মৃণাল সেনের এক শ হলো
হ্যাঁ, মৃণাল সেনের এক শ হলো।
সত্যজিৎ-ঋত্বিক দ্বৈরথে আম-বাঙালি ঠিকমতো তাঁর চলচ্চিত্র অনুধাবন করেনি বলেই মনে হয়। হাতে গোনা গোটা তিন-চার চলচ্চিত্র আমাদের ইন্টেলিজেন্সিয়ার আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে। ফরিদপুরের ছেলেটি কলকাতা মহানগরে এসে একধরনের ভয়-ই পেয়েছিল না, আস্তে আস্তে এই ভয় পরিণত হয় তীব্র ভালোবাসায়। তীব্রতাটি এমন, মনে হয়: কলকাতা মহানগরী কোনো পারমাণবিক বিকিরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ভবিষ্যতের সংবেদনশীল নগরবিদগণ এই চলচ্চিত্ররাশির কাছে এসে নগরী পুনর্নির্মাণে সক্ষম হবেন। কোয়ান্টাম মেকানিকসের কর্ণধার নিলস বোরের একটি কথা মৃণাল সেনের সৃষ্টিবীজ—এভরি সেন্টেন্স আই আটার ইজ নট অ্যান অ্যাসারশন বাট আ কোয়েশ্চেন (যত বাক্য উচ্চারিত হয়, তার সবটাই একটি জীবনজিজ্ঞাসা, এক অনুসন্ধান, জীবনজুড়ে)।
প্রথাগত চলচ্চিত্রশিক্ষা নয়—পড়াশোনা, লেখাপত্র এবং চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের সাথে বন্ধুতা একজন মৃণাল সেনকে নির্মাণ করেছিল। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির প্রদর্শিত ছবি চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন একমাত্র মৃণাল সেন। মার্ক্সবাদ মিশিয়ে নিয়েছিলেন রক্তের মধ্যে, সমকালীন বামপন্থীদের মতো মোটেও যান্ত্রিকভাবে নয়।
তৎকালীন জনপ্রিয় চিত্রসুন্দরী সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম চলচ্চিত্র 'রাতভোর' (১৯৫৫) নির্মাণের প্রস্তাব দেন। স্বরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প। পরবর্তী সময়ে পরিচালক জানাবেন স্বোপার্জিত সেন্স অব হিউমারসহ সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালী' দারুণ ছবি, পৃথিবী কাঁপানো ছবি আর আমার প্রথম ছবি আমাকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে।
চীনের রাজনীতির প্রতি সার্বিক সন্দেহের সেই সব দিনে একজন সাধারণ দরিদ্র চীনে ফেরিওয়ালার চরিত্রে কালী বন্দ্যোপাধ্যায় অপূর্ব অভিনয় করলেন দ্বিতীয় ছবি 'নীল আকাশের নীচে' চলচ্চিত্রে। আন্দামানে আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবিতে পোস্টারও ছিল চলচ্চিত্রটির ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। কিছু জনপ্রিয়তা পাওয়ায় তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' নির্মাণ কঠিন হয়নি। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায় 'বাইশে শ্রাবণ'কে ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক ছবি হিসেবে চিহ্নিত করেন। বাঙালির যৌথ স্মৃতির সাথে যুক্ত একটি বিশেষ দিন চিরকালের মতো যুক্ত হয়ে গেল একটি দরিদ্র দম্পত্তির ভাগ্যবিপর্যয়ের সাথে।
ট্রেনের হকারের জীবনে প্রেম আর দাম্পত্য প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে উঠে এল তুলনারহিত ভঙ্গিমায়। দুর্ভিক্ষের করাল চেহারাও। ক্ষুধাকে কোনোভাবেই গ্ল্যামারাইজ করার চেষ্টা করেননি তিনি। পরবর্তীকালে যা আমরা আরেক মায়েস্ত্রোর 'অশনি সংকেত'-এ দেখি। আমাদের স্মরণে এই প্রথম মাধবী মুখোপাধ্যায় নামক এক তরুণীর অভিনয় স্থান করে নিল। তৃতীয় ছবি থেকেই মৃণাল সেনকে স্বনামে চিহ্নিত করা গেল। 'পুনশ্চ'—ভোগবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যেমন স্বামীকে প্রথম মাইনে পেয়ে সিগারেটের কৌটো তুলে দিচ্ছেন স্ত্রী, ছাদে এই দাম্পত্যদৃশ্যের অনতিদূরে সেই সিগারেটেরই বিজ্ঞাপন, বিশালাকার। অতি অল্প কথায়, এই ব্যবস্থা মেনে নিতে না চাওয়া। পঞ্চম ছবি 'অবশেষে' সমাজে অগণিত বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে একধরনের হাস্যরসাত্মক ছবি। দর্শক নেয়নি। পরে মৃণাল নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকেই দায়ী করেন, অতিরিক্ত সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়েছিল ছবিটি। 'প্রতিনিধি' পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর কুসংস্কার আঁকড়ে ধরা না ধরা—এই সকল বিষয় নিয়ে নির্মিত। নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থাকলেও 'শেষের দিকটা আমি কেমন যেন গুলিয়ে ফেলেছি বলে এখন মনে হয়'—জানান পরিচালক। 'আকাশ কুসুম' নিয়ে সত্যজিৎ আর মৃণালের বিতর্ক ইতিহাসবিখ্যাত। সত্যজিৎ এটিকে 'ক্রো ফিল্ম' আখ্যা দেন। ফ্রাসোয়া ত্রুফোর প্রভাবের কারণেই রায় বাবুর এ হেন মন্তব্য। কিন্তু তাহলে ফ্রিজ শট ব্যবহারের জন্য স্বয়ং ত্রুফোর 'ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ'কেও তো ক্রো ফিল্ম বলা যায়, এমনটাই মনে করেন দ্বৈরথলিপ্ত দুই বাঙালি পরিচালকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়। সত্যজিৎ 'জুল আ জিম'-এর নকল বলে মনে করলেও নৃপেন নিশ্চিত করেন কাহিনিকার আশীষ বর্মণ ছবিটি দেখেননি।
সাতটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণে এক দশক কাটিয়ে উড়িয়া সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক কালিন্দী পানিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে 'মাটির মানুষ' চলচ্চিত্রে ওডিশার কৃষকজীবনের গল্প তুলে আনলেন। দুই ভাইয়ের জমি আত্মসাৎ করবার জন্য জমিদার ভূস্বামী কেমন করে গৃহবিবাদ কাজে লাগান, এটিই কেন্দ্রীয় বিষয়। ওডিশাবাসী নিজেদের ভাষার ছবিটি পছন্দ করেনি। কিন্তু পরিচালকের বন্ধু ও প্রতিদ্বন্দী, অন্তত তর্কযুদ্ধে, সত্যজিৎ ও ঋত্বিকের ভালো লেগেছিল। বনফুলের গল্প নিয়ে 'ভুবন সোম' নির্মাণ করে তিনি আক্রমণ করেছেন ভারতীয় আমলাতন্ত্রকে, খানিক হালকা ঢঙেই, প্রকৃতির বিপুল বিস্তার চলচ্চিত্রটিকে বিস্তর খ্যাতি এনে দিয়েছিল হিন্দিভাষী অঞ্চলে। 'ইন্টারভিউ' আমাদের জানায়, প্রথমত, রঞ্জিত মল্লিক এক অসামান্য অভিনেতা, ক্রুদ্ধ এবং দ্রোহী—বাণিজ্য সাফল্যের প্রতীক ম্যানিকুইন ধ্বংসযজ্ঞে আমরা বুঝে উঠি, বাণিজ্যসফলতা মূলত জননাঙ্গরহিত। 'ভুবন সোম' সত্যজিৎ নিছক ইচ্ছেপূরণের গল্প ভেবে ভুল করেছিলেন। তিনি তলিয়ে দেখতে পারেননি, আমলাতান্ত্রিকতার বিপ্রতীপে সহজাত আক্রমণের স্তরসমূহকে। এই প্রসঙ্গে আমাদের জীবনানন্দের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ক্রমাগত ভুল বিচার মনে পড়ে যেতে পারে। হয়তো বিরুদ্ধ কথাতেই উত্তেজিত নির্মাতা 'ইন্টারভিউ' চলচ্চিত্রে আরও রাজনৈতিক, আরও সাহসী।
২
'সময়ের প্রতি আনুগত্য নানান ধরনের হতে পারে। আমি যেভাবে বুঝেছি, আপনি যে সেভাবে বুঝবেন, এমন তো কোনো কথা নেই। আমি আমার বাস্তব অবস্থাকে, পৃথিবীকে যেভাবে বুঝেছি, আপনি সেভাবে না-ও বুঝতে পারেন। সময় ও বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করার সময় আপনি হয়তো বাস্তবসম্মতভাবে এগোতে পারেন—কিন্তু তারপরেই সমস্ত ব্যাপারটা সাবজেকটিভ হয়ে পড়ে। এবং আপনার সেন্স অব রিয়্যালিটি, আপনার আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব ইউর টাইম—সেটাও শেষ পর্যন্ত কিন্তু ভীষণ সাবজেকটিভ হয়ে পড়তে বাধ্য। এখানেই সংকট আসবে সংকটের ঘাড়ে চেপেই আমাদের চলতে হবে। সংকটকে ভয় পেলে চলবে না। এটাকে আমরা প্রগতি বলব। (সিনেমার সংকট/সিনেমা, আধুনিকতা)
উদ্ধৃতি দীর্ঘ হলো।
প্রগতি বলতে মৃণাল কী বোঝাতে চান, তা বিবৃত করতে জরুরি ছিল এই দীর্ঘ উদ্ধৃতি। 'ইন্টারভিউ' ১৯৭১ সালের সে আগুনে সময়ের এক দলিলচিত্র। বের্টোল্ট ব্রেখটের পদ্ধতিতে নেপথ্যপ্রশ্ন আর নায়কের উত্তর উচ্চারণ এখানেই প্রথম। ভারতীয় চলচ্চিত্র এই প্রথম মহৎ নাট্যকারের কাছে নতজানু হলো। সুবোধ ঘোষের 'গোত্রান্তর' গল্পের চলচ্চিত্ররূপ, হিন্দিভাষী 'এক আধুরি কাহিনি'—কোনো পরিচিত মুখ না থাকায় চলেনি একেবারেই। 'কলকাতা-৭১' মৃণাল সেনের সিগনেচার চলচ্চিত্র। চার দশকজুড়ে ইতিহাসের রাস্তা ধরে হাঁটে এই চলচ্চিত্র। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধকুমার সান্যাল এবং সমরেশ বসু—এই তিন ধ্রুপদি লেখকের তিনটি গল্প অবলম্বনে গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রটির শরীর। গ্লানি, অত্যাচার, অপমান সব মিলিয়ে কলকাতা মহানগরীর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বাস্তবতাকে এবং ঐ বাস্তবতা সত্ত্বেও হার না মানা বিদ্রোহকে মৃণাল সেন ছাড়া আর কে সেলুলয়েডে ধরবেন! 'পদাতিক'—এক পলাতক রাজনৈতিক কর্মীর গল্প। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেন, এই চলচ্চিত্র থেকে নেওয়ার মতো বিষয় কী? উত্তরে পরিচালক স্মরণ করালেন জাভাত্তিনিকে, 'ইট ইজ মাই জব টু প্রোফাউন্ড আ সলিউশন' (পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, সমাধান নয়)৷ বিশ্লেষণপরবর্তী দায়িত্ব দর্শকের, যদি তিনি দায় নিতে স্বীকৃত থাকেন। 'কোরাস' মিশ্র ঘরানার চলচ্চিত্র; থিয়েটার আর চলচ্চিত্র, ফিকশন আর ডকুমেন্টারির ফারাক এখানে লীন হয়ে গিয়েছে। প্রেম চন্দের তিক্ততম গল্প 'কাফন' অবলম্বনে, তেলেগু ভাষার চলচ্চিত্র 'ওকা উরি কথা'—দুর্ভিক্ষের ভয়াল চেহারা আরও একবার। মধ্যবর্তী চলচ্চিত্র 'মৃগয়া'—ভারতীয় চলচ্চিত্রকে চিনিয়েছিল মিঠুন চক্রবর্তীর মতো বাঙালি অভিনেতাকে। সম্ভবত আদিবাসী সমাজের ব্যথা আর ক্রোধকে কেন্দ্রে রেখে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র।
৩
সাতাত্তর সালে কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে। চলচ্চিত্র বিকাশের জন্যে, তারা কয়েকজন পরিচালককে অর্থ বরাদ্দ দেয়৷ 'পরশুরাম'—সরকারি পয়সায় নির্মিত কিন্তু সরকারি বয়ানের বাইরে, ফুটপাতবাসীদের গল্প। 'একদিন প্রতিদিন' (১৯৭৯), 'একদিন আচানক' (১৯৮৯)—দশ বছরের দূরত্বে নির্মিত দুটি সিনেমা। প্রথমটিতে ঘরের মেয়ে সারা রাত বাইরে থাকলে যে পরিমাণ উদ্বেগ, প্রতিবেশী সমাবেশের কুৎসা প্রণীত হয়, তার ওপর নির্মিত। পরেরটি একজন উচ্চ মধ্যবিত্ত পুরুষ স্বেচ্ছায় গৃহত্যাগী হলে যে পারিবারিক সংকট, প্রশ্ন-প্রতিপ্রশ্ন উপস্থিত হয়—তাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র। দুটি চলচ্চিত্রজুড়েই মধ্যবিত্তের দ্বিধাদীর্ণ যাপন ক্ষতস্থানপ্রতিম ফুটে আছে।
'আকালের সন্ধানে' (১৯৮০)—ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম ফিল্ম উইদিন ফিল্ম—মৃণাল ফিরে গেলেন প্রিয় 'বিষয়' ক্ষুধার কাছে। 'চালচিত্র' (১৯৮১)—সিনেমায় অভিনয় করে অঞ্জন দত্ত ভেনিসে শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতার পুরস্কার পান। 'কলকাতা শহরে কত উনুন জ্বলে'—এই হলো তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্রের মিশেলে নির্মিত ছবিটির কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। বাংলা ভাষায় দীর্ঘতম স্বপ্নদৃশ্যও সম্ভবত এই চলচ্চিত্রেই রচিত হয়। 'খারিজ'—রমাপদ চৌধুরীর গল্প। ফাইফরমাশ খাটার জন্য আসা ছেলেটা অপঘাতে মরল। সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র মৃত্যু-পরবর্তী দশার বয়ান। মৃত্যু কেমন করে হলো না দেখিয়ে মৃণাল পরবর্তী অবস্থার ময়নাতদন্তে লিপ্ত হন। 'খন্ডহর' (১৯৮৩)—প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোঁতা আবিষ্কার' গল্প থেকে নেওয়া, হিন্দিতে তোলা। নাসিরউদ্দিন শাহ, শাবানা আজমীর অভিনয়ধন্য এক নিঃসঙ্গতার প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে কোনো এক নিরঞ্জন ফিরবে বলে যামিনী অসুস্থ মাকে নিয়ে অপেক্ষায় রাত জাগে। 'জেনেসিস' (১৯৮৬)—সমরেশ বসুর গল্প। একই গল্পে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরে 'উত্তরা' চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি দেখলেই চলচ্চিত্রকারদ্বয়ের বিশ্ববীক্ষা সম্পর্কে আমরা একটি ইশারা পাব। 'কভি দূর কভি পাস'—দূরদর্শনের জন্যে নির্মিত বারোটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্রমালা। আমি দেখিনি, ফলে মন্তব্যে বিরত রইলাম।
৪
'মহাপৃথিবী' (১৯৯১)—সোভিয়েতে সমাজতন্ত্রের আপাত বিপর্যয়ের পর মৃণালের দার্শনিক অবস্থান আমাদের সামনে উপস্থিত করে। অঞ্জন দত্তের নাটকের গল্পকে ভেঙে এই চলচ্চিত্রের সৃজন। যথারীতি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কের আঁতের কথা উন্মোচন। 'অন্তরীণ' ( ১৯৯৩)—মান্টোর গল্প। বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই। পর্দাজুড়ে পোড়োবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া এক লেখক এবং অসময়ে অনিচ্ছুক বিবাহে বাধ্যতার দাম্পত্যে বন্দী এক নারী—এই দুজনের যোগাযোগ ঘটেছে টেলিফোনের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি মানুষের চিরন্তন নিঃসঙ্গতার প্রতি বিশ্বচলচ্চিত্রের অসহায় আত্মসমর্পণ।
দশ বছর প্রায়, বিরতি নিয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি এসবের প্রেক্ষাপটে আফসার আমেদের মতো একজন গুণী লেখকের গল্প নিয়ে শেষ চলচ্চিত্র 'আমার ভুবন'। সকল চরিত্রই এইখানে ইসলামধর্মাবলম্বী। কিন্তু কুরোশাওয়ার 'ম্যাদাদেও', সত্যজিতের 'আগন্তুক' যেমন একটা ফাইনাল টেস্টামেন্ট হয়ে উঠতে পেরেছিল, 'আমার ভুবন' ছবিতে বয়সের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। যদিও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিপ্রতীপে তাঁর মানবিক আকুতি স্পষ্ট।
৫
কলকাতায় নিজেকে আউটসাইডার ভাবতেন মৃণাল সেন। পরে কলকাতাপ্রেম মৃণাল সেনকে বিশ্বনাগরিক করে তুলেছে। জন্মশতবর্ষে তাঁর সারা জীবনের অনমনীয়তা, ঋজু মেরুদণ্ডসম্বল যুদ্ধ চিরকাল অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। যত দিন যাবে, তিনি চলচ্চিত্র তো বটেই, তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকতার ইতিহাসেও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন।