চিত্রকর্ম ইতিহাসের দুর্ধর্ষ এক ঠকবাজ!
জন মায়াট ছবি জাল করার অভিযোগে জেল খাটার আগপর্যন্ত মায়াটকে প্রতিবেশীরা চিনত এক ব্যর্থ চিত্রকর হিসেবে, যার নিজস্ব কোনো স্টাইল নেই, যার কোনো ছবি বিক্রি হয় না। মায়াট থাকতেনও একেবারে সাদামাটাভাবে, শান্ত নিস্তব্ধ লন্ডন থেকে ৩ ঘণ্টার ড্রাইভিং দূরত্বে থাকা স্ট্যাফোর্ডশায়ারের এক ছোটখাটো বাসায়। মায়াটকে যদি কেউ চেনে, তবে তাও এক গানের জন্য, ১৯৭৯ সালে ব্রিটেনের সেরা ৪০ গানের চার্টে আসা 'সিলি গেমস' গানের গীতিকার-সুরকার হিসেবে।
১৯৮৬ সাল। মায়াট টের পেলেন তিনি দুনিয়ার সেরা চিত্রকরদের ছবি নকল করতে পারেন অনায়াসেই এবং পরবর্তী ৯ বছর তার আঁকা ছবি বিক্রি হতে থাকল রমরমিয়ে, মায়াট গোপনে হয়ে উঠলেন তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে সফল 'জাল আঁকিয়ে'। জর্জেস ব্রাক, অরিঁ মাতিস, আলবার্তো জিয়াকোমেত্তি কিংবা লা করবুসিয়েঁ, চিত্রজগতের সব বাঘা বাঘা আঁকিয়ের ছবি এমনভাবে জাল করা শুরু করলেন, চিত্রকর্মের বিশেষজ্ঞদের মনেও ছবিগুলো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ দানা বাঁধেনি।
৯ বছর পর। জন মায়াট তার ছেলেকে স্কুলবাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য দরজা খুলতেই ২ আগন্তুককে দেখতে পেলেন। ২ জনই পরিচয় দিলেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা হিসেবে, এদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট জোনাথন শার্লে, যিনি নিজেও একসময় চিত্রকর ছিলেন, চিত্রকর্ম রিস্টোর করার কাজে যুক্ত ছিলেন, সাথে ইতিহাস নিয়েও টুকটাক চর্চা করেছেন।
৫০ বছর বয়সী মায়াট অফিসার দুজনকে বাসায় বসার আমন্ত্রণ জানালেন, সময় চাইলেন তার ছেলেকে বাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য, এই ফাঁকে দুই অফিসারও মায়াটের বাড়ির আগামাথা চষে ফেললেন। মায়াট বাসায় ফিরে দুই অফিসারকে খুঁজে পেলেন তার স্টুডিও রুমে। স্টুডিও রুমের দেয়ালগুলোতে ঝুলছে জিয়াকোমেত্তি, শাগাল, ব্রাক আর ডুবুফেটের ছবি, টেবিলের ওপর রাখা ড্রয়িংপ্যাডেও দেখা যাচ্ছে জিয়াকোমেত্তি, লা করবুসিয়েঁ আর বেন নিকলসনের ছবির স্কেচ। মায়াট শার্লের দিকে তাকালেন, দেখতে পেলেন তার ছেলের আঁকা এক টুকরো ছবি হাতে ধরে আছেন। জিজ্ঞাসা করলেন শার্লেকে, 'এই ছবিটা কি পছন্দ হয়েছে আপনার?'
ওই দিনই মায়াট তার জাল ছবি আঁকার কথা স্বীকার করলেন। ইতিমধ্যেই রপ্ত করে ফেলেছেন ৯ জন আধুনিক চিত্রকরের আঁকার স্টাইল, এঁকে ফেলেছেন ২০০-এর বেশি ছবি। মায়াট প্রতি ৬ সপ্তাহে ১টি করে ছবি দিয়ে আসতেন লন্ডনের এক ব্যক্তির কাছে, নাম জন ড্রিউই। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অবশ্য জন ড্রিউইর ব্যাপারে আগেই সন্দেহ করেছিল মায়াটের জাল ছবি বিক্রি করার মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে, যেগুলো সথবি, ক্রিস্টি এবং ফিলিপসের মতো বড় বড় নিলাম প্রতিষ্ঠান তো বটেই, লন্ডন, প্যারিস ও নিউইয়র্কের বড় বড় আর্ট ডিলারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে অনেক দিন ধরে।
এরপর মায়াট যা জানালেন, তা গোয়েন্দাদেরও জানা ছিল না। মায়াট এই ছবিগুলো আঁকতেন ঘরের দেয়ালে রং করা ইমালশন পেইন্ট দিয়ে, যা আবিষ্কার হয়েছে ১৯৬০-এর দিকে, মূল ছবিগুলো আঁকার কয়েক দশক পর! মায়াট অবশ্য জানতেন না, তার ছবিগুলো কত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়ে বিভিন্ন সংগ্রাহক তাদের বাড়ির দেয়ালে ঝুলিয়েছেন। ৯ বছরে মাত্র ১ লক্ষ ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার তার সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। মায়াট তার অপরাধ স্বীকার করার সাথে সাথে তার হাতে থাকা ৩০ হাজার পাউন্ড ফিরিয়ে দিতে চাইলেন, সাথে ড্রিউইকে ধরার জন্য সাহায্যের কথাও বললেন।
৭ মাস পর, ড্রিউই আর তার সহযোগীদের আলাপ-আলোচনা পর্যালোচনা করার পর ড্রিউইর লন্ডনের শহরতলির বাসায় অভিযান চালাল পুলিশ, খুঁজে পাওয়া গেল বিভিন্ন জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারির জাল কাগজপত্র, যেখানে 'এই চিত্রকর্ম আসল' সিলসহ এ ধরনের নানা ডকুমেন্টসে ভর্তি। সাথে রয়েছে কয়েক দশকের পুরোনো ছবির কেনাবেচার রসিদ, বিভিন্ন চিত্রকরের পরিবার থেকে পাওয়া জাল 'আসল ছবির সার্টিফিকেট' এবং কাঁচি, ছুরি, আঠা, টেপ এবং ফ্লুইডের মতো কাগজ জাল করার প্রয়োজনীয় জিনিস।
তবে কয়েক দিন পর গোয়েন্দারা বুঝতে পারলেন, এসব সার্টিফিকেট নকল ড্রিউইর হাতের ময়লা। মায়াটের আঁকা নকল ছবিগুলোর আসল ছবির ইতিহাসই ড্রিউই পরিবর্তন করে ফেলেছেন ছবিগুলো বিক্রি করার জন্য, অর্থাৎ ছবিগুলো আঁকার পর কোথায় কার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, কোন প্রদর্শনীতে টাঙানো হয়েছে, তার একটি কাল্পনিক ইতিহাসও বানিয়ে ফেলেছেন ড্রিউই!
ড্রিউই প্রতারণার যে জাল বিছিয়েছিলেন, তা ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। আর্ট গ্যালারিতে ঢুকে চিত্রকর্ম চুরি করার চেষ্টা করেননি তিনি বরং সবচেয়ে সুরক্ষিত আর্ট গ্যালারির রেকর্ডরুমে গিয়ে চিত্রকর্মগুলোর কেনাবেচার রেকর্ড পাল্টে দেন তিনি। ড্রিউইর আগে কখনোই এ ধরনের পরিকল্পনা কারও মাথাতেই আসেনি, আর এর ফলে আর্টের দুনিয়ায় যে অকল্পনীয় ক্ষতি হয়েছিল, তা-ও এর আগে কখনো ঘটেনি। ড্রিউই যেসব ছবির রেকর্ড পাল্টে দিয়েছিলেন, সেসব ছবির প্রকৃত মূল্যও এখন আর জানা সম্ভব নয় ড্রিউইর এই চতুর জালিয়াতির ফলে। মায়াট যে ২০০টি ছবি এঁকেছেন এবং ড্রিউই বিক্রি করেছেন, এখনো পর্যন্ত তার মধ্যে ৭৩টির হদিস পাওয়া গিয়েছে। বাকি ছবিগুলো এখনো 'আসল ছবি' হিসেবেই হয়তো কোনো সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে।
নিউইয়র্কের 'মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট'-এর সাবেক ব্যবস্থাপক গ্লেন লাউরির মতে, 'ভিজ্যুয়াল আর্টের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় জালিয়াতি আর নেই। আর্টজগতের পুরো সিস্টেমকেই তিনি যেভাবে পাল্টে দিয়েছেন, তা জালিয়াতির চেয়েও বড় কিছু।'
'কাল্পনিক' জীবন
জন ড্রিউই সারা জীবনই তার জীবনকে কল্পনার রঙে সাজিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে জন ককেট হিসেবে জন্ম নেওয়া ড্রিউই সাসেক্সের একেবারে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই নিজের নামে গালগল্প ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাস ছিল ককেটের, স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি ইয়র্কের আর্লের সরাসরি বংশধর এবং তার বাবা ব্রিটিশ হোম স্টোরের প্রতিষ্ঠাতা। যদিও স্কুলে একেবারে গড়পড়তা ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তার স্কুলজীবনের এক বন্ধু ড্যানিয়েল স্টোকসের মতে, ককেট ছোটবেলা থেকেই অস্বাভাবিক গোছালো স্বভাবের ছিলেন। বিশাল এক লাইব্রেরি ছিল ককেটের বাসায়, আর সব সময় ক্লিপিং ফাইল নিয়ে চলাফেরা করতেন তিনি। স্টোকসের ভাষায়, ককেট যেন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য একজায়গায় সাজিয়ে রাখতেন, তার বাসা দেখে মনে হতো এটি কোনো একটা ল্যাবরেটরি।
১৭ বছর বয়সে ককেট তার নাম পরিবর্তন করে ড্রিউই রাখেন এবং তার পরের ১৫ বছর ড্রিউই স্রেফ লাপাত্তা হয়ে যান। ব্রিটেনের অ্যাটমিক এনার্জি অথোরিটির একেবারে নিচু এক পদে ড্রিউইকে শেষবারের মতো খোঁজ পাওয়া যায়, তারপরে কর থেকে শুরু করে গ্রেপ্তারের রেকর্ড, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রেকর্ড কিংবা চাকরির তথ্য, কোনো জায়গাতেই আর ড্রিউইকে দেখা যায়নি।
ড্রিউই অবশ্য তার এই লুকিয়ে থাকা জীবন সম্পর্কে বেশ কিছু জিনিস দাবি করেছেন। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি প্যারিসে হওয়া ১৯৬৮ সালের বিখ্যাত ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি জার্মানিতে চলে যান এবং কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছর ধরে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর ফলিত পদার্থবিজ্ঞান পড়ান। তার দাবিমতে, এরপর তিনি নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তার দ্বিতীয় পিএইচডি সম্পন্ন করেন। যদিও কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয় বা নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি জন ককেট অথবা জন ড্রিউই, কোনো নামেই ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেনি, সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ও তার নাম কখনোই শোনেনি!
১৯৮০ সালে ড্রিউইর সাথে পরিচয় হয় ইসরায়েল থেকে লন্ডনে আসা বাতশেবা গুডস্মিথ নামের এক চক্ষুবিশেষজ্ঞের সাথে। বাতশেবা কিছুদিন হলো ইসরায়েল থেকে ইংল্যান্ডে এসেছেন, বাড়ি কিনেছেন গোল্ডার্স গ্রিনে, ইসরায়েল থেকে আসা কিছুটা বিত্তশালী ইহুদি অভিবাসীদের প্রিয় জায়গা লন্ডনের এই শহরতলি। বাতশেবাও এই বাড়ি কিনেছেন হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা তার বাবা-মায়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মান সরকার থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে, যদিও বাতশেবা ড্রিউইর সাথে থাকা তার সম্পর্কের কারণে প্রায় সবকিছুই পরবর্তীতে হারান।
বাতশেবার সাথে প্রথমবার দেখা করতে গিয়ে ড্রিউই হাজির হলেন এক সাদা রোলস রয়েস নিয়ে, সাথে বিশাল এক ফুলের তোড়া। নিজেকে পরিচয় দিলেন অ্যাটমিক এনার্জি অথোরিটির উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ অ্যারোস্পেসের বোর্ড সদস্য হিসেবে। এর কোনো কিছুর মধ্যেও সত্যির ছিটেফোঁটাও ছিল না, যদিও তার এই বিলাসিতা করার মতো টাকাপয়সা কীভাবে এসেছিল, তা জানা যায়নি। বাতশেবার ভাষ্যমতে, সে প্রথমে বলেছিল যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করে, কিছুদিন পর বলল, উলউইচের এক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিতে কাজ করছে।
কখনো বাতশেবাকে বিয়ে না করলেও তাকে স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় দিতে থাকেন ড্রিউই। 'আমি তাকে বিয়ে করিনি, কারণ, আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কোনো একটা গন্ডগোল আছে, কিন্তু সেটা যে কী, তা বুঝতে পারিনি। সে তার সব কাজই করত দরজার আড়ালে। আমি আমার কাজ সম্পর্কে কিছু জানাতাম না, সে-ও তার কিছু জানাত না,' বাতশেবার জবাব।
বাতশেবা কয়েক বছর পর লক্ষ করলেন, ড্রিউই বাসায় একের পর এক ছবি নিয়ে বাড়িতে জড়ো করছেন। তার প্রশ্নে ড্রিউই জবাব দিলেন, অ্যাটমিক এনার্জিতে তার এক পুরোনো সহকর্মী তার সংগ্রহশালা থেকে একটি একটি করে ছবি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন, তিনি এটিতে সাহায্য করছেন মাত্র। একবার বাতশেবার সামনে ড্রিউই ছবিতে কাঁদা মাখাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। বাতশেবার প্রশ্নের জবাবও মুখের ওপর তৈরি করা ছিল। 'ভল্টে থাকার কারণে ছবিটা অনেক নতুন মনে হচ্ছে, তাই একে একটু পুরোনো করছি।' সময় তখন ১৯৮৬। ড্রিউই তত দিনে মায়াট নামক এক প্রতিভাবান 'শিল্পী'র খোঁজ পেয়ে গেছেন।
মায়াটের সাথে পরিচয়
ড্রিউই যখন মায়াটকে খুঁজে পেলেন, মায়াটের অবস্থা তখন বেশ বিপর্যস্ত। অর্থকষ্ট তো ছিলই, সাথে পরিবার নিয়েও বেশ ঝামেলায় ছিলেন মায়াট। স্থানীয় এক স্কুলে ছবি আঁকার শিক্ষক হিসেবে কাজ করে কোনোমতে দিন চালাচ্ছেন, 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হিসেবে তার স্ত্রীও তার দুই সন্তানকে রেখে চলে গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে মায়াটের এক বন্ধু তাকে দিয়ে এক ফরাসি চিত্রকরের ছবির নকল আঁকিয়েছিলেন, নিচে ছিল চিত্রকরের অবিকল স্বাক্ষর। বিনিময়ে বন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছিলেন ৪০০ ডলার। বন্ধু তাকে পরে জানিয়েছিলেন, ছবিটি দেখে চিত্রসংগ্রাহকেরাও জাল বলে চিনতে পারেননি। মায়াট এই খবর শুনে বেশ মজাই পেয়েছিলেন। তবে ছবির নকল এঁকে পেট চালানোর কথা তখনো মাথায় আসেনি, যতক্ষণ না তার ঘাড়ে দুই ছেলেমেয়েকে সামলানোর পাশাপাশি পেট চালানোর কথাও ভাবতে হলো।
১৯৮৬ সাল, মায়াট এক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর নকল ছবি বিক্রি করবেন, প্রতিটি ২৪০ ডলারের বিনিময়ে। মায়াটের কাছে কল এল কিছুদিন পরেই, কল করলেন 'প্রফেসর ড্রিউই', একজন নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ, যিনি নিজের ঘর সাজানোর জন্য ছবিগুলো কিনতে চান।
ড্রিউই প্রথমে মাতিসের ছবির অর্ডার করলেন, তারপর একেক করে ক্লি আর সপ্তদশ শতাব্দীর দুই ওলন্দাজ চিত্রকরের ছবিও বানিয়ে নিলেন। লন্ডনের ইউস্টন স্টেশনে গিয়ে রোল করা ক্যানভাসের মধ্যে ড্রিউইর কাছে নকল ছবিগুলো হস্তান্তর করতেন মায়াট। দেখা করার সময়েই মায়াটের ব্যাপারে জেনে নিয়েছিলেন ড্রিউই, তাকে প্রায়ই পানশালায় ফিয়ে/// পান করাতেন, নিয়ে যেতেন নিজের বাড়িতে। ড্রিউইর দামি মার্সিডিজ কিংবা বিশাল বাড়ি দেখে মায়াটও অবাক হয়েছিলেন। মায়াটের কাছে ড্রিউই তার পরিচয় দিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের পাশাপাশি ব্রিটেনের গোয়েন্দা বাহিনীর সাথেও তার কাজ করতে হয়।
ওই বছরেরই এক সন্ধ্যায় ড্রিউই মায়াটকে জানালেন, তার একটি ছবি তিনি ক্রিস্টির নিলামে নিয়ে গিয়েছিলেন, দাম উঠেছে ৩৮ হাজার ডলার! সেদিন থেকেই মায়াট বুঝতে পারলেন, বৈধ ব্যবসার দিন শেষ, তিনি অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ড্রিউইকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'এটা কীভাবে সম্ভব! ওই ছবি তো দেয়ালের রং দিয়ে আঁকা!'
ড্রিউই অবশ্য তার এই ব্যবসার জন্য একেবারে নিখুঁত সময়কে বেছে নিয়েছিলেন। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে চিত্রকর্মের বাজার ফুলেফেঁপে উঠছে, নিলামে ওঠা ছবিগুলো বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। ১৯৬০ সালে ৩ হাজার ডলারে বিক্রি হওয়া জ্যাসপার জনের ছবি 'ফলস স্টার্ট' ৩৯ বছর পর বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ডলারে, নিলামের আগে হওয়া আনুমানিক দামের দ্বিগুণেরও বেশি দামে। পরের বছরই ভিনসেন্ট ভ্যান গখের 'পোর্ট্রেট অব ড. গ্যাশে'-কে রেকর্ড ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় এক জাপানি সংগ্রাহক, যদিও ছবি আসলত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই।
ড্রিউইর একের পর এক কাজের চাপে মায়াট এবার আঁকতে শুরু করলেন; ৫ ঘণ্টায় আঁকা জিয়াকোমেত্তির এক ছবি নিলামে বিক্রি হলো ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ডলারে। ড্রিউইর কথায় এবার মায়াট আঁকা শুরু করলেন বেন নিকলসন, নিকোলাস দ্য স্টেল, লা করবুসিয়েঁ, মাতিস, রজার বিসিয়েঁর ছবি। বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে নিজেই যেন নিজের ছাপ এঁকে দিলেন মায়াট, বাকিদের ছবি নকল করে। ইমালশন পেইন্টের সাথে কে-ওয়াই জেলি মিশিয়ে দেওয়ার ফলে রং শুকিয়েও যেত খুব দ্রুত, ফলে আঁকতেও পারতেন বেশ দ্রুত।
মায়াটের আঁকা ছবিগুলো কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি হতে শুরু করল। মায়াটের কাছে ছবি জাল করা একধরনের নেশা হয়ে উঠল, স্রেফ অর্থের জন্য নয়, ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসাও ছিল তার। তবে নিজ নামে ছবি আঁকলে এই সাফল্য পাওয়া সম্ভব ছিল না। তবে উত্তেজনার পাশাপাশি ভয়ও ছিল, কারণ, তিনি জানতেন, ছবিগুলো যদি রিস্টোর করতে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এর আসল রূপ বের হয়ে পড়বে।
তবে ড্রিউই তাকে আশ্বস্ত করতে থাকলেন, মায়াটকে দেখালেন এক বছর আগেও যেখানে তিনি প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় ছিলেন, সেখানে এখন তাকে টাকাপয়সা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না, সন্তানদের ভরণপোষণ নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে না। তবে মায়াট হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এর শেষটা মোটেই ভালো হবে না।
নকল চিত্রকলা
আর্টের বাজারে প্রচুর নকল ছবি ঘুরে বেড়ালেও প্রায়ই নিলামের লোকেরা এবং বিশেষজ্ঞরা এগুলো গোপন রাখেন, যাতে আর্টের বাজারের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা টিকে থাকে। অনেকের রুটিরুজিও এর ওপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিলামে ওঠানো ছবিগুলোর ১০ থেকে ৪০ শতাংশই সম্পূর্ণ নকল। এগুলোর সাথে বেশ কিছু ছবি থাকে, যেগুলো এত বেশি রিস্টোর করা হয়েছে যে এর ভেতরে আসল ছবির কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্ট ডিলারের মতে, নিলামে যেসব ছবি বিক্রি হয়, তার ১৫ শতাংশই নকল। মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের সাবেক ব্যবস্থাপক থমাস হভিংয়ের মতে, জাদুঘরের কেনা ৪০ শতাংশ ছবিই হয় নকল অথবা অতিরিক্ত রিস্টোর করা।
এ ছাড়া ধারণা করা হয়, রাশিয়ার আভান্ত-গার্দ আমলের ৬০ শতাংশ ছবিই নকল। এ ছাড়া বিখ্যাত দুই চিত্রকর মোদিজিলানি এবং শাগালের বিধবারা টাকার বিনিময়ে 'আসল ছবি'র সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন বলে জানা যায়। সালভাদর দালিও মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় কয়েক হাজার খালি লিথোগ্রাফে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে গেছেন বলে জানা যায়।
আধুনিক চিত্রকলাকে নিজেই নিজের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে। রেনেসাঁ যুগের ছবির মতো সরল ছবি নয় এগুলো, বরং বেশ জটিল। এবং ছবির অর্থ কী, তা-ও একেকজন একেকভাবে বর্ণনা করে। ফলে ছবি সম্পর্কে না জেনে, কেবল বিখ্যাত চিত্রকরের নাম দেখেই অনেকে ছবি কিনে ফেলে কেবল নিজের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য। ফলে নকল ছবির ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে, আর ড্রিউই ঠিক এই সুযোগের সদ্ব্যবহারই করেছিলেন।
ড্রিউইর কৌশল
'কোনো ছবির শেষ মালিক হচ্ছে একজন ছবি জালকারীর সবচেয়ে বড় শত্রু।' ড্রিউইও ছবির ইতিহাসের এই মারপ্যাঁচ জানতেন, তাই তিনি এর ওপরেই কাজ শুরু করলেন। ড্রিউই আরেকজনের নাম দিয়ে মায়াটের আঁকা জাল ছবির মালিক বানিয়ে দিতেন,– যাদের বেশির ভাগই হতো তার পরিচিত কেউ, সাথে টাকার অভাব রয়েছে। ড্রিউই এদের টাকা দিয়ে ছবির জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন।
তবে যদি স্বাক্ষর করার মতো পরিচিত কেউ না-ও থাকত, সম্পূর্ণ কাল্পনিক কাউকে মালিক বানিয়ে ফেলতেন ড্রিউই। ড্রিউই স্বাক্ষরসহ আসল সার্টিফিকেট জোগাড় করতেন, এরপর স্বাক্ষরের ওপর কাগজ কেটে বা জোড়া লাগিয়ে অথবা বাক্য মুছে দিয়ে বেশ কয়েকবার ফটোকপি করতেন। ফটোকপির মাধ্যমেই নামের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিচয়ের অন্য কোনো মালিক বানিয়ে ফেলতেন।
১৯৮৯ সালে ড্রিউইর জাল করার এই সুযোগ আরও বেড়ে যায়। নিজেকে সংগ্রাহক পরিচয় দিয়ে মায়াটের আঁকা নকল দুটি ছবি লন্ডনের ইন্সটিটিউট অব কন্টেম্পোরারি আর্টে দান করে তাদের সংগ্রহশালা আর রেকর্ডরুমে ঢোকার বিশেষ অনুমতিপত্র জোগাড় করে নেন ড্রিউই। একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন টেট সংগ্রহশালাতেও, বিসি রের ছবি দানের মাধ্যমে। তবে টেট মিউজিয়াম বিসি রের ছেলেকে ছবি পরীক্ষা করলে একে নকল বলে ধরে ফেলেন তিনি। নকল ছবি দানের অপরাধ ঢাকতে ড্রিউই সাথে সাথে জাদুঘরে ৩২ হাজার পাউন্ড দান করেন, সাথে লাইব্রেরিতে গবেষণা করার অনুমতিও চান। ড্রিউইর ছবি সম্পর্কে জ্ঞান এবং অর্থদানের অঙ্ক দেখে টেট জাদুঘরও ড্রিউইকে তাদের রেকর্ডরুম ও সংগ্রহশালা দেখার বিশেষ অনুমতি দেয়। নিজের পরিচয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সত্যয়িত করেন এক নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানীর কাছে, নাম 'ড. জন ককেট'!
রেকর্ডরুমে ঢুকে ড্রিউই তার কাজ শুরু করে দেন। রেকর্ডবুক ঘেঁটে ১৯৫৫ সালের এক প্রদর্শনীর তালিকা খুঁজে বের করেন, তারপর একই ধরনের টাইপরাইটার খুঁজে বের করে একই ধরনের টাইপে মায়াটের আঁকা বেশ কিছু চিত্রকর্মের তালিকা আর তার ছবি যুক্ত করে পুনরায় রেকর্ডবুকে সেলাই করে লাগিয়ে দেন। ব্যস! রেকর্ডবুকে নকল ছবি যুক্ত হয়ে গেল আসল ছবি হিসেবে!
ছবি জাল করার জন্য ড্রিউই যত দূর পরিকল্পনা করেছেন, একজন ছবি জালকারী যে এত দূর যেতে পারে তা কল্পনা করতে পারেনি বলেই তিনি নির্বিঘ্নে নিজের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। কিছুদিন পরে ড্রিউই লন্ডনে আর্ট রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নামে এক নকল প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। নিজের নামসহ বেশ কিছু মৃত ব্যক্তির নাম যোগ করে ছবি জালকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ছবি জালকে পুরোদস্তুর নিজের পেশা বানিয়ে ফেলেন তিনি। চিত্রকরের পরিবারের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে থাকেন ড্রিউই, চিত্রকরদের জীবন, তাদের পরিবার, তাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে যা পারেন সব জেনে নিতে থাকেন, যাতে করে নকল চিঠি লিখে একে আসল বলে চালানো যায়!
মায়াটের আঁকা ১৪টি নকল ছবি বিক্রি করা নিলাম কোম্পানি সথবির মডার্ন আর্ট ডিপার্টমেন্ট প্রধান মেলানি ক্লোরের মতে, 'ড্রিউই চিত্রকরদের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য নিয়ে এমন সব কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করে ফেলতেন যে ওই নামে আদৌ কেউ ছিল কি না, তা পরীক্ষা করার উপায় ছিল না। নকল চিঠিতে থাকা সত্য তথ্য মেশানো নকল চরিত্রের স্বাক্ষর দেখেই আমাদের সেগুলোকে বিশ্বাস করে নিতে হতো।'
নিলাম প্রতিষ্ঠান আর পাবলিক আর্ট গ্যালারির আরও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। আর্ট গ্যালারিগুলো চেষ্টা করত ছবিগুলো সব সময়ের জন্যই জনগণ আর গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখার জন্য, ফলে ছবিগুলোর আসল-নকল পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ড্রিউইও এ ধরনের পাবলিক গ্যালারির ওপরেই নজর রেখে একের পর এক নকল চিত্রকর্ম বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তা ছাড়া নিলাম প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এত চাপ থাকে যে প্রতিটি ছবির খুঁটিনাটি যাচাই করে, ল্যাবে পাঠিয়ে রং পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। যেহেতু ড্রিউই রেকর্ডবুকেও নকলগুলোকে আসল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন, আর নিলাম প্রতিষ্ঠান বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষার জন্য ওই রেকর্ডবুকগুলোই পরীক্ষা করে, ফলে সেগুলোকে এর চেয়েও বেশি যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেনি তারা।
কেবল নিলাম প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, নিলাম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তথাকথিত 'বিশেষজ্ঞ' থেকে শুরু করে ছবির সার্টিফিকেট পরীক্ষাকারী, সবাই-ই ছবির আসলত্বকে পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দিয়েছে। এক জাদুঘরের কিউরেটরের ভাষ্যমতে, 'ড্রিউইর মতো একজন জালকারক যখন এতটা সফল হয়, তখন বোঝা যায়, কেবল একজন মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয় বরং পুরো সিস্টেমই দুর্নীতিগ্রস্ত। সবাই যদি নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করত, তবে এ ধরনের জাল করা সম্ভব হতো না।'
অবশেষে ড্রিউই ধরা পড়েন তার সাবেক প্রেমিকার চেষ্টায়। ড্রিউই বহুদিন আগেই বাতশেবার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন, কিন্তু রেখে এসেছিলেন ছবি জালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। বাতশেবা সে ধরনের কিছু কাগজ দেখে সন্দেহ করেন এবং পুলিশের কাছে কাগজগুলো পাঠিয়ে দেন। এদিকে ড্রিউইর কানে যায় তার বেশ কিছু কাগজপত্র বাতশেবার হাতে পড়েছে। সাবেক প্রেমিকাকে হুমকি দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রমাণসহ বাড়ি পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেন ড্রিউই। আগুনে তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে মারা যান এক ভাড়াটিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য অনুযায়ী, ড্রিউইকে ধরলেও তিনি তার চুল-দাড়ি কামিয়ে এবং চশমা খুলে হাজির হন, ফলে প্রত্যক্ষদর্শীও তাকে চিনতে ব্যর্থ হয়। ড্রিউইকেও প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
তবে ৩ মাস পর বাতশেবার কাছ থেকে পাওয়া কাগজপত্র দেখে মায়াটের বাড়িতে গিয়ে তার স্বীকারোক্তি আদায়ের পর ড্রিউইয়ের জাল ছবির কারবার সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। এরপর বেশ কয়েক মাস ড্রিউইর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পর তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়।
নিলাম প্রতিষ্ঠান, বিক্রেতা, আর্ট ডিলার, চিত্রকরের পরিবার থেকে শুরু করে চিত্রকলা বিশেষজ্ঞ বা জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ড্রিউই যেভাবে ঘোল খাইয়েছেন, তাতে তার অচিন্ত্যনীয় সৃজনশীলতার প্রশংসা না করলেই নয়। ড্রিউই প্রমাণ করে দিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব কিছুও নয়। তবে তিনি একেবারে আধুনিক চিত্রকলার একেবারে মূলে আঘাত হেনেছেন, সামনে এনেছেন এক বিরাট প্রশ্নকে। যদি কোনো ছবির নান্দনিকতা থেকে থাকে, যা কিনতে একজন আগ্রহী হয় এবং ছবি কেনার ফলে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই বিত্তশালী সংগ্রাহক, তবে সমস্যা কোথায়?
১৯৪৭ সালে ছবি জাল করে বিচার হওয়া ফন মিগেরেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আধুনিক চিত্রকলাজগতের এই অন্তঃসারশূন্যতাকেই যেন প্রশ্ন করেছিলেন, 'গতকাল এই ছবির দাম ছিল কয়েক মিলিয়ন গিল্ডার এবং বিশ্বের প্রতিটি কোনার চিত্র সংগ্রাহক, শিল্পবোদ্ধা এবং গবেষকেরা হাজির হয়েছিলেন এই ছবিটি দেখতে। আজকে এই ছবিটির কোনো দাম নেই, স্রেফ নকল হওয়ার কারণে এবং বিনা মূল্যেও কেউ এই ছবি দেখতে আসতে চাচ্ছে না। কিন্তু ছবিটা কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। তাহলে কী পরিবর্তন হয়েছে?'