এশিয়া কাপ ফাইনাল: শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ নাকি পাকিস্তানের তৃতীয়?
পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত অনেক মানুষের জীবন। বন্যার্তদের জন্য এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে চান দেশটির অধিনায়ক বাবর আজম। শ্রীলঙ্কার অবস্থা আরও নাজুক। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতায় দেশটি। শিরোপা জিতে এক পশলা আনন্দের বৃষ্টি ঝরাতে চান লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। এবারের এশিয়া কাপের ফাইনালে তাই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের পাশাপাশি জড়িয়ে থাকছে আবেগও।
অন্যান্য সময়ও আবেগ থাকে, দেশের জন্যই লড়েন ক্রিকেটাররা। কিন্তু এবারের আবেগ, জেতার তাড়না অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দল দুটির মধ্যে। দারুণ ক্রিকেট খেলে ফাইনালে ওঠা উজ্জীবিত এই দুই দল আজ শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে। ম্যাচটি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে।
২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই ফাইনাল জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ড আরও মজবুত করার লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার। অন্যদিকে শিরোপা জিতে এশিয়া অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে লঙ্কানদের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তান।
এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি শিরোপা ভারতের, সাতটি শিরোপা জিতেছে তারা। এরপরই শ্রীলঙ্কা, দ্বীপদেশটির ঝুলিতে আছে পাঁচটি শিরোপা। ১৯৮৬, ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এশিয়া কাপের সেরার মুকুট জেতে শ্রীলঙ্কা। আরও ছয়বার ফাইনালে উঠেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি তারা। পাকিস্তান শিরোপা জিতেছে দুইবার। ২০০০ ও ২০১২ এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতে তারা। এ ছাড়া আরও দুইবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জেতা হয়নি পাকিস্তানের।
পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টিতে ২২ বার মুখোমুখি হয়েছে। পাকিস্তান জিতেছে ১৩ ম্যাচে, শ্রীলঙ্কা ৯টিতে। টি-টোয়েন্টির লড়াইয়ে পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার দাপট। এশিয়া কাপে ১৬ বারের লড়াইয়ে ১১ বারই জিতেছে লঙ্কানরা, ৫ ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তান। ফাইনালের লড়াইয়েও শ্রীলঙ্কার দাপট। এশিয়া কাপের ফাইনালে তিনবারের সাক্ষাতে দুইবার পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা। সর্বশেষ ২০১৪ ওয়ানডে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারায় শ্রীলঙ্কা।
এবারের আসরেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে পারেনি পাকিস্তান। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে ১৯.১ ওভারে ১২১ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে ১৭ ওভারেই ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে এবারের হারসহ পুরনো সব হিসেব চুকিয়ে নিতে মরিয়া পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কাও প্রস্তুত আরেকবার পাকিস্তানকে হতাশায় ডুবিয়ে শিরোপা উদযাপন করতে।
শেষ ম্যাচের হতাশা কাটিয়ে ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাবর আজম। পাকিস্তান অধিনায়ক বলেছেন, 'বোলাররা নিজেদের কাজ করেছে। আমাদের পেস বোলাররা ভালো ছন্দে রয়েছে। হাসান দলে ফিরেছে। ব্যাটসম্যানদের কোথায় ভুল হচ্ছে, সেটা ফাইনালের আগে আলোচনার ব্যাপার। আশা করি ফাইনালে সবাই নিজেদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করবে। ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।'
ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ রেকর্ড থাকলেও সতর্ক লঙ্কান অধিনায়ক। শানাকা বলেছেন, 'ফাইনালের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় পেয়েছি আমরা। এই জয় বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে। তবে ফাইনাল নিয়ে আমরা অনেক বেশি সতর্ক। পাকিস্তান শক্তিশালী দল। পুরো আসরে তা দেখিয়েছে তারা। ফাইনালে ঘুড়ে দাঁড়াতে মরিয়া থাকবে তারা। আমরাও ছাড় দেব না। ফাইনাল জিততে নিজেদের সেরাটা উজার করে দেব।'
শ্রীলঙ্কা একাদশ (সম্ভাব্য): কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), পাথুম নিসাঙ্কা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দানুশকা গুনাথিলাকা, দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), ভানুকা রাজাপাকশে, চামিকা করুনারত্নে, ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহেশ থিকশানা, প্রমোদ মাদুশান ও দিলশান মাদুশাঙ্কা।
পাকিস্তান একাদশ (সম্ভাব্য): বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), ফখর জামান, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, শাদাব খান, আসিফ আলী, মোহাম্মদ নওয়াজ, নাসিম শাহ, হারিস রউফ ও মোহাম্মদ হাসনাইন।