তৃতীয় প্রজন্মের স্কুটার: ভেসপা রোমান্টিক বোলতা!
'রোমান হলিডে' কিংবা লা ডলসি ভিটা বিশ্বের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে মাতিয়ে দেবার পরপরই 'ভেসপা রোমান্স' কথাটি চালু হয়ে যায়। স্বল্প আয়ের মানুষের গতিশীলতা বাড়িয়ে কমমূল্যের মোটরচালিত এই দ্বিচক্রযানটি বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্তের এবং ইউরোপে নিম্নমধ্যবিত্তের আয়ও যে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, অর্থনীতির সে হিসাবটি এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।
সিনেমার কারণে ভেসপার আর্থিক অবদানের চেয়ে বেশি প্রচারিত হয়েছে রোমান্টিকতায় অবদানের কথা। ভেসপা উৎপাদনের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপিত হয়েছে ২০২১ সালে। এ সময়ে ভেসপার বিভিন্ন কারখানায় প্রস্তুত স্কুটার বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ। ১৯৪৬ সালে উৎপাদন শুরু হবার পরই ল্যাম্বব্রেত্তা স্কুটারের জোরদার প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে মার খেতে দাঁড়িয়ে যায় ভেসপা এবং হয়ে উঠে তৃতীয় প্রজন্মের সবচেয়ে সফল স্কুটার।
১৯১৪ সালের আগের কোনো কোনো মোটরবাইকে স্কুটারের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা গেলেও ১৯১৫ সালেই প্রথম মোটর স্কুটার নির্মিত হয়।
১৯১৫-১৯৩০ এই সময়টা হচ্ছে স্কুটারের প্রথম প্রজন্ম। নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে অটোপেড স্কুটার কারখানায় নির্মিত হয় এবং ক্রাপ নামে জার্মানিতে একই স্কুটার উৎপাদন শুরু করে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর স্কুটার কারখানার সংখ্যা ও কারখানার উৎপাদনক্ষমতা বাড়ে, ডিজাইনেও পরিবর্তন আনা হয়।
প্রথম প্রজন্মের স্কুটারের ইঞ্জিনকে মনে করা হয়েছে অস্থিতিশীল আর গাড়ির ফ্রেমকে নমনীয় এবং দামও বেশি। প্রথম প্রজন্মের স্কুটার অটোপেড, স্কুটামোটা এবং কেনিলওয়ার্থ।
১৯৩০ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রজন্মের স্থিতিকাল হলেও ১৯৪৬ থেকে পাশাপাশি তৃতীয় প্রজন্মের স্কুটারের উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪-কে তৃতীয় প্রজন্মের স্কুটারকাল বলা হলেও তৃতীয় প্রজন্ম ঈষৎ পরিবর্তন ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এখনো বহাল রয়েছে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের স্কুটার হচ্ছে কুশম্যান। কুশম্যান কোম্পানি ১৯৩৬ থকে ১৯৬৫ পর্যন্ত স্কুটার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। ১৬৫ সিসির হার্লে-ডেভিডসন টপারস্কুটার ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত কিছুটা বাজার দখল কওে রাকে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জাপানি উড়োজাহাজ নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাকাজিমা এয়ারক্র্যাফট কোম্পানির ১৯৪৬-এ ফুজি র্যাবিট স্কুটার বাজারে ছাড়ে। তারপর মিৎসুবিশি নামায় সিলভার পিজিয়ন স্কুটার।
তৃতীয় প্রজন্মের স্কুটার ভেসপা আর ল্যামব্রেত্তা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইতালির পিয়াজ্জিও ভেসপা যে স্কুটারে নিয়ে আসে, তা-ই অচিরে স্কুটারের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হয়। ১৯৪৬-এর এপ্রিলে স্কুটারের পেটেন্ট নিবন্ধিত হয়। এই গতিশীল বাহনে 'অটোমেটিভ', 'অ্যারোনটিক্যাল' ও 'মোটরসাইকেল' ডিজাইনের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
নতুন এই দ্বিচক্রযান ডিজাইন ও আর্থিক সাশ্রয়ের আইকন হয়ে উঠল। পিয়াজ্জিও কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রিনান্দো পিয়াজ্জিও যখন তার কারখানায় নির্মিতব্য দুই চাকায় বাহনটির ডিজাইন দেখলেন, বলে উঠলেন, 'সেমব্রা ওনা ভেসপা'—ইংরেজিতে কথাটার মানে 'ইট লুকস লাইক অ্যা ওয়াস্প'; বাংলায়—'এটাকে বোলতার মতো দেখাচ্ছে।' তার কথার রেশ ধরেই বাহনটির নাম রাখা হলো ভেসপা। রিনান্দো পিয়াজ্জিও তার কারখানায় তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দুই চাকার দ্রুতগতি বাহনটির বাজারজাতকরণ দেখে যেতে পারেননি। আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
পিয়াজ্জিওর কারখানার উৎপাদিত ব্র্যান্ডগুলোর সবই কমবেশি খ্যাতি অর্জন করেছে। কোম্পানির করপোরেট হেডকোয়ার্টার্স ইতালির পিসা প্রদেশে ।
১৯৫৬ সালে ১০ লক্ষতম ভেসপাটি পিয়াজ্জিওর প্রোডাকশন লাইন থেকে বেরিয়ে আসে। আর প্রথম ভেসপাটি বের হয় ২৩ এপ্রিল ১৯৪৬, দুপুর ১২টায়। ভেসপার প্রতিদ্বন্দ্বী ল্যামব্রেত্তা ১৯৪৭-এর প্যারিস শোতে প্রথম প্রদর্শিত এবং প্রথম বছরই ৯,০০০ স্কুটার বিক্রি হয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ল্যামব্রেত্তার কারখানা বোমায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পিয়াজ্জিও ও ইন্নোসেন্তি (ল্যামব্রেটার নির্মাতা) উভয়ই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে বিভিন্ন ধরনের আকাশযান প্রস্তুতির সাথে জড়িত ছিলেন।
মিলানভিত্তিক কারখানার মালিক ফার্দিনান্দো ইন্নোসেন্তিও নিশ্চিত ছিলেন মহাযুদ্ধোত্তরকালে পৃথিবীর মানুষের চাহিদা হবে দ্রুতগামী স্বল্পমূল্যের বাহন। ব্যবসায় সাফল্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভেসপার সাথে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারেনি। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার কারখানাটি কিনে নিয়ে মুম্বাই ও লক্ষ্ণৌতে কারখানা স্থাপন করে।
স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে বাংলাদেশে ভেসপার ভিড়ে দু-একটা ল্যামব্রেত্তাও দেখা যেত। গত বছর (২০২১) পর্যন্ত ৮৩টি দেশে ভেসপার শোরুম এবং বিক্রয় প্রতিনিধি রয়েছে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারতসহ অনেক দেশে ভেসপা কারখানা স্থাপিত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চীনের কারখানা ও পূর্ণ উদ্যমে চলছে। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রয় হয়েছিল ৪২ হাজার স্কুটি, চার বছরে তা ৯৭ হাজারে পৌঁছে। ভেসপার যত জনপ্রিয়তাই থাকুক, পেট্রল যখন দুর্লভ এবং মূল্যও বেশি—দরিদ্র ভেসপার মালিকের জন্য সেটা দুঃসময়।
ভেসপার মডেল না হয়েও গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন তাদের রোমান্টিক কমেডি 'রোমান হলিডে' সিনেমার মাধ্যমে ভেসপার জন্য একটি অভাবনীয় বৃহৎ ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করলেন। প্রেমপাগল যুবকের তো ভেসপা থাকতেই হবে। নতুন যুগের যুবতীর বেলাতেও তা-ই। ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনে ছিল ভেসপা ও ল্যামব্রেত্তার ক্রেজ। চালানো সহজ, কোনোরকমে রাস্তায় একটা পা রাখতে পারলে ভেসপা উল্টে পড়ার সম্ভাবনা নেই।
স্কুলে যাবার জন্য, বাহাদুরি দেখাবার জন্য টিনেজারদেরও প্রিয় বাহন হয়ে উঠল ভেসপা। ইউরোপে সৃষ্টি হলো ভেসপা ক্লাব। ১৯৫২ সালেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভেসপা ক্লাবে সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
১৯৪৮ সালের জনপ্রিয় ১২৫ সিসির ভেসপাতেই কোম্পানি স্থির হয়ে থাকেনি। মডেল, স্টাইল ও প্রযুক্তি বদলেছে। ১৯৫৫-তে এসেছে ১৫০ সিসি। ইঞ্জিন নিয়ে আরও দ্রুতগামী ভেসপা, আবার ১৯৬৩ সালে ৫০ সিসিতেও নেমে এসেছে। ১৯৬৮ সালের ভেসপা ১২৫ প্রাইমাভেরা সবচেয়ে বেশি টেকসই বলে সমাদৃত হয়েছে।
১৯৫৯ সালে কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তরিত হলো ইতালির এগনেল্লি পরিবারের কাছে। ২০০৩ সালে দেউলিয়া হতে হতে কোম্পানি আবার উঠে দাঁড়ায়, উত্তর আমেরিকার বাজার ধরে।
সত্তরের দশক থেকে মোটরসাইকেল কিংবা স্কুটারের চেয়ে কিছু বেশি দাম দিলেই ছোট গাড়ি মিলতে শুরু করে, অন্যদিকে সস্তার স্কুটার বাজারে ছাড়ে এগিয়ে কয়েকটি দেশ। এই চ্যালেঞ্জের মুখে মডেল বদলে বদলে ভেসপাও বাজার ধরে রাখতে চেষ্টা করে। ভেসপার শেষ দিনকার মডেলগুলো হচ্ছে ভেসপা এলেগেন্ট ১৫০, এসএক্সএল১৫০, এসএক্সএল১২৫, ভিএক্সএল১৫০, জেডএক্স১২৫, ভিএক্সএল১২৫। ভারতীয় কারখানায় প্রস্তুত তখনকার সবচেয়ে দামি ভেসপাটি হচ্ছে Vespa Elegante ১৫০; দাম ১.৫৫ লক্ষ রুপি।
ভেসপা জার্মানির জেমস অসওয়াল্ড হফম্যান সামরিক বাহিনীর জন্য পুনরায় ডিজাইন করে হিটলারের বিশেষ সম্মাননা লাভ করেছিলেন। পঞ্চাশের দশকের উক্তি: 'ভেসপা চালানো বাবা সন্তানের কাছে হিরো।'
একটি বিনামূল্য ব্যবস্থাপত্র: 'যদি আপনি আত্মার আরোগ্য কামনা করেন, তাহলে গাড়ি না চালিয়ে ভেসপাতে চড়ুন।'
কৃষ্ণেন্দু মেধাবী মেডিকেল ছাত্র, জাতে ব্রাহ্মণ; আর রীনা ব্রাউন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান তরুণী, মেধায় কৃষ্ণেন্দুর চেয়ে কম কিছু নন। দুজনই কলকাতা মেডিকেল কলেজে। কৃষ্ণেন্দুর গোঁড়া বাবা ছবি বিশ্বাস একটি খ্রিষ্টান মেয়েকে পুত্রবধূ করতে রাজি নন। সুতরাং ভাঙনই অনিবার্য হয়ে ওঠে। কাহিনির মাঝখানে ওথেলোর মঞ্চায়ন—সেখানে জেনিফার কাপুর ডেসডিমোনা আর উৎপল দত্ত ওথেলোর ভূমিকায়। উত্তম কুমার হচ্ছেন কৃষ্ণেন্দু আর সুচিত্রা সেন সেই রীনা ব্রাউন।
সিনেমার গল্পটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রোমান্টিক কাহিনি 'সপ্তপদী'র বাইকটিও স্মরণীয় হয়ে আছে। কিন্তু কেউ স্মৃতিস্মারক হিসেবে এটি রক্ষা করেনি, যেমন রক্ষা করেছে 'রোমান হলিডে' চলচ্চিত্রের ভেসপাটি। 'রোমান হলিডে' আরো আট বছর আগের। ২৭ আগস্ট ১৯৫৩ সালে মুক্তি পেল উইলিয়াম ওয়াইলার পরিচালিত ও প্রযোজিত স্মরণকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক ড্রামা 'রোমান হলিডে'। গ্রেগরি পেক, সিনেমার জো ব্র্যাডলি, একজন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক; অড্রে হেপবার্ন একটি দেশের ক্রাউন প্রিন্সেস অ্যান এবং একটি ভেসপা ১২৫—এ দেশেরও বহু সিনেমা দর্শককে স্মৃতিকাতর করে রেখেছে। 'সপ্তপদী'র স্কুটার চালিয়েছেন কেবল উত্তম কুমার, 'রোমান হলিডে'র ভেসপার চালক ছিলেন দুজনই—গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন।
রাজকুমারী ইউরোপীয় বিভিন্ন রাজধানী সফরে বেরিয়েছেন। রোমে এসে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বেড়াজালে এবং কর্মসূচির বাড়াবাড়িতে রাজকুমারী বিগড়ে যান, হতাশ হয়ে পড়েন, অর্থহীন মনে হয় এ জীবন। ডাক্তার পরিস্থিতি সামলাতে তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন।
কিন্তু মুক্তিপ্রত্যাশী রাজকুমারী ঘুম ভাঙার পর সংগোপনে নিজ দেশের দূতাবাস থেকে বেরিয়ে আসেন। তখনো কিন্তু ওষুধের প্রতিক্রিয়া শেষ হয়নি। তিনি একটি বেঞ্চের ওপর আবার ঘুমিয়ে পড়েন। আমেরিকার একটি বার্তা সংস্থার রিপোর্টার জো ব্র্যাডলি তাকে পেয়ে যান, কিন্তু চিনতে পারেননি। ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি তাকে টাকা সাধেন, কিন্তু তার দিক থেকে কোনো সাড়া পান না। আবার এমন সুন্দরী একটি তরুণীর নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে একলা রেখে যেতেও তার মন চায় না। শেষ পর্যন্ত জো তাকে নিয়ে যান নিজের অ্যাপার্টমেন্টে।
মেয়েটির রাজকীয় আচরণ তাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। মেয়েটিকে ঘুমন্ত রেখেই জো চলে আসেন তার পূর্বনির্ধারিত কাজে; সেই দূতাবাসে রাজকুমারীর সংবাদ সম্মেলনে। এখানে এসে শোনেন রাজকুমারী আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, সংবাদ সম্মেলন বাতিল। রাজকুমারীর ছবি দেখার পর ব্র্যাডলির বোধ হয়, তার অ্যাপার্টমেন্টে কৌচের ওপর ঘুমিয়ে থাকা তরুণী আসলে কে? জো তার এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে রাজকুমারীর একটি একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য ৫০০ ডলার দাবি করেন। এজেন্সি রাজি হয়। একই সঙ্গে ৫০০ ডলার বাজিও ধরেন যে, জো এ সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
জো অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন, নিজের সাংবাদিক পরিচয় লুকিয়ে রেখে তাকে রোম ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তাব দেন। জো তাদের ছবি তুলতে ফটোগ্রাফার আরভিং র্যাডোভিচকেও ডেকে নেন।
কিন্তু খেয়ালি রাজকুমারী একসময় জোকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যান, সেলুনে ঢুকে চুলও কাটিয়ে নেন। বহু খোঁজাখুঁজি করে জো তার সন্ধান পান এবং সেই ভেসপাতে তাকে নিয়ে রোমের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান।
রাজকুমারীর ভূমিকায় অভিনয় করে অড্রে হেপবার্ন সেবারের শ্রেষ্ঠ নায়িকা হিসেবে অস্কার পেলেন। ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমা রোমান হলিডে বক্স অফিস হিট করে উপার্জন করে ১২ মিলিয়ন ডলার।
অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেকের ভেসপা ভ্রমণ এতটাই রোমান্টিক ছিল যে, ভেসপা কেনার হিড়িক পড়ে গেল। কেবল এ জুটির কারণেই তখন ১ লাখ বাড়তি ভেসপা বিক্রি হয়েছে বলে বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা। রোমে বেশ ঘটা করে প্রদর্শিত হলো অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেকের সেই ভেসপাটি। ২০১৬-তে ভেসপার ৭০ বছর পূর্তির উৎসবে সেই ভেসপার ছবি, সেই সুন্দরী ও সেই পুরুষ আবার ফিরে আসে সেন্টার স্টেজে।
পরিচালক ও প্রযোজক জন ওয়াইলার জো ব্র্যাডলি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ক্যারি গ্র্যান্টকে পছন্দ করেছিলেন। ক্যারি প্রত্যাখ্যান করলেন, কারণ তার মনে হয়েছে অড্রে হেপবার্নের তুলনায় তাকে একটু বেশি বুড়ো মনে হবে। অন্য একটি সূত্র মনে করে, সিনেমার দর্শকদের আগ্রহ নিবদ্ধ থাকবে রাজকুমারীর ওপর, নায়ক হিসেবে তিনি উপেক্ষিত হবেন বলে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেননি। তার পরই গ্রেগরি পেককে পছন্দ করা হয়।
রাজকুমারীর চরিত্রে প্রথমে এলিজাবেথ টেইলর কিংবা জিন সিমনকে পছন্দ করা হয়, কিন্তু তাদের শিডিউল পাওয়া যায়নি। তারপর অড্রে হেপবার্ন। কিন্তু স্ক্রিন টেস্টে তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত জন ওয়াইলার চরিত্রটির জন্য তাকে চূড়ান্ত করেননি।
সিনেমাটি রঙিন করার পরিকল্পনা থাকলেও রোমে শুটিংয়ের খরচ এত বেশি যে শেষ পর্যন্ত ব্যয়সংকোচন করতে পরিচালক-প্রযোজক সাদা-কালোতে ফিরে এলেন।
১৯৫৫ সালে আলফ্রেড হিচককের চলচ্চিচত্র 'টু ক্যাচ অ্যা থিফ'-এ ক্যারি গ্রান্ট কুখ্যাত চোর জন রোবির ভূমিকায় ভেসপায় ঘুরে বেড়াতেন।
ভেসপা প্রস্তুতকারী কোম্পানি পিয়াজ্জিও ভেসপা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছে। রোমে অবস্থিত জাদুঘরটির নাম পিয়াজ্জিও মিউজিয়াম। এখানে 'দ্য ভেসপা অ্যান্ড দ্য মুভিজ' নামে বিশেষ প্রদর্শনীও হয়েছে।
অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক ছাড়াও যেসব নায়ক-নায়িকা অভিনয়ের কোনো না কোনো অংশে ভেসপা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন: চার্লটন হেস্টন, রক হাডসন, রক হাডসন, জন ওয়েইন, হেনরি ফন্ডা, রেকুয়েল ওয়েলচ, উরসুলা অ্যানড্রেস, জেরাল্ডিন চ্যাপলিন, জোয়ান কলিন্স, জেইন ম্যানসফিল্ড, ভার্না লিসি, গ্যারি কুপার, অ্যান্থনি পার্কিনস, অ্যান্থনি কুইন, জ্য পল বেলামদো, নান্নি মোরেত্তি, আন্তোনিও বান্দারেস, ম্যাট ড্যামন, জুড ল, এডি মার্ফি, ওয়েন উইলস, নিকোল কিডম্যান, জিনা লোলো ব্রিজিতা, মার্শেলো মাস্ত্রোয়ানি এবং আরো অনেকেই।