‘বিয়ার এবং খেলা’- এ দুয়ের যোগসূত্রের গোড়া কোথায়?
প্রিয় দল মাঠে দারুণ খেলছে, আর উন্মাদ দর্শক সে খেলা দেখছেন গ্যালারিতে বসে। কিংবা বাড়িতে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে খেলা দেখতে দেখতে খেলোয়াড়দের নিয়ে মন্তব্য করছেন উচ্ছ্বসিত দর্শক। এমন দৃশ্যের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। আমাদের দেশে ফুটবল, ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে এ দৃশ্য তো অহরহ দেখা যায়!
পশ্চিমা বিশ্বেও এটি খুব সাধারণ এবং অতি পরিচিত একটি দৃশ্য। তবে পার্থক্য হলো তাদের হাতে থাকে অ্যালকোহল (মদ ও বিয়ার)। ক্রীড়াপ্রেমীরা খেলা দেখছে কিন্তু হাতে বিয়ারের ক্যান বা গ্লাস নেই, পশ্চিমা বিশ্বে এ যেন অসম্ভব ব্যাপার!
যুক্তরাষ্ট্রের লয়োলা মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লরেন্স ওয়েনার আজ থেকে ৩০ বছর আগে লিখেছিলেন, 'হাতে বিয়ার নিয়ে খেলা দেখাকালীন তুখোড় খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য নিয়ে মন্তব্য করা এক বড় সাংস্কৃতিক পরিহাস!'
'শ্যাম্পেইন দিয়ে ফর্মুলা ওয়ান রেইস প্রতিযোগীদের সম্মানে পোডিয়াম উদযাপন থেকে শুরু করে লকার-রুমের খুনসুটি, স্পোর্ট বার- 'অ্যালকোহল, খেলা এবং পৌরুষ' - এই তিনে মিলে বহুদিন ধরে 'হরিহর আত্মা' হিসেবে কাজ করে আসছে। একইসঙ্গে পরস্পর নির্ভরশীল সংস্কৃতি হিসেবে এগুলো গেথেঁ গিয়েছে একই সূত্রে।
চলমান কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে তৈরি নানা ইস্যুর মধ্যে একটি হলো অ্যালকোহল। প্রথমদিকে মদ্যপায়ীদের জন্য স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট অংশে অ্যালকোহলের ব্যবস্থা থাকবে এমনটা বলা হলেও শেষ পর্যায়ে এসে আয়োজকরা ইউ-টার্ন নিয়েছেন। গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করে কাতার। ফলস্বরূপ, আটটি ভেন্যুর একটিতেও এ জাতীয় পানীয় বিক্রি করা হবে না।
ফিফা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'আয়োজক দেশ কাতারের কর্তৃপক্ষ ও ফিফার মধ্যকার আলোচনা শেষে স্টেডিয়ামের ভেতরকার বিয়ার দোকানগুলো অপসারণ করে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলো দর্শকদের অন্যান্য গন্তব্যস্থল ও অনুমোদনপ্রাপ্ত ভেন্যুতে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
সুতরাং, বিশ্বকাপ চলাকালীন দেশটিতে স্টেডিয়ামের বাইরে অ্যালকোহল পাওয়া যাবে ঠিকই, কিন্তু বিগত বিশ্বকাপগুলোর টুর্নামেন্টের মতো অ্যালকোহল সর্বত্র থাকবে না। এতে নিশ্চয় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে অনেক ইউরোপীয় এবং পশ্চিমা দর্শকদের।
কিন্তু, 'বিয়ার এবং খেলা- এ দুটোর যোগসূত্রের গোড়া-ই বা কোথায়? ক্রীড়াবিশ্বই বা কীভাবে অ্যালকোহলকে ঘিরে আবর্তিত হতে শুরু করেছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করা হয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত হয়েছে এক বিশেষ প্রতিবেদনে।
নিউজিল্যান্ডের ওটাগো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ জ্যাকসনের মতে অ্যালকোহল ও ক্রীড়ার সম্পৃক্ততার যাত্রা শুরু রোমান সাম্রাজ্যের আমলে।
জ্যাকসন আল-জাজিরাকে বলেন, 'নাগরিকদের সন্তুষ্ট রাখতে এবং সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে তারা রুটি এবং সার্কাসের ব্যবস্থা করত। সেখানে আরও থাকত ওয়াইনসহ হরেক রকমের অ্যালকোহল।'
পরে রেডিওর জনপ্রিয়তার যুগে এসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞাপনদাতারা কোনো এক ক্রীড়াদলের সাথে তাদের পণ্য জুড়ে দেওয়া কতটা সুদূরপ্রসারী ফল দিতে পারে- তা উপলব্ধি করলেন। তাদের পণ্যের সম্ভাবনাময় এক বাজার দেখতে পেলেন তারা। তাই আঞ্চলিক অ্যালকোহল প্রস্তুতকারকরা স্থানীয় বেসবল দলগুলোর স্পন্সর করতে শুরু করল। উদ্দেশ্য থাকত দলের প্রতি ভক্তদের যে আনুগত্য, তা যেন তাদের পণ্যের সাথেও জুড়ে যায়।
কয়েক দশক আগেও অভিজাত খেলাগুলোর অংশগ্রহণকারীরা সবাই ছিলেন পুরুষ। এর ফলে এবং অন্যান্য সামাজিক কাঠামোর কারণে ক্রীড়াপ্রেমীদের অধিকাংশই ছিলেন পুরুষ।
তাই 'ক্রীড়া, বিয়ার এবং পৌরুষ' - এই তিনের সমন্বয়ে যেন গড়ে উঠল 'হোলি ট্রিনিটি' বা 'পবিত্র ত্রিত্ব' যা পরিণত হলো- খুব সাধারণ একটি ব্যাপারে। ভোক্তা বাজারে পদ্ধতিগতভাবে এই তিনটির মিথষ্ক্রিয়ার ফলে সমসাময়িক সংস্কৃতিতে জেন্ডার (লিঙ্গ পরিচিতি) নতুনভাবে 'সংজ্ঞায়িত' হতে লাগল।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার-এর জিওপলিটিক্যাল ইকোনমি অব স্পোর্ট বিষয়ক গবেষক পল উইডপ বলেন, 'বিয়ার পুরুষদের মাঝে মিথষ্ক্রিয়াকে (মেলামেশা, সামাজিক বন্ধনকে) সহজতর করে। বর্তমানে নারীদের ক্ষেত্রেও- তা ক্রমাগত সত্যি হয়ে উঠছে।'
'এটি ক্রীড়া সংস্কৃতির অংশ, যে অংশ ক্রীড়াপ্রেমীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গড়ে তুলেছেন; কেবল বিয়ার ব্র্যান্ড নয়- অ্যালকোহলের দোকান অর্থাৎ পাবগুলোর সাথেও তৈরি হয়েছে প্রতীকী সংযুক্তি। ঠিক এজন্যেই ভিক্টোরিয়ান যুগের ফুটবল খেলার মাঠগুলো অবস্থিত ছিল মদের দোকানের পাশে,' বলেন পল।
এই অর্থে, অ্যালকোহল এক প্রকার 'সোশ্যাল লুব্রিকেন্ট' হিসেবে কাজ করে।
বিয়ার এবং অর্থ
ক্রীড়া এবং অ্যালকোহলের সম্পর্কের সাথে ব্যবসা তথা অর্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
স্পোর্ট মার্কেট ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি স্পোর্টক্যাল-এর হিসাবমতে, বর্তমানে ৩০টি শীর্ষস্থানীয় অ্যালকোহল ব্র্যান্ডের ক্রীড়াশিল্পের বৃহৎ প্রতিযোগিতা, ক্লাব এবং ক্রীড়াবিদদের সাথে ৭৬ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ২৮০টিরও অধিক স্পন্সরশিপ চুক্তি রয়েছে।
অ্যালকোহল উৎপাদনকারী ডাচ বহুজাতিক কোম্পানি হাইনিকেন এনভি প্রতিবছর স্পোর্ট স্পন্সরশিপের জন্য ১১ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করে। তাদের বর্তমানে কার রেসিং প্রতিযোগিতা ফর্মুলা ওয়ান-এর সাথে একটি বার্ষিক দুই কোটি ১৪ লাখ ডলারের চুক্তি এবং মেজর লিগ সকার-এর সাথে এক কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিসহ মোট ২৫টি সক্রিয় চুক্তি রয়েছে।
ক্রীড়া বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশি খরচ করে থাকে বাড লাইট। আমেরিকার সবচেয়ে বড় ফুটবল লিগ ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল)-এর সাথে তাদের ২৩ কোটি ডলারের স্পনসরশিপ চুক্তি রয়েছে।
যেসব দেশে রাগবি খেলা হয়, সেগুলোতে সিক্স নেশনস চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা (পুরুষ) খুবই জনপ্রিয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস - এই ছয়টি জাতীয় দল নিয়ে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্ট।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব স্টারলিং-এর ইন্সটিটিউট ফর সোশ্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড হেলথ-এর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালের সিক্স নেশনস চ্যাম্পিয়নশিপ-এর সময় কেবল এক ম্যাচেই ৯০০'র বেশি পাইন্ট অ্যালকোহল পান করা হয়। অর্থাৎ, প্রতি ১২ সেকেন্ডে গড়ে একটি অ্যালকোহল ক্যান বা বোতল নিঃশেষ হয়ে যায়। এরমধ্যেই বেশিরভাগ অ্যালকোহল ছিল আয়ারল্যান্ডের কোম্পানি গিনিস- এর, যেটি সেবছর স্পন্সর ছিল।
ইথিপিয়ায় অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ম্যাচগুলোর ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, প্রতি ৯০ মিনিটের খেলায় গড়ে ১০.৮ মিনিটের অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন স্ক্রিনে দেখা গিয়েছিল।
ফুটবল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। তাই অ্যালকোহল ব্র্যান্ডগুলোরও চোখ থাকে ফুটবলের বিভিন্ন টুর্নামেন্টের ওপর। বর্তমানে মোট যত সক্রিয় অ্যালকোহল স্পন্সরশিপ চুক্তি আছে, তার প্রায় ৪৯ শতাংশই ফুটবলকে কেন্দ্র করে। এবং টার্গেট ভোক্তা হিসেবে শীর্ষের রয়েছেন ইউরোপীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা যারা মোট ভোক্তার প্রায় ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে আছেন- উত্তর আমেরিকার ভোক্তারা, যারা ২০ শতাংশ।
এসব তথ্য কী নির্দেশ করে?
ব্রিটিশ বিয়ার অ্যান্ড পাব অ্যাসোসিয়েশন-এর হিসাব অনুযায়ী, ইউরো ২০২০ (উয়েফা ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ) সেমিফাইনালের ইংল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচের দিন আনুমানিক ১০ মিলিয়ন অ্যালকোহল পাইন্ট পান করা হয়। দ্য ইকোনোমিস্ট-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, কেবল এই ম্যাচ চলাকালীন প্রতি মিনিটে গড়ে ৫০ হাজার পানীয় বিক্রি হয়েছিল।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের সাথে সহিংস আচরণের সম্পর্ক আছে। তাছাড়া খেলার ফলাফল এবং সহিংসতার সাথে অ্যালকোহলের সম্পর্কও বেশ প্রতিষ্ঠিত। ল্যাঙ্কেস্টার ইউনিভার্সিটির ২০১৪ সালে পরিচালিত এক গবেষণা অনুযায়ী, ইংল্যান্ড কোনো ফুটবল ম্যাচে হারলে গৃহ-সহিংসতার পরিমাণ ৩৮ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে জিতলে কিংবা ড্র করলে বেড়ে যায় ২৬ শতাংশ।
তৃণমূল পর্যায়ে মদ্যপান সংস্কৃতি
কেবল যে বড় বড় লিগগুলোর খেলায় অ্যালকোহল পান অধিক প্রচলিত তা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূল ক্রীড়া ক্লাবগুলোর জনপ্রিয়তাও কম নয়। এ ক্লাবগুলো শুধু বিনোদনের উৎস নয়, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর মেলবন্ধন কিংবা সামাজিকতারও মাধ্যম। এসব ক্লাবগুলোর পাশেই থাকে কোনো পানশালা যা ক্লাবগুলোর প্রয়োজনীয় আয়ের অন্যতম উৎস।
বিশ ও একুশ শতকে 'পুরুষত্ব কিংবা পুরুষ পরিচয়' বিকাশে ক্রীড়া এবং অ্যালকোহল সংস্কৃতির বড়সড় হাত রয়েছে।
লরেন্স বলেন, "ক্রীড়া সংস্কৃতির সাথে বিয়ার ও মদ্যপান সংস্কৃতি একীভূত হয়ে গেছে। এটি 'গ্রহণযোগ্য পৌরুষ'-এর এক প্রকার সংকেত বা কোড হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিয়ার পান করতে করতে খেলা উপভোগ করা মানে- যেন আপনি একজন 'রিয়েল ম্যান' বা 'আসল পুরুষ'!
খেলার সাথে মদ্যপান শিল্পের সমর্থনকারীরা মনে করেন, অ্যালকোহল স্পন্সরশিপ এবং বিক্রয় থেকে আয় না হলে- মানুষের খেলাধুলার অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকত না।
কেবল যুক্তরাজ্যেই অ্যালকোহল স্পনসরশিপ থেকে আসে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশটির মোট ক্রীড়া স্পন্সরশিপের ১২ শতাংশ। এ অঙ্ক থেকে আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি যায় তৃণমূল পর্যায়ের খেলায়।
অ্যালকোহল বিপণন থেকে শিশুদের রক্ষা এবং দায়িত্বশীল মদ্যপান প্রচার করে অ্যালকোহল ইন্ডাস্ট্রি ট্রেড গ্রুপ পোর্টম্যান গ্রুপ। তাদের ভাষ্যমতে, এসব স্পনশিপের অর্থ খেলার মাঠ নির্মাণ, প্লেয়ার ডেভেলপমেন্ট, খেলার আঞ্চলিক কাঠামো গঠন এবং টুর্নামেন্ট আয়োজনসহ নানা সুবিধা প্রদান করে।
যুক্তরাজ্যে ক্রীড়া স্পন্সরশিপের প্রায় ১০ শতাংশ আসে অ্যালকোহল থেকে। পোর্টম্যান গ্রুপ-এর প্রধান নির্বাহী ম্যাট ল্যামবার্ট বলেন, 'ক্রীড়া স্পন্সরশিপের অর্থ খেলাধুলায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। ফলে এটি তৃণমূল খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা নিশ্চিত করে। এছাড়া পার্টনারশিপের মাধ্যমে পেশাদারের পাশাপাশি অপেশাদার ক্রীড়া বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও তহবিল গঠনে স্পন্সরশিপ ভূমিকা রাখে।'
বিয়ারওয়াশিং
ক্রীড়া এবং অ্যালকোহল - এ মানিকজোড় আলাদা করা কি খুব দেরি হয়ে গেছে?
এ দুটোকে আলাদা করতে চাওয়ার পেছনে কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এবং সামাজিক কারণ রয়েছে। কিন্তু, খেলায় অ্যালকোহল পানের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে সবচেয়ে শক্তিশালি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে 'বাজারের ইচ্ছা।'
অর্থের সম্পৃক্ততা থাকলে সংস্কৃতি অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য। স্পোর্ট ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোর মতো স্পন্সররাও বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন ভৌগলিক বাজারে তাদের নাগাল প্রসার করতে চায়।
খেলাধুলা এবং মদ্যপান - এ দুটোকে বিচ্ছিন্ন করা নয়, বরং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য অন্যান্য পানীয়কে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করাকে ইসলামিক বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছে অ্যালকোহল শিল্প।
উদাহরণস্বরূপ, বাহরাইনে ফর্মুলা ওয়ান উদযাপনে আঙ্গুরের রস পানের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ চোখে এটি বিশ্বের অন্য কোথাও শ্যাম্পেন উদযাপনের মতোই দেখায়।
জ্যাকসন বলেন, 'বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এই ব্যাপক প্রচারণায় নামছে। সুতরাং, তাদের টুর্নামেন্টগুলোতে অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় প্রবর্তন করাটা খুব একটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়।'
"এটি হয়ত পুরুষ ভোক্তাদের বৈধ ও নৈতিকভাবে স্পোর্ট-ড্রিংকিং সংস্কৃতিতে জড়িত করার সুযোগ তৈরি করে দেবে, যা দিনশেষে বাডওয়াইজার-এর মতো বড় বড় কোম্পানিগুলোর উদ্দ্যেশ্যই পূরণ করবে। এটি বিয়ার-ওয়াশিং এর মতো কাজ করবে,' যোগ করেন তিনি।
ক্রীড়া এবং মদ্যপানের লাভজনক সম্পর্ক ভাঙতে অনিচ্ছুক বিজ্ঞাপন দাতারা ক্রীড়াঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে, অ্যালকোহল বিজ্ঞাপনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়ে বাজার প্রসারের কৌশল গ্রহণ করছে।
জ্যাকসন বলেন, 'আগামী বছর নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠাতব্য ফিফা নারী বিশ্বকাপে প্রচুর অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য রয়েছে অ্যালকোহল শিল্পের।'
ইংল্যান্ডের নর্থ্রাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যাথারিন পামার মনে করেন, পুরুষদের মদ্যপানের তুলনায় নারীদের মদ্যপানকে সবসময় অধিক 'সমস্যাযুক্ত' হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। ২০১৯ সালে এক গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি লেখেন, 'ক্রীড়া সম্পর্কিত মদ্যপান পুরুষের জন্য যতটা আনন্দদায়ক ও সমস্যাযুক্ত, নারীদের ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই।'
অ্যালকোহল এবং খেলাধুলার শত শত বছরের পুরোনো যৌথ সংস্কৃতির অচিরেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্রীড়া তহবিলের বিকল্প পন্থা খুঁজে না পেলে, তৃণমূল কিংবা অভিজাত ক্লাব প্রতিযোগিতায় অ্যালকোহল স্পনসরশিপ একচ্ছত্র ভূমিকা পালন করে যাবে। কিন্তু, মুনাফার ব্যাপার জড়িত থাকলে সংস্কৃতি পরিবর্তন কিংবা প্রসার, দুটোই সম্ভব।
যেহেতু অ্যালকোহল এবং খেলাধুলা - এই উভয় জগত অপ্রচলিত বাজারে পৌঁছানোর চেষ্টায় আছে, আমরা হয়ত অন্তর্ভুক্তিতে (যেমন, বিজ্ঞাপনে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা) এবং ক্রীড়ায় মদ্যপান সংস্কৃতির সহিংস উপাদান দূরীকরণে 'মুনাফার উদ্দেশ্য'কে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি দেখতে পাব।