দুর্ধর্ষ সব জলদস্যু: একের পর এক জাহাজ লুটই ছিল যাদের নেশা
সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ আটকের ঘটনা আমাদের অনিশ্চিত সমুদ্রপথের কথা মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানের মতো অতীত জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্বজুড়ে জলদস্যুতার সত্যিকারের স্বর্ণযুগ ছিল ১৬৮৯ থেকে ১৭১৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় ব্ল্যাকবিয়ার্ড ও হেনরি মরগানের মতো দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের পাশাপাশি অ্যান বনি এবং মেরি রিডের মতো নারী জলদস্যুদেরও উত্থান হয়। বিপুল ধনসম্পদের মালিক হন এ জলদস্যুরা। তারা বেশির ভাগই ছিলেন নির্দয়। তবে বেলামি নামের এক জলদস্যু ছিলেন উদার। তাকে সমুদ্রের রবিনহুডও বলা হতো। তাদের বেশির ভাগকেই অবশ্য করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল।
১. বারবারোসা ব্রাদার্স
১৪৯২ সালে স্পেন যখন গ্রানাডা জয় করে তখন অভিজ্ঞ জলদস্যু হিসেবে খ্যাতি ছিল আরুজ ও হিজির নামের দুই ভাইয়ের। তারা ভূমধ্যসাগর দাপিয়ে বেড়াত। তাদের বলা হতো বারবারোসা ব্রাদার্স। ইতালিয়ান শব্দ বারবা রোসা অর্থ হলো লাল দাড়ি।
স্পেন এবং পর্তুগাল যাতে উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে কোনো অঞ্চল দখল করতে না পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে অটোমান সম্রাট কুরকুদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন আরুজ ও হিজির। সম্রাটের মৃত্যুর পর তারা উত্তর আফ্রিকায় আসেন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিচিতি পান।
তারা ১৫১৬ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স আক্রমণ করেন এবং এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অটোমান সাম্রাজ্য তাদের গুরুত্ব স্বীকার করে এবং দুই ভাইকে তহবিল দেয় ও সহায়তা প্রদান করে। আরুজ আলজিয়ার্সের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং হিজির পান পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের প্রধান সমুদ্রবিষয়ক গভর্নরের পদ।
বারবারোসা ব্রাদার্স এতটাই সফল জলদস্যু ছিলেন যে খ্রিষ্টানরা তাদের পরাজিত করার জন্য হলি লীগ নামে একটি নৌবহর তৈরি করেছিল।
২. হেনরি মরগান
বিখ্যাত জলদস্যুদের মধ্যে একজন ছিলেন হেনরি মরগান। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ছিল তার 'রাজত্ব'। স্প্যানিশ জাহাজ এবং বিভিন্ন শহরে আক্রমণ করে লুণ্ঠনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন হেনরি। স্প্যানিশ শহর পুয়ের্তো প্রিন্সিপেতে মরগান ও তার লোকদের আক্রমণের পর পুরো শহরই পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। স্প্যানিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে তার আক্রমণে প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল ইংল্যান্ডের।
মরগানের শক্তিশালী জ্যামাইকান নৌবহর ছিল। লোকমুখে শোনা যায়, তিনি জলদস্যু হিসেবে তার সমগ্র জীবনে ৪০০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছেন। স্প্যানিশ শহর ও জাহাজের পাশাপাশি তিনি ৩০টি জাহাজ ও ১২০০ লোক নিয়ে পানামা সিটিতেও অভিযান চালান।
পরে তাকে গ্রেপ্তার করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাকে ক্ষমা করে জ্যামাইকায় পাঠানো হয়। একসময় তিনি জ্যামাইকার গভর্নর হন এবং পরে একটি ছোট বাগানবাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান।
৩. টমাস টিউ
নায়কোচিত দস্যু জীবন কাটিয়েছিলেন টমাস টিউ। তার সময়কার অন্যান্য জলদস্যুর সাথে মিলে জাহাজ লুট করতেন তিনি। বিপুল ধনসম্পদ গড়ে তোলেছিলেন। একবার একটি বড় ভারতীয় জাহাজে হামলা চালান তিনি ও তার দল। সেই জাহাজ থেকে লুট করেন প্রায় এক লাখ পাউন্ড সমমূল্যের ধনসম্পদ। এরপর এক মুঘল নৌবহরে আক্রমণ করেন তিনি। সেখানেই সংঘর্ষের মধ্যে তিনি প্রাণ হারান।
৪. হেনরি অ্যাভেরি
লং বেন নামেও পরিচিত ছিলেন হেনরি অ্যাভেরি। তিনি 'কৃতিত্বের' সাথে দ্রুত পরপর দুটি বড় জাহাজ লুট করেছিলেন। দুটি জাহাজ থেকে তিনি বিপুল ধনসম্পদ সংগ্রহ করেন। জলদস্যু হিসেবে তিনি কতটা নিখুঁত ছিলেন, সেটি তারই প্রমাণ।
তবে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন কখনোই ধরা না পড়ে। বিপুল সম্পদ লুণ্ঠনের পরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং পালিয়ে যান। লোকমুখে তিনি কিংবদন্তি জলদস্যু হিসেবে রয়ে গেছেন।
৫. ফ্রাঁসোয়া ল'ওলানায়স
ফরাসি জলদস্যু ফ্রাঁসোয়া ল'ওলানায়স ১৬৬০-এর দশকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে তার আধিপত্য শুরু করেন। ১৬৬৬ সালে তিনি আটটি জাহাজ এবং ৪৪০ জন জলদস্যু নিয়ে বর্তমান ভেনেজুয়েলার মারাকাইবোতে আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
পথিমধ্যে তিনি তৎকালীন ২ লাখ ৬০ হাজার স্প্যানিশ ডলার এবং মূল্যবান রতœপাথর, কোকো বিনসহ বিপুল ধনসম্পদে ভরা একটি জাহাজ লুট করেন।
মারাকাইবো গিয়ে তিনি শহরটি পুড়িয়ে দেন এবং ৫০০ সৈন্যকে হত্যা করেন। প্রতিশ্রুত মুক্তিপণ পাওয়ার পরেও তিনি শহরটিতে লুটপাট চালিয়ে যান এবং ক্রীতদাসসহ প্রায় সবকিছুই নিয়ে যান।
তার এই বর্বরতার কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই জলদস্যু তার শত্রুদের চোখ বের হয়ে আসা পর্যন্ত গলায় দড়ি বেঁধে রাখার মতো নির্মমতার জন্য কুখ্যাত ছিলেন। ফ্রাঁসোয়া তার এক শত্রুর হৃৎপি- খেয়েছিলেন বলেও কথিত আছে। ১৬৬৮ সালে এক নরখাদক উপজাতির হাতে তিনি বন্দী হন এবং এরপর আর কখনো তার কথা শোনা যায়নি।
৬. উইলিয়াম কিড
ঠান্ডা মাথার এক খুনি ছিলেন ক্যাপ্টেন কিড। নিউইয়র্ক এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জলদস্যুমুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে। পরে তিনি নিজেই দস্যু হয়ে ওঠেন। এই পরিবর্তনের কারণ তার ক্রুদের মধ্যে বিদ্রোহ। জাহাজে বিদ্রোহ দেখা দিলে বিদ্রোহ দমনে তিনি একজনকে খুন করেন। এরপর আর নৃশংসতা থেকে বের হতে পারেননি কিড।
তার সবচেয়ে সাহসী কাজটি ছিল ভারতের মালাবার উপকূলের কাছে নিজের জাহাজের প্রায় দ্বিগুণ আকারের একটি ট্রেজার জাহাজ লুট করা। কিন্তু লুটের পর তাকেই পাল্টা তাড়ার মুখে পড়তে হয়। তিনি বোস্টনের উদ্দেশে পালানোর চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে নিউ ইংল্যান্ডের গভর্নর স্যার রিচার্ড বেলোমনি তাকে গ্রেপ্তার করে ১৭০০ সালে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন।
১৭০১ সালের ২৩ মে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তিনি একটি বেদনাদায়ক মৃত্যুর মুখোমুখি হন; কারণ, তাকে দুবার ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দড়ি মাঝপথে ছিঁড়ে যায় যায় এবং তাকে দ্বিতীয়বার ফাঁসিতে ঝুলতে হয়।
৭. এডওয়ার্ড টিচ বা ব্ল্যাকবিয়ার্ড
ব্ল্যাকবিয়ার্ড নামে পরিচিত এডওয়ার্ড টিচ জলদস্যুতা ও তার কুখ্যাত সব পন্থার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। সে তার বিনুনি করা দাড়িতে স্মোকিং ফিউজ গেঁথে এবং তার বুকে অসংখ্য পিস্তল ও ছোরা ঝুলিয়ে অন্যদের ভয় দেখাতেন।
তিনি ছিলেন শয়তানের জীবন্ত মূর্তি, একজন দক্ষ যোদ্ধা এবং লুটপাটের জন্য বিখ্যাত। টিচের জলদস্যু ক্যারিয়ার তার জীবনের 'গৌরবময়' বিবরণ তুলে ধরে।
তিনি ১৭১৭ সালে একটি ফরাসি ক্রীতদাস জাহাজ দখল করেন এবং এর নামকরণ করেন 'কুইন অ্যান'স রিভেঞ্জ' নামে। জাহাজটিতে ৪০টি কামান লাগানো ছিল এবং এর সাহায্যে তিনি সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটন বন্দর অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
উত্তর ক্যারোলিনা পৌঁছানোর পর তিনি ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হন। জানা যায়, তার শরীরে ২০ বার ছুটিকাঘাত এবং পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল।
৮. ঝেং ই সাও
শেক ইয়ুং এবং চিং শিহ নামেও পরিচিত ছিলেন এই নারী জলদস্যু। এই জলদস্যু নেত্রী ১৮০১ সাল থেকে ১৮১০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগরে দস্যুতা করে বেড়ান। দিনি ২৬ বছর বয়সে এক জলদস্যু নেতাকে বিয়ে করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি নিজের দত্তক পুত্র মিলে জলদস্যু দলটির নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি সেই দত্তক পুত্রকে বিয়েও করেন।
গুয়াংডং জলদস্যু দলের ওপর তার ব্যাপক প্রভাব ছিল এবং তার বহরে ৪০০টি চীনা জাহাজ এবং ৬০ হাজার জলদস্যু ছিল তার দলে। তিনি পর্তুগিজ সাম্রাজ্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং এমনকি কিং রাজবংশের মতো বড় শক্তির মুখোমুখি হন।
১৮১০ সালে তিনি বিচার এড়াতে কিংরাজবংশের রাজার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেই সময়ে তার দলে ২০টির বেশি জাহাজ এবং ১ হাজার ৪০০ জলদস্যু ছিল। এরপর তিনি আফিম পাচারে নেমে পড়েন এবং ৬৮ বছর বয়সে মারা যান।
৯. ক্যালিকো জ্যাক
ক্যালিতো জ্যাক র্যাকহ্যামের নাম উল্লেখ করা ছাড়া সারা বিশ্বের জলদস্যুদের নামের তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। একবার তার জাহাজের ক্যাপ্টেনের ভুল সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে ঘটনাক্রমে তিনি সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন হন। পরবর্তী সময়ে তিনি নিজের জাহাজকে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত জলদস্যু জাহাজে পরিণত করেন।
তিনি একটি মাথার খুলি, দুটি ক্রস করা তলোয়ারসহ তার বিখ্যাত জলি রজার পতাকার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। তার অধীনে মেরি রিড এবং অ্যান বনি নামের দুই নারী জলদস্যু কাজ করত। একমাত্র এই দুই নারীই ক্যারিবীয় অঞ্চলে দস্যু হিসেবে কাজ করেছেন।
তার মধ্যে অ্যান বনি ক্যাপ্টেন জ্যাকের সাথে সমুদ্রে যেতে তার স্বামীকে ত্যাগ করেছিলেন। আর মেরি রিড পুরুষ ছদ্মবেশে বিভিন্ন অপারেশনে যেতেন এবং অন্য দস্যুদের প্রশিক্ষণ দিতেন। ১৭২০ সালে একটি জলদস্যু জাহাজের সাথে সাথে সংঘর্ষ হয় এবং এতে তারা প্রাণ হারান।
১০. চার্লস ভেন
১৭০০-এর দশকের প্রথম দিকে বাহামায় সক্রিয় ছিলেন এই ইংরেজ জলদস্যু। ধনসম্পদে ভরা অনেক জাহাজে তিনি হামলা চালান। একবার তিনি বন্দী হন এবং পরে রাজার কাছে ক্ষমা চেয়ে তা পেয়েও যান।
কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি এবং তার লোকেরা জলদস্যুতায় ফিরে আসেন। তিনি বেশ নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন এবং হত্যা করার আগপর্যন্ত নিজের শত্রুদের তিনি নির্যাতন করে যেতেন।
১৭১৯ সালে রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে তিনি বে দ্বীপপুঞ্জে আটকে পড়েন। একটি ব্রিটিশ জাহাজ তাদের দেখে এবং সেখানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভেনের বিচার করে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
১১. ফ্রান্সিস ড্রেক
পুরোপুরিভাবে একজন জলদস্যু নয়; বরং ১৬ শতকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে একজন ইংরেজ যুদ্ধজাহাজের নাবিক হিসেবে বেশি সক্রিয় ছিলেন ফ্রান্সিস। তিনি একজন প্রতিভাধর নাবিক ছিলেন। তবে ভাগ্য এতটা সদয় ছিল না তার ওপর। একসময় তিনি জলদস্যুতার জীবন বেছে নেন। ফ্রান্সিসের বুদ্ধিমত্তা তাকে মূলত জলদস্যু হিসেবে বিশ্বের কাছে বিশেষ পরিচিত করে তোলে।
১২. অ্যানি বনি এবং মেরি রিড
এই দুইজন সম্পর্কে কিছু তথ্য ওপরে বর্ণিত হয়েছে। জলদস্যু হলেও পুরুষের বিশ্বে নারী শক্তির উদাহরণ অ্যানি বনি এবং মেরি রিড।
ভাগ্য তাদের উভয়কে জলদস্যুতায় নিয়ে আসে এবং একে অপরের বন্ধু করে দেয়। সাথে নাবিক হিসেবে তাদের দক্ষতা বিশ্বের কাছে জলদস্যু হিসেবে বিখ্যাত করে তোলে।
তারা দুজনই ক্যালিকো জ্যাকের জলদস্যু দলের সদস্য ছিলেন। ধারণা করা হয় যে ক্যাপ্টন জ্যাকের সঙ্গে অ্যানির প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
কঠিন এক জীবন ছিল অ্যানি বনির। তিনি তার বাবার এক ভৃত্যের অবৈধ সন্তান ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে একটি বাগানে কাজ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়। সেখানে এক নাবিকের সাথে বনির পরিচয় হয় এবং তারা বিয়ে করেন। তিনি জলদস্যুদের সাথে মিশতে শুরু করেন এবং একসময় জ্যাকের জাহাজে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি স্বামীকে ত্যাগ করেন।
১৩. হাওয়েল ডেভিস
খুব সংক্ষিপ্ত জলদস্যু জীবন ছিল হাওয়েল ডেভিসের। নৌ পরিচালনায় দক্ষতা এবং নিজের জাহাজের চেয়ে বড় জাহাজে আক্রমণ চালানোর মতো সাহসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ক্যারিবীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেন ডেভিস।
পুরো বছরজুড়ে তিনি দস্যুতা করে বেড়াতেন। কিছু উত্থান-পতনও দেখেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী জলদস্যুদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হন ডেভিস।
১৪. বার্থলোমিউ রবার্টস
বুদ্ধিমান এক জলদস্যু ছিলেন বাথলোমিউ রবার্টস। ব্ল্যাক বার্ট নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। ক্যারিবিয়ান, আফ্রিকা এবং এশিয়াজুড়ে ৪০০টির বেশি জাহাজ লুট করেছিলেন তিনি।
হাওয়েল ডেভিসের অধীনে কাজ করতেন তিনি। তবে ডেভিসের অকালমৃত্যুতে দস্যু দলের দায়িত্ব নিতে হয় রবার্টসকে। তিনি অত্যন্ত সাহসী এবং ঠান্ডা মাথার ব্যক্তি ছিলেন। একবার ২০টি জাহাজ লুট করে তিনি সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেন। পুরো ক্যারিবীয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ অঞ্চল নিয়ন্ত্রওে নিয়েছিলেন তিনি।
১৭২২ সালে রবার্টস নিহত হন। তার দুঃসাহসী কর্মজীবন তাকে জলদস্যুদের ইতিহাসে অনন্য করে তোলে।
১৫. কালো স্যাম বেলামি
ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল বেলামি ছিলেন ১৮ শতকের একজন নাবিক, যিনি পরবর্তী সময়ে জলদস্যুতে পরিণত হন। তার জলদস্যু জীবন স্বল্পকালীন হলেও সেই যুগে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধনী জলদস্যু। মোট ৫৩টি জাহাজ তিনি লুট করেছিলেন।
অত্যন্ত নিষ্ঠুর জলদস্যু হিসেবে পরিচিত হলেও বেলামি ছিলেন উদার। তিনি সব সময় ভালো পোশাক পরতেন এবং সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। বেলামির লোকেরা তাকে বেশ পছন্দ করত এবং তাকে সমুদ্রের রবিনহুড বলে ডাকত।
১৬৮৯ সালে জন্ম নেওয়া বেলামি ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে একজন নাবিক হিসেবে তার সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন। ভাগ্য তাকে ভিন্ন জায়গায় নিয়ে আসে। তিনি ব্ল্যাকবিয়ার্ড এমনকি বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের সাথে কাজ করতে শুরু করেন।
১৭১৭ সালে বেলামি একটি ক্রীতদাসভর্তি জাহাজ দখল করেন। দুই মাস পরে সেই জাহাজ ঝড়ের মধ্যে ডুবে যায় এবং সেই সাথে বেলামিসহ সবাই মারা যান। ১৯৮৪ সালে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।