সাকিবের রেকর্ড গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশের দাপুটে জয়
ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম নেই দলে। অন্যতম সেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও দলের বাইরে। অধিনায়ক তামিম ইকবালও ছিলেন না পুরো ফিট। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও তাদের ঘরের মাঠ, কন্ডিশন মিলিয়ে নির্ভার থাকার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ম্যাচ সেরা লিটন দাসের সেঞ্চুরির পর ম্যাজিক্যাল সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণিতে জয় তুলে নিতে কোনো বেগই পেতে হলো না বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেয়েছে তামিম ইকবালের দল।
শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে স্বাগতিকদের ১৫৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রানের হিসাবে ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের চতুর্থ সেরা জয়, বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ। জিম্বাবুয়ের মাটিতে এটা বাংলাদেশের ১৪তম জয়। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে আরও ১০ পয়েন্ট যোগ হলো বাংলাদেশের নামের পাশে। সুপার লিগে ৯ ম্যাচে ৫টিতে জয় পাওয়া বাংলাদেশ ৫০ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে।
দলের বিরাট জয়ে বিরাট অবদান সাকিবের। ব্যাট হাতে ১৯ রান করে বিদায় নিলেও বল হাতে তার শিকার ৫ উইকেট। তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নেওয়ার পথে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। মাশরাফি বিন মুর্তজার সমান ২৬৯ উইকেট নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সাকিব। ৫ উইকেটে নিয়ে ওয়ানডেতে এখন তিনি ২৭৪ উইকেটের মালিক। দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা মাশরাফি এখন দুই নম্বরে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। লিটন কুমার দাসের সেঞ্চুরি এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর মাঝারি ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে শুরুতে সাইফউদ্দিন-তাসকিনদের তোপে দিক হারানো জিম্বাবুয়ে পরে সাকিবের স্পিন তোপে দিশেহারা হয়ে ওঠে। তাদের ইনিংস থেমে যায় ১২১ রানেই।
২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই দিক হারায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই জিম্বাবুয়ে ওপেনার টাডিওয়ানাশে মারুমানিকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনসাইড এজে ভেঙে যায় মারুমানির স্টাম্প। তাসকিন তার নিজের তৃতীয় ওভারে উপড়ে নেন আরেক ওপেনার ওয়েসলে মাধেভেরের স্টাম্প। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তাকে পরাস্থ করেন তাসকিন। ১৩ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
এখান থেকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ব্রেন্ডন টেলর ও ডিওন মায়ার্স। কিন্তু তারাও পারেননি। ১৮ রান করা মায়ার্স ফেরান শরিফুল ইসলাম। এরপর শুরু হয় সাকিব শো। টেলরকে ফেরানোর পর আরও ৪টি উইকেট তুলে নেন তিনি। এর মাঝে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন রেজিস চাকাভা। টিমিসেন মারুমা চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ৯ উইকেট পতনেই শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ৪৫ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন সাকিব। সাইফউদ্দিন, তাসকিন ও শরিফুল একটি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় চরম অগোছালো। দলীয় ৭৪ রানের মধ্যেই ফিরে যান তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এর মধ্যে সাকিব ও মিঠুন ১৯ রান করে করেন। এক পাশে ভাঙনের সুর বাজতে থাকলেও সেদিকে তাকানটি লিটন।
পরে তার সঙ্গে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজন মিলে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। মাহমুদউল্লাহ ৩৩ রান করে বিদায় নিলেও লিটন তুলে নেন ওয়ানডের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১১৪ বলে ৮টি চারে ১০২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। শেষের দিকে বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে রান যোগ করেছেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৫ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ রান করেন আফিফ।
২৫ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় মিরাজ করেন ২৬ রান। সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ৮ রানে। জিম্বাবুয়ের লুক জঙ্গুয়ে ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগাভারা ২টি করে উইকেট নেন। বাকি উইকেটটি নেন টেন্ডাই চাতারা। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি আগামী ১৮ জুলাই হারারেতেই অনুষ্ঠিত হবে।