গোল পোস্টে শট নিতে ‘অপারগ’ ক্রোয়েশিয়া কি টাইব্রেকার ছাড়া সেমি-ফাইনালে জিততে পারবে?
ফুটবলপাগল জাতি হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে শ্রদ্ধা করে না, এমন কোনো প্রতিবেশী দেশ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ক্রোয়েশিয়া এরই মধ্যে সাতটি টুর্নামেন্টে তিনবার সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। মাত্র চার মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া বরাবরই ফুটবলের প্রতি ইতিবাচক। মিডফিল্ডে প্লেমেকারদের রেখে যেভাবে পজেশনভিত্তিক ফুটবল খেলেছে তারা, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে তাদের পারফরমেন্স এবং ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত তাদের সাফল্যের দৌড় দেখে এখনও প্রশ্ন থেকেই যায় যে ক্রোয়েশিয়া কী সত্যিই ভালো ফুটবল খেলে?
বিশ্বকাপের দুই আসরে ছয়টি নক-আউট ম্যাচে তাদের ফলাফল ক্রমানুসারে- ড্র, ড্র, অতিরিক্ত সময়ে এক গোলে জয়ী, হার, ড্র এবং ড্র। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালো, যে চারটি ম্যাচে তারা ড্র করেছে, সবগুলো ম্যাচই তারা টাইব্রেকারে জিতেছে। সুতরাং যা দেখা যাচ্ছে, ক্রোয়েশিয়ার ট্রাম্প কার্ড হচ্ছে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া; যদিও মাঝেমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তারা টাইব্রেকারে জয়ে বের করে এনেছে।
এছাড়া, আরও একটি যৌক্তিক প্রশ্ন হলো- চার বছর আগে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়া ক্রোয়েশিয়া দলের চেয়ে আজকের ক্রোয়েশিয়া আরও ভালো নাকি খারাপ?
ক্রোয়েশিয়ার পারফরমেন্সের কথা বিবেচনা করলে দুর্দান্ত এক টুর্নামেন্ট পার করছেন ক্রোয়েট গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ। কিন্তু কোনো কারণে তাকেও বিচলিত লেগেছে, ছন্দহীন ফুটবল খেলছেন।
এদিকে রক্ষণভাগে বল পায়ে জসকো ভার্দিওল ক্রোয়েশিয়াকে বেশি সাহায্য করেছেন, খেলায় গতি এনে দিয়েছেন। বর্তমান লেফট ব্যাক বর্না সোসা রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা ইভান স্ট্রিনিচের চেয়ে এবার ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলা সাইম ভারসালিকোর বদলে এবার কাতার বিশ্বকাপে মাঠে নামা ডিফেন্ডার ইয়োসিপ জুরানোভিচকে নিয়ে হয়তো সন্দেহ থেকেই যেত, যদি না তিনি ব্রাজিলের বিপক্ষে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে মার্কিংয়ে রাখতে ব্যর্থ হতেন!
খেলার স্টাইল, মান ও খেলোয়াড়দের বিবেচনায়, কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডে গত আসরের চেয়ে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। দলের সবচেয়ে বড় তারকা লুকা মডরিচের বয়স এখন ৩৭ বছর। খেলার নিয়ন্ত্রণে তিনি এখনও বড় রকম প্রভাব বিস্তার করে চললেও, কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তবে ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে তাদের আক্রমণভাগে।
ইভান পেরিসিচ তার খেলার গতি এখনো ধরে রেখেছেন বটে, কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার দুটি পজিশনে দক্ষতার অভাব রয়েছে- আপ ফ্রন্ট এবং রাইটে। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে, আক্রমণভাগে গতি না থাকায়ই এতটা দক্ষ মিডফিল্ডের সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারে না।
বাকী নয়টি পজিশনে ক্রোয়েশিয়ান কোচ দালিচ তার সেরা খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জানেন এবং সেখানে তার পরিকল্পনা আগের মতোই রেখেছেন, ব্যতিক্রম শুধু একজন- অসুস্থতার কারণে জাপানের বিরুদ্ধে নক-আউটের ম্যাচে ছিলেন না সোসা; তার বদলে খেলেছেন বর্না বারিসিচ।
চার বছর আগে ক্রোয়েশিয়ার লাইনে ছিলেন মারিও মানজুকিচ এবং রাইট পজিশনে ছিলেন আন্তে রেবিচ। ৩৬ বছর বয়সী মানজুকিচ এখন অবসরে গেছেন, এবছর তিনি ক্রোয়েশিয়ান কোচিং স্টাফদের সাথে আছেন এবং রেবিচ ২৬ জনের স্কোয়াডে জায়গা পাননি।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মরক্কোর সাথে গোলশূন্য থেকেই বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ খেলে কানাডার বিপক্ষে জয় পায় ক্রোয়েটরা। এটিই বিশ্বকাপের একমাত্র ম্যাচ যেখানে নব্বই মিনিটের খেলায়ই জয়ে পেয়েছে লুকা মডরিচের দল। বেলজিয়ামের সাথে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে ক্রোয়েশিয়া।
নক-আউট পর্বে জাপানের সাথেও ড্র করে টাইব্রেকারে জিতে যাওয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছে ক্রোয়েশিয়া।
ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণভাগের খেলায় ছন্দহীন। কানাডা ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেও ৯০ মিনিটের তেমন গোলই করতে পারেনি লুকা মডরিচের দল। তাই সত্যিকার অর্থে প্রতিপক্ষের জন্য ভীতিকর কোনো আক্রমণের চাপই সৃষ্টি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।
এই মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন সত্যি করতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ জিততে হবে। নিজেদের সব ঘাটতি পূরণ করে যদি কামব্যাক করতে পারে, তবেই ২০১৮ বিশ্বকাপের দুঃখ এবার সুখ হয়ে ধরা দিবে তাদের কাছে।
সূত্র: দ্য অ্যাথলেটিক