"আমরা মরক্কো থেকে এসেছি, আমরা মরোক্কান সিংহ"
আশরাফ হাকিমি পেনাল্টি নিতে এগিয়ে যেতেই সবার মনে আশা জেগে উঠলো, মরক্কো কি নতুনভাবে ইতিহাস লিখতে যাচ্ছে?
১২০ মিনিট ধরে স্পেন-মরক্কো কেউ কারো বাধা ভাঙতে পারছিলো না। হাকিমি পেনাল্টির দিকে এগিয়ে যেতেই স্প্যানিশ দর্শকরা তাদের মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে হাকিমির মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। তবে হাকিমি তার প্রতিজ্ঞায় অনড়, পুরো দেশের মানুষ তারদিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যেই দুই গোলে এগিয়ে রয়েছে মরক্কো, তার বলটা জালে জড়ালেই মরক্কো বিশ্বকাপের মচে এগ্যে যাবে আরও এক ধাপ।
প্রেস বক্স আর ভিআইপি এরিয়া ছাড়া পুরো স্টেডিয়ামের আর কেউ বসে নেই। মরক্কোর বদলি খেলোয়াড়রা গ্যালারি থেকে ছুঁড়ে মারা পতাকাগুলো সংগ্রহ করতে নেমে পড়েছেন। উদযাপনের আনন্দ বিস্ফোরিত হবে এমন সময় ঘনিয়ে আসছে, মাঠের মাঝখানের বৃত্তে থাকা বাকি ৯ জন খেলোয়াড়ের হাতের মুঠো আরও শক্ত হয়ে আসছে, হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গিয়েছে অনেক। দৌড় শেষ হওয়ার দাগ দেখা যাচ্ছে, বিজয় হাতের মুঠোয়।
হাকিমি দৌড় শুরু করলেন, যদি গোল করতে পারেন তাহলে তার জন্মস্থান দেশ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়বে।
এবং গোল। মরক্কোর লাল সমুদ্র ভেঙে পড়লো আনন্দে, ছয়বারের চেষ্টায় অবশেষে তারা বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠতে পারলো।
"সারা বিশ্বের সবার আনন্দ যোগ করার ফলাফল এটি। আমরা খুবই খুবই, খুবই খুশি," এজুকেশন সিটি স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে মরক্কোর দর্শকদের ভেসে আসা চিৎকার সেটিই জানান দিলো।
"আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আমরা জিতবো। কারণ আমরা মরক্কো থেকে এসেছি। আমরা মরোক্কান সিংহ," জানালেন ক্যাসাব্লাঙ্কায় জন্ম নেওয়া কিন্তু বর্তমানে কাতারে থাকা এক মরক্কো সমর্থক, ইঙ্গিত করলেন জাতীয় ফুটবল দলের ডাকনাম 'অ্যাটলাস লায়ন্স'-এর দিকে।
গ্যালারি থেকে সিঁড়িতে, সেখান থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে, তারপর সেখান থেকে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো মরক্কো সমর্থকদের উদযাপন। গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, পতাকা উড়িয়ে, গান গেয়ে, চিৎকার করে, আনন্দে মাতাল হয়ে নেচে উদযাপন চালিয়ে গেল তারা।
"আমি এখন একজন মরোক্কান হয়ে অনেক অনেক বেশি গর্বিত। ওয়াও। ওয়াও। ওয়াও। ওয়াও। এটা অসাধারণ। সবচেয়ে সেরা অনুভূতি এটা। পরের ম্যাচের জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমরা কাতারে থাকবো, আমাদেরকে এখনই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে না," জানালেন খাদিজা নামের একজন সমর্থক।
অনেক মরক্কো সমর্থকরাই যাওয়ার সময় স্প্যানিশ দর্শকদের জড়িয়ে ধরার আগে ক্ষেপিয়ে গেলেন, "এসপানা এসপানা। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথ এদিকে, এসপানা।"
ফিরদাউস নামল এক মরক্কো সমর্থক বৃহস্পতিবার সকালেই বিমানের টিকিট কেটে রেখেছিলেন।কিন্তু তিনি শনিবারের কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই আবার ফিরবেন বলে জানালেন। "এটা বিশাল। এটা এমন কিছু যা এর আগে মরক্কো কখনোই অর্জন করতে পারেনি। আমরা সারাজীবন ধরে এর অপেক্ষায় ছিলাম। এটা কেবল শুরু। আমাদের আরও পথ যাওয়া বাকি।"
মোহাম্মাদ কারাম নামে আরেক সমর্থক ম্যাচের পর ঠিকঠাকভাবে কথাই বলতে পারছিলেন না। তার কাছে এটা 'তার জীবনের সেরা ম্যাচ'। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না মাঠের মধ্যে যা হলো তা সত্যি কিনা: "আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। অনেক বড় ব্যাপার ছিল এটা, অনেক বেশি টেনশন হচ্ছিলো, অনেক আবেগের ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমরা এটা করতে পেরেছি। আমরা এখন কোয়ার্টার ফাইনালে।"
সূত্র: আল জাজিরা