রেসলিং থেকে চলচ্চিত্র তারকা
জনপ্রিয় অভিনেতা ডোয়াইন জনসন। তবে কয়েক বছর আগেও প্রো-রেসলার হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন তিনি। 'দ্য রক' নামে দীর্ঘদিন ডব্লিউডব্লিউই দাপিয়ে বেড়ানোর পর সিনেমায় নাম লেখান জনসন। তার পথ ধরে সিনেমা অঙ্গনে পা রাখেন জন চেনা, ডেভ বাতিস্তার মতো রেসলাররা। যদিও তাদের কেউই ডোয়াইন জনসনের মতো সাফল্য পাননি।
ডোয়াইন জনসনের রুপালি পর্দায় অভিষেক ইউনিভার্সাল পিকচার্সের দ্য মামি রিটার্নস সিনেমার মাধ্যমে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি তাকে নিয়ে বানায় দ্য স্করপিয়ন কিং। তাতেই বাজিমাত। এর প্রায় এক দশক পর একই প্রতিষ্ঠানের ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজের পঞ্চম কিস্তিতে (ফাস্ট ফাইভ) অভিনয় করে ফের দর্শকের মন জিতে নেন দ্য রক।
এক সাক্ষাৎকারে ডোয়াইন জনসন বলেছিলেন, তিনি সব সময়ই সিনেমায় অভিনয় করতে চাইতেন। শুধু যে অভিনয় করতে চাইতেন, তা নয়; সিনেমাজগতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার ছিল।
দ্য রকের সেই আকাঙ্ক্ষার অনেকটাই পূরণ হয় ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতার স্বীকৃতি পেয়ে। তার ব্যবসাবুদ্ধিও অত্যন্ত ক্ষুরধার। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের ছবির প্রচারণা চালানোর জন্যও জনসন আলাদাভাবে মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক নেন।
ডোয়াইন ডগলাস জনসনের নানা পিটার মাইভিয়া ও বাবা রকি জনসন দুজনেই ছিলেন পেশাদার রেসলার। তাই পারিবারিকভাবেই রেসলিংয়ের আবহে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তবে প্রথমে জনসনের রেসলার হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন ফুটবলার হতে। কিন্তু চোটের কারণে একসময় ফুটবল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সে সময় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলেন জনসন।
ফুটবলে ব্যর্থ হয়ে জনসন স্থির করলেন প্রো-রেসলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন। ১৯৯৬ সালে 'রকি মাইভিয়া' নামে অভিষেক হয় তার পেশাদার রেসলিংয়ে। অল্প দিনের মধ্যেই দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ডব্লিউডব্লিউএফের (ডব্লিউডব্লিউইর পূর্বনাম) ইতিহাসে প্রথম 'তৃতীয় প্রজন্মের রেসলার' উপাধি পান জনসন।
১৯৯৮ সাল থেকে জনসন নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন দ্য রক নামে। ওই বছরই ডব্লিউডব্লিউএফ চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এরপর আর প্রো-রেসলিংয়ের জগতে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
২০০০-এর দিকে হলিউডযাত্রা করেন দ্য রক। দ্য মামি রিটার্নস ও দ্য স্করপিয়ন কিং ছবির পর কয়েক বছর সাফল্য পাননি তিনি। তবে তার হলিউড ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ফাস্ট ফাইভ ছবিটি। ডোয়াইন জনসনের উপস্থিতির ফলেই ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্রাঞ্চাইজ নিয়ে নতুন করে উন্মাদনা শুরু হয় দর্শকদের মধ্যে। এরপর তিনি একে একে অভিনয় করেন স্যান আন্দ্রেস, দ্য ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস, জুমানজি, র্যাম্পেজ, স্কাইস্ক্র্যাপার-এর মতো ব্যবসাসফল ছবিতে।
ডোয়াইন জনসন যে কেবল সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা, তা নয়। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে তিনি জায়গা করে নেন টাইম মাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায়ও।
বর্তমানে হলিউডে ব্যস্ত জীবন পার করছেন জনসন। মাঝখানে কয়েকবার রেসলিংয়ের মঞ্চে ফিরে গেলেও স্থায়ী হননি। তার মনোযোগ এখন অভিনয় ক্যারিয়ারের দিকেই। বলা হয়, বর্তমানে কোনো সিনেমায় ডোয়াইন দ্য রক জনসনের উপস্থিতি মানেই বক্স অফিসে সাফল্যের নিশ্চয়তা।
স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন
আসল নাম স্টিভেন জেমস অ্যান্ডারসন। সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসলারদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে তার নাম। ১৯৯০-এর দশকে অ্যান্টিহিরো হিসেবে বিপুল জনপ্রিয় হন। অ্যাটিচিউড এরার পোস্টার বয়ও হন তিনি।
প্রতিপক্ষ রেসলারের কথার মাঝখানে 'হোয়াট' বলে বাধা দেওয়ার প্রচলন শুরু করেন স্টিভ অস্টিন। এই শব্দটি দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
অস্টিন ১৯টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেমে জায়গা করে নেন। এ ছাড়া বেশ কিছু ছবিতেও অভিনয় করেছেন স্টিভ অস্টিন।
জন চেনা
পুরো নাম জন ফিলিক্স অ্যান্টনি চেনা। ১৬ বারের ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন জন চেনা একাধারে রেসলার, অভিনেতা ও র্যাপার। 'মাই টাইম ইজ নাউ' থিম সংয়ের সঙ্গে রিংয়ে ওঠেন তিনি। এই গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন।
এ ছাড়া চেনা অনেক জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। মেইক-আ-উইশ ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। মেইক-আ-উইশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা পূরণ করেছেন জন চেনা।
জন চেনা বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সুইসাইড স্কোয়াড। এ ছাড়া সামনে পিসমেকার নামক টিভি সিরিজ নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন তিনি।
হাল্ক হোগান
পেশাদার রেসলিং জগতের প্রথম সুপারস্টার হাল্ক হোগান। তার আসল নাম টেরি ইউজিন বোলে।
হোগানের পেশাদার রেসলিং ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালে ডব্লিউডব্লিউএফে নাম লেখানোর পর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। টানা দুবার (১৯৯০ ও ১৯৯১) 'রয়্যাল রাম্বল' ম্যাচ জেতা প্রথম রেসলার হাল্ক হোগান।
হাল্ক হোগান ছয়বারের ডব্লিউডব্লিউএফ চ্যাম্পিয়ন এবং ছয়বারের ডব্লিউসিডব্লিউ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। ২০০৫ সালে তিনি ডব্লিউডব্লিউই হল অব ফেমে জায়গা করে নেন।
রেসলিংয়ের পাশাপাশি হোগান অভিনয়ও করেছেন। ১৯৮২ সালে রকি ৩ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। নো হোল্ডস বারড, মি. ন্যানি-সহ বেশ কিছু ছবিতে দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া হোগান নোজ বেস্ট, থান্ডার ইন প্যারাডাইজ-সহ কিছু টেলিভিশন শোতেও কাজ করেছেন হোগান।
বাতিস্তা
বাতিস্তা ওরফে ডেভিড মাইকেল বাতিস্তা জুনিয়র একাধারে জনপ্রিয় রেসলার, অভিনেতা, মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট এবং বডিবিল্ডার।
বাতিস্তার রেসলিং-জীবনের শুরু ১৯৯৯ সালে। ২০০২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রিংয়ের জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে চারবার ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ ও দুবার ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। ২০০৫-এর 'রয়্যাল রাম্বল' জিতে রেসলম্যানিয়া ২১-এর মূল ইভেন্ট করেন তিনি। সেটি ছিল ডব্লিউডব্লিউইর ইতিহাসের সে সময়ের সর্বোচ্চ আয় করা ইভেন্ট। ২০১৮ সালে তিনি রেসলম্যানিয়া ৩৫-এ ট্রিপল এইচের সঙ্গে হেরে রেসলিং থেকে অবসর নেন।
২০০৬ সালে বাতিস্তা অভিনয় শুরু করেন। দ্য ম্যান উইথ দ্য আয়রন ফিস্ট, জেমস বন্ড সিরিজের স্পেক্টার, ব্লেড রানার ২০৪৯-সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে বাতিস্তা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স-এর ড্র্যাক্স চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি, গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ২ এবং অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার ছবিতে তিনি এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ব্রুনো সামারিটানো
ইটালিয়ান-আমেরিকান ব্রুনো লিওপোল্ডো সামারিটানো ছিলেন পেশাদার রেসলিংয়ের প্রথম চ্যাম্পিয়ন। এগারো বছরের বেশি সময় ধরে ডব্লিউডব্লিউএফ ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট নিজের দখলে রাখেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন হন টানা আটবার।
১৯৩৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্রুনো ক্যারিয়ারের শুরুতে খ্যাতি পেয়েছিলেন 'দ্য ইটালিয়ান স্ট্রংম্যান' ও 'দ্য স্ট্রংগেস্ট ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে। পরে তিনি 'দ্য লিভিং লেজেন্ড' নামে খ্যাতি পান।
ব্রুনো সামারিটানো সর্বকালের সেরা পেশাদার রেসলারদের একজন হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৫৯ সালে রেসলিংয়ের রিংয়ে তার অভিষেক হয়। সে ম্যাচে প্রতিপক্ষ দিমিত্রি গ্র্যাবোভস্কিকে মাত্র ১৯ সেকেন্ডে ম্যাটে শুইয়ে 'পিন' করে ফেলেন তিনি। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ।
পেশাদার রেসলিং-জগতে ড্রাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন তিনি। ব্রুনো সামারিটানো ২০১৮ সালে মারা যান।