রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে মায়ানমারের অসহযোগিতা: জাতিসংঘে বাংলাদেশের অভিযোগ
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতিসংঘকে জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার (১২ জুন) রোহিঙ্গা ইস্যু এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে বিষয়টি জানায় পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে দেরি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ প্রধান।
বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, যারা বসবাস করছে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠীদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্মম আক্রমন চালায়, যাকে গনহত্যার সঙ্গে যার তুলনা করেছে জাতিসঙ্ঘ। এর ফলে রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, আশ্রয় নেয় এখানকার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে।
এ বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেসকে জানান শাহরিয়ার আলম।
অন্যদিকে ঢাকায়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং সম্মানজনক পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণে মিয়ানমারকে চাপ প্রদান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোকে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ সরকার।
মিয়ানমার সরকারের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে বুধবার সকালে ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকদের ডেকে এবিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে এক বিবৃতি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এবিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত এবং যুক্তি উপস্থাপন করেন মন্ত্রী।
“আমরা মনে প্রাণে চাই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাক। কিন্তু বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে তারা”, বলেন ড. মোমেন।
গত বছরের জানুয়ারিতে পুনর্বাসনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত হয় এবং এখনও পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া শুরু হয় নি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে মিয়ানমার সরকারের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিয়েও গুতেরেসকে অবহিত করেন শাহরিয়ার আলম।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ প্রধানকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সরকার ও এর অধিবাসীদের উদার এবং মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতিজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
জলবায়ু ইস্যুতেও বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহনের প্রশংসা করেন তিনি। আসছে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে’ বাংলাদেশের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণের আশা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ প্রধান।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অসাধারণ অবদানের জন্যও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
শান্তিরক্ষা মিশনের উপ-মহাসচিব জঁ পিয়ের ল্যাক্রোঁর সঙ্গেও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারের বিষয়টি তাঁকে জানান মন্ত্রী।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ এবং অগ্রগতির প্রশংসা করেন ল্যাক্রোঁ। বিশ্বশান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের কর্মকান্ডে সহযোগিতাপূর্ণ অবদান রাখতে শাহরিয়ার আলমকে অনুরোধ জানান তিনি।
ল্যাক্রোঁকে তিনি জানান, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ কাজ করে যাবে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডে বিশ্বে ‘চ্যাম্পিয়ন দেশ’ হিসেবে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ।
শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারেও ল্যাক্রোঁর প্রতি অনুরোধ জানান শাহরিয়ার আলম।
প্রসঙ্গত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা প্রক্রিয়া শুরু করতে গঠিত বিশেষ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি।