ঈদের আগের দিন বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ আনন্দ
রাত পোহালেই ঈদ-উল-আযহা। মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান দুই উৎসবের এটি একটি। এমন সময়ে দেশ থেকে আট হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পরিবারের সঙ্গে না থাকতে পারায় মন খারাপই হওয়ার কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। যদিও দারুণ এক জয়ের পর আর মন খারাপ থাকার কথা নয়। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এমন অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম নয় ক্রিকেটারদের, এ ছাড়া ঈদের আগের দিন মিললো বিদেশের মাটিতে এক যুগ পর প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দ। সব মিলিয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে ঈদটা মন্দ কাটার কথা নয় তামিম-সাকিবদের।
মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের ৫০তম ওয়ানডে জয়। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা জিম্বাবুয়ে তিন হাফ সেঞ্চুরিতে ২৯৮ রান তোলে। জবাবে দারুণ শুরুর পর অধিনায়ক তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি এবং মোহাম্মদ মিঠুন ও নুরুল হাসান সোহানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১২ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বিদেশের মাটিতে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় হোয়াইওয়াশ সাফল্য। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের সেই ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক কেনিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় খালেদ মাসুদ পাইলটের দল। এর এক বছর আগে ঘরের মাটিতে কেনিয়াকে হারিয়েই প্রথম বারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
তিন বছর পর ২০০৯ সালে বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় বারের মতো প্রতিপক্ষকে সিরিজের সব ম্যাচে হারায় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ছিল। এরপর অনেক সময় গেলেও দেশের বাইরে বিপক্ষ দলকে সব ম্যাচে হারানো হয়নি। জিম্বাবুয়ে সফরে দীর্ঘ ১২ বছরের অপেক্ষা ফুরালো বাংলাদেশের। মিললো ওয়ানডেতে ১৫তম হোয়াইটওয়াশের সাফল্য।
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বিদেশের মাটিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তার তাড়ার সাফল্য। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তারার রেকর্ডটিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ৩১৩ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেটে টপকেছিল বাংলাদেশের। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্যারিবীয়দের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই টপকে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও এই সিরিজটি হাল্কাভাবে নেওয়ার সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের। ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ ছিল ম্যাচ তিনটি। তামিমবাহিনীর দৃষ্টি ছিল পুরো ৩০ পয়েন্টে। সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসানের ছন্দে ফেরার সিরিজের সব কটি ম্যাচ জিতে লক্ষ্য পূরণ করলো বাংলাদেশ। তিন জয়ে সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান পোক্ত হলো। ১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে তামিমের দল দুই নম্বরে। ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দাপুটে শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৮৮ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। যা বিদেশের মাটিতে উদ্বোধনী জুটিতে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। এরপর ৩২ রান করে থামেন লিটন। তার বিদায়ের পর তামিম ইকবালের সঙ্গে দ্রুতই মানিয়ে নেন সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন তামিম-সাকিব। দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় থামেন সাকিব। লুক জঙ্গুয়ের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৩০ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ম্যাচ সেরা তামিম একই ছন্দে খেলে যেতে থাকেন। প্রথম কয়েক বল পরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে দাপুটে ব্যাটিং করা তামিম ৮৭ বলে ৭টি চার ও ৩ ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এটা তার ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম।
৯৭ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ রান করে তামিম বিদায় নেওয়ার পর হঠাৎ দিক হারায় বাংলাদেশ। পরের বলেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে থামান জোরা আঘাত হানা জিম্বাবুয়ের পেসার ডোনাল্ট টিরিপানো। এরপরও চাপ বুঝতে হয়নি বাংলাদেশকে। পঞ্চম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি গড়েন মিঠুন ও সোহান। মিঠুন ৩০ রান করে আউট হওয়ার পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন সোহান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৭ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। দুটি করে উইকেট নেন টিরিপানো ও মাধেভেরে।
এরআগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ে সাবধানী শুরুর পরও কয়েকবার চাপে পড়ে। প্রথম কয়েক দফায় দলের চাপ সামলে নেওয়ায় নেতৃত্ব দেন সবচেয়ে বড় ইনিংস খেলা রেজিস চাকাভা। কিছুটা সময় ব্রেন্ডন টেলর ও ডিওন মায়ার্সেও সওয়ার হয় স্বাগিতকরা। এরপর দারুণ ব্যাটিং করেন সিকান্দার রাজা ও রায়ার্ন বার্ল।
সব মিলিয়ে ২৯৮ রান তোলে জিম্বাবুয়ে। শেষের দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমান দ্রুত উইকেট না নিতে পারলে আরও বড় হতে পারতো বাংলাদেশের লক্ষ্য। ওপেনার রেজিস চাকাভা ৯১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। রাজা ৫৭ ও বার্ল ৫৯ রান করেন। এ ছাড়া টেলর ২৮ ও মায়ার্স ৩৪ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজ। নিজের করা শেষ ওভারেই তিনটি উইকেট পান ৮ ওভারে ৮৭ রান দেওয়া সাইফউদ্দিন। দুই বছর চার মাস পর ওয়ানডে উইকেটের স্বাদ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২টি উইকেট নেন। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ একটি করে উইকেট নেন।