বাবার সাথে কথোপকথন
প্রিয় বাবা,
সন্তানের প্রতি শুধু মায়ের নয়, বাবার ভালোবাসা, করুণা ও মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন।
আপনিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। পৃথিবীতে একটি মেয়েকে তার বাবার চেয়ে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারবে না, তাই না, বাবা?
বাবা, যুঁই বলে ডাকেন না ১৫ আগস্ট দুই বছর হয়ে গেল। ২০২০-এ আপনার জন্মদিনের দুদিন আগে ১৭ আগস্ট আপনি চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে অনন্তলোকে যাত্রা করলেন। এখন আপনি আর আমার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন্ন হন না। আস্তে আস্তে আম্মার অনুপস্থিতি অভ্যাস করছিলাম আপনাকে আঁকড়ে ধরে। সকালের নাশতা, দুপুর আর রাতের খাবার আপনার সাথেই। আপনার সাথে হাসপাতাল যাওয়া, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া, ঝগড়া, অভিমান, আপনার সাথে থাকতে থাকতে সময় কখন চলে যেত, টেরও পেতাম না। আমার জীবনটা এই ছকেই বাঁধা ছিল। এখন সকালের নাশতা, দুপুর আর রাতের খাবার একসাথে নানাবিধ গল্প করতে করতে খাওয়া হয় না। ফোন করে বলেন না, 'যুঁই সাড়ে ১০টা বাজে, নাশতা খেতে আয়, অপেক্ষা করছি।' বাসায় সবকিছুই আগের মতোই আছে। আপনার নেবুলাইজার, পালস অক্সিমিটার, বাইপাপ মেশিন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। এরা ছিল ২০১৩ সাল থেকে ১৩ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত আপনার নিত্যদিনের সহচর।
বাবা, আমার কাছে আপনি ছিলেন আমার বন্ধু আর আমার ছেলে। আপনি ছিলেন আমার সুপারহিরো। আপনার কি মনে পড়ে, আপনাকে যখন বকা দিতাম, রাগ করতাম, বলেই নিতাম বাবা আমি কিন্তু এখন আপনার মা হয়ে যাচ্ছি। এখন আমি আপনার মেয়ে না। আপনি আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিতেন আর বলতেন, 'তোর রাগ খুব বেশি...।' বাবা আমি আর আগের মতো রাগী নাই। আপনার সাথে গত দুই বছর কথা হয় না। আপনি কী জানেন, আপনার চলে যাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে সুজাতও চলে গেছে। আপনি, আম্মা আর সুজাত না খুব স্বার্থপর। আপনারা আমাকে একা রেখে চলে গেলেন।
আমি আর কার সাথে রাগ করব? আম্মা ২০১৭ সালে চলে যাবার পর আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন আপনি ছিলেন, আপনি সেটা জানতেন। তারপরেও চলে গেলেন। আপনি ছিলেন আমার পৃথিবী, জীবনের শ্বাসপ্রশ্বাস। শ্বাস ছাড়া কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? অথচ আমি এখনো বেঁচে আছি!
আমার শরীর খারাপ হলে সব সময় আপনি শঙ্কিত থাকতেন। এখন আর কেউ শঙ্কিত হয় না। আপনি চলে যাওয়ার পর শিখেছি অনেক বাস্তবতা, দেখেছি অনেক নিষ্ঠুরতা। আমার যত আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, গর্ব সব আপনাকে ঘিরে। কত স্মৃতি চোখের সামনে ভাসে। আজকে আপনি ছাড়া আমি অনেক অসহায় বাবা। আপনার সাথে কাটানো সময়ের স্মৃতিগুলো বারবার আমাকে অতীতে নিয়ে যায়। আমি শারীরিকভাবে বর্তমানে বাস করলেও অতীতই আমার বর্তমান। বাবা আমি বাইরে গেলে আপনি ফোন করে জানতে চাইতেন, 'বাসায় আসবি কখন? একা একা ভালো লাগে না।' বাসায় ফিরলে জানতে চাইতেন, দেরি হলো কেন? এখন কেউ আর জানতে চায় না।
আম্মা ২০১৬ সালে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে রোজার পুরো মাসের ইফতারি আমি বানাতাম। বাবা আপনি মাখাতেন মুড়ি। এক মুঠো করে সবাইকে দিতেন। আজকে আপনার মাখানো মুড়ির জন্য এত লালায়িত হব, আগে বুঝিনি। বাবা আপনার আর আম্মার বাসার ইফতারির টেবিল আজকে ১৫ বছর পর খালি। এই প্রথমবার কেউ ইফতারি খেতে বসল না। আর আমি? পাথর হয়ে গেছি। ইফতারি করব, কুটটু হুইলচেয়ার নিজে নিজে চালিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বলল, আম্মু সারা দিন রোজা রেখে কী খাবে, ইফতারি বানাওনি? তুমি কী খাবে? মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে কুটটুকে বললাম, 'বাবু কোনো দিন আমাদের বাসায় আর ইফতারি বানানো হবে না।'
বাবা, একটা ঘটনা মনে করে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। বলব আপনাকে? আপনার দেখাশোনার জন্য আপনার বাসায় দিনেরাতে কয়েকবার আমাকে আসতে হতো। আপনার মনে আছে, ২০২০ সালে আমাদের শেলটেক মনিহার অ্যাপার্টমেন্টের বিল্ডিং নং ২-এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঈদের রাতে একজন আঙ্কেল মারা গিয়েছিলেন। অ্যাপার্টমেন্ট নং ৬ এবং ৮-এ করোনাভাইরাস ঢুকে পড়েছিল। এরপর থেকে আমার জন্য আপনার দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। আপনি বলতেন, 'তুই এতবার আমার এখানে আসিস, তোর কিছু হলে আমাকে কে দেখবে? তোর চিন্তায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।' আমাকে না জানিয়ে আমার সুরক্ষার জন্য আপনি পিপিই কিনে আমাকে দিয়ে বলেছিলেন: 'এটা পরে আসিস, আমি নিশ্চিত হব।' আমি পিপিই দেখে হাসছিলাম আর বলেছিলাম, 'বাবা আমি পিপিই পরব না।' আপনি বলেছিলেন, 'কেন পরবি না, আমার আর তোর সেফটির জন্য পর।' আমি বলেছিলাম, 'আমাকে কেমন লাগবে দেখতে। বাবা আমি আমার ৩ নং বিল্ডিং থেকে আপনার ৭ নং বিল্ডিংয়ে আসব, এতে কী আর এমন হবে?' আপনাকে বলার পর মন খারাপ করেছিলেন। অগত্যা আপনাকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে বলেছিলাম, 'তথাস্তু বাবা আমি পিপিই পরব...।' পিপিই পরার আগে আর খোলার পরে ব্লিচিং পাউডারমেশানো পানি দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে নিতে বলতেন। বাবা, আপনার কানে কানে আজকে একটা কথা বলব? পিপিই পরার পর আমার কেন জানি স্বস্তি হয়েছিল। শুধু আমার জন্যই নয়, সুজাত আর কুটটুর জন্যও কিনে এনেছিলেন। যুথীকেও চিটাগংয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন। বাবা, জানেন কুটটুও আপনার মতো বলে, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, তোমার কিছু হলে আমার দেখাশুনা কে করবে?
বাবা, আমার শরীর খারাপ হলে ছুটে আপনার কাছে চলে যেতাম। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, 'তোর কিছু হলে আমার কী হবে?' আম্মা আর সুজাতও একই কথা বলত। আজকে আমার শরীর অনেক খারাপ হলেও বলার মতো কেউ নাই, 'তোর/তোমার কিছু হলে আমাদের কী হবে, দেখবে কে?' বাবা, আপনি দোয়া পড়তেন আর ফুঁ দিতেন। আমি হাসতাম আর বলতাম, 'কী করেন বাবা?' আপনি বলতেন, 'আমি পীর বংশের ছেলে, তোর দাদা পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে গোরাচাঁদ পীরের খলিফা ছিলেন। দোয়া করলাম তোর শরীর ভালো হয়ে যাবে।'
বাবা, মনে আছে, প্রতিবছর আপনি আর আমি নার্সারি থেকে গাছ কিনে আনতাম। আমরা প্রতি শীতে ফুলের নার্সারিতে যেতাম ফুল কেনার জন্য। আমার বাগান করার পিছনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা আপনি ছিলেন। বাবা, আপনি চলে যাওয়ার পর আজকে আবার ব্যালকনি গার্ডেন করলাম। আপনি নাম দিয়েছিলেন 'ব্যালকনি গার্ডেন'। আপনি বলে দিতেন কীভাবে গাছগুলো ব্য্যলকনিতে সাজিয়ে রাখব। আমি নার্সারিতে আর কখনো যাব না।
গাছগুলো সাজিয়ে রাখার সময় আপনার অভাব এত কষ্ট দিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল দৌড়িয়ে আপনার কাছে চলে যাই। সুজাতও সকালবেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলত, 'যুঁই, তোমার গাছগুলো দেখলে মন ভরে যায়, খুব ফ্রেশ লাগে।' আম্মাও আমার বাগান দেখতে বাসায় আসতেন আর বলতেন, বাহ্, খুব সুন্দর!
আম্মা চলে যাবাব পরে আমার জন্মদিনে সকাল ৮টায় আপনার ফোনকলে ঘুম ভাঙত। আপনি বলতেন, 'হ্যাপি বার্থডে যুঁই...।' আমি ঘুমের ঘোরে বলতাম 'ঞযধহশ ুড়ঁ ইধনধ...।' সকাল ১০.৩০, আপনার বাসায় নাশতার টেবিলে বসলে আপনি ২০০০ টাকা দিয়ে বলতেন, 'টোকেন মানি...।' আমি বলতাম, 'থাক না বাবা, লাগবে না... ।' আপনি বলতেন, 'যত দিন পারি দিতে থাকি...নে না...।' ২০০০ টাকা দেয়ার আমার বাবাটাও আজকে আর নাই।
বাবা, আপনার জীবনের শেষের কয়েকটা বছর ২০১৭-২০২০ সালে আমি আপনাকে ছবি আঁকতে বললে আপনি বিরক্ত হয়ে বলতেন, বিশ্রাম করছি, সময় হলে আঁকব। আমার মাথার কম্পিউটারে সব সেট করা আছে। আমি বলতাম, 'বাবা আর কত বিশ্রাম নিবেন, ছবি না আঁকলে আম্মা অমর হবেন কীভাবে?' বাবা, আপনি তো বলেছিলেন ২০২০ সালে মার্চ মাসে (আম্মা চলে গেছেন ২০১৭) আম্মাকে অমর করে রাখার জন্য ছবি আঁকার প্ল্যান করেছেন? আপনি বলেছিলেন, প্ল্যান করেছি তো, তুলুর (আম্মার ডাক নাম) জন্য আঁকব সাদা ক্যানভাসে, সাদার মধ্যে সাদা ফিগারেটিভ কাজ, তার মধ্যে শাড়ির আঁচলে যেকোনো একটা রংয়ের হালকা ছোঁয়া অথবা শুধু ঠোঁটটা হবে রঙিন। আরও পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াতবিষয়ক একটা সিরিজ করার ইচ্ছা ছিল আপনার।
আমার দিকে তাকিয়ে আপনি বলতেন, আরে চিন্তা করিস না, আমি হচ্ছি সিজন্যাল আর্টিস্ট। আমি আপনার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে ভিজিওলাইজ করতাম আর খুব উত্তেজিত হয়ে বলতাম, বাবা আঁকতে পারলে দারুন হবে কিন্তু, কবে আঁকবেন? বাবা বলতেন, আরে আঁকব, একবার আঁকার মুড চলে আসলে জানিস তো আমি আর থামি না। আমি বলতাম, বাবা, মুড আসবে কবে? বাবা তারপর আপনি উদাস হয়ে বলতেন, তোর আম্মা চলে যাবার পর আর কোনো কিছু ভালো লাগে না। আমি বাবার উদাস মন ডাইভার্ট করার জন্য একটু বিরক্ত নিয়ে বলতাম—বাবা, কেন, আপনি কি জানেন না, জন্ম হলে মৃত্যু তো আসবেই। বাবা বলতেন, যাক ওসব কথা বাদ দে, আমার পায়ে তোর হাত বুলিয়ে দে। আমি একটু বিশ্রাম নেই। তারপরেও আমি বাবাকে বলতাম—আর কত বিশ্রাম নেবেন? বাবা, আপনি তো এখন শুধু বিশ্রাম আর বিশ্রাম নিচ্ছেন! নিয়তির কাছে হার মেনে আপনি অনন্তলোকে চলে গেলেন, যেখান থেকে কেউ কোনো দিন ফেরে না। আমি শুধু স্মৃতিগুলো বয়ে চলেছি।
আমি আরও আপনাকে বলতাম—বাবা, ছবি না আঁকলে সংসার চলবে কেমন করে? মাসে তো আপনার খরচ কম না। কয়েন, কাগজের নোট, কয়েন, কাগজের নোট, ডাকটিকিটের পিছনে তো কম টাকা খরচ করেন না। এগুলো কিনতে হলেও তো টাকা লাগবে। দুদিন আগেও তো খুব উত্তেজিত হয়ে আমাকে ফোন করে বললেন—যুঁই, মুঘল আমলের কয়েকটা স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছি, কিনব? দাম শোনার পর আমি বললাম—বাবা, অনেক দাম, আপনার কিনতে ইচ্ছা করছে? আপনি উদাস গলায় বললেন, ইচ্ছা তো করছেই, তাহলে বাদ দেই, কি বলিস? আমি বললাম—টাকা কার? আপনার; তাহলে অবশ্যই কিনবেন। বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে বললেন—তুই যখন বলছিস কিনেই নিই, মুদ্রাগুলো আমার সামনেই। আমি রাগ করে বললাম—বাবা, তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আপনি বললেন, তোকে জিজ্ঞাসা না করে আমি কি কিছু করি? তা ছাড়া তোরা তো আছিস, আমি ছবি আঁকতে না পারলে তোরা তো আমাকে টাকাপয়সা দিবি, দিবি না?
আমি বলতাম—বাবা, আপনাকে কে কে দেবে আমি জানি না, তবে আমি দিব না। আপনি অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতেন—তুই দিবি না! আমি বলতাম, না দিব না। অথর্ব হয়ে আপনি বিছানায় পড়ে থাকবেন আর ছেলেমেয়ের টাকার ওপর মুখাপেক্ষী হয়ে অপেক্ষা করবেন, কখন আমরা টাকা দিব, সেই দিন যদি আসে, আমি সহ্য করতে পারব না বাবা। আপনি তো কখনো আমাদের মুখাপেক্ষী হননি। সুজাত আমার পাশে থেকে আপনার সাথে আমার ফোন আলাপ শুনে রাগ করত, বলত এভাবে কথা বলো কেন? কষ্ট পাবেন। সুজাত আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলত—আপনি চিন্তা করবেন না, আপনার যা ইচ্ছা কেনেন। আমরা তো আছি। বাবা, আপনি ফোনের ও পাশ থেকে বলতেন—দেখ সুজাত, যুঁই কী বলে? সুজাত বলত, ওর কথা বাদ দেন, ও তো এ রকমই, মুখের ওপর কথা বলে দেয়, নেন যুঁইয়ের সাথে কথা বলেন।
বাবা, মনে আছে, ২০১৪ সাল থেকে লাগাতার আম্মা অসুস্থতার কারণে বারবার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হতেন। আম্মার অসুস্থতা মানসিক দিক দিয়ে আপনাকে একেবারে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল, সেই সাথে আমাদের পরিবারেও নেমে এসেছিল স্তব্ধতা। বাবা আপনাকে সান্ত্বনা কী দিব, আমরাও তো মা হারানোর শোকে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আম্মা যখন ৫৫ বছর একসাথে চলার পর ২০১৭ সালের ১৩ মে আপনার হাত ছেড়ে পরপারে চলে যাওয়ার পর থেকেই আপনার মনটা কেমন এক শূন্যতায় ভরে গিয়েছিল। আম্মার কথা মনে করে, আম্মার অনুপস্থিতি, আম্মার বিচ্ছেদে আপনার চোখ পানিতে ছলছল করত। দেখেছি নীরবে আম্মার জন্য চোখের পানি মুছতেন। ছবি আঁকার স্পৃহা আপনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। আমি ইচ্ছা করে আপনাকে বকা দিতাম। বলতাম আম্মার জন্য এত বিরহ ভালো না, ছবি না আঁকলে সংসার চলবে কী করে? আসলে কথাগুলো বলতাম আপনাকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য না। আমার চোখে ধরা পড়লে বলতাম—কাঁদছেন কেন? আমি আপনার চোখের পানি মুছে দিতাম আর বলতাম বাবা আম্মার জন্য এত ভালবাসা!!! আপনি আমার হাত দুটা চেপে ধরে হাসতেন আর বলতেন এত দিনের বন্ধন; তোর আম্মাকে খুব মিস করি।
বাবা. যখনই আপনি কোনো ছবি আঁকতেন, সবার আগে আম্মাকে দেখাতেন এবং তার মতামত নিতেন। আপনি মনে করতেন ছবি হলো চোখের দেখা। শিল্প দেখার জন্য ব্যাকরণ জানার দরকার নাই। তাই আম্মা কোনো মন্তব্য করলে আপনি তা পরিবর্তন করে ফেলতেন এবং আম্মার মতামতকে খুবই মর্যাদা দিতেন।
আমার সারা জীবন কেটেছে আমার আম্মা আর আপনার সাথে। এমনকি আমার বিয়ের পরেও আমি আর আপনারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। বাবা, আপনার মনে আছে, আমি আর কুটটু ঢাকা থেকে যখন চিটাগং আপনাদের কাছে যেতাম, বাস দেরি হতো আর অনেক রাত হয়ে যেত। আপনি ফুটপাতে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেন। আমার বাবা! আমার সবকিছু আপনার সাথে শেয়ার করতাম। ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়ি, তখন আমি বিবাহিতা। অনেক ছেলে জানত না, খুব বিরক্ত করত। প্রপোজ করত, কবিতা লিখে হাতে গুঁজে দিত। আমি আপনার সাথে শেয়ার করতাম। আপনি আপনার পিয়ন বশর ভাইকে দিয়ে বলে পাঠাতেন আমি কার মেয়ে। আমি সাধারণত ইউনিভার্সিটিতে আপনার পরিচয় দিতাম না। সবার মতো আমিও আপনাকে স্যার বলে ডাকতাম। টাকা লোন নেয়া থেকে শুরু করে আমার জীবনের উত্থান-পতনে আমার ঢাল ছিলেন আপনি। সমস্যার সমাধান মানেই ছিলেন আমার কাছে আপনি, বাবা।
১৯৭৩ সালে প্যারিস থেকে আসার পর আপনার জীবনের প্রথম স্থায়ী চাকরি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অ্যাসিস্টান্ট বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসারের বেতনে সংসার চলে না। কমার্শিয়াল কাজ বা বইয়ের প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন আপনি করতেন না। সংসার চালানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থের জন্য অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে আঁকাআঁকি করতেন। আপনার জগৎ ছিল আম্মা আর আমাদের তিন ভাইবোনকে ঘিরে। আম্মার অসুস্থতার সময় নিজে অসুস্থ হয়েও দিনরাত সেবা করে গেছেন।
বাবা, আপনি বলেছিলেন আপনার শরীরটা মাঝে মাঝে জানান দিচ্ছে 'এলিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ডের' খরগোশের মতো যে বারবার পকেট থেকে ঘড়ি বের করে বলছে—আর বেশি সময় নাই! আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করতেন না। নিয়তিতে বিশ্বাস করতেন। আপনি নিয়ত করেছিলেন ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ওমরাহ হজ পালন করতে পবিত্র মক্কা শরিফ যাবেন। আপনার বিশ্বাস ছিল আল্লাহর কাবাঘর তাওয়াফ করলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করে নিজেকে ধন্য করবেন। এই ছিল আপনার শেষ স্বপ্ন।
শারীরিক দিক থেকে ৮৭ বছর বয়স হলেও মনের দিক থেকে ২৭ বছরের যুবক ছিলেন আপনি, বাবা। তারুণ্যে ভরপুর, প্রাণচঞ্চল্যে এক তাজা যুবক। আপনি ২০-২৫ বছর আগে কয়েকটি মৌলিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে নোটও করেছিলেন। এ ছাড়া ভিন্ন আঙ্গিকে আপনি আত্মজীবনী লিখছিলেন, যা অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর থেকে ১২০০ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতের সামাজিক ইতিহাস লেখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই জন্য বেদ, মহাভারত, রামায়ণ, গীতা এবং নানাবিধ পুরাণ ছাড়াও হিন্দুশাস্ত্র মনু, নারদ, বৃহস্পতি, বিষ্ণু এবং বৌদ্ধশাস্ত্র বশিষ্ঠ, বৌদ্ধায়ন, সুত্ত বিভঙ্গ, অস্পষ্ঠসম্ভা, গৌতম, বৌদ্ধসূত্র, ধর্মপদ, কুলাবগ্গ, মহাবগ্গ ও জাতক অধ্যয়ন করেন। এই গবেষণা করার জন্য সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে বইয়ের দীর্ঘ তালিকা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এই তালিকার বেশির ভাগ বই না পাওয়াতে এই উচ্চবিলাসী গবেষণাটি সম্পন্ন করতে পারেননি। এই জন্য আপনার মনে অনেক দুঃখ ছিল। তবে বাংলার মন্দিরে টেরাকোটাশিল্প, বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের একটি মুদ্রার ওপর নতুন আলোকপাত এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে আপনি মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশী সুলতান গ্রন্থটি রচনা করতে ২-৩ বছর সময় নিয়েছিলেন। আপনি বলতেন, 'পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশী সুলতান ও তৎকালীন সমাজ এই গবেষক পরিচয়ে বেঁচে থাকলে খুশি হবেন। মন্দিরে টেরাকোটাশিল্প মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আপনি ভারতের আইসিসিআরের অর্থায়নে পশ্চিমবঙ্গের ৯টি জেলায় ১৯৯৩ সালে ১২৫টি গ্রাম ও ১৯৯৭ সালে ১৫০টি গ্রামে অনুসন্ধান করেন। এ ছাড়া ২টি ভিন্নধর্মী গবেষণা বৈদিক সংহিতা ও কোরআনভিত্তিক প্রবন্ধ রচনার পরিকল্পনা করেছিলেন কিন্তু নানা কারণে লেখা হয়ে ওঠেনি। এ কারণে আপনার মনে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল।
বাবা, আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আপনার ফুসফুস আর তেমনভাবে কাজ করছে না। কত আর ২৪ ঘণ্টা কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে জীবন ধারণ করা যায়। হৃৎপিণ্ডটাও মাঝে মাঝে জানান দিচ্ছে আর বেশি সময় নাই। আম্মার মৃত্যুশোক এখনো কাঁচা ঘায়ের মতো বুকের ভিতরে ধারণ করে আছি, এখনো শুকায়নি। ২০১৯ সালে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আপনি অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হলেন। জীবনের এই প্রান্তে এসেও বিবিধ শারীরিক অসুবিধা মেনে নিয়েই নিজের কাজের মাধ্যমে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়ার গভীর বিশ্বাস আপনাকে আবিষ্ট করে রাখত। জীবনের অসমাপ্ত ছবি আঁকাআঁকি, ছয়টি মৌলিক গবেষণামূলক কাজ সম্পূর্ণ করার স্বপ্ন হাসপাতালের সিসিইউতে শারীরিক জটিল মুহূর্তেও আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াত। আপনার মনে আছে, ভোর ৪টার দিকে সিসিইউতে আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললাম, কোনো সমস্যা বাবা? বললেন, নাহ, রেজা (ডা. এ কিউ এম রেজা, কার্ডিওলজিস্ট, বাবার ডাক্তার) ফিগারেটিভ কাজ ছাড়া কিছু একটা এঁকে দিতে বলেছে। ও তো হজ করে এসেছে, তাই সুরা ইয়াসিন আঁকব। আপনি ভোর ৪টার দিকে ছবি আঁকা শুরু করলেন। নাকে অক্সিজেন, হাতে পালস অক্সিমিটার এবং ক্যানুলা লাগানো অবস্থায় মহা উৎসাহে আপনি ছবি আঁকলেন একটি তরুণীর প্রতিকৃতি এবং সূরা ইয়াসিন, কোরআন শরিফের হৃৎপিণ্ড। আপনি মনে করতেন সত্যিকারের শিল্পীরা মরণশীল নয়, অবিনশ্বর। আপনি যশ, খ্যাতি ও অর্থের পিছনে ছোটেননি। যশ আর খ্যাতি আপনার পেছনে ছুটে এসেছে। আপনি কখনো অর্থের কাঙাল ছিলেন না। আপনি বলতেন, এই চিত্রশিল্পের পথ ফুলের পাপড়ি বিছানো নয়, দুর্গম কাঁটা বিছানো পথ, যে পথে হাটতে গিয়ে বারবার আপনার পা রক্তাক্ত হয়েছে। যে কারণে যুথী এত ভালো ছবি আঁকার পরও আপনি আর আম্মা ওকে উৎসাহিত করেননি।
বাবা, আজকে ২০২২, তারিখ ১৪ আগস্ট। ২০২০ আজকের তারিখ ১৪ আগস্টেও জানতাম না আপনি ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের জন্য পৃথিবীর মোহ-মায়া ত্যাগ করে অনন্তলোকের পথযাত্রী হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি যখন ২০১৯-এ পরপর দুবার অ্যাপোলো হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলেন। মেডিক্যাল বোর্ড বসল, ডাক্তাররা তখনই আপনার সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে খুব হতাশ হয়েছিলেন। তারা আমাকে ডেকে অনেকক্ষণ চুপ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাই দেখে আপনি বলেছিলেন সব রকম ভালো আর খারাপ রিপোর্ট শোনার জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত। তারা বললেন, স্যার আপনার ফুসফুসের অবস্থা ৬ মাস আগের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট থেকে অনেক খারাপ এবং হার্টের অবস্থাও ভালো না।
বাবা, আপনি তো জানেন, আপনি অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হলে সুযোগ পেলেই বারবার চিটাগং থেকে যুথী এসে আপনার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকত। যামী শারীরিকভাবে না থাকলেও নিউইয়র্ক থেকে আপনার কাছে ফোন করে উদ্বেগজনক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করত—আব্বু, আপনি কেমন আছেন? আমি আপনার সাথে ২৪ ঘণ্টা সিসিইউতে আপনার পাশে থেকে সাহস দিয়ে মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছি। আমার চিন্তাযুক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি বলতেন, নিয়তিই বলে দিবে আমার ভবিষ্যৎ।
বাবা, এখন আপনাকে বলব, সেই অনাকাক্সিক্ষত ভয়ংকর দিনটার কথা। ২০২০, ১৫ আগস্ট; এভারকেয়ার হাসপাতালের (সাবেক অ্যাপোলো) ওয়েটিং রুমে আমি আর যুথী বসে আছি। ডাক্তার ভোর ৬টায় এসে জানাল, স্যারের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সেন্স নেই। বাবা, আমি ডাক্তারকে বললাম, বাবার করোনা টেস্ট রিপোর্ট আসার আগেই আপনারা বাবাকে করোনা ইউনিটে নিয়ে গেলেন। বাবার কিছু হবে না। বাবা ভয় পাচ্ছেন, আমাকে দেখলে বাবা সাহস পাবেন। বাবা জানেন, ডাক্তার আমাকে অনুমতি দিল না। বাবা তখন আমি ডাক্তারকে অনুরোধ করলাম, আপনার কানের কাছে কলেমা পড়ে দিতে। এদিকে যুথী সমানে কেঁদে যাচ্ছে। সুজাতকে ফোন করলাম। বললাম, বাবা হয়তো এবার আর বাঁচবেন না। ডাক্তার কোনো আশা দিচ্ছেন না। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। তুমি বনানীতে কবর রেডি করো। বাবা, আমার কাছে কী মনে হয় জানেন, বড় সন্তান হওয়া অনেক যন্ত্রণার। সব দিকে সামাল দিতে হয়। সকাল ৯.১০ মিনিটে ডাক্তার ঘোষণা করলেন, স্যার আর নাই। তবে ৯টার দিকে একটু সেন্স এসেছিল। ঠোঁট নড়ছিল, কিছু পড়ছিলেন। বাবা, আপনি কী তবে কলেমা পড়ছিলেন?
৩ ঘণ্টা পরে আপনাকে ডাক্তাররা আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করেন এবং ডাক্তার কী বলেছিলেন, জানেন বাবা? বলেছিলেন, আমি স্যারের সামনে ছিলাম, উনি খুব শান্তিতে গেছেন। আমি ডাক্তারকে বললাম, বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারি? ডাক্তার বলেছিলেন, স্যারের কোভিড ১৯। বাবা, আমি চোখ তুলে ডাক্তারের চোখের দিকে তাকালাম। উনি কী বুঝলেন, জানি না। বললেন, ঠিক আছে তবে।
বাবা, আপনি চলে গেছেন ২ বছর। আম্মা ৫ বছর। সুজাত ২৩ মাস। আমি যুদ্ধ করে চলেছি নিজের মনের সাথে। বাস্তবকে মানতে কাকে প্রাধান্য দিব? যুক্তি না আবেগ? যখনই মনোবল শক্ত করে নিজের জীবনের নিঃসঙ্গতাকে মেনে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তখনই কারণে-অকারণে বারবার আবার পিছিয়ে যাই সেই ২০২০ সালে।
বাবা, আপনি বলতেন, 'ছবি আঁকাটা প্রার্থনার মতো। আমি ছবি আঁকি বেডরুমে। ইতালি ও ফ্রান্সে যখন ছিলাম, তখনো তা-ই করেছি। সত্যি বলতে কী, ছবি হলো আমার কাছে প্রেমিকার মতো। যাকে না দেখলে ভালো লাগে না। রাতে হয়তো বা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, আমি ইজেলের আনফিনিশড কাজটি দেখি। একসময় কাজটির ভেতরে ঢুকে যাই। আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। গোসল করে, দাঁড়ি কেটে, আফটার শেভ মেখে, অডি কোলন মেখে তারপর ছবি আঁকতে বসি...।'
বাবা, গত দুই বছরে আপনার নামে মুর্তজা বশীর ট্রাস্ট হয়েছে। আপনার বাসাটা মুর্তজা বশীর সংগ্রহশালা হচ্ছে। আপনার চিরস্থায়ী বাসস্থানকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলছে। যুথী আর যামী দূরে থেকে যতটুকু পারছে সহযোগিতা করছে। আপনার সংগ্রহশালা নিয়ে কাজ করছে আশফাক, আসাদ আর নিজাম বিশ্বাস। আপনার সংগ্রহশালা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। আমি জানি, আপনি আমাদের সাথেই আছেন। আমি জানি, আপনি বলছেন মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্ত এবং দৃঢ় থাকতে হবে আমাকে। বাবা কী বললেন? আমি কী করছি? আর চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে আর পারলাম না বাবা। চোখের পানি ঝরঝর করে পড়ছে।
বাবা, আপনি আসলেই একজন রহস্যময় মানুষ, যা-ই বলেন না কেন! এমন এক তারিখে চলে গেলেন, ১৫ আগস্ট (বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণ দিবস), যে তারিখ আপামর জনতা ভুলবে না। আপনি সব সময় বলতেন, আমার মৃত্যুর খবর পত্রিকার প্রথম পাতায় আসবে কি না! হ্যাঁ বাবা, বাংলাদেশের বেশির ভাগ পত্রিকার প্রথম পাতায় আপনার চলে যাওয়ার খবর ছাপা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আপনি সব সময় সংশয়ে থাকতেন আর বলতেন—যুঁই, আমার জীবিত অবস্থায় আমাকে কে মনে রাখল না রাখল, আমার কিছু এসে-যায় না, কিন্তু আমার মৃত্যুর পরে আমাকে কি কেউ মনে রাখবে? আমি মৃত্যুর পরেও অমর হয়ে থাকতে চাই। একটা শিল্পীর মনে স্বপ্ন থাকে মৃত্যুর পরেও যেন তাকে স্মরণ করা হয়। বাবা, আজকে আমি বলব, আপনি আসলেই রহস্যে আবৃত। সবার থেকে ব্যতিক্রম হয়ে থেকেছেন এবং থাকবেন।
শুভ জন্মদিন, বাবা। আপনাকে অনেক ভালোবাসি, বাবা। আম্মা আর সুজাতের সাথে যেখানে আছেন, ভালো থাকবেন। আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুন।
আপনার যুঁই