ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ড: ভূরাজনীতি যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাড়তি উত্তাপ ছড়াবে
গত এপ্রিলে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রয়ের পর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান একই গ্রুপে পড়েছে।
গ্রুপ বি-র এই দল দুটির ম্যাচ রাজনৈতিকভাবে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ।
তবে গ্রুপটিতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ইরানকে ঘিরেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ায়নি, বাকি দুটি দল নিয়েও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বি গ্রুপের বাকি দুটি দল হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস একই 'স্বাধীন রাষ্ট্রের' অংশ—কিন্তু ফুটবলের বেলায় দুই দল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
খেলার দিক থেকে দেখলে, গ্রুপ ই-কে বলা চলে ডেথ গ্রুপ। এই গ্রুপে আছে জার্মানি, স্পনে, জাপান ও কোস্টারিকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ এলে এই টুর্নামেন্টের বড় আকর্ষণ হলো গ্রুপ বি।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর, ১৯৮০ সাল থেকেই আমেরিকা ও ইরানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তিক্ততার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে।
দুই দেশের সম্পর্কের ধরন প্রভাবিত হয়েছে রাজনীতি, কূটনীতি ও সামরিক সংঘাতের দ্বারা। সেইসঙ্গে সময় সময় ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ তো ছিলই।
২০০২ সালে ইরানকে 'শয়তানের অক্ষ' আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দুদেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তেহরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ এনেছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
২০২০ সালে একজন শীর্ষ ইরানি জেনারেলকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দুই দেশ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
এই পরিস্থিতিতে ২১ নভেম্বর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ম্যাচ দুটিকে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। যদিও উভয় দলের কোচই রাজনীতি সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। তবে ইরানের জন্য এ ম্যাচের গুরুত্ব একটু বেশিই। কারণ, গোটা ইরানজুড়ে এখন মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে। ২২ বছর বয়সি এই কুর্দি-ইরানি তরুণী দেশটির নৈতিক পুলিশের হেফাজতে মারা যান।
ইরানের কয়েকজন শীর্ষ খেলোয়াড় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কাতারেও তারা এ কাজ করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মতো গুরুতর না হলেও ইংল্যান্ড-ওয়েলস ম্যাচও ভালোই উত্তাপ ছড়াবে। ইতিমধ্যে অভিনেতা মাইকেল শিন এক অগ্নিঝরা বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্ট গনগনে করে দিয়েছেন। প্রতিবেশী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ওয়েলসবাসীর আবেগ ধরা পড়েছে এই ওয়েলশ অভিনেতার বক্তব্যে।
৬৪ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ওয়েলস। এবার তারা প্রতিবেশীর ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মাইকেল শিন তার বক্তব্যে বলেন, 'প্রতিবেশীদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার জন্য আমরা ৬৪ বছর অপেক্ষার পর অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে এখানে আসিনি। …ওরা আমাদের বরাবরই খুব ছোট, বড্ড শ্লথ, বড় দুর্বল, আর প্রচণ্ড ভীতু বলে এসেছে।' এবার ইংল্যান্ডের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুধু গ্রুপ বি নয়, আরও কয়েকটি গ্রুপেও এরকম রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ পাওয়া যেতে পারে।
যেমন গ্রুপ সি-তে পড়েছে লাতিন আমেরিকার দুই দেশ মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনা। দেশ দুটি ফুটবল খেলায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী। এছাড়া দুই দেশেই ক্ষমতায় আছে বামপন্থী সরকার।
এছাড়া গ্রুপ ডি-তে ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচও উত্তাপ ছড়াবে। এ বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার চুক্তি বাতিল করে দিলে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।
চলতি মাসের সুরুর দিকেই অবশ্য ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দেশকে 'রাজনীতি' সরিয়ে রেখে 'ফুটবলে মনোযোগ' দিতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু দলগুলোর সমর্থকরা তার অনুরোধে কান দিলে তো!