‘আপন’ হয়ে ওঠা ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরেকটি হার
একই উইকেটে ভিন্ন দৃশ্য। যে উইকেটে রান তুলতে নুরুল হাসান সোহান ছাড়া বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানকেই সংগ্রাম করতে হলো, সেই উইকেটেই সাবলীল ব্যাটিং করে গেলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য পাড়ি দিতে বেগই পেতে হলো না স্বাগতিকদের। হতাশার ব্যাটিংয়ের পর তাই নিয়ন্ত্রিত বোলিং কাজে এলো না। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও হার মানলো সাকিব আল হাসানের দল।
রোববার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ এই ম্যাচেও প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নিতে পারলো না। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন ধ্রুবর গড়পড়তা মানের ইনিংসের পর সোহানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ডেভন কনওয়ের দারুণ ইনিংস ও গ্লেন ফিলিপসের খুনে ব্যাটিংয়ে ২ উইকেটে ১৩ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
ব্যাট হাতে নামলে যেন হতাশায় হাবুডুবু খাওয়াই একমাত্র নিয়তি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টিতে দেখা যায় অন্য ফরম্যাটের ব্যাটিং, যা প্রায় নিয়মিত দৃশ্য। ব্যাটিং ব্যর্থতার ব্যাপারটি যেন 'আপন' হয়ে উঠেছে সাকিবদের জন্য। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো শুরু না পাওয়ার পরও গুছিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ, কিন্তু পরে পথ হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটেছে তারা।
প্রতিপক্ষের বোলিং, মাঠের আয়তন, কৌশল; এসবের তোয়াক্কা না করে দৃষ্টিকটু সব শট খেলে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের ইনিংস ছিল মাত্র দুটি ছক্কা, দুটিই সোহানের। মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ইয়াসির আলী রাব্বিরা দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। শান্ত, আফিফ, সাকিবরা কিছু রান করলেও টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালাতে পারেননি।
তিনটি পরিবর্তন নিয়ে কিউইদের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। বাদ পড়েন সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ। ফেরেন নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সুযোগ দেওয়া হয় নাজমুল হোসেন শান্ত ও শরিফুল ইসলামকে। ব্যাটিংয়ে ছন্দ পেতে এদিন সাব্বিরকে বাদ দেওয়া। ইনিংস উদ্বোধন করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাটিং অর্ডারেও আনা হয় বড় পরিবর্তন, সাকিব নামেন সাত নম্বরে। কিন্তু কোনো কিছুতেই ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি নিউজিল্যান্ডও। দলীয় ২৪ রানে ওপেনার ফিন অ্যালেনকে হারায় তারা। তবে তাকের হারানোর চাপ বুঝতেই হয়নি কিউইদের। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৬ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এ সময় উইলিয়ামসন ধীর স্থির থাকলেও ঝড় তোলেন কনওয়ে।
২৯ বলে একটি চারে ৩০ রান করা উইলিয়ামসনের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এরপর দাপুটে ব্যাটিংয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন কনওয়ে ও ফিলিপস। ৫১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৭০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন কনওয়ে। তাণ্ডব চালানো ফিলিপস ৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৩ রান করেন। নিউজিল্যান্ডে যাওয়া উইকেট দুটি ভাগাভাগি করে নেন শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
এরআগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি, দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাজেভাবে ক্যাচ তুলে আউট হন ৫ বলে ৫ রান করা মিরাজ। শুরুতেই উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য সহজেই কাটিয়ে তোলেন শান্ত ও লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়েন দুজন। এ সময় লিটন আস্তে ধীরে খেললেও মারকুটে মেজাজে ব্যাট চালান শান্ত, যদিও তা কিছু সময়ের জন্য। ১৬ বলে ১৫ রান করা লিটন দৃষ্টিকটুভাবে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। ৭.৫৭ রান রেটে ৭.৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৩/১। এরপর যে ভাঙনের সুর বেজে উঠে, তা আর থামানোই যায়নি।
কিছুক্ষণ পর ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন ২৯ বলে ৪টি চারে ইনিংস সেরা ৩৩ রান করা শান্ত। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও ব্যর্থ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। অপরিকল্পিত শটে ক্যাচ তুলে থামেন ৪ বলে ২ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঝড়ো ইনিংস খেলা ইয়াসির আলী রাব্বিও হতাশ করেন। ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন ৭ রান করা এই ব্যাটসম্যান।
আফিফ হোসেন ধ্রুব এক পাশ আগলে খেলতে থাকলেও রান তুলতে সংগ্রাম করতে হয় তাকে। ২৬ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ২৪ রান করেন তিনি। সাত নম্বরে নামা সাকিব ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হন। বাংলাদেশ ১৩৭ রানে পৌঁছায় মূলত সোহানের ব্যাটে। যে উইকেটে রান তুলতে প্রায় সবাই ধুঁকেছে, সেই উইকেটে খুনে ব্যাটিং করেন তিনি। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১২ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রানের না মানা ইনিংস খেলেন। নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, মাইকেল ব্রেসওয়েল ও ইশ সোধি ২টি করে উইকেট নেন।