ছোটদের চোখ দিয়ে বিরাট স্বপ্ন দেখছেন মিরাজ-সাইফউদ্দিনরা
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, দলও তখন দারুণ ছন্দে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ২০১৬ যুব বিশ্বকাপের শিরোপা দেখতে পাচ্ছিলেন অনেকেই। ঠিক পথেও ছিল বাংলাদেশ যুবারা। কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ। যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় মিরাজ, শান্ত, সাইফউদ্দিনদের।
এবার শেষ চারের বাধা পেরিয়ে গেছেন আকবর আলী-মাহমুদুল হাসানরা। শিরোপার লড়াইয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের যুবারা। যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ফাইনাল অভিজ্ঞতা সুখের না হওয়ায় পুরনো একটি প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে, সোনালী শিরোপা নাকি আরেকটি হৃদয় ভাঙার গল্প?
রোববার রাত ১০টার মধ্যে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। যুব বিশ্বকাপ পেয়ে যাবে নতুন অথবা চিরচেনা চ্যাম্পিয়নকে। এরআগে ফাইনালে অনুজদের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের দুই অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এবারের যুব দলের পারফরম্যান্স, তাদের সামর্থ্য, প্রতিপক্ষ ভারতসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন এ দুজন।
মেহেদী হাসান মিরাজ
শিরোপা জেতা প্রসঙ্গে
শেষটা যেন ভালো হয় এটাই চাই। আমার ভালো লেগেছে, ওদের তিনটা বিভাগই বেশ ভালো খেলছে। যেটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি ওরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসবে। এটাই আমার প্রত্যাশা। আমাদের দেশের সবার প্রত্যাশা, ওরা চ্যাম্পিয়ন হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এই প্রথম ফাইনালে খেলবে। এটা একটা বড় পাওয়া আমাদের দেশের মানুষের জন্য।
ফাইনাল ও ভারতকে হারানো প্রসঙ্গে
ভারতের সাথে অনেক কাছে গিয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ হেরেছি। তবে কাল আমাদের পারতে হবে। অবশ্যই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলব। ছেলেরা যে করম খেলছে, আশা করি ওরাও অনেক আত্মবিশ্বাসী। সবার অনেক আশা। চাপ নয়, এর আগে যতগুলো ম্যাচই খেলেছে, যেভাবে খেলেছে, একইরকম খেললে হয়তো আমরা ভারতকে হারাতে পারব।
মিরাজদের সঙ্গে এই দলের পার্থক্য
আমাদের সময় পারফর্মার আমি ছিলাম, শান্ত, সাইফউদ্দিন, ইমন ছিল। বোলারদের মধ্যে সবাই মোটামুটি পারফর্ম করেছে। তিন চারজন এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলেছে। এ জন্য হয়তো আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্তই খেলেছি। যে পার্থক্য দেখছি, সেটা হচ্ছে ওদের সবাই ভালো খেলছে, দুই-একজন নয়। পেসাররা কন্ট্রিবিউট করছে। এরপর ১ থেকে ৫ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান যারা, ওরাও যখন যেটা দরকার সেটা করছে। দুজন বাঁহাতি স্পিনারও খুব ভালো বোলিং করছে। সব মিলিয়ে যখন যা দরকার, তখন তা করছে। আমরা ভুল না করলে ১৬'র বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতে পারতাম। আশা করি আমরা যেটা করতে পারিনি, ওরা সেটা করবে।
প্রতিপক্ষ ভারত প্রসঙ্গে
ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ওরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। অবশ্যই ওদেরকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। কারণ ওরা অনেক অভিজ্ঞ এবং অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে সব সময়। আমাদের জন্য এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ওরা অনেক আত্মবিশ্বাসী।
টিপস
আমার পক্ষ থেকে ওই রকম টিপস নেই। শুধু বলব, ওরা যে রকম ক্রিকেট খেলছে, সে রকম খেলুক। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ ওদের সমর্থন করবে। জাতীয় দলের যেসব ক্রিকেটার আছেন, তারা অনেক সমর্থন করবেন। ওদের সবার জন্য অনেক শুভ কামনা।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
ফাইনাল নিয়ে
আমি নিজে অনেক এক্সাইটেড। ইতিহাস বলা যায়। আমাদের দল প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো ইভেন্টের ফাইনালে খেলছে। সত্যি অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। ম্যাচটি দেখার জন্য অনেক আগ্রহী আমি। একাডেমি ভবনে সেমিফাইনালের ম্যাচ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি বল দেখেছি।
প্রতিপক্ষ ভারত প্রসঙ্গে
শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপের একটা ম্যাচ দেখেছিলাম। খুব অল্প রানে, ভারতকে ১০৭ (১০৬) রানে অল আউট করেছিল বাংলাদেশ। খুব কাছে গিয়েও আমরা হেরে গিয়েছিলাম। ম্যাচটি দেখে অনেক খারাপ লেগেছিল। বিশ্বকাপে যেহেতু একই প্রতিপক্ষ পেয়েছে, ভালো একটি সুযোগ এসেছে। প্রতিপক্ষ না ভেবে যদি আমাদের জুনিয়ররা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে, তাহলে জয় পাওয়া সম্ভব।
ফাইনালের চাপ প্রসঙ্গে
ফাইনাল ম্যাচ অবশ্যই ভিন্ন। নতুন নতুন পরিবেশ, নতুন প্রতিপক্ষ। আমার মনে হয় প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা না করে স্বাভাবিক খেলাটা খেললেই জয় পাওয়া সম্ভব। আমাদের বোলাররা বলেন, ব্যাটসম্যানরা বলেন, খুব ভালো ফর্মে আছে। আমাদের ফিল্ডিং সাইডও বেশ ভালো। এগুলো যদি প্রয়োগ করতে পারে মাঠে, তাহলে জয় পাওয়া সম্ভব।
যুব দলের খেলোয়াড় প্রসঙ্গে
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যারাই যায়, প্রত্যেকে প্রমাণিত খেলোয়াড়। একটু ১৯-২০ হয়তো থাকে। আমরা বিগত ৮-১০ বছরে অনেক ভালো খেলোয়াড় দেখেছি। ইনজুরির কারণে, অফ ফর্মের কারণে বা বাজে অভ্যাসের কারণে তারা সরে যায়। এখানে সব খেলোয়াড়ই দক্ষতাসম্পন্ন। যে মানিয়ে নিতে করতে পারবে, যে বেশি পরিশ্রম করবে, দ্রুত জাতীয় দলে বা ভালো পর্যায়ে খেলতে পারবে।