একেবারে জাদুর মতো: রাতারাতি ১২ শতাংশ বেড়ে গেল বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা
কাতার বিশ্বকাপ আরও এক অদ্ভুত মোড় নিয়েছে, যেখানে ৮টি স্টেডিয়ামেরই অফিশিয়াল ধারণক্ষমতা রাতারাতি ১২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে লেখা গাইডবুকে উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া আল বাইত স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার হলেও অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তা বেড়ে ৬৮,৮৯৫ প্রদর্শন করছে। একইভাবে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম লুসাইলের ধারণক্ষমতাও ৮০ হাজার থেকে বেড়ে ৮৮,৯৬৬ প্রদর্শন করছে।
কাতারের আয়োজকদের সাথে পরিচিত এক সূত্র থেকে জানা যায়, ফিফার নিয়মানুযায়ী স্টেডিয়ামগুলোতে কমপক্ষে ৮০ হাজার, ৬০ হাজার অথবা ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা থাকতে হবে। কাতারের আয়জকরা ব্রডকাস্ট, মিডিয়া এবং স্পনসরশিপের জন্য আলাদাভাবে বেশি সিট তৈরি রেখেছিলেন, যদিও পরে জানা যায় এত বেশি সিট প্রয়োজন নেই; যার ফলে সাধারণ দর্শকদের জন্য সিট সংখ্যা তারা বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সূত্র জানায়, ব্রডকাস্ট এবং মিডিয়ার লোকজন ছাড়াই লুসাইল স্টেডিয়ামে ৯২ হাজার দর্শক প্রবেশ করতে পারবে। মোট সংখ্যা হিসাব করলে, কাতারের ৮টি স্টেডিয়ামে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার সিট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,২৬,১১১টি সিটে; অর্থাৎ ৪৬ হাজার ১১১টি সিট বেড়েছে।
আরও একটি রহস্য হলো: অফিশিয়ালভাবে দর্শক উপস্থিতি প্রায় নিখুঁত দেখালেও বাস্তবে স্টেডিয়াম কেন এত ফাঁকা দেখাচ্ছে? কেন এত সিট ফাঁকা পড়ে আছে? সৌদি আরব বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচে অফিশিয়ালি মাত্র ১ হাজার আসন ফাঁকা থাকার উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে মাঠে প্রচুর সংখ্যক আসন ফাঁকা দেখা যায়। এর কারণ কী?
প্রথম কারণটি হলো: যারা টিকেট কিনেছেন তারা মাঠে খেলা দেখতে আসেননি। এখনো পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকা সিট দেখা যায় নেদারল্যান্ডস বনাম সেনেগাল ম্যাচে; বিশেষ করে মাঠের দুই পাশে থাকা একেবারে সামনের সারির সিটগুলো। এর অর্থ হচ্ছে, স্পন্সর এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা মাঠে খেলা দেখতে উপস্থিতই হননি।
আরও একটি কারণ হলো স্থানীয় দর্শকদের ম্যাচে উপস্থিত না হতে পারার ব্যর্থতা। ফিফা নিশ্চিত করেছে ৩ মিলিয়ন সিটের মধ্যে বেশিরভাগই কাতারের নাগরিকদের কেনা, যেটা আয়োজক দেশের ক্ষেত্রে বেশ স্বাভাবিক। তবে একেবারে সঠিক অঙ্কটি অফিশিয়ালি প্রকাশ করেনি ফিফা বা কাতার কর্তৃপক্ষ।
গার্ডিয়ান এক কাতারি দর্শকের কাছ থেকে জানতে পারে তিনি একাই ২০টি ম্যাচের টিকিট কিনেছেন। এগুলো কেনা হয়েছে দুটো আলাদা ফিফা অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে, যদিও সেটি অবৈধ। তার ভাষ্যানুযায়ী, তার আরও বেশ কিছু বন্ধু একইভাবে বেশি টিকিট কিনেছেন। এছাড়াও বিদেশি দর্শকদের অনেকেই টিকিট কেনার পরও শেষ মুহূর্তে কাতারে আসার পরিকল্পনা বাতিল করার কারণে সিট ফাঁকা থাকতে পারে।
আরও একটি কারণ হতে পারে, টিকিট বিক্রির পদ্ধতি; যেখানে ফেরত দেওয়া টিকিটগুলো পুনরায় বিক্রি করা যাবে কিনা তা ওয়েবসাইট রিফ্রেশ না করলে প্রদর্শন করে না। দোহার ওয়েস্ট বে-এর ডিইসিসি মেট্রো স্টেশন অফিসে নিয়মিতভাবে টিকিট বিক্রি চালু থাকলেও ওয়েবসাইট রিফ্রেশ না করার ফলে স্ক্রিনে সবসময় সোল্ড আউট প্রদর্শন করছে। ফলে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে অনেক দর্শককে, যদিও আসলেই প্রচুর সংখ্যক সিট খালি পড়ে আছে।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো গত শুক্রবার দাবি করেছিলেন, "এই বিশ্বকাপে ৩০ লক্ষ মানুষ স্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়ে খেলা দেখবে।" বাস্তব চোখের দেখার সাথে অবশ্য এই দাবির তেমন কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।