ইংলিশ ফুটবল প্রভাবিত মার্কিনরা কি ইংল্যান্ডকে থামাতে পারবে?
২০১২ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দলের অধিনায়ক টাইলার অ্যাডামসের তখন মাত্র ১৩ বছর বয়স, নিউ ইয়র্ক রেড বুলের অ্যাকাডেমির চোখ পড়েছে তার দিকে। এমন সময়েই এনবিসি টেলিভিশন চ্যানেলকে যুক্তরাষ্ট্রে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ সম্প্রচারে চুক্তিবদ্ধ করা হয়, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল জনপ্রিয় করার পথ সুগম করে।
এর আগে ইংলিশ লীগের ম্যাচগুলো দেখানো হতো ফক্স সকার চ্যানেলে, যার জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হতো গ্রাহকদের। তবে ২০১২ সালে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিময়ে ৩ বছরের জন্য ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষার মৌসুমের ৩৮০টি প্রিমিয়ার লীগের সবগুলো ম্যাচের সম্প্রচার অধিকার কিনে নেয় এনবিসি, যেটি পরবর্তীতে ২.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পরবর্তী ৬ বছরের জন্য আবারো কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে ম্যাচগুলো মার্কিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
"বেড়ে ওঠার সময় প্রিমিয়ার লীগে খেলা সবসময়ই একটি স্বপ্ন ছিল। আমি থিয়েরি অঁরির ভক্ত ছিলাম, কেবল তিনি যে নিউ ইয়র্ক রেড বুলসের হয়ে খেলেছেন বলেই নয়, বরং আমি আর্সেনালেরও প্রচুর ম্যাচ দেখতাম। আমি তাকে সম্মান করতাম, যেভাবে তিনি ফুটবল খেলতেন সেজন্য। আমার মনে হয় আমেরিকায় এখন প্রচুর খেলোয়াড় আছে যারা নিয়মিত প্রিমিয়ার লিগ দেখে থাকে। কারণ এগুলো সকালে প্রচারিত হয় এবং খুব সহজেই দেখা যায়," টাইলার অ্যাডামস জানালেন।
কর্মঠ হিসেবে সুপরিচিত ডিসেন্সিভ মিডফিল্ডার অ্যাডামস নিউ ইয়র্ক রেড বুলস থেকে ২০১৯ সালে পাড়ি জমান এর সহযোগী ক্লাব আরবি লাইপজিগে। লাইপজিগ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে ওঠে তার করা গোলেই। তবে অ্যাডামসের স্বপ্ন ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা। অবশেষে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে লিডোসে পাড়ি জমালে তার স্বপ্ন সত্যি হয়। অ্যাডামসের মতো আরও অনেক খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা, আর সে স্বপ্নের কিছুটা হয়তো মিলবে শুক্রবার, যখন কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে তারা।
"মার্কিন সংস্কৃতি ইংল্যান্ডের সংস্কৃতির কাছাকাছি, সেদিক থেকে জার্মানি ততটা নয়। তাছাড়া প্রিমিয়ার লীগে খেলা সবসময়েই বিশেষ কিছু, এবং আমার কাছে এটা সবসময়েই বিশেষ কিছু থাকবে।"
প্রিমিয়ার লীগের বিশেষত্ব নিয়ে একমত মার্কিন কোচ গ্রেগ বারহাল্টারও। মার্কিন দলের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একইসাথে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার রেকর্ড গড়লেন। নেদারল্যান্ডসে থাকাকালীন সময় তিনিও নিয়মিত প্রিমিয়ার লিগ দেখতেন। নব্বইয়ের দশকে শুরু হওয়া তার ১৫ বছরের ইউরোপীয় ক্যারিয়ারে নিয়মিত প্রিমিয়ার লীগের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি।
গ্রেগের মতে, "এটি একটি অসাধারণ লিগ। ঐ লীগে আমাদের খেলোয়াড়রা খেলায় আমরা আসলেই গর্বিত। এটা আমার কাছে অনেকটা এনএফএল-এর মতো; যদি এর প্রভাব এবং বাণিজ্যিক স্বভাবের কথা চিন্তা করা হয়।"
টাইলার অ্যাডামস কাতারে অংশগ্রহণ করা ৩২টি দলের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ অধিনায়ক। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে ওয়াল্টার বারের পর মার্কিন ফুটবলের ইতিহাসেও সবচেয়ে কম বয়স্ক অধিনায়ক তিনি। ঐ বিশ্বকাপেই ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তেতে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গতবার বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকেই বাদ পড়া যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে ফিরে এসেছে, একদল তরুণকে নিয়ে মার্কিন 'সকার' সম্পর্কে নিচু দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর উদ্দেশ্যে। কাতারে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও ইংল্যান্ডকে চমকে দিতে পারবে?