বাংলাদেশ ২-০ অস্ট্রেলিয়া
ছোট লক্ষ্য হলেও বারবার রং বদলালো ম্যাচের। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২ ওভার পর্যন্ত চললো আশা-নিরাশার দোলাচল। এরপর গল্পটা কেবলই বাংলাদেশের। যেখানে কাণ্ডারির ভূমিকায় আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহান। এ দুজনের ব্যাটে লেখা হয়ে গেল বিজয়ের গল্প। দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যেকোনো ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে জিতলো বাংলাদেশ। যাদের বিপক্ষে একটা জয় পাওয়াই ছিল সাধনার, সেই অজিদের বিপক্ষেই বাংলাদেশ এখন সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা অস্ট্রেলিয়া মুস্তাফিজুর রহমান, মাহেদী হাসান, সাকিব আল হাসানদের বোলিংয়ের সামনে সুবিধা করতে পারেনি। ৭ উইকেটে ১২১ রান তোলে সফরকারীরা। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাটিং করে পুরো ওভার খেলে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে ২০১০ সালে পার্থে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ৮ উইকেটে ১৩৩ রান ছিল তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।
জবাবে এলোমেলো শুরু হলেও দলকে পথ হারাতে দেননি ম্যাচ সেরা আফিফ ও সোহান। ১২তম ওভারে জুটি বাধা এই দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ৮ বল হাতে রেখেই দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন। এই জয়ে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো সিরিজ জেতার সুযোগ তৈরি হলো বাংলাদেশের। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে আগামী ৬ আগস্ট অজিদের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
লক্ষ্য বড় ছিল না। তবে ধীর গতির উইকেটের কথা মাথায় রেখে সাবধানী শুরু করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার। এরপরও অবশ্য ভালো শুরু হয়নি। দলীয় ৯ রানেই সৌম্য সরকারের স্টাম্প উপড়ে নেন মিচেল স্টার্ক। রানের খাতাই খুলতে পারেননি আগের ম্যাচে ২ রান করা সৌম্য। কিছুক্ষণ পর ৯ রান করা নাঈম শেখকে বিদায় করেন জস হ্যাজলউড।
২১ রানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশকে কিছু সময় পথ দেখান সাকিব আল হাসান ও মাহেদী হাসান। দলীয় ৫৮ রানে গিয়ে থামেন সাকিব। এর আগে ১৭ বলে ৪টি চারে ২৬ রান করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিদায় নিলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
বারবার জীবন পেয়ে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন মাহেদী। চারবার জীবন পেয়েও অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২৪ বলে একটি ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন তিনি। ৬৭ রান থেকে শুরু হয় আফিফ হোসেন ধ্রুব-নুরুল হাসান সোহান জুটির।
এরপর আর দিক হারায়নি বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান আফিফ-সোহান। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৪ বলে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। যা টি-টোয়েন্টিতে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা।
দুঃসময়ে দলের হাল ধরে দারুণ ব্যাটিং করা আফিফ ৩১ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। দীর্ঘ বিরতির পর জিম্বাবুয়ে সফরে দলে ফেরা সোহান ২১ বলে ৩টি চারে ২২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড, অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাডাম জ্যাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা অস্ট্রেলিয়া শুধু স্পিন নয়, এবার বাংলাদেশের পেস আক্রমণের বিপক্ষেও ধুঁকেছে। প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো এই ম্যাচেও শুরু করে দেন স্পিনার মাহেদী হাসান। এরপর বল হাতে শাসন করে যান মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসানরা।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ব্যতিক্রম ছিলেন মিচেল মার্শ। দারুণ ছন্দে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। মার্শের ইনিংসটি ৪২ বলে ৫টি চারে সাজানো।
এ ছাড়া কেবল ময়জেস হেনরিকস রানের দেখা পান। ২৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ রান করেন তিনি। এ ছাড়া কেউ দলের হয়ে অবদান রাখতে পারেননি। জস ফিলিপে ১০ ও অ্যালেক্স ক্যারি ১১ রান করেন।
আগুনে বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন। যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো বাংলাদেশি বোলারের সেরা বোলিং। সবচেয়ে কিপ্টে বোলিং করেন মাহেদী হাসান। ডানহাতি এই স্পিনার ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। এ ছাড়া শরিফুল ২টি ও সাকিব একটি উইকেট নেন।