শার্লক হোমসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রুর পরিচয়-রহস্য কি সমাধান হয়েছে? তিনি কি হোমসের ভাই?
প্রফেসর মরিয়ার্টি। স্কটিশ লেখক আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস সিরিজে রহস্যময় ও নির্মম এই মানুষটি ছিল 'অপরাধজগতের নেপোলিয়ন'।
শার্লক হোমসের জাতশত্রু এই প্রফেসর মরিয়ার্টির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে নতুন এক তত্ত্ব হাজির করেছেন একজন শীর্ষস্থানীয় স্কটিশ গবেষক ও লেখক।
লেখক রবার্ট জে হ্যারিসের দাবি, শার্লক হোমসের ভয়ানক প্রতিদ্বন্দ্বী মরিয়ার্টি আসলে এই গোয়েন্দার আপন ভাই মাইক্রফট হোমস।
২২১বি বেকার স্ট্রিটের বিখ্যাত বাসিন্দা শার্লক হোমস স্বয়ং কয়েকবার মাইক্রফটকে তার চেয়েও অনেক বেশি প্রতিভাধর বলে প্রশংসায় ভাসিয়েছে।
হোমসকে নিয়ে নতুন উপন্যাসও লেখেন রবার্ট জে হ্যারিস। হোমসকে নিয়ে তিনি 'আ স্টাডি ইন স্কারলেট' ও 'দ্য ডেভিলস ব্লেজ' নামে দুটি উপন্যাস লিখেছেন। তিনি প্রফেসর মরিয়ার্টির পরিচয় নিয়ে নতুন এ তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন 'শার্লক হোমস ম্যাগাজিন'-এ।
হ্যারিস লিখেছেন, মরিয়ার্টির প্রকৃত পরিচয়ের ব্যাপারে শার্লকের বন্ধু, তদন্তে সহায়তাকারী ও তার কেসের গল্পকার ডা. জন ওয়াটসন 'অজস্র সূত্র' দিয়ে রেখেছেন। মরিয়ার্টির সঙ্গে অবশ্য ওয়াটসনের কখনও সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি।
'দ্য ফাইনাল প্রবলেম' গল্পে ওয়াটসন দূর থেকে এক ঝলকের জন্য মরিয়ার্টিকে দেখে, যখন শার্লক ও এই খলনায়ক সুইজারল্যান্ডের একটি ঝর্ণার ধারে মরণপণ লড়াই করছিল। ওই লড়াইয়ে শার্লক ও মরিয়ার্টি দুজনেরই মৃত্যু হয়। তবে পরে জানা যায়, শার্লক হোমস আসলে বেঁচে গিয়েছিল, 'দি অ্যাডভেঞ্চার অভ দি এম্পটি হাউজ'-এ তার প্রত্যাবর্তন হয়।
রবার্ট হ্যারিসের মতে, মরিয়ার্টি আসলে 'একটি বিশাল অপরাধচক্রের স্রেফ একজন সিনিয়র সদস্য ছিল', যা শার্লক হোমস উন্মোচন করেন।
এই লেখক লিখেছেন, 'এই হতবুদ্ধিকর সত্যটি ঢাকতে ওয়াটসন তার বর্ণনায় মরিয়ার্টি নামের মধ্যে দুজন আলাদা ব্যক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে'—এর মধ্যে একজন 'তুলনামূলক নিরীহ' অধ্যাপক, এবং 'অপরজন সব অপরাধের মূল নাটের গুরু: মাইক্রফট হোমস'।
মাইক্রফটের নাম প্রথম আসে 'দি অ্যাডভেঞ্চার অভ দ্য গ্রিক ইন্টারপ্রেটার'-এ। এই গল্পে শার্লক অনেকটা 'অনিচ্ছাকৃতভাবে' তার ভাইয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানিয়ে দেয়।
ওয়াটসন যখন শার্লকের প্রতিভাকে প্রশিক্ষণের ফলাফল বলে উল্লেখ করে, তখন এই গোয়েন্দা বলে—সম্ভবত দাদির কাছ থেকে বংশানুক্রমে এই গুণ পেয়েছে সে।
হোমস কী করে নিশ্চিত হলো যে এই প্রতিভা বংশগত—এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য ওয়াটসন চাপাচাপি শুরু করলে হোমস বলে: 'কারণ, আমার ভাই মাইক্রফটের মধ্যে আমার চেয়েও বেশি পরিমাণে এই প্রতিভা আছে।'
এই গোয়েন্দা বলে, হিসাবপত্রে মাইক্রফট অসাধারণ দক্ষ। সরকারের কয়েকটি বিভাগের হিসাব অডিটের কাজ করে সে।
হ্যারিস লিখেছেন, সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, মাইক্রফটের এই ক্ষমতা ও দক্ষতার সঙ্গে মরিয়ার্টির বৈশিষ্ট্যের মিল অনেক বেশি।
শার্লক পরে বলে, মাইক্রফট তর্কযোগ্যভাবে সরকারের অন্দরে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি, তার অসাধারণ মস্তিষ্কে সবকিছু 'কবুতরের খুপরির মতো করে সুবিন্যস্তভাবে অনুযায়ী সাজানো' এবং যেকোনো সময় যেকোনো তথ্য সেখান থেকে উপস্থাপন করা সম্ভব।
হ্যারিস লিখেছেন, মাইক্রফট যেভাবে 'রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি ঠিক করে', একইভাবে 'অপরাধজগতের নেপোলিয়ন' মরিয়ার্টিও সিদ্ধান্ত নেয় 'কোন অপরাধ সংঘটিত হবে এবং কোনটি হবে না'।
হোমসের ভাইকে নিয়ে লেখা দ্বিতীয় এবং শেষ গল্প 'দ্য ব্রুস-পার্টিংটন প্ল্যানস'-এ মাইক্রফট একটি চুরি যাওয়া নথি খুঁজে বের করার তদন্তে সক্রিয় ভূমিকা নেন। হ্যারিসের মতে, সে এতে যুক্ত হয় শার্লকের কাজের ওপর নজর রাখার জন্য।
হ্যারিসের মতে, এই কেসের বর্ণনায় 'ওয়াটসন খুব সম্ভব অনেক সত্য লুকিয়ে রেখেছে'। কাহিনির শেষে হোমস তার ভাই মাইক্রফটের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উন্মোচন করে, তা-ও 'চেপে গেছে' ওয়াটসন।
উপসংহারে হ্যারিস বলেন, 'আমরা ধারণা করতে পারি, শার্লক তার ভাইকে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার এবং গ্রামে অবসর জীবন কাটানোর সুযোগ দিয়েছিল।'