কাতার বিশ্বকাপে কাসেমিরো যেন ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা
গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। ম্যাচটি জিতলেই ব্রাজিলের নিশ্চিত হয়ে যাবে শেষ ষোলোর টিকেট। ফেভারিটের তকমা নিয়ে ব্রাজিল প্রথমার্ধে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও ভেদ করতে পারেনি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্স। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৬ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট প্রতিপক্ষের জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। আর তখন ব্রাজিল ফ্যানরা ভেবেই নিয়েছিল হয়তো এ ম্যাচে হয়তো ড্র দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাদের। ঠিক তখনই ব্রাজিলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন কাসেমিরো। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক শটে গোল করে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত করেন শেষ ষোলোর টিকেট।
সুইজারল্যান্ড ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৬ নম্বর দল হওয়ায় ম্যাচটি জেতা নেইমারবিহীন ব্রাজিলের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। অন্যদিকে হাই ভোল্টেজ এ ম্যাচটি উপভোগ করতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলের গ্রেট রোনালদো নাজারিও, রবার্তো কার্লোস, কাফুর ও কাকার মতো ফুটবল তারকারা। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত গোলে তারাও গ্যালারিতে বসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নিজের অসাধারণ এ নৈপুণ্যর জন্য সর্বোচ্চ রেটিং পেয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন কাসেমিরো।
ম্যাচের পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গোলটি নিয়ে কাসেমিরো বলেন, 'যদিও গোলটি আমিই করেছি, তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গোলটি আমার দলকে জেতাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা যখন জিতবো তখন একসাথে জিতবো। আবার আমরা যখন হারবো, তখন একসাথে হারবো। আমাদের দলগতভাবে খেলতে হবে। শিরোপার জন্য দলগতভাবে খেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'
কাসেমিরোর গোলে ব্রাজিলের জয়ের পর সতীর্থ নেইমার টুইটারে লিখেছেন, 'কাসেমিরো বহু আগের থেকেই বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার।" নেইমারের এ মতের সাথে হয়েছেন স্বয়ং ব্রাজিল কোচ তিতেও। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে খেলা ব্রাজিলের সাবেক খেলোয়াড় সিজার সাম্পাইয়ো বলেছেন, "ক্যাসেমিরো মিডফিল্ডার হিসেবে সামনে থেকে ডিফেন্সের চারজন খেলোয়াড়ের বর্ম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ক্যাসেমিরো মাঝারি দূরত্বের শট নিতে পারে যেটা দলে তার পজিশনে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করে দেয়।'
কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মধ্যমাঠের নেতৃত্বে কাসেমিরো থাকলেও চার বছর আগে প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১৮ বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালের যে ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছিল সে ম্যাচে তখন একাদশে জায়গা পাননি কাসেমিরো। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারা এ ম্যাচে কাসেমিরোর পরিবর্তে খেলানো হয়েছিল ফার্নান্দিনহোকে। তবে চলমান কাতার বিশ্বকাপে কাসেমিরো জায়গা যে একাদশে প্রায় নির্ধারিত সেটা প্রথম দুই ম্যাচে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
গত বিশ্বকাপের তুলনায় এ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে ইতিবাচক কী পরিবর্তন এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কাসেমিরো বলেন, 'আমি মনে করি এ বিশ্বকাপে আমাদের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। স্কোয়াডে নতুন নতুন খেলোয়াড় এসেছে, আমাদের বেঞ্চও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলোয়াড় পরিবর্তন করে আমরা খুব সহজেই আমাদের খেলার ধরন পরিবর্তন করতে পারবো। সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই যে, ২০১৮ বিশ্বকাপের চেয়ে এ বিশ্বকাপে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছি।" কাসেমিরোর সাথে সুর মিলিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতে বলেন, "আমরা দীর্ঘ চার বছর ধরে নিজেদের প্রস্তুত করেছি, তরুণ খেলোয়াড়েরা নিজেদের উন্নত করছে। আজ আপনারা যে ব্রাজিল দলটিকে দেখতে পারছেন সেটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল।'
কাসেমিরো ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন টানা ৯ বছর। চলতি বছরের আগস্টে ৬০ মিলিয়র ডলারের ট্রান্সফারে রিয়াল ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ব্রাজিলের এ তারকা ফুটবলার রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লীগ, তিনটি লা-লীগা ছাড়াও ব্রাজিলের হয়ে ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা জিতেছেন। তবে বহু কিংবদন্তি ফুটবলারের মতো বিশ্বকাপের স্বপ্ন এখন পর্যন্ত কাসেমিরোর কাছে অধরাই রয়ে গেছে। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বহু আকাঙ্ক্ষিত হেক্সা পূরণের সাথে সাথে কাসেমিরোর বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন পূরণ হবে তো?