‘বেঈমানি’ করলো বিসিবি
গত বছরের অক্টোবরের কথা। হঠাৎ একত্রিত হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বসেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সংবাদমাধ্যমের সামনে ১১ দফা দাবি (পরে আরও দুটি দাবি যোগ হয়) জানিয়ে ক্রিকেটাররা ঘোষণা দেন, দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলবেন না তারা। এর মধ্যে একটি দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়াতে হবে, সংখ্যাটা ৩০ জনে উন্নীত করতে হবে।
একদিন পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যে ৯টি দাবি মেনে নিয়ে ক্রিকেটারদের আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ করে, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারটিও ছিল। কিন্তু ৫ মাস পর বিসিবির ঘোষণা করা নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হয়েছে ১৭ জন ক্রিকেটারের। ভুলে বাদ পড়া সৌম্য সরকারের নামটি নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মঙ্গলবার।
যে দাবির জন্য এত আন্দোলন সেটা এখন মুখের বুলি। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কথা দিলেও সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। উল্টো শেষ কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে একজন ক্রিকেটার কমানো হয়েছে। বিসিবির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ছিল ১৮ জন ক্রিকেটার। বিসিবির এমন সিদ্ধান্তে ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করছেন।
বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তি দেখার পর অনেক ক্রিকেটার এটাকে 'বেঈমানি' বলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের নিয়মিত একজন সদস্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'এটা তো বেঈমানিই। কেউ কথা দিয়ে কথা না রাখলে সেটাকে আপনি কী বলবেন? আমরা ভাবিনি এমন কিছু হবে। কারণ বোর্ডের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের কথা দেওয়া হয়েছিল। এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।'
আরেকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বোঝা গেল, তিনি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। কেন্দ্রীয় চুক্তির বিষয়টি তুলতেই যেন মেজাজ হারিয়ে বসলেন তিনি। বললেন, 'বিসিবি আমাদের কাছে পরিবারের চেয়েও বেশি কিছু। পরিবারই যখন এমন দুই নম্বরী করে, তখন আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না। আমাদের টাকাই আমাদের দেবেন, সেখানে আপনাদের সমস্যা কোথায়?'
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি কেমন হলো, বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের সাবেক একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে। নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটার সংখ্যা জানাতেই তিনি বলেন ওঠেন, 'এটা ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রহসন করা। যে ক্রিকেটারদের দিয়ে বোর্ড এতো সমৃদ্ধ হয়েছে, তাদের পেছনে টাকা খরচ করতে না চাওয়াটা হাস্যকর। এর চেয়ে বড়, তারা তো কথা দিয়েছিল। সেটা রাখবেন না কেন? এসবের প্রভাব যে খেলার মাঠেও পড়ে, সেটা হয়তো আমাদের বোর্ড বুঝতে পারছে না।'
মেনে নেওয়া ৯টি দাবির মধ্যে একটি ছিল, কেন্দ্রীয় চুক্তির ক্রিকেটার সংখ্যা ও বেতন বাড়ানো। যদিও তখন অন্যরকম সমঝোতা হয়েছিল বলে জানালেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। এটা যে সম্ভব নয়, তখনই নাকি ক্রিকেটারদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আকরাম খান বলেছেন, 'কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যাপারে ওদের দাবি ছিল কিন্তু আমরা তখনই বলেছি এটা সম্ভব না। তিনটা ফরম্যাট মিলিয়ে খেলে ২০ জন ক্রিকেটার। ৩০জনকে কীভাবে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রাখবেন? ২০-২২ জন দিয়েই তিন ফরম্যাট হয়ে যায়। আপনি ৩০ জন কেন করবেন?'
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা ছিল বিসিবির নির্বাচকদের। ২৪ জন ক্রিকেটারের একটি তালিকা করে বিসিবিতে জমা দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। বিষয়টি প্রধান নির্বাচকই দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন সোমবার। তাদের পাঠানো সেই তালিকা থেকে কাটছাট করে পরে ১৬ জনকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেওয়া হয়। হিসাবে থাকলেও ভুলে সৌম্যর নাম বাদ পড়েছিল বলে জানিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, 'কেন্দ্রীয় চুক্তির জন্য আমরা ক্রিকেটারদের একটা তালিকা করেছিলাম। সেখানে ২৪জন ক্রিকেটার ছিল। তালিকাটা আমরা বিসিবিতে জমা দিই। সেখান থেকে কাটছাট করা হয়েছে। আমরা আমাদের অংশটুকুর দায়িত্ব পালন করেছি।'
বিসিবির আরেক নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এ বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাইলেন না। তিনি বলেন, 'আলোচনা করে কমানো হয়েছে। প্রথমে তো দেওয়া হয়েছিল। আর কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।'
গত বছরের ২১ অক্টোবর মিরপুরের একাডেমি মাঠে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে ষষ্ঠ দাবিতে এনামুল হক জুনিয়র বলেছিলেন, 'জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ জন করতে হবে এবং বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না। সেটা বাড়াতে হবে।' বিসিবিও ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়ানোর কথা দিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি কথা দেওয়া পর্যন্তই থেকে গেল।