রাওয়ালপিন্ডিতে হতাশায় মোড়ানো দিন
দুঃস্বপ্নের শুরুর পরও দুই ব্যাটসম্যানের থিতু হওয়া এবং ইনিংস গুছিয়ে নেয়া। সেখান থেকে হ্যান্ডসাম একটা স্কোরের আশা করতেই পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেটে সেট হয়েও মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেনদের আত্মহুতিতে সে আশায় গুড়েবালি! রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষে তাই বাংলাদেশ শিবিরে বেদনার সুর।
৮২.৫ ওভারে ২৩৩ রানেই শেষ হয়ে গেছে মুমিনুল হকদের প্রথম ইনিংস। যদিও স্কোরকার্ডের চেহারা এরচেয়েও রুগ্ন ছিল। ১০৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ বিকেলে মোহাম্মদ মিঠুন ও স্পিনার তাইজুল ইসলামের লড়াইয়ে ২০০ পার করার পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। ৭.১ ওভার বাকি থাকলেও দিনের খেলার ইতি টেনে দেন আম্পায়াররা।
পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বিপক্ষে ভুগতে হবে, এটা অনুমেয়ই ছিল। ম্যাচ মাঠে গড়াতেই অনুমান হয়ে ওঠে রুঢ় বাস্তবতা। যেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেবলই শিকারের নাম। উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। কেউ কেউ তিথু হয়েও পথ হারিয়েছেন অনাহুত শট খেলে।
পাকিস্তানের তিন পেসারের মধ্যে নাসিম শাহকে খেলতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। কিন্তু বাকি দুই পেসার শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ আব্বাসকে খেলতে গিয়ে দিশা হারিয়ে ফেলেছেন তামিম, সাইফ, মুমিনুলরা। ১৩ টেস্টে ১১ উইকেট নেয়া হারিস সোহেলকেও উইকেট দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। সে সুর হাহাকার হয়ে পৌঁছায় অভিষিক্ত সাইফ হাসানের কানে। শাহিন আফ্রিদির করা ম্যাচের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তরুণ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে পারেননি কদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) রেকর্ড ৩৩৪* রানের ইনিংস খেলা তামিম ইকবালও। মোহাম্মদ আব্বাসের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিরতে হয় দেশসেরা এই ওপেনারকে। ৩ রানেই নেই ২ উইকেট। নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক যেন তখন উইকেটে নয়, মাঝ দরিয়ায়।
প্রাথমিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে অবশ্য সময় নেননি এই দুই ব্যাটসম্যান। শুরুর দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে ঠান্ডা মেজাজে খেলে যেতে থাকেন শান্ত ও মুমিনুল। দুজনকেই বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল। কিন্তু টেস্ট মেজাজে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি এ দুজনের কেউই। বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হয়েছেন তাঁরা। দলীয় ৬২ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুমিনুল। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।
আরও কিছুটা সময় মেজাজ ধরে রাখা শান্তও ফেরেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ১১০ বলে ৪৪ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আব্বাসের বলে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসবন্দী হন। ছন্দের সাথে ব্যাটিং শুরু করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও পারেননি স্বস্তি ফেরাতে। শাহিন আফ্রিদির তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান।
উইকেটের মিছিল চলতে থাকলেও লিটন দাসকে সবচেয়ে বেশি সাবলীল মনে হয়েছে। ছয় নম্বরে নেমে দলের ভার নিজ কাঁধে তুলে নেয়া মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। অন্যরা টেস্ট মেজাজে থাকলেও লিটন রান তোলায় মন লাগান। কিন্তু ৩৩ রান করেই থামতে হয় তাঁকে।
এরপর তাইজুলকে নিয়ে দিনের তৃতীয় সেরা জুটি গড়েন ইনিংস সেরা ৬৩ রান করা মিঠুন। সপ্তম জুটিতে ৫৩ রান যোগ করেন এ দুজন। জুটিতে মিঠুন ২৭ ও তাইজুল ২৪ রান করেন। ২৪ রান করে তাইজুল ফেরার পর আবারও শুরু হয় আসা যাওয়ার মিছিল। নাসিম শাহর প্রথম শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন মিঠুন। এরপর মুহূর্তেই সব শেষ।
মিঠুন ফেরার পর বাকি থাকেন তিন পেসার রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহি ও এবাদত হোসেন। এদের কেউই পারেননি ব্যাট হাতে দলের হয়ে অবদান রাখতে। শাহিন আফ্রিদি চারটি, মোহাম্মদ আব্বাস ও হারিস সোহেল দুটি এবং নাসিম শাহ একটি উইকেট নেন।