণটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পুরো ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড!
আরও আট বছর বাদে, ২০১৭ সালে নেইমার যখন বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব থেকে গেলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে, তখন তাঁর পেছনে খরচ হয় ১৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড।
ধারণা করা যেতেই পারে, ভবিষ্যতে ট্রান্সফার মার্কেটে মহাতারকাদের পেছনে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে এবং অনুমেয়ভাবেই তা এক অননুমেয় পর্যায়ে উপনীত হবে।
ফিফার দেয়া তথ্যমতে, শুধু ২০১৯ সালেই বিশ্বব্যাপী ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটে খরচ হয়েছে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন পাউন্ড। বলাই বাহুল্য, এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সিংহভাগই ঘোরাফেরা করেছে ইউরোপে।
তো এবার দেখা যাক, খেলোয়াড়দের দলবদলের ট্রান্সফার ফি কীভাবে সাহায্য করে ইউরোপিয়ান ক্লাবদের আয় বৃদ্ধিতে।
প্রতিটি খেলোয়াড়ের সঙ্গেই ক্লাবের নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য চুক্তি থাকে। ওই নির্দিষ্ট সময়সীমা অবধি খেলোয়াড়টির মালিকানা ক্লাবের দখলে। কিন্তু চুক্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই খেলোয়াড়টি তাঁর বর্তমান ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। এক বা একাধিক নতুন ক্লাবও তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর যে রিলিজ ক্লজ রয়েছে কিংবা তাঁর বর্তমান ক্লাব তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দাবি করছে, তাঁকে দলে ভেড়াতে ইচ্ছুক ক্লাবকে সেই অর্থ ব্যয় করতে হবে।
তবে অবশ্যই ট্রান্সফার ফির সময় ব্যয়িত অর্থের বেশির ভাগ খেলোয়াড়টির বর্তমান ক্লাব পেলেও সব ক্ষেত্রে পুরোটাই তারা পায় না। কিছু অংশ খেলোয়াড়টি নিজেও পান। এ ছাড়াও এজেন্ট ফি ও লিগ্যাল ফির পেছনেও কিছু অর্থ ব্যয় হয়।
বড় ক্লাবগুলো সাধারণত তাদের তুরুপের তাস, অর্থাৎ সেরা খেলোয়াড়দের খুব সহজে হাতছাড়া করতে চায় না। তাই যদি শেষ পর্যন্ত অর্থের কাছে নতিস্বীকার করে দলের সেরা খেলোয়াড়কে তারা ছাড়তে বাধ্য হয়, তবু খুব বেশি পরিমাণ আর্থিক দেনা না থাকলে কোনো ক্লাবই নিজেদের তারকা ফুটবলারদের বিক্রি করে দেওয়াকে মূল আয়ের উৎস হিসেবে ভাবতে চায় না।
তবে ট্রান্সফার মার্কেটে নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দিয়ে আয় করতে ইচ্ছুক অনেক ক্লাবও রয়েছে। বিশেষত ইউরোপের কিছু অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ক্লাব এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ।
যেমন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ভ্যালেন্সিয়া, এএস মোনাকো ও আয়াক্সের মতো দলগুলো অল্প বয়সে, স্বল্প মূল্যে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের কিনে তাঁদের গ্রুম করে থাকে এবং যখন ওই খেলোয়াড়েরা তাঁদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাতে শুরু করে, তখন ক্লাবগুলো তাঁদের উচ্চমূল্যে অন্য বড় কোনো ক্লাবের কাছে বেচে দেয়। এভাবে নিজেদের বিশ্বব্যাপী সমর্থকগোষ্ঠী, বিপুল অঙ্কের স্পনসরশিপ প্রভৃতি না থাকলেও কেবল খেলোয়াড় বিক্রি করেই এসব ক্লাব লাভ করতে পারে, টিকিয়ে রাখতে পারে নিজেদের অস্তিত্ব।
টিভি সম্প্রচার স্বত্ব
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিভি সম্প্রচার স্বত্ব ইউরোপের ক্লাবগুলোর জন্য নিশ্চিত আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যেমন ইপিএলে ব্যাপারটি এভাবে কাজ করে যে ইপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে লিগের সকল ম্যাচের টিভি ডিস্ট্রিবিউশনের স্বত্ব। সেই স্বত্ব আবার তারা তাদের কাছে সর্বোচ্চ বিড করা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। স্কাই স্পোর্টস, বিটি স্পোর্টস এবং স্ট্রিমিং সাইট ডিএজেডএনের মতো আউটলেটগুলো সচরাচর সর্বোচ্চ বিডার হয়ে থাকে।
সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করার পর প্রাপ্ত অর্থ ইপিএল ভাগ করে দেয় লিগে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে সব ক্লাব যে সমান অর্থ পায়, তা কিন্তু না। কোন ক্লাব কত ভিউয়ার টানল, সেই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে অর্থ ভাগাভাগি হয়। ভিউয়ার টানার বিষয়টি আবার দুটি জিনিসের ওপর নির্ভর করে: একটি ক্লাবের জনপ্রিয়তা কতটুকু এবং তাদের মাঠের পারফরম্যান্স কেমন।
২০১৮ সালে ইপিএল ২০১৯-২২ সময়কালের জন্য প্রতি মৌসুম ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন পাউন্ড দরে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেছে। সুইস র্যাম্বলের করা হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে সেবারের লিগজয়ী লিভারপুল আয় করেছে টিভি স্বত্ব থেকে ১৩৯ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ড। অপর দিকে লিগে একদম তলানিতে থাকা নরউইচ সিটি আয় করেছে ৯২ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড।
চলুন দেখা যাক ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের টিভি সম্প্রচার স্বত্বের মূল্যমান কেমন:
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইংল্যান্ড): ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন পাউন্ড
লিগ ওয়ান (ফ্রান্স): ১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন পাউন্ড
বুন্দেসলিগা (জার্মানি): ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন পাউন্ড
লা লিগা (স্পেন): ১ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন পাউন্ড
সিরি এ (ইতালি): ৮৬২ মিলিয়ন পাউন্ড
প্রাইজ মানি
এতক্ষণ ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর আয়ের উৎস হিসেবে যেগুলোর নাম উল্লেখ করেছি, সেগুলোতে দলগুলোর মাঠের পারফরম্যান্সের প্রভাব রয়েছে বটে, কিন্তু কোনোটিই সরাসরি ও সম্পূর্ণরূপে মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে ব্যতিক্রম প্রাইজ মানি। কোনো লিগে কোন দল কেমন খেলল ও কী ফল করল, তার ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় যে তারা ঠিক কী পরিমাণ প্রাইজ মানি বা অর্থ পুরস্কার লাভ করবে।
এই ক্যাটাগরির শর্তাবলি খুবই সোজাসাপটা। যে ক্লাব মাঠে যত ভালো খেলবে এবং তার দরুণ যত বেশি লিগ বা টুর্নামেন্টে জয়লাভ করবে, তারা প্রাইজ মানি হিসেবে তত বেশি অর্থ পাবে।
এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, প্রাইজ মানি পাওয়ার জন্য কোনো প্রতিযোগিতার শিরোপাই জিততে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কিন্তু নেই। সাধারণত লিগ প্রতিযোগিতাগুলোয় যে ক্লাব টেবিলের যত ওপরে স্থান পাবে, সেই ক্লাবের প্রাইজ মানি তত বেশি হবে। অন্যদিকে নকআউট প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো দল প্রতিযোগিতার যত ওপরের রাউন্ডে উঠবে, তাদের প্রাপ্ত প্রাইজ মানির পরিমাণ তত বাড়বে।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ হলো ইউরোপের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রতিযোগিতা। ইউরোপিয়ান বিভিন্ন লিগের শীর্ষ দলগুলো এখানে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। শুধু অংশগ্রহণ করলেই প্রতিটি ক্লাব বেশ বড়সড় অর্থ আয় করে। এরপর যে ক্লাবের ফলাফল যত ভালো হয়, প্রাইজ মানিও তত বেশি হয়।
তবে আরেকটি ব্যাপারও উল্লেখ করা জরুরি যে প্রতিটি ক্লাব প্রতিযোগিতায় তাদের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে কিছু বোনাসও পায়। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে জয়ী তথা চ্যাম্পিয়ন দলটিই যে সর্বোচ্চ বোনাস পাবে, এমন নয়। রানার্সআপ দলটিও কিছু ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন দলের চেয়ে বেশি পারফরম্যান্স বোনাস পেতে পারে।
২০১৯-২০ মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে লা লিগায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান লাভ করা দলগুলো প্রাইজ মানি পায় যথাক্রমে ৪০ ও ৩৮ মিলিয়ন ইউরো। ইপিএলে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী দল পায় যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৫ ও ৩৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন পাউন্ড। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে চ্যাম্পিয়ন দল পায় ৩৪ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ইউরো এবং রানার্সআপ দল পায় ৩০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ইউরো। উয়েফা ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল পায় ১১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ইউরো এবং রানার্সআপ দল পায় ৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ইউরো। (এখানে ইপিএলের প্রাইজ মানি পাউন্ডে এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতার প্রাইজ মানি ইউরোতে উল্লেখ করা হয়েছে।)
শেষ কথা
এতক্ষণ সামগ্রিকভাবে ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবগুলো প্রধানত কোন কোন উৎস থেকে আয় করে থাকে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ভাববেন না যে এগুলোর বাইরে তাদের আর কোনো আয়ের উৎস নেই। উল্লিখিত উৎসগুলোর বাইরেও ক্লাবগুলো, বিশেষ করে শীর্ষ ক্লাবগুলো আরও নানাভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকে।
এসব অর্থের উৎসের বেশির ভাগই যেহেতু সরাসরি মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তাই অনেকেরই ধারণা হতে পারে যে ঘরোয়া লিগে বা চ্যাম্পিয়নস লিগে কোন ক্লাব কেমন করল, তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আরেকটু তলিয়ে ভাবলে বুঝতে পারবেন, কিছু না, অনেক কিছুই যায়-আসে।
ফুটবল ক্লাবগুলোর প্রাণ হলো তাদের ভক্ত-সমর্থক এবং সেই ভক্ত-সমর্থকেরা তাঁদের মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসে তাদের সাফল্য দেখার আশাতেই। যদি কোনো ক্লাব তার ভক্ত-সমর্থকদের দিনের পর দিন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে সেই ক্লাবের অন্যান্য আয়ের উৎসও সংকুচিত হয়ে আসতে বাধ্য।
মোদ্দাকথা, ভক্ত-সমর্থকেরা আছে বলেই ইউরোপিয়ান ফুটবল-অর্থনীতির আজ এই ভরভরন্ত দশা। যদি কোনোদিন ভক্ত-সমর্থকেরা মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে ইউরোপিয়ান ফুটবল-অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।