ফরাসি সাংবাদিকের বোমা: দুর্নীতি, ম্যাচ ফিক্সিং, যৌন কেলেঙ্কারিতে সয়লাব ফুটবল
- দুজন নারীর উপর যৌন নিপীড়নের পাশাপাশি ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ফুলব্যাক ফারলান মেন্ডি।
- অনেক দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত পিএসজি, সংযোগ আছে সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথেও।
- আফ্রিকার বেশ কিছু ফুটবল ফেডারেশন পতিতাবৃত্তি বা শিশুকামিতার সঙ্গে জড়িত।
- ফুটবলকে ব্যবহার করে সদস্য নিয়োগ দেয় আল-কায়দা।
এরকম অসংখ্য চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নিয়ে ফুটবল বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছেন ফরাসি সাংবাদিক রোমাইন মলিনা। দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে কাজ করা এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক আজ টুইটারে লাইভে এসে জানান এসব তথ্য।
ফ্রান্স থেকে শুরু করে বিশ্বের আনাচে-কানাচের বেশ কিছু লিগ, পরিচালনা পর্ষদ ও ফুটবলারদের গোপন তথ্য ফাঁস করেন এই সাংবাদিক। এর আগে, ২০১৮ সালে হাইতি ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ইভিস জ্যঁ-বার্টের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও শিশুকামিতার অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। তার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে বার্টকে অভিযুক্ত করে ফিফা।
আজকের টুইটার লাইভে যেসব বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন মলিনা, তার উল্লেখযোগ্য অংশ:
ফারলান মেন্ডি
মলিনা বলেন, এক নারীকে ধর্ষণের পর তাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন মেন্ডি। মাথার আঘাতের জন্য সে নারীকে পরবর্তীতে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হয়। এ ঘটনা জানার পর তা ধামাচাপা দেয় মেন্ডির তৎকালীন ক্লাব, লিওঁ।
ধর্ষণের শিকার খেলোয়াড়েরা
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের শীর্ষ লিগগুলোতে খেলা চার শতাধিক ফুটবলার বাল্যকালে ধর্ষিত হয়েছেন। যে কারণে এখনও পায়ুপথের রোগ বা ইনজুরি নিয়ে বিশেষ ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে হয় তাদের। মলিনা জানান, প্রায় দুই দশক ধরে এ দুই দেশের ফুটবল পরিমণ্ডলে চলে আসছে এই ঘৃণ্য চর্চা।
পিএসজি: দুর্নীতি, অপকর্ম ও সিসা
ফরাসি ক্লাবটির ব্যাপারে মলিনা বলেন, "আমি চাইলে পিএসজি ও নাসের আল খেলাইফিকে নিয়ে একটা বই লিখতে পারবো। এদের দুর্নীতি ও অপকর্ম কেউ খালি চোখে দেখতে পায় না। একদিন পিএসজি ও খেলাইফির অন্ধকার দিকগুলো জানতে পারবে সবাই। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে ক্লাবটির।"
এছাড়া মলিনা জানান, পিএসজির ৮০ শতাংশ ফুটবলারই সিসা সেবন করে। এই মাদক নিয়েই একসময় অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতে খেলতে যেতো পিএসজি।
আর্সেনাল
হিলিয়াম বেলুন সেবন করার মাধ্যমে ড্রেসিংরুমে নিয়মিত নেশা করে থাকেন আর্সেনালের খেলোয়াড়েরা।
ফরাসি কোচ ও খেলোয়াড়ের যৌন কেলেঙ্কারি
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা এক ফরাসি কোচ ১৩ বছর বয়সী দুই মেয়েকে ধর্ষণ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। মলিনা জানান, তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে ছাটাই করা হলেও এই খবর ধামাচাপা দেয় তার নিয়োগদাতারা।
মলিনা আরও জানান, ফ্রান্স জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়ের নাইট ক্লাবে মলত্যাগের মাধ্যমে বিকৃত যৌনাচার করার অভ্যাস রয়েছে। এই ফুটবলারের বিকৃত যৌনাচারের শিকার এক নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
বেনজেমার প্রত্যাবর্তন
করিম বেনজেমাকে ফ্রান্সের জাতীয় দলে ফেরানোর পিছনে ছিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর হাত। মলিনা জানান, কোচ দিদিয়ের দেশম কখনোই বেনজেমাকে ফেরাতে চাননি। কিন্তু প্রেসিডেন্টের অনুরোধে এবারের ইউরো দলে এই রিয়াল তারকাকে জায়গা দিতে বাধ্য হন।
আল-কায়দার নিয়োগ প্রক্রিয়া
জঙ্গি নিয়োগের জন্য বেশ কিছু জায়গায় ফুটবলকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী সংগঠন আল–কায়দা। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বর্ণনা দেননি মলিনা।
ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা ও জিব্রাল্টারের লিগগুলোতে ম্যাচ পাতানো একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়া, এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচও পাতানো হয়ে থাকে। এ কারণে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলের হয়ে খেলা বন্ধ করে দিচ্ছে।
আফ্রিকায় পতিতাবৃত্তি ও শিশুকামিতা
আফ্রিকার একাধিক ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানরা ফেডারেশনের অর্থ দিয়ে যৌনকর্মী রেখে থাকেন। মলিনা জানান, অনেক নামকরা ফুটবলারও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া, কঙ্গোর এক ফুটবল একাডেমি শিশুকামী কার্টেলের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান এই ফরাসি সাংবাদিক।