রোমাঞ্চিত আকবর-রাকিবুলদের দৃষ্টি বহুদূর
বিজয়ের ঘ্রাণ তখনও সবখানে, মাথায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। এমন সময়ে দেশে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে দাঁপিয়ে বেড়ানোর কথা ছিল বিশ্বজয়ী যুবাদের। কয়েকজন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পেয়ে আলো ছড়াতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ-ই থমকে যায় সব। করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায়। দুই-এক মাস নয়, বন্দি অবস্থায় কেটে গেছে প্রায় সাত মাস।
অবশেষে বন্দি দশা কেটেছে। জাতীয় দলের পর মাঠে ফিরেছেন এক ঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে হাই পারফরম্যান্স দলের (এইচপি) ক্যাম্প। ২৮ জনের ক্যাম্পে বিশ্বজয়ী ১২ জন যুবা ডাক পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭ জন ক্রিকেটার আবার সুযোগ পাচ্ছেন বিসিবির আয়োজন করা তিন দলের বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে খেলার।
আগামী ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের দল গড়া হয়েছে জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারদের নিয়ে। নেতৃত্বে থাকবেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরেই অগ্রজদের সঙ্গে ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলছে, যা নিয়ে রোমাঞ্চিত বিশ্বজয়ী যুবারা। এই অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতের পাথেয় করে বহুদূর পাড়ি দিতে চান তারা।
দীর্ঘদিন পর ক্রিকেট ম্যাচে ফেরা, ফেরার পর্বেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারার সুযোগ, বয়সভিত্তিক পর্ব পেরিয়ে নতুন ধাপে পা রাখার স্বস্তির কথা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ডাক পাওয়া ৭ ক্রিকেটার। সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত হলেও পুরোপুরি ইনজুরি কাটিয়ে না ওঠায় ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলবেন না মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
আকবর আলী
এমন সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত তো অবশ্যই। জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার থাকবেন। তাদের সাথে অনুশীলন করা, ম্যাচ খেলা, ড্রেসিং রুম শেয়ার করা, এটা বড় ব্যাপার। জাতীয় দলে ঢোকার আগে এমন অভিজ্ঞতা হওয়া মানে কিছুটা এগিয়ে থাকা। সব মিলিয়ে এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে।
সত্যি বলতে টুর্নামেন্ট নিয়ে এখনও সেভাবে চিন্তাই করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ম্যাচে ইনভলব হতে পারিনি। দলের সঙ্গে কয়েকদিন অনুশীলন করলে স্বাভাবিক ব্যাপারটা ফিরে আসবে বা বোঝা যাবে কী অবস্থায় আছি। তবে এখনও ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করিনি।
তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই এটা বড় সুযোগ। অনেক কিছু শিখতে পারব সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলে শেখার অনেক কিছু থাকবে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে, সব জায়গাতেই সিনিয়রদের কাছ থেকে লেসন নিতে পারব। সব মিলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।
বয়সভিত্তিক শেষ করে এইচপিতে এলাম। এটা ভালো লাগার ব্যাপার। অবশ্য এরআগেই আমরা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছি। তবে ধাপের যে ব্যাপারটা, এইচপি নতুন একটা ধাপ। একটা ধাপ শেষ করে আরেকটা শুরু হলো। একইভাবে মনোযোগী থেকে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
পারভেজ হোসেন ইমন
ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলার ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্যই অনেক রোমাঞ্চিত। প্রথমবারের মতো অনেক খেলোয়াড়ের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা হবে। অনুশীলন থেকে শুরু করে ম্যাচ খেলা, সব মিলিয়ে উত্তেজনা কাজ করছে। তবে যতটা পারছি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি।
এমন একটা টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়া অনেক বড় কিছু। জাতীয় দলের সব ক্রিকেটার থাকবেন। তারা অনেক অভিজ্ঞ। তাদের সাথে থাকলে অনেক কিছু শিখতে পারব। তারা কীভাবে চলাফেরা করেন, কীভাবে অনুশীলন করেন, একসাথে থাকলে এসব দেখা হবে। যা দেখে অনেক কিছু শিখতে পারব আমাদের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা।
বয়সভিত্তিকের পর্যায় ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। এটা অবশ্যই স্বস্তি দিচ্ছে, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ঠিক পথেই আছি। এইচপির ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছি, এটা আরও একটা শুরু। এই জায়গাটা ধরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, পারফরম্যান্স করতে হবে। এসব ভালোভাবে মাথায় রাখছি।
রাকিবুল হাসান
এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। যদি সুযোগ হয়, মুখিয়ে আছি এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য। সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার ব্যাপারটি অবশ্যই খুব টানছে। এতোদিন ক্রিকেট খেলিনি। ফিরেই এমন সুযোগ, সত্যি বলতে দারুণ অনুভূতি কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা আর যদি একাদশে সুযোগ পাই, সেরাটা দিয়ে খেলব।
এটা অনেক বড় সুযোগ। আমি চাইব নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার জন্য। এমন সুযোগ সব সময় তো আসবে না। যতটা পারব, সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে থেকে, মিশে অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করব। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানিয়ে নিতে কী করতে হয়, কীভাবে খেলতে হয়, জানার চেষ্টা করব আর নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করব।
বয়সভিত্তিক পর্যায়টা ভালো গেছে। অবশ্যই এটায় স্বস্তি আছে। পরিকল্পনা মতো এগিয়ে যেতে পারলে উন্নতি হয়। তো এখন এইচপিতে সুযোগ পেলাম। ধাপে ধাপে এগোতে চাই। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে চাই।
শাহাদাত হোসেন
লকডাউনে তো সেভাবে কাজ করা হয়নি। ম্যাচ, ট্রেনিং সবকিছু থেকেই দূরে ছিলাম সাত-আট মাস। আবার ক্রিকেটে ফিরছি। সেটাও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে। উত্তেজনা তো অবশ্যই কাজ করছে। এটা একটা বড় সুযোগ, কাজে লাগাতে পারলে ভালো হবে।
ম্যাচ খেলেছি কিনা, সেটা নিয়ে ভাবছি না। প্রস্তুতি ঠিক আছে কিনা, তাও চিন্তা করছি না। গভীরভাবে ভাবছি না সত্যি বলতে। সুযোগ হয়েছে, অনুশীলন করব নিজেকে প্রস্তুত করতে। ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিব। ম্যাচে যে মানসিকতা নিয়ে খেলা দরকার, সেটা যেন ফিরিয়ে নিয়ে আনতে পারি।
সাকিব-মাশরাফি ভাই ছাড়া সবাই আছেন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলব, সত্যিই অনেক উত্তেজনা কাজ করছে। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ। আমরা যারা নতুন, এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ভবিষ্যতে যা আমাদের অনেক কাজে দেবে। কেবল মাঠেই নয়, উনারা কীভাবে চলাফেরা করেন, সেটাও আমাদের শেখার বিষয়। অবশ্যই এই সুযোগটা নিতে চাই।
বয়সভিত্তিকের ধাপটা খুব ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। এইচপিতে এখন সুযোগ পেয়েছি, এটাও বড় ব্যাপার। একটা পাইপলাইনের মধ্যে আছি বলে আমি মনে করি। বয়সভিত্তিক খেলার পর অনেকেই কিন্তু সুযোগ পায় না। আমরা সুযোগ না পেলে রাস্তা অনেক কঠিন হয়ে যেত। এখন একটা পাইপলাইনে আছি, ধাপে ধাপে এগোতে পারলে ভিতটা মজবুত হয়। সুযোগ পেয়েছি, সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
তানজিদ হাসান তামিম
সত্যি বলতে এক্সাইটমেন্ট নয়, বিশ্বকাপ থেকে আসার পরই আমাদের প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়েছিল। তখন সবার অনেক ভালো সুযোগ ছিল। অনেক খেলা থাকতো। অনেক সুযোগ ছিল। বিশ্বকাপ থেকে আসার পর সাত মাসের বিরতি। আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে সবকিছু। এটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
এমন পর্যায়ে খেলার ব্যাপারটি অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো একটা সুযোগ। সবাই চেষ্টা করব ভালো কিছু করার। অনেক কিছু শিখতে পারব আমরা এই টুর্নামেন্ট থেকে। যা আমাদের ভবিষ্যতে অনেক বেশি কাজে লাগবে। এই শিক্ষাটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
ছোট বেলা থেকেই তামিম ভাইয়ের খেলা দেখতাম। উনার খেলা দেখে বড় হয়েছি। ছোট বলো থেকে উনাকেই অনুসরণ করা হয়। খুবই ভালো লাগছে উনার দলে আমি আছি। আরও অনেক বেশি ভালো লাগবে যদি উনার সঙ্গে একাদশে সুযোগ পাই। উনার সঙ্গে ব্যাটিং করে ভালো পারফর্ম করতে পারলে আরও বেশি ভালো লাগবে।
বিশ্বকাপ থেকে আসার পর সব বন্ধ। ইংল্যান্ডে একটা ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল, সেটাও হয়নি। করোনার কারণে সব ঠিকমতো যায়নি। আমাদের এখন নতুনভাবে শুরু করতে হবে সবকিছু। এখন আমরা আরেকটা পর্যায়ে এসেছি, নতুন ধাপে পা রেখেছি। এখানে ভালো করার চেষ্টা করব। নিজেকে উন্নত করতে সব ধরনের চেষ্টা করব।
শরিফুল ইসলাম
এক্সাইটেড তো অনেক, বলে বোঝানো যাবে না। সিনিয়র অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলব। এতোদিন পরে ক্রিকেট খেলব, এখানে সবাইকে পাচ্ছি; দারুণ লাগছে। যদি সুস্থ থাকি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সাথে খেললে অনেক কিছু শেখা যাবে। উনাদের কাছ থেকে জানা যাবে অনেক কিছুই। আর উনাদের তো অনেক ঐতিহাসিক ম্যচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেই সময় উনারা কীভাবে খেলে দলকে জিতিয়েছেন, এইগুলো জানার ইচ্ছা খুবই।
একটা ধাপ শেষ করে এইচপিতে এসেছি। ভালো পথেই এগোচ্ছি। এরপরের ধাপ 'এ' দল এরপর জাতীয় দল। সব যদি ঠিক থাকে জাতীয় দলে খেলার আশা করি। ভালো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজের সেরাটা দিতে চাই।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী
শোনার পর থেকে উত্তেজনা কাজ করছিল। কারণ সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে এক ডেসিং রুম শেয়ার করা বা একটা ম্যাচ খেলা। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি, হঠাৎ করে দলে নাম দিয়ে দিল দেখে খুব অবাকই লেগেছে। কারণ ইনজুরিতে ছিলাম, আর অনুশীলনও করতে পারিনি ভালো করে। ভালো লাগছিল কয়েকদিন ধরেই।
আমি এইচপির ক্যাম্পে অনুশীলন শুরু করেছি। কিন্তু পুরো গতিতে শুরু করিনি। আস্তে আস্তে বোলিং করছি। পুরো ফিট না হয়ে খেলা ঠিক হবে না। আমাদের যারা কোচ আছেন, তারাও একই পরামর্শ দিয়েছেন। খেলতে পারলে খুবই ভালো লাগতো। পেস বোলারকে সবসময় এটা মেনে নিতে হবে, যে বিশাল বড় সুযোগ সামনে থাকলেও ইনজুরি নামক একটা জিনিস আছে, যেটা আমাকে বাধা দেবেই।
ফিটনেসের অবস্থা ভালো, কিন্তু করোনায় লকডাউনে ওইভাবে পুনর্বাসন হয়নি। যে কারণে একটু পিছিয়ে আছি। বয়সভিত্তিক পর্যায় শেষ করে এইচপিতে সুযোগ পেলাম। নতুনভাবে, নতুন উদ্যোমে কঠোর পরিশ্রম করতে চাই। তবে এরআগে অবশ্যই আমাকে পুরো ফিট হয়ে উঠতে হবে।