ম্যারাডোনার বিদায়ের দুই বছর ও কাতার বিশ্বকাপ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/25/argentina_wins_fifa_world_cup.jpg)
১৯৮২ বিশ্বকাপের অনভিজ্ঞ ২২ বছরের যুবক থেকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের নায়ক, ১৯৯০ বিশ্বকাপে ফাইনাল হার আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপে মাদক কেলেংকারিতে নিষিদ্ধ হওয়া, বিশ্বকাপ আর তিনি যেন একে অপরের পরিপূরক। হ্যাঁ, বলছি দিয়েগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনার কথা।
তার মৃত্যুর পর এটিই প্রথম বিশ্বকাপ। ২০২০ সালের আজকের দিনেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়। তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর সময় কাতারে চলছে বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বদেশ আর্জেন্টিনা এবং মেসির জন্য চিৎকার করতে মাঠে আসতেন দিয়েগো।
বিশ্বকাপ আর ম্যারাডোনা যেন একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ৪ টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি, ২১ ম্যাচে করেছেন ৮ গোল, যার একটিকে তিনি তুলনা করেন 'ঈশ্বরের হাত'র সঙ্গ, আরেকটি তো আখ্যা পেয়েছে গত শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবেই।
১৯৮২ বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন ২২ বছরের তরুণ হিসেবে। অনভিজ্ঞ ম্যারাডোনা আর আর্জেন্টিনা কোচের অদূরদর্শীতায় সেই বিশ্বকাপে বেশি দূর যাওয়া হয়নি। তবে ৫ ম্যাচে ২ গোল করে জানান দিয়েছিলেন তিনি আসছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/25/world_cup-1986-arg-eng.jpg)
সেই আসাটাই পরিপূর্ণ করেন পরের বিশ্বকাপেই, মেক্সিকোতে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে অনেকটা একা হাতেই জিতিয়েছিলেন দিয়েগো। লিওনেল মেসির এত এত অর্জনের পরেও অনেকে তাকে ম্যারাডোনার থেকে সেরা মানতে নারাজ শুধুমাত্র এই একটি বিশ্বকাপের জন্যই। কারণ ৩৬ বছর ধরে বিশ্বকাপের জন্য হাহাকার করা আর্জেন্টাইনরা জানে একটি বিশ্বকাপ জেতার মূল্য কতখানি।
১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলের ব্যবধানে হেরে হৃদয় ভেঙ্গেছিল ম্যারাডোনা আর কোটি আর্জেন্টাইনের। সেই বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতলে হয়তো সর্বকালের সেরা তর্কে ম্যারাডোনার পাশে আর কারো নাম উচ্চারিত হওয়ার সুযোগ থাকতো না।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে মাদক নেওয়ার দায়ে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। খেলোয়াড় হিসেবে নিজের শেষ বিশ্বকাপের স্মৃতিটা তাই বেশ অম্লই ম্যারাডোনার কাছে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/25/fbl-wc2010-match59-arg-ger.jpg)
২০১০ বিশ্বকাপে আবারও ফিরে আসেন দিয়েগো, তবে এবার আর্জেন্টিনা এবং মেসির কোচ হিসেবে। অনেকেই আর্জেন্টিনার ২৪ বছরের খরা ঘোচানোর সময় হিসেবে দেখছিল সেটিকে। কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছিল আর্জেন্টিনা এবং মেসিও। কিন্তু জার্মান বুলডোজারে সেই স্বপ্ন পিষ্ট হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয় দিয়েগোকে।
এরপর ফুটবল থেকে দূরে সরে যান ম্যারাডোনা। ২০১৪ বিশ্বকাপে আবারও জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনার ফাইনাল হারে কষ্ট পেয়েছেন, ২০১৮ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মেসির দলকে সমর্থন দিতে এসে তার গোল উদযাপন দেখেছে পুরো বিশ্বই। তবে সেটিই যে বিশ্বকাপের মঞ্চে তাকে শেষ দেখা, তা কজন ভেবেছিলেন!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/25/fbl-wc-2018-match39-ngr-arg.jpg)
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিরতরে ওপারে পাড়ি জমান দিয়েগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনা। অন্য দুনিয়ায় হয়তো ঈশ্বরের সঙ্গেই তার সেই বিখ্যাত 'ঈশ্বরের হাত' নিয়ে গল্প করেন ফুটবলকে শিল্প বানানো এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়।
কাতার বিশ্বকাপ তাকে ছাড়া প্রথম বিশ্বকাপ, এরপর থেকে কোনো বিশ্বকাপেই তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবেননা, কিন্তু তাকে মনে রাখবে আর্জেন্টিনার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের সবুজ গালিচা। কারণ, দিয়েগো ম্যারাডোনা আর বিশ্বকাপ যে একে অপরেরই অংশ।