ফুটবলে করাল যুদ্ধের ছায়া!
১.
ফিফার সাবেক এবং বহুল বিতর্কিত সভাপতি সেফ ব্ল্যাটার দাবি করেছেন, ফুটবল এই বিশ্ব চরাচরের মতই প্রাচীন; মানুষ সব সময়ই কোনো না কোনো ধরনের ফুটবল খেলেছে। আজকের দিনে যেমন ফুটবলে লাথি দেওয়া হয়, সে রকম মৌলিক কাজটি সদাসর্বদাই করা হয়েছে।
ব্ল্যাটারের এই উক্তি দিয়েই ডেভিড গোল্ডব্ল্যাট তার বিখ্যাত বই, 'দ্য বল ইজ রাউন্ড: দ্য গ্লোবাল হিস্টোরি অব সকার'-এর 'দ্য চেসিং শ্যাডোজ: দ্য প্রিহিস্টোরি অব ফুটবল' অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। তারপরই গোল্ডব্ল্যাট প্রশ্ন তোলেন, সত্যি? আমরা এভাবে খেলতাম? অতিশয় উক্তির দায় থেকে ফিফার তৎকালীন সভাপতি ব্ল্যাটারকে মাফ করে দেওয়ার আহ্বান জানান। তারপর ব্ল্যাটারকে যুক্তির চাবুকে তুলোধোনা করে ছাড়েন গোল্ডব্ল্যাট।
২.
গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র থরের কাহিনি অনেকেই জানেন। যিনি তার অমিত শক্তিবলে মহাকালের গতিকে মুহূর্তের জন্য হলেও থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন। এরপরই স্বর্গে শক্তি পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাকে পানপাত্র ভরে দেওয়া হয়েছিল সাত মহাসাগরের পানি। থর তা জানতেন না। তিনি প্রাণপণে চুমুক দিয়ে পানপাত্রের পানিও কমিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু নিঃশেষ করতে পারেননি। থর একে ব্যর্থতা ভেবেছিলেন। কিন্তু দেবরাজ জিউসসহ বাকি সব দেবতা থরের শক্তিকে ভয় পেয়েছিলেন।
সাময়িকভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে এমনই এক অপরিসীম ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় পেলে। ব্রাজিলের সান্তোস ক্লাবে খেলতেন পেলে। ১৯৬৯ সালে এ ক্লাব ফুটবল খেলার জন্য সফর করছিল আফ্রিকা। সে সময় নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ লড়াই দুই বছর ৬ মাস ১ সপ্তাহ ২ দিনব্যাপী চলেছে। পেলের আফ্রিকা সফরের সময়ে বাইফ্রান যুদ্ধ নামেও পরিচিত নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলছিল পুরোদমে। এ সত্ত্বেও গ্রিন ইগলস ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল সান্তোস। নাইজেরিয়ার মানুষ শুনলেন সান্তোসের দলের হয়ে খেলতে আসবেন পেলে। ব্যস, শান্তিমতো খেলতে দিতে হবে দুই দলকে। তাই ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়ে গেল লড়াইরত পক্ষরা। ফুটবল জগতের রাজাকে মানুষ প্রাণভরে দেখতে উদ্গ্রীব ছিলেন। সান্তোসে পেলের সতীর্থ খেলোয়াড় লিমা বলেন, আরামে খেলা দেখার আশায় দর্শকেরা মাথায় করে চেয়ার নিয়ে এসেছিল।
ফুটবল ঘিরে অন্য কাহিনিও আছে। রক্তাক্ত লড়াইয়ের 'প্রতিশোধ' হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ২২ জনের মরণপণ এ খেলা। ঘটনাটা ১৯৬৬-এর বিশ্বকাপের। সেবারে স্বাগতিক দেশ ছিল ইংল্যান্ড। ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নামে পশ্চিম জার্মানি। খেলার ২০ মিনিটের মাথায় দুইপক্ষই গোল করে। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ হয় ২-২ গোলে। কাজেই খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। ১০৩ মিনিটের সময়ে বলের গোলা ছুঁড়লেন ইংল্যান্ডের তারকা খেলোয়াড় জিউফ হার্স্ট। কিন্তু ক্রসবারে লেগে তার দেগে দেওয়া বল গোললাইনের কাছে পড়ে। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা তাকে গোল বলেই দাবি করে। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড়রা বলেন, গোল হয়নি। কারণ, বল মোটেও গোললাইন অতিক্রম করতে পারেনি। এবারে রেফারি গটফ্রাইড ডাইনস্ট এ বিষয়ে লাইনসম্যান তোফিক বাখরামোভের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লাইনসম্যান বাখরামোভ একে গোল বলে সিদ্ধান্ত দিলেন। এর একটু পরেই আরেকটি গোল করে ৪-২ গোলে ফাইনালে বিজয় অর্জন করে ইংল্যান্ড।
কিন্তু গোললাইন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পরে দেখা যায় যে বাখরামোভ গোল হিসেবে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, তা ভুল। বল গোললাইন পার হতে পারেনি। বলা হয়, মৃত্যুশয্যায় শায়িত বাখরামোভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন সেদিন তিনি জেনেশুনে এই ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। জবাব তিনি বলেন, স্তালিনগ্রাদ। অর্থাৎ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় স্তালিনগ্রাদের ভয়াবহ যুদ্ধের প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে জুন থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মে পর্যন্ত চলমান এ যুদ্ধে অন্তত ১২ লাখ সোভিয়েত মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অন্যদিকে অন্তত পাঁচ লাখ জার্মান নিহত এবং ৯১ হাজার যুদ্ধবন্দী হয়েছিল।
৩.
একইভাবে যুদ্ধের করাল ছায়া ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। প্রতিযোগিতা এতই ধারালো যে তাকে ফুটবল বৈরিতা হিসেবেও বলতে পছন্দ করেন কেউ কেউ।চ
এই প্রতিযোগিতা বা কিংবা বৈরিতা যা-ই বলুন, তার মূলে রয়েছে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের এই দ্বীপটি থেকে দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূমি মাত্র ৪৬০ কিলোমিটার দূরের পথ। দ্বীপটি স্বশাসিত ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি। এ দ্বীপের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যুক্তরাজ্য।
ফকল্যান্ডের ভূমির ৯০ শতাংশই চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং দ্বীপটির অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
১৯৬২ সালের আগে ব্রিটেনের অ্যান্টার্কটিক টেরিটরিকে নির্ভর করতে হতো এ দ্বীপের ওপর। অনেক বিশেষজ্ঞ এখনো মনে করেন, ফকল্যান্ডের ওপরই নির্ভর করে ভবিষ্যতে অ্যান্টার্কটিকার সম্পদের ওপর দাবি তুলবে ব্রিটেন।
আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে স্পেন, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা এবং যুক্তরাজ্য এই চার দেশই ফকল্যান্ডের ওপর নিজদের সার্বভৌমত্ব দাবি করেছে। মনে করা হয়, অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুসি প্রথম এ দ্বীপকে দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এ দ্বীপের কথা প্রথম উল্লেখ করেন ব্রিটিশ নৌ-অভিযাত্রী জন ডেভিস। অন্যদিকে ফকল্যান্ডের প্রথম মানচিত্র তৈরি করে ফ্রান্স। ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বীপটিতে প্রথম বসতি স্থাপনও করে তারাই। পরে ব্রিটিশরা এ দ্বীপকে তাদের বলে দাবি করে। ১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্বীপটিকে স্পেনের কাছে বেচে দেওয়া হয়। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে নতুন প্রজাতন্ত্র বুয়েনস এইরেসের (পরবর্তী সময়ে আর্জেন্টিনা) অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় একে। ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশরা দ্বীপপুঞ্জটি পুনরায় দখল করে নেয়। সেখানে প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে ফকল্যান্ড যুদ্ধ প্রথমে শুরু করে আর্জেন্টিনা। দেশটির সেনারা দ্বীপপুঞ্জটি দখল করে নেয়। প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশ নৌ ও বিমান হামলা চালায়। লড়াই চলেছে ৭৪ দিন।
যুদ্ধে ব্রিটিশ ২৫০ এবং আর্জেন্টিনার প্রায় সাড়ে ছয়শ সেনা নিহত হয়। এছাড়া প্রাণ হারায় ফকল্যান্ডের তিন ব্যক্তি। আর্জেন্টিনার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অসম এ লড়াইয়ের পর্দা নেমে আসে।
যুদ্ধের ফলে আর্জেন্টিনার শেষ সামরিক স্বৈরশাসক লিওপোল্ড গালতিইয়ারি দেশব্যাপী সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে এ যুদ্ধ ফকল্যান্ডবাসীদের ভাগ্য খুলে দেয়। তারা পূর্ণ ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন। অন্যদিকে এ যুদ্ধই ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার মধ্যে তীব্র ফুটবল প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়। ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপে তার উত্তাপ টের পাওয়া গেছে।
'ইশ্বরের হাতের সাহায্যে' ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন ফুটবলের অন্যতম বরপুত্র দিয়াগো মারাডোনা। ২০০২ সালে একই খেলায় আবার গোল দেন তিনি। এ গোলকে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে ভোট দেওয়া হয়েছে।
ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে রানিশাসিত ব্রিটিশ গণতান্ত্রিক সরকার হৃদয়ে বড়ই চোট পেয়েছিল। দেশটির সরকারি দলিল-দস্তাবেজ থেকে জানা যায়, ১৯৮২-এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে খেলতেই চায়নি তারা।
ব্রিটেনের জাতীয় মহাফেজখানা থেকে নতুন প্রকাশিত কাগজপত্র থেকে জানা যায় যে আর্জেন্টিনার সাথে খেলার কথা ভাবতে গিয়ে তীব্র অনীহার শিকার হয়েছেন দেশটির ফুটবল খেলোয়াড়েরা। হয়তো বিবমিষাও বোধ করেছেন। তবে লৌহমানবী হিসেবে খ্যাত তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার কঠোর হুঁশিয়ারি জানান। তিনি স্বদেশি খেলোয়াড়দের বলেন, আর্জেন্টিনার সাথে খেলতে অস্বীকার করলে তাতে দেশটিকে ব্রিটিশবিরোধী প্রচারের ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেওয়া হবে।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য স্পেনে গিয়েছিল।
এর আগে আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ডে অভিযান চালানোর পরপরই ২ এপ্রিল ১৯৮২ সালে ব্রিটিশ ক্রীড়ামন্ত্রী নেইল ম্যাকফারল্যান্ড একটি নির্দেশনা জারি করেন। এতে ব্রিটিশ কোনো ক্লাব বা ব্যক্তিকে আর্জেন্টিনার সাথে ক্রীড়া সম্পর্ক স্থাপন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জুনে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। তাতে ব্রিটেন অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মে মাসে একটা চিঠিও দেন থ্যাচার। তিনি পরে লেখেন, এক সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে আমি ঠিক করি বিশ্বকাপে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
তিনি আরও বলেন, তবে এইচএমএস শেফিল্ড এবং সি হ্যারিয়ার্সে ব্রিটিশদের প্রাণহানির ঘটনা অনেক আন্তর্জাতিক ফুটবলার এবং প্রশাসকের ওপর উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তারা এ সময়ে আর্জেন্টিনার সাথে একই টুর্নামেন্টে খেলার কথা ভাবতে যেয়ে তীব্র অনীহা বা বিবমিষার শিকার হচ্ছেন।
অন্যদিকে ফিফা জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিযোগিতার থেকে সরে পড়ার জন্য আর্জেন্টিনাকে কোনো চাপ দেওয়া হবে না।
ব্রিটিশ দল যদি বিশ্বকাপ থেকে সরে যায়, তবে সে কাজ দেশটিকে একাই করতে হবে। অন্য কোনো দেশ এ ক্ষেত্রে তাদের সহযাত্রী হবে না বলে থ্যাচাকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা স্বীকার করেন দেশটির ক্যাবিনেট মন্ত্রী রবার্ট আর্মস্ট্রং। এছাড়া বিশ্বকাপে ব্রিটিশরা অংশ না নিলে সে জন্য আর্জেন্টিনা কোনো চাপে পড়বে না বা বিন্দুমাত্র চাপও অনুভব করবে না। বরং ব্রিটিশবিরোধী প্রচারের সোনায় সোহাগা সুযোগ পাবে। মাঝখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একলা হয়ে যাবে ব্রিটেন। আর যা-ই হোক, 'তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে' গানের কথা মেনে চলার জাত নয় ব্রিটিশ।
রাজনীতিবিদদের সঙ্গে শলাপরামর্শ এবং আলাপ-আলোচনা করা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড টুনার্মেন্টে অংশ নেয়। তবে এ তিন দলের কেউ মাঠে আর্জেন্টিনাকে মোকাবিলা করেনি। তারা আগেই হেরে বিশ্বকাপের আসর থেকে টুস করে ঝরে যায়।
দ্বিতীয় রাউন্ডের নিচের দিকে ইতালির কাছে হেরে স্বদেশের পথ ধরে আর্জেন্টিনা। আর সে বছর বিশ্বকাপ ঘরে তোলে এই ইতালিই।
এদিকে একই বছর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আগস্টে আর্জেন্টিনার সাথে ক্রীড়াবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ব্রিটিশ।
৪.
বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখতে গিয়ে পুরাই মদন বনে গেল আমাদের পাড়ার আবুইল্যা ওরফে আবুল। আমরা যাকে টান টান বলি আবুইল্যা তাকে বলে 'টন টন।' এই 'টন টন' উত্তেজনার ফাইনাল খেলায় তার পাশে এক দর্শকের আসন খালি। আবুইল্যা কৌতূহলে ব্রেক কষতে পারল না। ভাই, ওই আসনটা খালি ক্যান? এমন খেলা দেখতে আসেনি কোন ছাগল! জবাবে লোকটা পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে বলল, ওই ছাগলটা হইল আমার বউ। গত ত্রিশ বছর ধরে যখন যেখানেই বিশ্বকাপ ফাইনাল হইছে দেখতে গেছি। এবার সে মারা গেছে। তাই আসতে পারে নাই। তার সিটটাই খালি। এবারে আবুইল্যা কইল, তা ভাই, পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ ছিল না? তারে দিতে পারেন নাই টিকিটটা। না ভাই। আমার বউরে পরিবারের সবাই খুবই পছন্দ করত। তারা সবাই আজ গেছে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়! জবাব শুনে আবুইল্যা এবারে নিজেই আবুল বনে গেল!
কাতারে মদ নিষিদ্ধ। সে কথা জেনেও ফাঁকি দিয়ে পানের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েন ব্রাজিলের সাপোর্টর এক বাংলাদেশি, ফ্রান্সের সাপোর্টার পাকিস্তানি ও আর্জেন্টিনার ভক্ত ভারতের ফুটবলপ্রেমিক নাগরিক।
এই তিন বান্দাকে আদালতে নেওয়ার পর বিচারক বললেন, মদ খাওয়ার শাস্তি ৪০ শাল্লাক। মানে বেত্রাঘাত। তবে তোমরা আমাদের মেহমান। আরবীয়রা মেহমানদের সম্মান করে। এখন শাস্তি দেওয়ার সময় তোমাদের একটা করে অনুরোধ রাখা হবে।
পাকিস্তানি কইল, আমার পিঠে বিশটা বালিশ বেঁধে তারপর শাল্লাক মারেন হুজুর।
দশ বেত্রাঘাতের পরই সব বালিশ ফেঁসে গেল। এবারে ভারতীয়র পালা। সে বলল, মোটা গালিচা দিয়ে পেঁচিয়ে ৪০টা বালিশ পিঠে বেঁধে তারপর মারার নির্দেশ যেন দেন বিচারকজি। কিন্তু ত্রিশদফা বেত্রাঘাতের পরই সব ছিঁড়েখুঁড়ে একাকার! এবারে বাংলাদেশির পালা। সে মিন মিন করে বলল, হাবিবি হাবিবি ইয়া হাবিবি স্যার, আমার পিঠে ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনার দুই সাপোর্টারকে বাইন্ধা তারপর বেত মারেন!
(সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা: ইহা নিছক মশকরা। কোন দল বা দেশকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কওয়া হয় নাই। আপনারা বলিবার কালে নিজ ইচ্ছা, খেয়াল বা খুশিমতো রদবদল, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিতে পারিবেন)
যাকগে, ফুটবলের কথা উঠলেই ফিফার নাম মনে উড়ে এসে জুড়ে বসবেই। তা ফিফা বলতে কী বোঝায়? লিখিত পরীক্ষায় কয়েক শ চাকরি প্রার্থীকে ডিঙিয়ে প্রথম হওয়া তরুণকে 'মুখিক' মানে মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হলো। চৌকস তরুণ বলল, আগে যা বোঝাত, তা এখন একদম বাতিল। নতুন কালে, আজকের দিনে ফিফা বলতে বোঝায় ফেইলিং ইন ফুটবল অ্যাডমিসটারিং। এ শব্দগুলোর আদ্য অক্ষর নিলেই পেয়ে যাবেন ফিফা।
চাকরিদাতাও কম যান না। আগেকার দিনে হলে বলা হতো শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি কিন্তু এখন নাকি বলা হয় শেয়ালে শেয়ালে হাগিং। তিনি এবারে প্রশ্নবাণ ছুড়লেন, ঠিক আছে। তা কন তো একটা খারাপ বাত্তি বদলাইতে ফিফার কয়জন কর্মী লাগবে?
একজনও না। কারণ, ফিফা অন্ধকারেই কাজ সারে বা সারতে পছন্দ করে।
চাকরিদাতা বললেন- হুম! আচ্ছা এবারে শেষ প্রশ্ন, একটা গাড়িতে ফিফার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগ পরিচালক উঠেছেন। এবারে গাড়িটা চালাবেন কে?
জি। উত্তরটা সহজ। গাড়ি চালাবে পুলিশ!
এবারে প্রশ্ন- তারপর কি এই চৌকস প্রার্থীর চাকরি হয়েছিল?
জবাবটা আপনারা খুঁজুন।