হুয়ান রুলফোর পেদ্রো পারামো: ‘এই আবর্জনাটা পড়ে দেখো এবং শেখো!’
কাফকাকে আবিষ্কারের মতোই, হুয়ান রুলফোকে আবিষ্কারও নিঃসন্দেহে আমার স্মৃতিতে একটি অপরিহার্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে যেদিন ট্রিগার চেপে ধরেছিলেন, ঠিক সেই দিনই আমি মেক্সিকোতে পৌঁছেছিলাম, ১৯৬১ সালের ২ জুলাই এবং তখনো শুধু যে হুয়ান রুলফোর বই পড়িনি, তা-ই নয়, তার বিষয়ে কিছু শুনিওনি।
বিষয়টি খুব অদ্ভুত ছিল: প্রথমত, সেই সময়ে আমি সাহিত্যজগতের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির হালনাগাদ খবরাখবর রাখতাম, আর লাতিন আমেরিকার উপন্যাস হলে তো সেটা আরও বেশি। দ্বিতীয়ত, মেক্সিকোতে প্রথম যাদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিল, তারা হলেন সেই লেখক শ্রেণি, যারা ম্যানুয়েল বারবাচানো পনচের সাথে কর্দোবার ড্রাকুলা ক্যাসেলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন এবং ফার্নান্দো বেনিতেজের নেতৃত্বে সাহিত্য সাময়িকী নভেদাদেসের সম্পাদকমণ্ডলী। স্বাভাবিকভাবেই, তাদের সকলেরই হুয়ান রুলফোর সঙ্গে জানাশোনা ছিল। তবুও অন্তত মাস ছয়েক পরে তার কথা শুনতে পাই। বেশির ভাগ নমস্য লেখকদের সাথে যা ঘটে থাকে, সম্ভবত হুয়ান রুলফোর ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে, এমন একজন লেখক, যিনি বহুল পঠিত কিন্তু কম আলোচিত।
আমি তখন মেক্সিকোর শহরতলি আনজুরেসের ওদিকে লিফটবিহীন একটি অ্যাপার্টমেন্টে মের্সেদেস, রদ্রিগোসহ থাকতাম, রদ্রিগোর বয়স তখন দুই পেরোয়নি। বড় শোবার ঘরের মেঝেতে একটি পেল্লায় গদি ছিল, পাশের কামরায় একটা ঘেরওয়ালা দোলনা এবং একটি কিচেন টেবিল ছিল, যা লিভিং রুমে লেখালেখির কাজেও লাগত। দুটি চেয়ার ছিল, যা প্রয়োজনমতো এদিক-সেদিক ব্যবহার হতো। আমরা এই শহরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম; কেননা শহরটি তখনো মানুষের বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে পড়ত, এর ফিনফিনে হাওয়া আর সড়কগুলোয় রঙিন ফুলের সমারোহ, কিন্তু আমরা এমন সুখের ভাগীদার হই, সেটা বোধ হয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মেনে নিতে আগ্রহী ছিল না। মেক্সিকোয় আমাদের অর্ধেকটা পেরিয়ে গেছে মানুষের অচল কাতারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো স্বরাষ্ট্র সচিবালয়ের অনুতপ্ত চাতালে চক্কর কেটে।
অবসর সময়ে আমি কলম্বিয়ার সাহিত্যের ওপর নোট লিখেছিলাম, যা পরে রেডিও ইউনিভার্সিদাদের জন্য সরাসরি সম্প্রচারে পাঠ করেছিলাম, এ ছাড়া ম্যাক্স অউবের পৃষ্ঠপোষকতায়ও কিছু লেখা হয়েছিল। ওই নোটগুলো লেখার প্রচেষ্টা আমার এতটাই সৎ ছিল যে একদিন সম্প্রচারকারীর প্রতি আদালতে অভিযোগ দায়ের করা প্রসঙ্গে কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত ফোন করেছিলেন। তার মতে, আমার লেখা কলম্বিয়ার সাহিত্যবিষয়ক নোট নয়, বরং তা কলম্বিয়ার সাহিত্যের বিরুদ্ধে। ম্যাক্স অউব আমাকে তার অফিসে ডাকলেন, আমি ভাবলাম, রোজগারের একমাত্র সংস্থান, যা আমি গত ছয় মাসে তৈরি করেছি, তা বুঝি এবার গেল। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা।
ম্যাক্স আউব আমাকে বলেছিলেন, 'অনুষ্ঠানটি শোনার মতো সময় আমার হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এটা যদি ওই রাষ্ট্রদূতের কথামতো হয়, তাহলে তো সেটা অবশ্যই খুব দারুণ কিছু হচ্ছে!'
আমার বয়স তখন বত্রিশ, এর মধ্যে কলম্বিয়ায় স্বল্প মেয়াদের সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলাম, প্যারিসে মাত্র তিন বছর খুব দরকারি, সেই সাথে কঠিন সময় কাটিয়ে এসেছি, নিউইয়র্কে আট মাস, মেক্সিকোতে এসে চিত্রনাট্য লিখতে চেয়েছিলাম। সে সময়ে মেক্সিকোর লেখক পরিমণ্ডল কলম্বিয়ার মতোই ছিল এবং আমি সেখানে খুব বেশি একাত্ম অনুভব করতাম।
ছয় বছর আগে আমার প্রথম উপন্যাস লিফ স্টর্ম প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার তিনটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি ছিল: 'নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল', যেটি ওই সময়েই কলম্বিয়া থেকে প্রকাশিত হয়; 'ইন ইভিল আওয়ার', ভিসেন্তে রোজোর সুপারিশক্রমে যা এডিটোরিয়াল এরা প্রকাশনা থেকে ছাপা হয় এবং গল্প সংকলন 'বিগ মামাস' ফিউনারেল। এর বাইরে একটি অসম্পূর্ণ খসড়া ছিল, কেননা মেক্সিকোতে আসার আগে আলভারো মুতিস আমাদের প্রিয়জন এলেনা পনিয়াতোওস্কাকে মূল পাণ্ডুলিপিটি পড়তে দিয়েছিলেন এবং যা এলেনা হারিয়ে ফেলেন। পরে অবশ্য আমি গল্পগুলো পুনরায় দাঁড় করিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম, এবং সার্জিও গ্যালিনদো তা আলভারো মুতিসের সুপারিশে ভেরাক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।
অর্থাৎ তত দিনে আমি হরেদরে পাঁচ বইয়ের লেখক হয়ে গেছি। তাতে আমার তেমন কোনো সমস্যা ছিল না, তখন থেকে বা শুরু থেকেও আমি খ্যাতির জন্য কখনো লিখিনি, বরং আমি ভেবেছি লেখালেখির জন্যই আমার বন্ধুরা আমাকে আরও ভালোবাসবে এবং আমি বিশ্বাস করি যে সেই মোতাবেক আমি কাজটি করতে পেরেছি। একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে আমার সবচে বড় সমস্যা হলো, এই বইগুলো লেখার পরে আমি অনুভব করেছি যে আমি নিজেকে এক অন্ধ গলিতে পরিচালিত করেছি এবং আমি পালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছি। আমি ভালো লেখক এবং খারাপ লেখক, উভয়ের সাথে সমানভাবে পরিচিত ছিলাম, যারা আমাকে পথ দেখাতে পারতেন এবং তবুও আমি নিজেকে চারপাশের চেনাজানা আবহের একই বৃত্তে অনুভব করেছি। আমি নিজেকে খরচ হয়ে যেতে দেখিনি।
পক্ষান্তরে, আমি অনুভব করেছি যে আমার মধ্যে এখনো অনেক উপন্যাস রয়েছে, কিন্তু আমি সেসব লিখে ফেলার জন্য বিশ্বাসযোগ্য এবং কাব্যিক উপায় কল্পনা করতে পারিনি। এ রকমই একসময়ে হাঁচড়পাঁচড় করতে করতে আমার সাততলা অ্যাপার্টমেন্টে এক বান্ডিল বই নিয়ে হাজির হলেন আলভারো মুতিস, হাসতে হাসতে তার মারা যাওয়ার দশা:
'এই আবর্জনাটা পড়ে দেখো এবং শেখো!'
বইটি পেদ্রো পারামো।
সেই রাতে বইটি দুবার পড়া ইস্তক আমার ঘুমই আসেনি। প্রায় দশ বছর আগে বোগোতার এক পাহাড় লাগোয়া ছাত্রাবাসে কাফকার মেটামরফোসিস পড়েছিলাম, সে এক ভয়ংকর রাত ছিল এবং ঠিক এমনই কাবু হয়েছিলাম। এর পরদিন আমি 'দ্য প্লেইন ইন ফ্লেইমস্' পড়লাম, আমার বিস্ময় তখনো অটুট। অনেক পরে, এক ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে, চোখে পড়ে রুলফোর মাস্টারপিস 'লিগ্যাসি অব মাতিলদে আর্কেইঞ্জেল'। মনে আছে সেই বছরের বাকি সময়টা আর কোনো লেখককেই পড়তেই পারিনি, কারণ তাদের সবাইকে জোলো মনে হয়েছিল।
কেউ একজন কার্লোস ভেলোকে বলেছিল যে আমি পেদ্রো পারামোর অনুচ্ছেদের পর অনুচ্ছেদ মুখস্ত পাঠ করতে পারি, অর্থাৎ তখনো আমি রুলফোর প্রতি আমার মুগ্ধতা এড়াতে পারিনি। সত্য বলতে কি, তেমন ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়াই পুরো বইটি সামনে থেকে পেছনে, আবার উল্টো দিক থেকেও পাঠ করতে পারতাম, এমনকি বইয়ের কোন পৃষ্ঠায় কোন দৃশ্য আছে, সেটাও; এবং বইয়ের এমন কোনো চরিত্র ছিল না, যার ব্যক্তিত্বের সাথে আমি গভীরভাবে পরিচিত ছিলাম না।
কার্লোস ভেলো আমাকে হুয়ান রুলফোর আরেকটি গল্পকে চলচ্চিত্রে অভিযোজনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, রুলফোর একমাত্র গল্প, যা তখনো পড়া হয়নি, দ্য গোল্ডেন ককরেল। ষোলো পৃষ্ঠার চটি, যাচ্ছেতাই রকমের টুটাফাটা, তিনটি ভিন্ন টাইপরাইটারে টিস্যু পেপারে টাইপ করা। এমনকি তারা যদি আমাকে বলে না দিত যে এটি কার বই, তাহলে আমি চট করে জানতেও পারতাম না। এই গল্পটির ভাষাভঙ্গি হুয়ান রুলফোর বাকি কাজগুলোর মতো জটিল ছিল না, রুলফোর লেখায় তার যে স্বভাবসুলভ উৎপ্রেক্ষাগুলো থাকত, সেসবও অনুপস্থিত ছিল। পরে কার্লোস ভেলো এবং কার্লোস ফুয়েন্তেস তাদের লেখা একটি চিত্রনাট্য পড়তে এবং সমালোচনা করতে বলেছিলেন, সেটা এই পেদ্রো পারামো।
আমি এই দুটি রচনার কথা সব সময় উল্লেখ করি—এদের প্রভাব ভালো কি মন্দ, সেটা বিবেচনায় না রাখলেও আমাকে উপন্যাসে আরও ডুবে যেতে বাধ্য করেছিল, নিঃসন্দেহে যাদের আমি তদীয় রচয়িতার চাইতেও ভালো করে জানতাম (যে রচয়িতার সঙ্গে এরও কয়েক বছর পরে দেখা হয়)। কার্লোস ভেলো চমৎকার একটা কাজ করেছিলেন: তিনি পেদ্রো পারামোর কালিক অংশগুলো ছেঁটে ফেলেছিলেন এবং গোটা পটভূমিটা নিয়ন্ত্রিতভাবে কালানুক্রমিকভাবে পুনরায় জুড়ে নিয়েছিলেন। এর ফলে কাজটি সহজে করা যাবে মনে হলেও তা মূল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু হয়ে দাঁড়ায়: ম্যাড়মেড়ে এবং খাপছাড়া। কিন্তু এতে করে হুয়ান রুলফোর নিগুঢ় শৈলী আর তার বিরল প্রজ্ঞা বুঝতে পারার জন্য এই অনুশীলনটি আমার জন্য অত্যন্ত দরকারি ছিল।
পর্দায় পেদ্রো পারামোকে মানানসই করে তোলার ক্ষেত্রে দুটি মৌলিক সমস্যা ছিল। এক তো হচ্ছে—নাম। 'নাম' যতটা বিষয়ভিত্তিক শোনায়, কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি নামই সেই ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যে সেটি বহন করে এবং এমন কিছু যা বাস্তব জীবনের চেয়ে কথাসাহিত্যে অনেক বেশি প্রকট। হুয়ান রুলফো বলেছেন বা তিনি বলেছে বলে দাবি করা হয়, তিনি জালিস্কোর কবরখানার কবরগুলোর নামফলক থেকে তার চরিত্রসমূহের নামগুলো নিয়েছেন। একমাত্র বিষয়, যা আমরা নিশ্চিত হতে পারি, তা হলো তার বইয়ের চরিত্রদের ঠিকঠাক কোনো বিশেষ্য নেই—বা বলতে গেলে উপযুক্ত অর্থে। এটি আমার কাছে এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিলÑপ্রকৃত অর্থে, তা আমার কাছে এখনো অসম্ভব বলেই মনে হয়Ñস্বীয় নামের সঙ্গে মানানসই এমন একটি চরিত্রও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
আরেকটি হলো, সেটাও পূর্বোক্ত সমস্যাটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য—বয়স। তার গোটা সৃষ্টিজুড়ে, হুয়ান রুলফো তার চরিত্রদের জীবৎকালের যত্নআত্তি করতে খুব কমই যত্নবান ছিলেন। সমালোচক নার্সিসো কোস্টা রোস সম্প্রতি পেদ্রো পারামোর এই বিষয়টি তুলে আনার এক আকর্ষণীয় চেষ্টা করেছেন। আমিও সব সময় ভেবে এসেছি, বিশুদ্ধ কাব্যিক অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে, পেদ্রো পারামো যখন সুজানা সান হুয়ানকে তার বিশাল জমিদারি মিডিয়া লুনায় নিয়ে যায়, সুজানার বয়স তখন বাষট্টি, পেদ্রো পারামো তারচে কমসে কম পাঁচ বছরের বড়।
বস্তুত, এখানে দুঃখজনক ব্যাপারটি আরও বিস্তৃত, অনেক বেশি ভয়ংকর এবং সুন্দর বলে প্রতীয়মান হয়, যে দারুণ আবেগ তাকে গতিশীল করে তোলে, তা এতটাই বয়সজনিত আবহ হয়ে দাঁড়ায়, তা প্রকৃত অর্থে কোনো স্বস্তি এনে দেয় না। চলচ্চিত্রে এত বিশাল কাব্যিক আখ্যান কল্পনা করাও মুশকিল। কোনো এক অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে, দুই বুড়োবুড়ির ভালোবাসা কারুর জীবনকে নাড়া দেয় না।
এই সুন্দর, ইচ্ছাকৃত উপায়ে জিনিসগুলোকে দেখার পক্ষে কষ্টকর বিষয়টি হলো, কাব্যিক অনুভূতি সব সময় সাধারণ বোধবুদ্ধির সাথে খাপ খায় না। যে নির্দিষ্ট দিনক্ষণে দৃশ্যসমূহের অবতারণা ঘটে, তা হুয়ান রুলফোর কাজের যেকোনো বিশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য, এমনকি আমি সন্দেহ পোষণ করি যে তিনি সচেতনভাবেই এটা করেছেন। কাব্যিক সৃষ্টিকে—এবং আমি মনে করি পেদ্রো পারামোর উঁচুমানের কাব্যিক রচনা—লেখকেরা প্রায়ই নিয়মমাফিক কালানুক্রমের বাইরের কিছুকেও টেনে আনেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে একজন লেখক আলটপকা বা কোনো বৈসাদৃশ্য এড়াতে দিন, মাস বা বছরের নাম বদলে দেন, এ রকম পরিবর্তনসমূহ তারা করে থাকেন—এই বিষয়টিকে স্বীকার না করে যে, এমন পরিবর্তন একজন সমালোচককে প্রশ্নবিদ্ধ রচনা সম্পর্কে অনতিক্রম্য উপসংহারে পৌঁছাতে না পারে।
এটি কেবল দিনক্ষণের বিষয়ই নয়, ফুলেদের জন্যও প্রযোজ্য। এমনও লেখক আছেন, যারা এসব তাদের নামের কৃত্রিমতার জন্যও ব্যবহার করেন, স্থান বা ঋতুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেদিকে খুব বেশি মনোযোগ না দিয়েই তারা এমনটি করে থাকেন। সে কারণেই এমন বই খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়, যেখানে সমুদ্রসৈকতে জেরানিয়াম ফুল ফোটে এবং তুষারে টিউলিপ। পেদ্রো পারামোতে, জীবিত এবং মৃতের মধ্যে ঠিক কোথায় সীমারেখা টানা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব, যেকোনো যথার্থতা এখানে আরও বেশি অগম্য। মৃত্যু কত সময় ধরে স্থায়ী হতে পারে, নিশ্চিতভাবেই, কেউই জানতে পারে না।
আমি এই সব লিখতে চেয়েছিলাম, হুয়ান রুলফোর কাজ সম্পর্কে আমার গভীর অন্বেষণই শেষ পর্যন্ত আমাকে আমার লেখালেখি জারি রাখার পথ দেখিয়েছিল, এবং সেই কারণেই আমি মনে করি, তার সম্পর্কে লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব। নিজের সম্পর্কে লেখাও। আমি আরও বলতে চাই যে এই সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণাগুলো লেখার আগে আমি তাকে আবার পাঠ করেছি এবং আমি আবারও সেই একই বিস্ময়ের অসহায় শিকার হয়েছি, ঠিক প্রথমবার যেমন হয়েছিলাম। সেসব তিন শ পৃষ্ঠার অধিক হলেও, ততটাই অসামান্য এবং আমি বিশ্বাস করি, সফোক্লিসের মতোই স্থায়ী।
[পেদ্রো পারামোর নতুন ইংরেজি সংস্করণে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের এই ভূমিকাটি অনুদিত হয়ে প্রকাশিত হয়]