‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হাইকোর্ট পছন্দ করে না’
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরা পছন্দ করি না।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
হাইকোর্ট বেঞ্চ আরও মন্তব্য করেন, ‘নয়ন বন্ড একদিনে তৈরি হয়নি। তাকে কেউ পেছন থেকে লালন পালন করেছে, সন্ত্রাসী বানিয়েছে।’
এ সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে আদালত বলেন, ‘এগুলো প্রশাসনের বিষয়। সরকার কিছু করলে তা জনগণ দেখবে। এগুলো আদালতের দেখার বিষয় নয়।’
এর আগে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরগুনার ডিসি ও এসপির পাঠানো প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িত এজাহারভুক্ত এখন পর্যন্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আসামি ধরতে অভিযান চালানোর সময় পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হয়। পরে গোলাগুলি থেমে গেলে পুলিশ সেখান থেকে নয়ন বন্ডের লাশ শনাক্ত করে।
এর আগে গত ২৭ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রিফাত হত্যা মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ না করতে পারে সে জন্য সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করার নির্দেশ দেন। ওই দিন প্রকাশ্যে রিফাত হত্যার ঘটনা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে হাইকোর্ট ওই আদেশ দেন।
একই সঙ্গে আদালত সেদিন বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন রুল ইস্যু করবো না। তবে মামলাটি আমাদের নজরদারিতে থাকবে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে হাইকোর্ট অগ্রগতি জানাতে বলায় আজ ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২২) কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যার ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন স্থানীয়রা। ভিডিও ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
গত ২৬ জুন স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য দিবালোকেই রিফাত শরীফ নামে বরগুনার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। হত্যাকান্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায় রিফাতের স্ত্রী বারবার ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় পাশে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও রিফাতের স্ত্রী ছাড়া কেউই সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
এর একদিন পর বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে মামলা করেন রিফাত শরীফের বাবা।
এরমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে তাতে দেখা যায়, হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার মূল নকশা করেন প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দেশব্যপী সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
ঘটনার পর অভিযুক্ত কয়েক আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পালিয়ে যান ঘটনার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। এরপর ২ জুলাই, মঙ্গলবার সকালে পুলিশের বরাত দিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়নের নিহত হবার খবর আসে গণমাধ্যমে।