নিরীহ কলম নিরীহ কালি, নিরীহ কাগজে লিখিল গালি
কলম নিরীহ, কালি নিরীহ, কাগজ নিরীহ, কিন্তু ব্যবহারকারী যদি সুকুমার রায়ের মতো দুষ্ট প্রকৃতির একজন ছড়াকার হন, তাহলে মানুষকে চটিয়ে দিতে লিখবেন 'বাদর বেকুব আজব হাঁদা/ বকাট ফাজিল অকাট গাঁধা।'
তারপর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে পাঠক। সুকুমারের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় এবং ছেলে সত্যজিতের পিণ্ডি চটকাবে।
অবস্থা বেগতিক দেখে সুকুমার এই কলম দিয়ে ভালো কিছু লিখে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন: 'শান্ত মানিক শিষ্ট সাধু/ বাছারে ধনরে লক্ষ্মী যাদু।'
সুকুমার রায় আরও লিখলেন:
রকম রকম কালির টানে
কারো হাসি কারো অশ্রুআনে,
মারে না, ধরে না, হাঁকে না বুলি
লোক হাসে কাঁদে কি দেখি ভুলি?
প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে কলম আঁকিবুকি করে যাচ্ছে, আর তাতেই সভ্যতার বিনির্মাণ চলছে নিরন্তর। কলম ক্লান্ত হচ্ছে, শক্তি হারাচ্ছে, মরেও যাচ্ছে। কলমের জুটেছে ভূয়সী প্রশংসা: বলা হচ্ছে 'পেন ইজ মাইটার দ্যান সোর্ড' কলম তরবারির চেয়ে শক্তিশালী।
এই বিখ্যাত উক্তিটি কোনো একজন সেলেব্রিটিকে (নাম স্মরণ করতে পারছি না) কিছুটা উত্যক্ত করে থাকতে পারে। তিনি বললেন, যারা কলমকে তরবারির চেয়ে শক্তিশালী মনে করেন, তারা তরবারির আঘাত আর কলমের খোঁচার তফাৎ বোঝেন না।
তরবারি ঘাতক, কলম কি ঘাতক নয়? তরবারি খাপ খেয়ে কারও মৃত্যু হয়েছে এমন কথা কেউ শুনেছেন? কিন্তু প্রতিবছর কলমের ক্যাপ গিলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একশরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এমন নয় যে মরার জন্য তারা কলমের ক্যাপ মুখে পুরেছেন। এমনিতেই লেখার জন্য কলমটা হাতে নিয়ে ক্যাপটা দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে লিখতে শুরু করলেন, তারপর তা মুখে ঠেলে দিলেন, কামড়াতে শুরু করলেন, অজান্তেই ঢুকে পড়ল আরও ভেতরে। শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে গেল, ছটফট করতে করতে মৃত্যুবরণ করলেন। বলপয়েন্ট যুগ আসার পরই এই মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। যারা ম্যাটাডর ধরনের বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করেন, তারা জানেন ক্যাপের উপরিভাগে বাতাস চলাচল করার জন্য ছিদ্র রাখা হয়েছে। প্রথম এ ছিদ্র রাখা হয় ইওঈ-এর কলমের ক্যাপে। যাতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দ্রুত মৃত্যু না ঘটে, চিকিৎসক কলমের ক্যাপটা বের করে আনার সুযোগ পান।
কলম খুঁচিয়ে মৃত্যু ঘটানোর মতো বর্বরতার কাহিনি শুনেছেন অনেকেই। আর পেননাইফ (পেন্সিল ধার করার ছুরি) শিল্পবিপ্লব-পরবর্তীকালে বহুসংখ্যক কিশোর খুনি সৃষ্টির জন্য দায়ী।
অস্ত্রাগার লুটের সময় তরবারি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছে, একালে তরবারি বড়জোর শোপিস। খাপ থেকে তরবারি খুলতে খুলতে শত্রুর গুলিতে মৃত্যু অনিবার্য। একালে আপাতদৃষ্টে যাকে কলম মনে হচ্ছে তা অবশ্যই লিখে, কিন্তু এটা যে স্পাই ক্যামেরা এবং রেকর্ডারও তা অনেকের অজানা। কিন্তু ক্রাইম থ্রিলার ও রহস্যোপন্যাসের পাঠক প্রায় শতবর্ষ আগে থেকে পেনগানের কথা পড়ে আসছেন। পেনগান বেশ ভালোভাবেই বিরাজ করছে এবং এর বৈধতাও রয়েছে।
পেনগান
কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাত্রী আকাশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। সুতরাং নিরাপত্তা চেকিং গেটে আপনি আপনার চাবি, মোবাইল ফোন, কলম, ধাতব মুদ্রা এমনকি প্যান্টের বেল্ট ট্রেতে রেখে শরীর তল্লাশির সিকিউরিটি আর্চ পেরোলেন, আপনার গায়ে হাত দিয়েও পরীক্ষা করা হলো, কিছুই নেই। তারপর ট্রে থেকে বেল্টটা তুলে পরে নিলেন, চাবি মুদ্রা ও মোবাইল ফোন পকেটে ভরলেন, নিঃসঙ্গ কলমটাকেও সবার সামনে তুলে নিয়ে শার্টের সামনের পকেটেই রাখলেন। কেউ জানলও না আপনার ওই স্টিঙ্গার কোম্পানির কলমটি আসলে পয়েন্ট ২২ ক্যালিবারের একটি পিস্তল। এই কলম নামের পিস্তলটির দৈর্ঘ্য পৌনে ছয় ইঞ্চি; যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩৪ সালের ন্যাশনাল ফায়ার আর্মস অ্যাক্ট অনুযায়ী এটি স্বীকৃত পিস্তল।
এবার পুরোনো কথায় আসি: এই কলম দিয়ে মানুষ হত্যা করা সম্ভব, উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করা সম্ভব, ভয়ংকর সব কাণ্ড করা সম্ভব। এ ধরনের কলম যদি হয় তাহলে তা অবশ্যই তরবারির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। বহু ধরনের পেনগান পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে, জং ধরছে পুরোনো দিনের তরবারিতে।
মোহাম্মাদি খাবনামায় কলম চুরি নিয়ে কী বলা আছে জানা দরকার। তবে পশ্চিমের ড্রিম ডিরেক্টরিতে স্বপ্নে কলম চুরিতে জীবনের এবং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখানো হয়েছে। আপনি কলম চুরি করছেন তার মানে আপনার অবচেতনে উজ্জ্বল সব পরিকল্পনা দেখা দিচ্ছে, আপনি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছেন, আপনার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রশংসনীয় মানুষ হিসেবে আপনার গৌরব বৃদ্ধি পাচ্ছে, আপনার সামনে অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, আপনি বুদ্ধিমত্তার সাথে বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন। স্বপ্নের সকল চুরির মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার হচ্ছে কলম চুরি।
২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল চিলি সফরকালে চেকোস্লাভ প্রেসিডেন্ট ভাক্লাভ ক্লস একটি সিরিমনিয়াল পেন (আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যবহৃত কলম) যে চুরি করছেন ইউটিউবে সেই চুরির দৃশ্যটি নিশ্চয়ই অনেকে দেখেছেন। দেখে না থাকলে 'Czech leader Vaclav Klaus caught stealing pen' লিখে সন্ধান করুন, পেয়ে যাবেন। বাক সিক্সটি ফাইভ ব্যান্ডের 'পেন থিফ' (কলমচোর) গানটিও শুনতে পারেন, চমৎকার এর কথায় আমার ফুসফুস স্পঞ্জের আর কলমটা ফানেল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলম চুরির স্বপ্ন দেখতে সক্ষম হননি, তবে একজন চোর বাস্তবিকই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রনাথের ফাউন্টেন পেন চুরি করে নিয়ে যায়। প্রিয় কলম হারিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমার ঝরনা কলম, আমার ঝরনা কলম বলে হাপিত্যেশও করেন। বলে রাখা ভালো ঝরনা কলম নামায়ন তারই করা। খ্রিষ্টীয় ৯৫৩ সালে প্রথম ফাউন্টেল পেন আবিষ্কার করেন মিসরের সম্রাট মা'দ আল-মুইজ। অনেক বছর ঝরনা কলম রাজত্ব করেছে।
বহু মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীসহ কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এক চোর। কোনটা কোত্থেকে চুরি করেছে তার সত্যতা যাচাই করতে করতে চোরকে চুরির ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। সেই চোরের কাছে যে কলমটি ছিল তা সে ঠাকুরবাড়ি থেকে চুরি করেছে বলে জানায়। যাচাই করতে তাকে রবীন্দ্রনাথের সামনে হাজির করা হলে রবীন্দ্রনাথ কলম দেখেই শনাক্ত করেন এটাই তার হারিয়ে যাওয়া কলম। কিন্তু এটা তো তাকে আদালতের আদেশ ছাড়া ফেরত দেবার সুযোগ নেই, কারণ কলমটা চোরের বিরুদ্ধে মামলার আলমত, যদিও ঠাকুর বাড়ি থেকে চোরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। রবীন্দ্রনাথকে জানানো হয় আদালতে হাজির হয়ে তাকে তার কলম ফেরত আনতে হবে। এটা তার জন্য আরও বিব্রতকর। সুতরাং তিনি সাহিত্যিক আইনজীবী সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়কে আদালতে পাঠালেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের পক্ষে আদালতের রায়ে কলমটি গ্রহণ করে কবিগুরুর হাতে তুলে দেন।
কলম চোর ক্যামেলা কাবেলো
২৮ নভেম্বর ২০১৯ কলম চুরির অভিযোগে সংবাদে উঠে আসেন সেলেব্রিটি কিউবান আমেরিকান সংগীতশিল্পী ক্যামেলা কাবেলো। তিনি কেলসিংটন প্রাসাদে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের সাথে রেডিও ওয়ানের কিড হিরো এওয়ার্ড অনুষ্ঠানের গিয়ে তাদের নাকের ডগার তলায় রাখা একটি পেন্সিল চুরি করে নিয়ে আসেন। একেবারে দিনেদুপুরে ডাকাতি। তিনি পরে ধরা পড়েছেন, অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং টুইট করে প্রিন্স ও কেটকে 'সরি' বলেছেন। পেন্সিলটি কমদামি কিন্তু ৫০ বছর পর এটি যখন এটি কলমটি নিলামে উঠবে তার মূল্য কত দাঁড়াবে অনুমান করা যায়। দারিদ্র কলম চুরিতে বাধ্য করেছে এমন ঘটনা খুব কমই। একালের কলম চোরদের মধ্যে বেশ অভিজাত লোকজনও রয়েছেন।
একালে ঝরনা কলমের চাহিদা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। ঐতিহ্যগতভাবে আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা হোয়াইট হাউসে ফাউন্টেন পেন ব্যবহার করতেন। কিন্তু মনিকা লিউনস্কির কারণে অধিকতর খ্যাত প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঐতিহ্যটা ভাঙলেন তিনি কালির কলম আর চান না। তিনি নিলেন এটিক্রস কোম্পানির ক্রস রোলার বল (বলপয়েন্ট), তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প কেউই ঝরনা কলমে ফিরে যাননি।
২০০৮ সালে একটি কলম চুরির ঘটনা বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আফ্রিকান জুলুদের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর লম্বা ধারালো কাঠের যে কলম দিয়ে ১৮৭৯ সালে ঐতিহাসিক জুুলু শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সংরক্ষণ কক্ষ থেকে ২০০৪ সালে সেই কলমটি চুরি হয়। কিন্তু ২০০৮ এর জানুয়ারির আগে কেমব্রিজ জানতেও পারেনি যে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তখনই জানতে পারল যখন চোরের প্রতিশোধপরায়ণ সাবেক প্রেমিকা বিষয়টি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আনে। পুলিশ চোরকে গ্রেপ্তার করে এবং সাবেক প্রেমিকার টিপস অনুযায়ী তার বাড়ির ড্রয়ারে লুকোনো কলমটি খুঁজে পায়।
চোরের নাম উইলিয়াম হার্মার, তবে তিনি মোটেও পেশাদার চোর নন। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পুলিশ গ্রেপ্তার করলে চুরির কথা স্বীকার করেন, তবে চুরিটি করেন টিনেজার অবস্থায়, ২০০৪ সালে।
কলম চোরদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা: আপনার চুরির সংবাদটি প্রেমিকা বা স্ত্রীর সাথে শেয়ার করবেন না। আপনাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে চোরাই কলমটি আপনার জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় কলম চুরিতে না জড়ালে।
জীবনে কখনো কলম চুরি করিনি এটা হয়তো অনেকেই বলবেন, কিন্তু জীবনেও আমার কলম চুরি হয়নি এমন কথা বলতে পারা শিক্ষিতজন দুর্লভ। ১৯৩১ দশকে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর একটি কলম চুরি হয়ে গেলে তিনি ব্যথিত হলেন, কিন্তু এ জন্য চোরের বেশি নিজেকেই দায়ী করলেন। আপনার কলমটি একজন মানুষকে চুরির জন্য কেন প্রলুব্ধ করবে? সুতরাং গান্ধী সিদ্ধান্ত নিলেন অত্যন্ত কমদামি কলম ব্যবহার করবেন। তিনি পেন হোল্ডার ও নিব ব্যবহার করতে শুরু করেন। অবশ্য কয়েকটি আনুষ্ঠানিক সাক্ষরের সময় তার হাতে ফাউন্টেন পেনও দেখা গেছে।
নোবেলজয়ী জন স্টাইনবেক পেন্সিলে লিখতেন। উপন্যাস লিখতে তিনি এক দিনে ষাটটি পেন্সিল কমবেশি ব্যবহার করেছেন, এমন হিসাবও তার জীবনীকারেরা দিয়েছেন। শরৎচন্দ্র দরিদ্রই ছিলেন। কিন্তু তার বাহারির কলমের সংগ্রহ ও ব্যবহারের কথা বহুলশ্রুত। এমিলো এরেনাস নামের একজন উরুগুয়ের নাগরিক সবচেয়ে বেশিসংখ্যক স্বাভাবিক (কালো) পেন্সিলের সংগ্রাহক হিসেবে গিনেস বইয়ে নাম উঠিয়েছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন শহর থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামের ১৬২৮০টি পেন্সিল তার কাছে আছে। পেন্সিলের সাথে শার্পনারের বিষয়টিও এসে যায়। গ্রিসের দেমেত্রা কুৎসুরিদোর কাছে আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮৫১৪টি শার্পনার।
আপনি যখন কাউকে একটি কলম দেবেন, লেখার কাগজ পেলে তিনি সবার আগে লিখবেন নিজের নাম। সমীক্ষায় দেখা গেছে অন্তত ৯৫ ভাগেরই হাতে পাওয়া কলমে প্রথম লেখাটিই নিজের নাম।
পেনের সাথে সহজেই একটি নাজুক জননযন্ত্রেও নাম উচ্চারণ করা যায়Ñপেনিস। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বহুল বিক্রিত একটি গ্রন্থের নাম: দ্য পেন ইজ মাইটার দ্যান দ্য পেনিস পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী লেখকদের লেখার উদ্ধৃতি নিয়ে এই বইটি সংকলিত। লেখক তালিকায় রয়েছেন স্যাপো থেকে শুরু করে মার্গারেট অ্যাটউড পর্যন্ত অনেকেই।
ফার্সি ভাষার কবি জালালউদ্দিন রুমি লিখেছেন: কলমটা বেশ এটা ওটা লিখছিল, কিন্তু আমি যখন ভালোবাসা লিখতে গেলাম কলমটা ভেঙে গেল।
সুকান্ত ভট্টাচার্য কলম নিয়ে কবিতা লিখেছেন 'কলম' নামে। কলম লিখে থাকে তার প্রভুর খেয়ালে। কিন্তু আর কত?
হে কলম হে লেখনী। আর কত দিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ।
আর কত মৌনমূক শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে
আর কত আর
কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার?
এ দাসত্ব ঘুচে যাক, এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ।
সম্ভবত কলমের চূড়ান্ত মুক্তির দিন এসে গেছে। নতুন সহস্রাব্দে সারা পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পেপারলেস অফিস। কাগজই যদি না থাকে কলমের চাহিদা কেন থাকবে। এমনিতেই কলমের চাহিদা কমে আসছিল, বিশ্বব্যাধি কোভিড এসে চাহিদা অর্ধেক নামিয়ে এনেছে।
কলম থাকলেই মানুষ বহু অখাদ্য-কুখাদ্য রচনা করে যাবে। ঠেকাবার উপায় কী? উপায় কি নেই? খুশবন্ত সিং আফসোস করেছেন: এখনো কলমের জন্য কেউ কনডম আবিষ্কার করেনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না, তা বোঝার একটি সূচক হচ্ছে কলমের বাজার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ অবশ্যই পেপারলেস হবে। সেই বাংলাদেশ হবে কাগজহীন, কালিহীন এবং কলমহীন বাংলাদেশ।