‘২০০৬ যুব বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলটি সেরা’
স্বপ্নের শিরোপা থেকে নিশ্বাস দূরত্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। আর একটি লড়াই জিতলেই বাংলাদেশ যুবাদের মাথায় উঠবে বিশ্বসেরার মুকুট। গায়ে বসবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের ট্যাগ। সোনালী শিরোপা জিততে ৯ ফেব্রুয়ারি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায়।
যুব বিশ্বকাপে ভারত সব সময়ই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। এবারের আসরেও তাদের প্রতাপ দেখেছে বিশ্ব ক্রিকেট। এমন এক দলকে হারিয়ে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা কতুটুকু আছে? বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলছেন, বাংলাদেশের এই দলটা শিরোপার দাবিদার। অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিসও বাংলাদেশ যুবাদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে রকিবুল হাসান বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো একটা দল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের সেরা দুটি দলই ফাইনালে গেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি চিন্তা করি, বাংলাদেশ এবার যে ক্রিকেট খেলেছে, সেটা পুরোপুরিভাবে ভয়ডরহীন। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই তারা অনেক ফোকাসড। তাদের মধ্যে কোনো চিন্তা বা চাপ আমি দেখিনি। ভারত শক্তিশালী দল হলেও বাংলাদেশ যদি ভুল না করে, সেরা ক্রিকেটটা খেলে, আমরা ভালো কিছু আশা করতেই পারি।’
অগ্রজ রকিবুল হাসানের মতো করে ভাবছেন শাহরিয়ার নাফিসও। বাঁহাতি এই ওপেনার বলছেন, ‘অবশ্যই আমাদের সেই সুযোগ আছে। যুব দল খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং তো ভালো করেছেই, বোলিং এবং ফিল্ডিং অসাধারণ ছিল। শেষ দুই ম্যাচে তারা যেভাবে খেলেছে, এভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই শিরোপা জয়ের সুযোগ থাকবে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, দল হিসেবে ভারত খুবই শক্তিশালী। ভারতকে হারাতে অবশ্যই সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। ভারত ফেবারিট, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি আশাবাদী। বাংলাদেশ যেভাবে ক্রিকেট খেলছে, সেটা এই ম্যাচে খেলতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব।’
ফলাফল বলছে যুব বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সেরা দল। কারণ এরআগে কোনো দলই ফাইনালে উঠতে পারেনি। রকিবুল হাসান তাই এই দলটাকেই সেরা মানছেন।
‘যেহেতু ফাইনালে উঠেছে, সেরা বলাই যায়। খুব গোছানো একটা দল। ফলাফল কিন্তু একটা দলের অনেক কিছু বলে দেয়। আমাদের এই দলটা অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। দক্ষতা, মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা অনেক ভারসাম্যপূর্ণ।’
আকবর আলী-তৌহিদ হৃদয়দের দলকে সাবেক এই ক্রিকেটার সেরার সার্টিফিকেট দিলেও নাফিস বলছেন অন্য কথা। তাঁর চোখে ২০০৬ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলটি এখন পর্যন্ত সেরা। নাফিসের ব্যাখ্যায়, ‘না, সেরা দল এটা নয়। রেজাল্টে চিন্তা করলে অনূর্ধ্ব-১৯ ইতিহাসের সেরা রেজাল্ট এটাই। তবে এটা সেরা দল নয়। আমার দৃষ্টিতে ২০০৬ যুব বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলটি সেরা। ওখান থেকে সাকিব, তামিম, মুশফিকরা বেরিয়ে এসেছে।’
‘ওই দলের প্রায় সবাই জাতীয় দলে খেলেছে। ২০০৪ বিশ্বকাপেরও ৯০ ভাগ খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলেছে। নামের দিক থেকে, ট্যালেন্টের দিক থেকে ২০০৬ ও ২০০৪-এর দল সেরা ছিল। কিন্তু রেজাল্টে এটা দৃশ্যমান যে, বাংলাদেশ কখনও ফাইনালে উঠতে পারেনি। রেজাল্টে এই দল ভালো করেছে। নামের দিক থেকে না হলেও কাজের দিক থেকে এই দল সেরা।’ যোগ করেন নাফিস।
যুব এই দলটি থেকে অনেকেরই ভালো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন রকিবুল হাসান। তাঁর মতে, ‘শরিফুল বেশ ভালো বোলিং করছে। হৃদয় বেশ ভালো, আকবর সুযোগই পাচ্ছে না ব্যাটিং করার। এরআগেই জিতে যাচ্ছে। তামিম, জয়, মুরাদ, রাকিবুলরা বেশ ভালো। এদের ভালো সম্ভাবনা আছে। এখান থেকে অনেকের উজ্জ্বল ভবিষ্যত আমি দেখতে পাই।’
শাহরিয়ার নাফিসও উল্লেখ করলেন কয়েকজনের নাম। বিশেষ করে বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানকে বেশ মনে ধরেছে তাঁর, ‘পেস বোলাররা খুব ভালো। শরিফুল, সাকিব- এ দুজনেরই খুবই ভালো সম্ভাবনা আছে। ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে যদি ধারাবাহিক বলি, সেটা তৌহিদ হৃদয়। দুটি বিশ্বকাপ খেলে অনেক রান করেছে ও। তবে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় রাকিবুল, বাঁহাতি স্পিনার। রাকিবুলকে আমার খুবই ভালো প্রসপেক্ট মনে হয়েছে।’
বয়সভিত্তিক বা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে অনেক ভালো করেও শেষ পর্যন্ত হারিয়ে গেছেন, এমন ক্রিকেটারও আছে বাংলাদেশে। সঠিক সময়ের আগেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় এমন হতে পারে বলে মনে করেন রকিবুল হাসান, ‘আগে সুযোগ দেয়ার কারণে অনেকেই হারিয়ে যায়। অনেক পরিণত হতে হবে, নির্বাচক কমিটি নিশ্চয়ই এটা নজরে রেখেছে।’ নাফিস মনে করেন অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় শেষে ক্রিকেটারকেই সব করতে হয়, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত একটা ভালো প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে, এরপর খেলোয়াড়ের কোয়ালিটি তাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।’